শরীয়া আইনকি মধ্যযুগীয়?

লিখেছেন লিখেছেন আবু তাশফীন ০৯ এপ্রিল, ২০১৩, ০৭:৪৪:৩৯ সকাল

ফেসবুকে একজন প্রিয় মানুষের হেফাযতের ১৩ দফা দাবীর বিপরীতে কমেন্ট 'r sob dabi reasonable na.almost middle era er sateh mile jay' পড়ে মনে হল কিছু বিষয় লেখা দরকার। (বিশেষ করে শেষ অংশটুকু আ.লীগ নেতা হানিফের কথার সাথে মিলে যায়।)

ক)

প্রথম অংশ (r sob dabi reasonable na):

আমি হেফাযতের ১৩ দফা দাবী আবার পড়লাম। দাবীগুলোর সবগুলোই যৌক্তিক বলে আমার বিশ্বাস। তবে সরকার এগুলো মানবে বলে মনে হয়না, কারণ দাবীগুলো সরকারের রাজনৈতিক আদর্শের বিপরীত।

কমেন্টকারী, কোন কোন দাবী reasonable na বলেননি, তাই বিস্তারিত লিখছিনা।

খ)

দ্বিতীয় অংশ (almost middle era er sateh mile jay):

এটা বলা ও বিশ্বাস করা একজন মুসলিম হিসেবে খুবই আপত্তিকর। বিস্তারিত বলি?

কোন ব্যক্তি শরীয়া আইনকে (ইসলাম ধর্মে আল্লাহ কোরআন-হাদিসের মাধ্যমে যেসকল আইন-কানুন আমাদের দিয়েছেন সেগুলোকে) মধ্যযুগীয় বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলে, এড়িয়ে গেলে বা অস্বীকার করলে 'সত্যিকার মুসলিম' হিসেবে তার পরিচয় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। কারণ এর মাধ্যমে কমপক্ষের নিম্নের দুটি বিষয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বীকার করা হয়:

১) আজ ১৪০০ বছর আগের আইন চলবে না, তাই নতুন আইন দরকার? মোহাম্মদ [সা:] শেষ নবী নয়, এখন একজন নতুন নবীর আগমন দরকার যিনি আইনগুলোর আপডেট মানুষদের জানিয়ে দিবেন?

[[

উল্লেখ্য, মোহাম্মদ [সা:]-কে শেষ নবী হিসেবে স্বীকার করা ইসলামের একটি মৌলিক বিষয়। কারন, আল্লাহ বলেছেন, মোহাম্মদ [সা:] শেষ নবী এবং তাঁর মাধ্যমে ইসলামকে মানুষের জন্য পরিপূর্ণ করেছেন।

মোহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত। (সুরা আহযাব, আয়াত ৪০)

আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। (সুরা মায়েদাহ, আয়াত ৩)

]]

২) আল্লাহ এমন এক সত্তা যিনি সর্বযুগের চাহিদা মোতাবেক আইন দিতে অপারগ? তাই এখন আমাদের নিজেদের প্রয়োজন অনুসারে আইন বানিয়ে নিতে হবে?

বিস্তারিত বললে, আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন সত্য, কিন্তু মানুষ কিভাবে সর্বযুগে ভালো থাকবে তা তিনি জানতেন না? তাই ১৪০০ বছর আগে তিনি বর্তমান সময়ের উপযোগী আইন দিতে পারেননি? ফলে একজন আইনদাতা হিসেবে তাঁর ক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ?

[[

এর মাধ্যমে আল্লাহর অনেক গুণ (আসমাউল হুসনা থেকে) অস্বীকার করা হয়। রব/সৃষ্টিকর্তা/মালিক হিসেবে আল্লাহর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে অস্বীকার করা হয়। তাঁর জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করা হয় কি না? অথচ, আল্লাহ সর্বজ্ঞ। তিনি আদি, তিনি অনন্ত। তিনি সবচেয়ে বড় বিচারক। ...

আরো বিশ্লেষণ,

এখন মানুষ নিজেদের বুদ্ধি খাটিয়ে আইন প্রণয়ন করবে? অথচ, মানুষের এই বুদ্ধি/ব্রেণ সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ। আর আইন প্রণয়নে মানুষের এখতিয়ার থাকলে, এর দ্বারা বুঝা যায় আল্লাহ যে বুদ্ধি মানুষকে দিয়েছেন, তাঁর নিজের বুদ্ধি এর চেয়ে কম! তাই আল্লাহর চেয়ে ভালো আইন মানুষ প্রণয়ন করতে পারে। ---> এর মানে উপরের দ্বিতীয় পয়েন্টটির গভীরে গেলে প্রকারান্তরে আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয় কি? আসলে আল্লাহ মানুষ বানাননি, মানুষ বিবর্তনের মাধ্যমে বাঁদর থেকে এসেছে?

]]

গ)

এখন দেখুন, আমরাতো নিজেদের মুসলিম হিসেবে দাবী করি। মুসলিম হিসেবে আমরা যদি আল্লাহর আইন অনুযায়ী না মানি/চলি তবে আল্লাহ কোরআনে কি বলেছেন-

যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের। (আল মায়েদাহ, আয়াত ৪৪)

যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম। (আল মায়েদাহ, আয়াত ৪৫)

যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই পাপাচারী (ফাসেক)। (আল মায়েদাহ, আয়াত ৪৭)

ঘ)

আমি অনুরোধ করি - সকলে কোরআন-হাদিস বুঝে পড়ুন। এতে প্রচলিত ইসলাম বিরোধী অনেক কথা, পথ ও মতের ব্যাপারে সজাগ থাকা যাবে। আমরা আমাদের নেতাদের অন্ধ অনুকরণ না করি। না জেনে তাঁদের ভুল কথা ও কাজকে সমর্থন না দেই। মনে রাখতে হবে আমাদের প্রতিটি কথা ও কাজের হিসেব আল্লাহকে পরকালে দিতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৯৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File