কি আছে ‘জিহাদী’ বইগুলোতে?
লিখেছেন লিখেছেন লেখক ৩০ আগস্ট, ২০১৩, ১০:৪৩:৫৮ রাত
পুলিশি অভিযানে প্রায়ই শিবিরের বিভিন্ন মেস ও বাসাবাড়ী থেকে ইসলামী বই ও কোরআন হাদিস উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের দাবী অনুযায়ী এগুলো জিহাদী বই। গত শুক্রবার নগরীর নয়াবাজার এলাকা থেকে শিবিরের একটি মেস থেকে বিপুল পরিমাল বই উদ্ধার করে জালালাবাদ থানা পুলিশ। উদ্ধার করা বই থেকে দু’টি বই আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। ‘চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান’ ও ‘আমরা কি চাই কেন চাই কিভাবে চাই’ বই দুটির কিছু অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
বই:চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান বইটি লিখেছেন উর্দু ভাষার বিশিষ্ট লেখক নঈম সিদ্দিকী। বাংলা ভাষায় এর অনুবাদ করেছেন আবদুল মান্নান তালিব। বত্রিশ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশ করেছে আইসি এস পাবলিকেশন। দাম মাত্র ৮ টাকা। শুরুতেই প্রকাশকের কথায় লেখা আছে, ‘ইসলামী সমাজ বিপ্লবের লক্ষ্যে পরিচালিত আন্দোলনে কর্মীদের চরিত্রই মুখ্য হাতিয়ার’। এর পরের পৃষ্ঠায় অনুবাদক আব্দুল মান্নান তালিবের লেখা ‘লেখক পরিচিতি’ তে নঈম সিদ্দিকীর পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। সপ্তম পৃষ্ঠায় মূল আলোচনা শুরু হয়েছে। লেখা হয়েছে ‘মানুষের তৎপরতা যত বৃদ্ধি পায় যত অধিক গুরুত্ব অর্জন করে, সেখানে শয়তানের হস্তক্ষেপও ততই ব্যাপকতর হতে থাকে। ‘পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী ও স্বার্থপূজারী সভ্যতা আমাদের জাতির নৈতিক পতনকে চরম পর্যায়ে উপনীত করেছে, অন্যদিকে চলছে সমাজতন্ত্রের নাস্তিক্ষ্যবাদী চিন্তার হামলা। এ হামলা আমাদের জাতির মৌলিক ঈমান, আক্বীদার মধ্যে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করেছে।’ এরপরই সূরা ‘আরাফ’ এর ১৭ নং আয়াত দিয়ে মুসলমানকে লক্ষ্যচ্যুত করতে শয়তানের হামলার বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে। নবম পৃষ্ঠায় ‘আল্লাহর সাথে যথাযথ সম্পর্ক’ শিরোনামে লেখা হয়েছে ‘আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনই হচ্ছে এ কঠিন পরীক্ষাক্ষেত্রে আমাদের প্রথম ও প্রধান প্রয়োজন।’ এরপর পয়েন্ট ভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে। মৌলিক ইবাদতসমূহের ব্যাপারে গুরুত্বের পাশাপাশি কুরআন হাদিস সরাসরি অধ্যয়ন, সফল ইবাদত, নফল রোজা ও সার্বক্ষণিক যিকির ও দোয়ার উপর জোর দেয়া হয়েছে। চৌদ্দ পুষ্ঠায় সংগঠনের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে করণীয় বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। পয়েন্ট ভিত্তিক আলোচনায় প্রথমেই লেখা হয়েছে ‘আদেশ ও আনুগত্যের ভারসাম্য সংগঠনের মেরুদণ্ড। এ ভারসাম্য ছাড়া আদতে সংগঠনের অ¯িÍত্বই অর্থহীন। সেখানে সূরা নিছা’র ৫৮ নং আয়াত দিয়ে আনুগত্য ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। সতের পৃষ্ঠায় ‘ইসলাম অবশ্য কখনো অন্ধ আনুগত্যের দাবী করেনি। বরং সে কেবল সৎকর্মের ক্ষেত্রে আনুগত্য চেয়েছে’। সূরা মায়েদার ২ নং আয়াত তুলে ধরা হয়েছে ‘গুনাহ ও আল্লাহ নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন মূলক কাজে পরস্পরের সহযোগী হয়ো না’ বিশেষ করে দলের নেতাদের আনুগত্যের ক্ষেত্রে সৎকর্মের বাহিরে আনুগত্য কদম রাখা থেকে বিরত রাখতে বলা হয়েছে।
উনিশ পৃষ্ঠায় ‘ব্যক্তির পরিবর্তনের কারণে আনুগত্য ব্যবস্থাকে মেনে চলার ক্ষেত্রে কোন প্রকার পরিবর্তন আসতে পারে না।’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
একুশ পৃষ্ঠায় সংগঠনের দায়িত্বশীলদের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। ২৫ পৃষ্ঠায় ‘কর্তৃত্ব ও আনুগত্য সম্পর্কে আরো আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে যথা সময়ে সভায় উপস্থিত হওয়া, দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আনুগত্যসহ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আটাশ পৃষ্ঠায় ‘সহযোগীদের সাথে সম্পর্ক’ শিরোনামে সংগঠনের অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। সূরা হুজরাতের ৬ নং আয়াতের উল্লেখ করে লেখা হয়েছে ‘কোন খবর বা বিবরণ শুনার পর সঙ্গে সঙ্গেই সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অনেক মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে। এই ধরনের ভুলের কারণে পরে লজ্জিত হতে হয়। এ নির্দেশটি অত্যন্ত ব্যাপক। ইসলামী সমাজের সদস্যদের এর ওপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকা উচিত। ফাসেকদের প্রদত্ত খবরে পরস্পরের সম্পর্কে তড়িৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত নয়।’ বিশেষ করে সূরা হুজরাতের ১০ নং আয়াত দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ‘পরস্পর ভাই ভাই’ সম্পর্ক স্থাপনে জোর দেয়া হয়েছে।
ত্রিশ পৃষ্ঠায় সূরা হুজরাতের ১১ নং আয়াত আলোচনা করে লেখা হয়েছে ‘বিদ্রুপ করা, পরস্পরের দোষ খুঁজে বেড়ানো এবং অসম্মানজনক নাম ব্যবহার করা থেকে মুসলমানকে বিরত রাখা হয়েছে।’
একত্রিশ পৃষ্ঠায় সূরা হুজরাতের ১২ নং আয়াতের উল্লেখ করে এক মুসলমান অন্য মুসলমান সম্পর্কে কু-ধারণা না করার ব্যাপারে লেখা হয়েছে।
সর্বশেষ বত্রিশ পৃষ্ঠায় আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে এবং দলীয় নীতি ও শৃঙ্খলা স্থাপনে দলীয় কর্মীদের আনুগত্যের পাশাপাশি নৈতিকতার উপর জোর দেয়া হয়েছে।
বই- আমরা কি চাই কেন চাই কিভাবে চাই ঃ আমরা কি চাই কেন চাই কিভাবে চাই বইটি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। দাম রাখা হয়েছে মাত্র ৮ টাকা। বইটির শুরুতেই প্রাসঙ্গিক কথায় ‘ছাত্রশিবিরের ব্যাপক পরিচয় তুলে ধরা সময়ের দাবী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চার পৃষ্ঠায় ‘মানুষের মর্যাদা’ মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য, মানুষের পরিণতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পঞ্চম পৃষ্ঠায় সূরা আল আহযাব এর ২১ নং আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে ‘মানুষের জীবন বিধান ইসলাম’ শিরোনামে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। ৬ পৃষ্ঠায় সূরা আলে ইমরানের ১১০ নং আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে ‘মুসলমানের দায়িত্ব’ শিরোনামে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া সূরা তওবার ৩৯ নং আয়াত ও সেথানে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া মানবীয় মতবাদের ব্যর্থতা, বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের ক্ষেত্রে সমস্যা, শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য সৃষ্টির কারণ, প্রকৃত শিক্ষা বিশেষ করে নৈতিক শিক্ষার সংকটের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এগারো পৃষ্ঠায় ‘সাংস্কৃতিক দেউলিয়াত্ব’ শিরোনামে লেখা আছে, ‘সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি চর্চা। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংস্কৃতির ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে আমাদের যুব চরিত্র ধ্বংসের সকল আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে।’
এরপর ১২ পৃষ্ঠায় ‘কোনপথে মুক্তি’ ‘মুক্তির পথ ইসলাম’ শিরোনামে আলোচনা করা হয়েছে। চৌদ্দ পৃষ্ঠায় জাতির ভাগ্য পরিবর্তনে ছাত্র সমাজের সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ‘জাতির ক্লান্তিলগ্নে শিবিরের আবির্ভাব’ শিরোনামে লেখা হয়েছে ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্র“য়ারি শিবিরের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর ১৫ পৃষ্ঠায় ‘লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য’ শিরোনামে শিবিরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়েছে। লেখা হয়েছে ‘আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সাঃ) প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবনের পুনঃবিণ্যাস সাধন করে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন।’ এছাড়া সূরা মায়েদার ৬৭ নং সূরা তওবার ৪১ নং আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
১৭ পৃষ্ঠায় ‘দাওয়াত’ শিরোনামে শিবিরের দাওয়াতের ক্ষেত্র আলোচনা করা হয়েছে। ১৮ পৃষ্ঠায় সংগঠন ও প্রশিক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সূরা আলে ইমরানের ১০৩-১০৪ নং আয়াতের মাধ্যমে সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। ২০ পৃষ্ঠায় ‘ইসলামী শিক্ষা ও ছাত্র আন্দোলন’ শিরোনামে সূরা আল-মুযদালার ১১ নং আয়াত দিয়ে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরা হয়েছে এবং ইসলামী শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
২১ পৃষ্ঠায় ‘সংসদ নির্বাচন’ ও ‘মানবতার মুক্তির জন্য সংগ্রাম’ শিরোনামে আলোচনায় অসৎ নেতৃত্বের অপসারণ ও সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২৩ পৃষ্ঠায় ‘ডাক দিয়ে যাই’ শিরোনামে লেখা হয়েছে, ‘আসুন, সকল প্রকার দল ও মতের উর্ধ্বে উঠে ইসলাম সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট ধারণা লভ করার চেষ্টা করি এবং ব্যক্তি ও জাতির ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির পথ খুঁজে বের করি।’
এদিকে গত শুক্রবার ভোর রাতে নগরী থেকে উদ্ধার করা বিপুল পরিমাণ ইসলামী বইকে জিহাদী বই দাবী করা সম্পর্কে মহানগর শিবিরের সেক্রেটারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোরআন হাদিস আর ইসলামী সাহিত্য যদি জিহাদী বই হয়ে থাকে তবে সত্যিই খুব দুঃখজনক। দলীয় কর্মীদের নৈতিক শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলতে এবং আদর্শিক সংগঠন হিসেবে শিবিরের নেতাকর্মীরা কাজ করছে বলে তিনি দাবী করেন। তিনি বলেন, নৈতিকতার অভাবেই আজ ঐশির মত বাবা মা খুনের ঘটনা ঘটছে। আর শিবির নৈতিকতা ও আদর্শিক শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে তাদের নেতাকর্মীদের।
বিষয়: রাজনীতি
১৯৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন