অতৃপ্ত জিজ্ঞাসা!!!

লিখেছেন লিখেছেন মেঘ বলেছে চৈত্রে যাব ২২ জুলাই, ২০১৩, ১২:২৫:৪৬ রাত

শফিকুল হায়দার সাহেব একজন ভাবুক মানুষ। কম কথার মানুষ হিসেবে নিজেকে জাহির করতে চান। পারেন না অনেক সময়। কারণ উনি যে জ্ঞান দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশাল ওস্তাদ। তাঁর আবার খিটখিটে মেজাজ। মিতব্যয়ী মানুষ। অপচয় করতে একদম পছন্দ করেন না। কিন্তু এই গুণটার আড়ালে উনি যে একজন কৃপণ, তা ওনার আশে পাশের মানুষরা খুব ভালো করেই জানে।

এই ভাবুক মানুষটির লেখালেখির অভ্যেস আছে। এই পর্যন্ত ওনার ১১টি বই বাজারে এসেছে। একটু ক্লাসিক্যাল ধরণের বই লিখেন। বই গুলো সহজেই বোঝা কঠিন। ভাষার মারপ্যাচে পাঠকদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন। ১১টি বইয়ের মধ্যে ৪টি বই খুব ভালো নাম করেছে। বাকি গুলো তেমন একটা চলে নি। সর্বশেষ যে বইটি প্রকাশিত হয়েছিল, ঐ বইটার অনেক গুলো কপি ওনার বাসায় পড়ে আছে। ইদানিং বাইরের কেউ ওনার সাথে কথা বলতে গেলেই তাকে জ্ঞান দেওয়া শেষে ঐ বই গুলোর এক্টা করে কপি করে ধরিয়ে দিচ্ছেন। আর বলছেন, পড়ে দেখুন/দেখবে/দেখিস, খুব চমৎকার একটা বই লিখেছি। কিন্তু পাঠকরা কেন জানি গ্রহণ করল না। পড়ে অবশ্যই মতামত দিবেন/দিবে/দিস।

দুই মেয়ে, এক ছেলে এবং স্ত্রী নিয়েই শফিকুল হায়দার সাহেবের সংসার। একটা বেসরকারি ব্যাংকে চাকুরি করতেন। এখন অবসরে আছেন। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন বৎসর পাঁচেক আগে। ছোট মেয়েটি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম থেকে পাশ করে বেরিয়েছে ২ বৎসর আগে। এখন একটা বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ডেস্ক রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছে। আর ওনার একমাত্র ছেলে বর্তমানে নটরডেম কলেজে অধ্যয়নরত। ওনার স্ত্রী পুরোদস্তুর গৃহিনী।

শফিকুল হায়দার সাহেব মুক্ত মনের মানুষ। কিন্তু ওনার মনটা অতটা বিশাল নয়। নিজের ছেলেমেয়েদেরকে মুক্তভাবে বাড়তে দিয়েছেন। যদিও ছেলেমেয়েরা মুক্ত চিন্তায় বেড়ে উঠেছে তবুও তাঁদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠায় একটু সমস্যা আছে। তাঁদের বাবা একটু কৃপণ স্বভাবের হওয়ায় তাঁদের অনেক চাহিদাই অপূর্ণ রয়ে গেছে।

শফিকুল সাহেব প্রচলিত কোন ধর্মই মানেন না। তাঁর বিশ্বাস এই সৃষ্টির পিছনে অতিপ্রাকৃতিক কোন কিছুরই হাত নেই। ঈশ্বর/আল্লাহ/গড এইগুলা বলতে কোন কিছুই নেই। এই জিনিষ গুলো সৃষ্টি হয়েছে মানুষের মুক্ত চিন্তাকে বন্দি করে রাখার জন্যে। উনি প্রায়ই বলেন, এখন হয় রাজনৈতিক ব্যবসা, রাজনৈতিক যুদ্ধ। বহুকাল আগে হত ধর্ম ব্যবসা, ধর্ম যুদ্ধ। এখন যেমন হাজার হাজার রাজনৈতিক দল। একেক দল চায় নিজেদের দলে বেশি লোক থাকুক। তেমনি আগেও ধর্ম ব্যবসায়ীরা চাইত নিজেদের ধর্মে বেশি লোক থাকুক। মারামারি কাটাকাটি করে এক ধর্মের লোককে আরেক ধর্মে নিয়ে আসাই ছিল তৎকালীন মানুষদের মূল চিন্তা।

তবে ওনার বিশ্বাস, ধর্ম মানুষকে শৃংখলিত করেছে। যে যত বেশি ধর্মের গন্ডির মধ্যে থাকবে, সে তত বেশি শৃংখলিত হবে। ধর্ম মানুষের পায়ে শিকল পড়িয়ে দেয়। আবার বিশ্বাস করেন, যে যত বেশি ধর্মভক্ত সে তত বেশি বিকৃত। তাঁর মস্তিষ্ক ধোলাই হয়ে গিয়েছে। এই ধর্মের জন্য সে যেকোন কিছুই করতে পারবে। এমনকি খুনও করতে দ্বিধাবোধ করবে না সে।

তিনি চান ধর্ম উঠে যাক সমাজ থেকে। ধর্ম উঠে গেলেই মানুষ চিন্তায় মুক্ত হতে শিখবে। আর চিন্তায় মুক্ত হলেই মানুষের পক্ষে ভালো গুণাবলির আধিক্য ঘটবে। এই জন্যে উনি চান বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি জোরদার করতে। ছাত্রছাত্রীদের ধর্ম শিক্ষার চাইতে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে। ধর্ম হইল বিশ্বাসের বিষয়। যা শুধুই কল্পনাতেই মানায়। আর বিজ্ঞান হল ব্যবহারিক বিষয়। এখানে সব কিছুই পরীক্ষালব্ধ। আর বাস্তবিক ব্যবহারিক জিনিষের কাছে অতিকাল্পনিক বিশ্বাস ঠুনকো! তাই জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দেওয়ার পক্ষে তিনি।

এইসব কথাগুলো বলে বেড়ান শফিকুল হায়দার সাহেব। যাঁকে পান তাঁকেই বুঝান। খাবার টেবিলে বসলে ছেলেমেয়েকে জ্ঞান দিতে থাকেন। এই নিয়ে ওনার স্ত্রী মহা বিরক্ত। ওনার ছেলেমেয়েরাই এখন ধর্মে বিশ্বাস করে না। কিছুদিন আগে ওনার নটরডেমিয়ান ছেলে অংক এই বিষয় নিয়ে ফ্রেন্ডদের সাথে তর্ক করতে গিয়ে মার খেয়ে এসেছিল। অংক তাঁর ফ্রেন্ডদের জিজ্ঞেশ করেছিল, আচ্ছা পৃথিবীতে তো হাজার হাজার ধর্ম, এবং প্রত্যেকটা ধর্মে একজন করে ঈশ্বর থাকে। তাহলে হাজার হাজার ধর্মের তো হাজার হাজার ঈশ্বর। তাহলে সব ঈশ্বররা কি ভাই ভাই?? আর ঈশ্বররা কি সব ছেলে!? কোন ধর্মে কি মেয়ে ঈশ্বর নাই!?

এই প্রশ্নগুলো নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে অংকের বন্ধুরা তাঁর নাক ফাটিয়ে দিয়েছে।

অংকের এই বেহাল অবস্থা দেখে শফিকুল হায়দার মোটেও চিন্তিত হন নি। বরং তিনি অংককে উৎসাহিত করেছিলেন।

শোন অংক, এই দেশ, এই সমাজ হল ধার্মিকদের জন্যে। এই দেশে থাকার অধিকার শুধু ধার্মিকদের। সব গুলো একেকটা নির্বোধ। জ্ঞান বুদ্ধি কিছুই নেই। মাথা খাটাতে জানে না। আবার কেউ মাথা খাটাতে চাইলেও তাকে সুযোগ দেবে না। সব দল বেঁধে আসবে মাথা কাটার জন্যে। তুই দুঃখ করিস না। শফিক সাহেব অংককে বোঝালেন।

অংক শুধু শুনে গেল।

শফিক সাহেবের স্ত্রী শফিক সাহেবকে লক্ষ্য করে বললেন, সব তোমার দোষ। তোমার জন্যে আজ এই অবস্থা হয়েছে ছেলেটার। আজীবন আমরা বাপ দাদার ধর্ম পালন করে এসছি। আর তুমি এসছ আমাদের মাথা খেতে। যত্তসব! নাস্তিক কোথাকার। কি ভুলে যে বাবা মা তোমার সাথে আমার বিয়ে দিলেন, এক উপরওয়ালাই যানেন।

এই নির্বোধ, মাথামোটা মেয়ে, এত উপরওয়ালা উপরওয়ালা করছ কেন? পারলে তোমার উপরওয়ালাকে নেমে এসে দেখা দিতে বল! শফিকুল সাহেব রেগে গিয়ে বললেন।

পাঁচ বৎসর আগের ঘটনা।

শফিকুল সাহেবের বড় মেয়ে রেখা বাসার কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে। রেখার মা এই নিয়ে বেশ চিন্তিত। কিন্তু শফিকুল সাহেব চিন্তিত না। যদিও মেয়ের প্রতি একটু রাগ হচ্ছিল তাঁর। তবুও মেয়ে যেহেতু অন্যায় করে ফেলেছে, কি আর করার, নিজের মেয়ে, ফেলে তো দেয়া যায় না। আর বেশি উচ্চবাচ্য করলে পাশের মানুষজন কি ভাববে। যদিও শফিক সাহেব মানুষজনকে কেয়ার করেন না। মেয়ের সাথে একান্তে কিছু কথা বলা দরকার তাঁর। মেয়েকে ডেকে পাঠালেন তিনি।

- না জানিয়ে বিয়ে করতে গেলি কেন?

- এছাড়া উপায় ছিল না কোন।

- উপায় ছিল না মানে?

- তুমিতো ধর্ম কর্ম কর না।

- আমি ধর্ম কর্ম করি না এতে তোর না জানিয়ে একা একা বিয়ে করার কী সম্পর্ক?

- আব্বু, তুমি আগে থেকেই চিন্তিত ছিলে যে আমাদের কোন রীতিতে বিয়ে দিবে। তুমি যেহেতু কোন ধর্ম মান না, তাই কোন ধর্মের রীতিতে তোমার মেয়েদের বিয়ে হোক তা চাইতে না। তাই আমি..…

- ঠিকই তো। বিয়ের আবার কিসের রীতি? ছেলে মেয়ে রাজি থাকলেই বিয়ে ওকে। শুধু ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশনটা করিয়ে নিলেই তো হয়।

- কিন্তু বাবা আমরা তো একটা সমাজে থাকি। যেই সমাজ ধর্মীয় রীতিতে চলে।

- রাখ তোর সমাজ। তুই যে না জানিয়ে একা একা বিয়ে করেছিস, এই খবর জানলে তোর সমাজ তোকে কোলে তুলে নাচবে? ছেড়ে দিবে না তোকে ওরা! এই সমাজের মানুষতো ভালোতে নেই, আছে খারাপের তালে। সব কটা গন্ড মূর্খ্য!

- আব্বু তুমি অযথাই রেগে যাচ্ছ।

- রাগব না। তুই বাবা হলে বুঝতিস।

- সরি আব্বু।

- তোদের বিয়ে কে পড়িয়েছে?

- কাজী।

- তার মানে তুই ইসলাম ধর্মীয় রীতিতে বিয়ে করেছিস?

- জ্বি আব্বু। তাছাড়া উপায় ছিল না।

- কেন খ্রিস্টান রীতিতি করলে কি সমস্যা হত? হিন্দু রীতিতেই বা কেন করিস নি?

- ঐ যে , আমাদের বাপ দাদারা ইসলাম ধর্মাবলম্বী। আর তোমার জামাইও।

- তোর যা ভালো মনে হয়েছে তুই তা করেছিস। যাআমাকে একটু একা থাকতে দে এখন।

- ঠিক আছে আব্বু। আমি তাহলে আসি।

রেখার বিয়েটা আর সামাজিকতার ছোঁয়া পায় নি। বিয়ের ঠিক দুই বৎসর পর তাঁর স্বামী তাকে ইংল্যান্ড নিয়ে যায়। এখন সেখানেই আছে।

আজ শফিকুল হায়দার সাহেব প্রচন্ড রেগে আছেন। তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে তিনি মেঝের পাপোষের দিকে তাকিয়ে আছেন। টেবিলের উপর থাকা পানির গ্লাসটাকে ছুড়ে ফেললেন মেঝের উপর।

সব গুলো গন্ড মূর্খ্য! এই সমাজে আমাদের ঠাঁই নেই। সব মূর্খ্য ধর্মবানদের। ধর্মে বিশ্বাস নেই যাঁদের তাঁরা কই যাবে? সরকারের উচিৎ একটা একটা পল্লী গড়ে তোলা। যেখানে শুধু ধর্ম বিশ্বাস হীণ মানুষরা থাকবে। এই নিয়ে পত্রিকায় একটা কলাম লিখতে হবে। আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। খুব চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথা গুলো বলতে লাগলেন তিনি।

শফিক সাহেবের স্ত্রী চা নিয়ে আসলেন।

- কী হয়েছে তোমার? এত চিল্লাইতেস কেন?

- কী আর হবে! আমার কপাল পুড়েছে আর কি!

- কী হয়েছে ঠীকঠাক করে বলত?

- মাথা খারাপ আছে। তুমি এখন চোখের সামনে থেকে যাও।

- থাক তুমি তোমার মাথা খারাপি নিয়ে।

- যাও যাও। নরকে যাও।

- নরকে তাহলে তোমার বিশ্বাস আছে??

- খামোখা কথা বাড়িও না তো!

শফিক শাহেবের স্ত্রী চলে গেলেন।

তাঁর মাথা খারাপ হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর ছোট মেয়ে বিন্দু। মেয়েটা বিবাহযোগ্য হয়েছে। একটা প্রাভেট টিভি চ্যানেলে ডেস্ক রিপোর্টারে চাকুরি করে। ভালো বেতন পায়। উপযুক্ত পাত্রের হাতে তাকে পাত্রস্থ করা দরকার। অনেক জায়গা থেকে অনেক পাত্র আসছে যদিও। কিন্তু শফিকুল হায়দার তাঁদেরকে পছন্দ করতে পারছেন না। সব গুলা গন্ড মূর্খ্যের দলে। বিন্দুর বিয়ের বিষয় নিয়ে পাশের বাড়ির এক লোক তাকে পথে ধরেছে। আর ঐ লোকের সাথে কথা কাটাকাটি করেই শফিক সাহেবের মাথা খারাপ হয়ে আছে।

আজ বিন্দুর বিয়ে।

শফিকুল হায়দার অনেক আনন্দিত। মেয়ের জন্যে উপযুক্ত একটা পাত্র পেয়েছেন তিনি। যদিও ছেলেটাকে বিন্দুই পছন্দ করেছে। নাম তাঁর স্পর্শ। সেও একটি প্রাইভেট টিভি চ্যানেলের ডেস্ক রিপোর্টার। ভালো ফটোগ্রাফারও। তাঁর চিত্রকর্ম নিয়ে কয়েকটা এগজিবিশনও হয়েছে। একটু সেকুলার মাইন্ডেড। মানবতার ধর্মে তাঁর অগাধ বিশ্বাস। তাছাড়াও কর্মকে সে বড় ধর্ম হিসেবেই মানে। যখন যা করে তাই তাঁর কর্ম, তাই তাঁর ধর্ম। হোক সেটা ভালো, হোক সেটা মন্দ। অদেখা জিনিষে তাঁর বিশ্বাস নেই। সেই সূত্রে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বেও নেই তাঁর বিশ্বাস। নিজেকে নাস্তিক বলে দাবি করে, আবার করেও না। বাপ দাদার পালিত ধর্ম অনুসারে সে ইসলাম ধর্মাবলম্বী। বাবা মায়ের অতি বাড়াবাড়ির কারনে ধর্ম নিয়ে তাঁর মনে অনেক গুলো প্রশ্ন জমেছিল। যেগুলোর উত্তর সে কখনোই কারো কাছে পায় নি। তাই ধর্মের উপর তাঁর আস্থা উঠে গেছে। মাঝে মাঝে যদিও জুম্মার ২ রাকাত ফরজ নামাজ পড়ে। আবার প্রতি বৎসর একটা দুইটা রোযাও রাখে! তবে প্রাণি হত্যার ঘোর বিরোধী হওয়ায় কোরবান ঈদটাকে সে বর্জন করে। আবার অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব গুলোতেও সে আনন্দ করে। এই ধর্মীয় উৎসব গুলোকে সে দেশীয় সংস্কৃতির অংশ হিসেবেই ভাবতে পছন্দ করে। এই বিষয় গুলো স্পর্শের সবচেয়ে ভালো দিক, অর্থাৎ সে ধর্মে বিশ্বাস করে না ভালো কথা, কিন্তু কোন ধর্মকেই সে অবমাননা করে না।

ঘর দোর অনেক সুন্দর করেই সাজিয়েছেন শফিকুল সাহেব।

সবকিছু নিজেই তদারকি করছেন। বড় মেয়েটার বিয়ে তিনি ওভাবে দিতে পারেন নি। তাই ছোট মেয়ের বিয়েতে কোন কিছুর কমতি করছেন না। অনেক অতিথি দাওয়াত দিয়েছেন তিনি। শফিকুল সাহেবের বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল সাহেব এসছেন। ছোট ভাই আমিনুল, বিখ্যাত অভিনেতা, তিনিও এসছেন। এরা দুইজনও সেকুলার মাইন্ডেড। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। ওনার বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল সাহেব তো টুপিওয়ালা, কিংবা দুতি পাঞ্জাবীওয়ালা দেখলেই ক্ষেপে যান। টিজ করেন।

একটা বৈপরিত্য কিন্তু ঘটে গিয়েছে! বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের জন্যে কাজী ডাকা হয়েছে। মুসলিম রীতিতেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই কাজটা বলতে গেলে বাধ্য হয়েই করেছেন শফিকুল সাহেব।

তিন কবুল বলার পরে কাজী সাহেব মোনাজাত ধরেছেন। সবাই হাত তুলেছে। সবাই যখন সমস্বরে আমীন বলে ডাক দিয়েছে, তখন শফিকুল সাহেবের বড় ভাই হো হো করে হেসে দিয়েছে!

আর বিন্দুর ছোট ভাই অংককে ইশারা করে বলল, কিছু বুঝলি? সব মূর্খ্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়!

বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ। সব অতিথিরাও বিদায় নিয়েছে।

শফিকুল হায়দার সাহেব বারান্দায় বসে আছেন। চেয়ারে হেলান দিতে দিতে ভাবতে লাগলেন, যেই বিষয়ে বিশ্বাস নেই, সেই জিনিষেই আমাকে ধরা দিতে হল! যাঁরা ধর্ম মানে না, তাঁদের জন্য বিবাহের কী রীতি হওয়া উচিৎ? ধর্ম মানেনা বলে অনেকে মৃত্যুর পর তাঁদের শেষকৃত্য কোন ধর্মের রীতিতে হোক, তা তাঁরা চান না। তাই বেঁচে থাকতেই নিজের শরীরকে কোন মেডিকেল কলেজে দান করে যান। মহানুভবতাই হোক আর মানবতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণের কারনেই হোক, যাই হোক, ধর্মের প্রতি তাঁদের বিশ্বাস না থাকায় তাঁরাএমনটি করে থাকেন। একজন মনে প্রাণে ধর্ম বিশ্বাসী কখনোই নিজের ডেড বডি মেডিকেল কলেজে দান করবেন না।

কিন্তু বিবাহের জন্যে কী রীতি হওয়া উচিৎ? সব ধর্ম অবিশ্বাসীরা বিয়ের সময় কোন না কোন ধর্মের রীতি মেনে ফেলছেন। তাহলে কি বিয়ে শব্দটাই বাদ দিতে হবে? না, না, তা কী করে হয়! একজন বাবা কখনোই তাঁর মেয়েকে বিবাহবহির্ভুত কোন সম্পর্কে ঠেলে দিতে পারবেন না। তাহলে কী করা যায়? ধর্ম অবিশ্বাসীরাও তাহলে কোন না কোন ভাবে ধর্মের শিকলে বন্দি? আমিও??

অনেক ভাবনাই ঘুরপাক খাচ্ছে শফিকুল হায়দার সাহেবের মাথায়।

প্রশ্ন গুলোর সমাধান হয়ত অনেক সহজ। কিন্তু সরল অংকের মতই অনেক ব্রাকেটে বন্দি হয়ে আছে।

একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ দু'টো বুঝলেন শফিকুল হায়দার।

[ কিছু জিজ্ঞাসা শুধু প্রশ্নবোধক চিহ্ন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। এগুলোর উত্তর হয় না কখনো।

আমি মনে করি ধর্ম হল সোজা বাংলায় আনুগত্য প্রকাশ করা। ধর্মে যা বলা আছে তার অনুগত হও। তাকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস কর। ধর্মের কলকব্জা নিয়ে প্রশ্ন আসছে মনে? চুপ থাকো। না হয় তুমি অবিশ্বাসী হয়ে যাবে। হয়্ত ভাবছ, চুপ করে থাকার চেয়ে অবিশ্বাসী হওয়া অনেক ভালো? তাহলে তুমি নরকে যাও। নরকেও বিশ্বাস নেই? তাহলে প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার জন্যে লাপাত্তা হও। তারপর বুঝবে নরক কী জিনিষ!]

[পুনশ্চঃ এতক্ষণ পর্যন্ত আমার লিখা সবচেয়ে বিরক্তিকর একটা গল্প পড়লেন আপনারা। এমন বিরক্তিকর গল্প আমি কিভাবে লিখলাম, নিজেরই বিশ্বাস হয় না। আমার এই বিরক্তিকর গল্প পড়িয়ে, আপনাদের মুল্যবান সময় নষ্ট করানোর জন্যে আন্তরিকভাবে দুঃখিত।]

বিষয়: বিবিধ

১৬৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File