এবার নারী আন্দোলনের না..রী..রা কি বলবে ধর্মান্ধতা নাকি বাস্তবতা?

লিখেছেন লিখেছেন প্রশান্তি ২৫ মার্চ, ২০১৩, ০৬:১০:৪০ সন্ধ্যা

যারা আজ প্রথম আলো অনলাইনে যান নি তাদের জন্য আর বাংলাদেশে যেসব হাফনারীরা পর্দা বলতে ধর্মান্ধ বুঝায় তাদের জন্য এই লেখাটি কপিপেষ্ট করলাম................

নারীকে আবেদনময়ী দেখালেই পুরুষ ধর্ষণ করবে?

অনলাইন ডেস্ক | তারিখ: ২৫-০৩-২০১৩

দিল্লিতে গত ডিসেম্বরে চলন্ত বাসে মেডিকেলের এক শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণ। গত সপ্তাহে মধ্যপ্রদেশে এক সুইস নারীকে গণধর্ষণ। একই সপ্তাহে আগ্রায় হোটেলের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে এক ব্রিটিশ নারীর ধর্ষণ থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা। সম্প্রতি ভারতে সংঘটিত আলোচিত ধর্ষণকাণ্ডের অন্যতম এগুলো।

সরকারি হিসাব মতে, ভারতে প্রতি ২১ মিনিটে একটি করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের ব্যাপারে ভারতীয় পুরুষেরা কী ভাবেন? এ প্রশ্নটি মাথায় রেখে ভারতের গোয়া রাজ্যের কয়েকজন ব্যক্তির মতামত জানতে চেয়েছিল ব্রিটিশ সাপ্তাহিক ‘অবজারভার’। মতামত দেওয়া ব্যক্তিদের প্রায় সবার বক্তব্য ছিল, মেয়েদের আবেদনময়ী দেখালে ছেলেরা ধর্ষণ করবে—এটাই স্বাভাবিক।

‘ধর্ষণ একটা সমস্যা। এটা নারীদের দিক থেকেই শুরু হয়। ওরাই পুরুষদের উত্তেজিত করে তোলে।’ বলছিলেন ৩২ বছর বয়সী এক পানশালার মালিক পাপি গঞ্জালেস। মাথা নেড়ে তাঁর কথায় সম্মতি দিলেন পানশালার কর্মী রবিন শ্রীঠা। ২১ বছর বয়সী এ তরুণের বক্তব্য, ‘মেয়েদের আবেদনময়ী দেখালে ছেলেরা নিজেদের আর ধরে রাখতে পারে না।’

২৮ বছর বয়সী অভিজিত্ হারমালকার পেশায় গাড়িচালক। ধর্ষণের ব্যাপারে তাঁর মতামত, ‘ধর্ষণের জন্য শুধু পুরুষকে দোষারোপ করা হচ্ছে। অথচ তরুণীদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কেউ কথা বলছে না। আমাদের এটা বোঝা উচিত যে, রাতের বেলায় মেয়েদের বাড়ির বাইরে যাওয়া উচিত নয়। আমাদের সংস্কৃতি ভিন্ন।’

হারমালকারের ছোট ভাই অবিনাশের (২৪) ভাষ্য, মা-বাবার উচিত বেশি রাতে মেয়েদের বাইরে যাওয়া বন্ধ করা। তাহলে এ ধরনের অপরাধ ঘটবে না।

২৬ বছর বয়সী ভিভরেশ বানাওলিকার একটি প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষক। তিনি বলেন, ‘আমার এক বোন আছে। ও যদি রাতে বাইরে যায়, আমি চিন্তায় পড়ে যাই। সাতটা পেরিয়ে গেলে আমি দুশ্চিন্তায় পড়ি। পুরুষেরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’

শুধু সাধারণ মানুষ নয়, ভারতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও বিশ্বাস করেন, ধর্ষণের দায় শুধুই পুরুষের নয়। চলন্ত বাসে মেডিকেলছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হওয়ার পর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল অনেকে। এ অবস্থার মধ্যেও মেয়েদের সাজগোজ ও পোশাক নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ছেলে এবং পার্লামেন্ট সদস্য অভিজিত্ মুখার্জি। ভারতের ধর্মীয় গুরু আসারাম বাপু বলেছিলেন, ‘ধর্ষণের শিকার নারী নির্দোষ ছিল না। এক হাতে কখনো তালি বাজে?’

গঞ্জালেস বলেন, দেশে যদি আরও বেশি যৌনকর্মী থাকত, তবে তরুণীদের সমস্যা হয়তো কমত। তিনি বলেন, ‘যৌনকর্মীরা পুরুষদের আনন্দ দেন। বোম্বেতে এমন ২০টি জায়গা আছে, যেখানে আমি মাঝেমধ্যে যাই। ওখানে এমন শত শত জায়গা আছে। কিন্তু গোয়ায় এমন কিচ্ছু নেই। সাদা চামড়ার কেউ যদি নিজের শরীর দেখায়, তবে গোয়াবাসী অনেক কিছু করে।’

তিনি বলেন, ‘নারীদের ওপরে যৌন নিপীড়ন ঠেকানোর একটি উপায় হতে পারে মা-বাবার কড়া শাসন, রাতে বাড়ির বাইরে যেতে না দেওয়া। এটা অনেক দিন ধরে প্রচলিত একটি উপায়। ভারতীয় সংস্কৃতিতে, আমাদের প্রজন্ম বেড়ে উঠেছিল পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে। এ জন্য আমরা মা-বাবাকে সম্মান করতাম। তাঁরা আমাদের যা বলতেন, আমরা তাই করতাম। মা-বাবা চিত্কার করে বলতেন, “এটা কর, ওটা কর”, আমরা করতাম। কিন্তু এখনকার প্রজন্মে ওসব বদলে গেছে।’

হারমালকার বলেন, যে পুরুষেরা বাসে নারীদের ওপরে নিপীড়ন করে, তারা একা থাকে না। তাদের বাঁচানোর জন্য আরও অনেকে থাকে বলেই তারা এমনটা করার সাহস পায়। আবার এমনও হয়, তারা যে ভুল করছে, এটা তারা বোঝে না।

কারখানার শ্রমিক বৃন্দাবন সালগাওকর বলেন, ‘এদের কোনো মেয়েবন্ধু নেই। যদি কোনো মেয়েবন্ধু থাকত, তারা এমনটা করত না। যদি তাদের একটা বোনও থাকত, তাহলেও এমনটা হতো না।’

যাঁদের মত নেওয়া হচ্ছিল, তাঁরা কেউ সমাধানের ব্যাপারে একমত হতে পারছিলেন না। বানাওলিকার বলেন, ধর্ষণ বন্ধের একমাত্র উপায় হলো ছেলেদের কাজে ব্যস্ত রাখা এবং পথ থেকে সরিয়ে নেওয়া। তিনি বলেন, ‘আমি যে কাজ করি, তাতে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। ওসব করার সময় আমার নেই। যদি আপনি তাদের (ছেলেদের) ব্যস্ত রাখেন, তবে তাদের সামলাতে পারবেন। বেকার ছেলেরাই ওসব কাজ করে।’

বানাওলিকার বলেন, ‘যদি তারা (ছেলেরা) কাউকে কিছু করতে দেখে, তাহলে নিজেরাও সেটি করতে চায়। মেয়েদের বেলায়ও এমনটি ঘটে। দিনের বেলা সে সুবোধ বালিকা, কিন্তু রাত হলেই সে বুঝে যায় কী করতে হবে। এ জন্য সে তার বন্ধুদের পটায়।’

সবার মত হলো, মা-বাবা ও স্কুলের উচিত ঠিক-বেঠিক শিক্ষা দেওয়া।

এ মানুষগুলোর কাছে উচ্চশিক্ষার জগিট খুবই আলাদা। তাঁরা মনে করেন, উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রগুলো পাপাচারের আখড়া। অবিনাশ বলেন, ‘কলেজজীবন একেবারে আলাদা। ওখানে যা ইচ্ছা ঘটতে পারে। মেয়েরা যৌনতা সম্পর্কে সব জেনে যায়। একের পর এক ছেলে বদল করে।’

বানাওলিকার বলেন, ‘কিছু কিছু নারী টাকার জন্য এসব করে। ওরা ছেলেটাকে ব্যবহার করে, পরে ছুড়ে ফেলে দেয়। এ জন্য কিছু কিছু ছেলে প্রতিশোধ নেয় (ধর্ষণ করে)। ওদের যদি যৌনকর্ম করতে চায়, কেউ ঠেকাতে পারে না। যদি আপনি যৌনকর্মে লিপ্ত হতে না চান, লোকে বলবে আমি খোঁজা।’

ভারতে যাঁরা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী, তাঁদের জন্য এ আলোচনাটি আশঙ্কাজনক ও ভীতিকর। গত সপ্তাহে দেশটির লোকসভায় ধর্ষণবিরোধী আইন পাস হয়েছে। সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। নারীদের হয়রানি বা উত্ত্যক্ত করার জন্যও কড়া শাসনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ওই আইনে। তবে গোয়ার সমুদ্রতীরে কিছু ব্যক্তির সঙ্গে অবজারভারের আলাপে এতটুকু বোঝা গেছে, যাঁরা যৌন নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে প্রচার চালাচ্ছেন, তাঁদের জন্য খুব বেশি আশা নেই। অবিনাশ বলেন, ‘কিচ্ছু বদলাবে না। প্রতিদিন এসব হচ্ছে। তবু কিছু হবে না। দুনিয়াটা ধ্বংস হলে যদি কিছু হয়!’

বিষয়: বিবিধ

১০৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File