Hobby Letter
লিখেছেন লিখেছেন মেঘ বলেছে চৈত্রে যাব ০২ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:৪৭:৫১ দুপুর
আমি গ্রামের বাড়িতে থাকার সময় আমার এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমার দাদিজান কোন এক সময় গণশিক্ষা কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলেন। ওখানে নাকি উনি পড়াতেন। তবে সেটা বোধহয় আমার বুঝতে শিখার আগের ঘটনা ছিল। দাদি লেখাপড়া জানতেন বলে অনেকেই দাদিকে এক কাপ চা আর একটা পানের বিনিময়ে অনেক শিক্ষামুলক কাজ করিয়ে নিতেন। এই যেমন কাউকে চিঠি লিখে দেয়া, কারো চিঠি পড়ে দেয়া, জমির দলিলে আঁকা বাকা করে কাদের কাদের নাম লিখা আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রায় প্রতিদিনই কমপক্ষে যেকোন একটি কাজ করতে হত দাদিকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উনি চিঠি লিখে দেওয়া এবং পড়ে শুনানোর কাজটা করতেন। দাদির চিঠি লিখার ভাষা ছিল অসম্ভব ধরনের সুন্দর। সাধু ভাষায়ও লিখতেন আবার চলিত ভাষায়ও লিখতেন। উনার চিঠি লিখার ভাবটাও ছিল বেশ সুন্দর। এই যেমন এক গৃহবধু বিদেশে থাকা স্বামীকে চিঠি লিখছেন, ( ঠিক মনে নেই যদিও, তবে এমনই হবে ),
ওগো প্রাণনাথ,
লিপির শুরুতে আমার কদমবুচি গ্রহণ করিবেন। আপনার জন্যে রহিল এক ভূবন ভালোবাসা। আমরা সবাই ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন তা জানাইয়া চিন্তামুক্ত করিবেন।
..…… .… ..… ..…
ইতি,
আপনার ভালোবাসার কোহিনূর।
আরও অনেক আছে। দাদির যখন বয়স হয়ে গিয়েছিল আর ভালো ভাবে দেখতে এবং লিখতে পারে না তখন দাদি বলতেন আর অন্য কেউ তা লিপিবদ্ধ করত। আমিও বেশ কয়েকটা চিঠি লিখে দিয়েছিলাম শুনে শুনে। যদিও আমাকে ঘুষ দিতে হত লিখে দেওয়ার জন্যে। আমার দাবি থাকত, পেনশনে পাওয়া ব্যাংক থেকে তুলে আনা কচকচে সুগন্ধী টাকা। আর তা না হলে দাদির মুখের পান। ( মজা লিখে এমনকি বলেও বুঝাইতে পারব না)।
সেই থেকে শুরু। কারনে অকারনে আমি শুধু হাওয়াই চিঠি লিখি। কখনও রসবোধ সম্পন্ন চিঠি, কখনও বা নিটোল প্রেমের চিঠি আবার কখনও বা মর্মান্তিক বিয়োগাত্মক চিঠি। খাতার পাতাকে মধ্যখানে সমানভাবে ভাঁজ করে কেটে লাভ আকৃতি করে সেই লাভ পাতায়ও অনেক চিঠি লিখেছি। তবে চিঠি গুলো জমা করে রাখি না। নিজে লিখি, নিজে পড়ে নিজেই নষ্ট করে ফেলি। দাদির মত হয় না তো তাই। তবে আমি চিঠি লিখে যাব। চিঠি লিখার মাঝে একটা প্রশান্তি কাজ করে আমার মধ্যে। ডাকটিকেট সংগ্রহ করা যদি সখ হয়ে থাকে তাহলে চিঠি লিখাটাও আমার সখ।
ভালো থেক জগতের সব চিঠি। আর ভালো থাকুক চিঠির প্রেরক প্রাপকরা।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন