মসুরের ডাল এবং কিছু স্মৃতিকথন!!!
লিখেছেন লিখেছেন মেঘ বলেছে চৈত্রে যাব ১৬ মে, ২০১৩, ০৯:২৩:০৯ রাত
মসুরের ডাল আমার অনেক পছন্দের খাবার। আমার মত অনেকরই হয়ত পছন্দের। প্রতিদিনের খাবারের পাতে ডাল না হলে অনেকের হয়ই না। আমারও না। যারা বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকেন তারা পছন্দ করেই হোক কিংবা অপছন্দ করেই হোক, মসুরের ডাল তাদের খেতেই হয়। একপ্রকারে তারা বাধ্য হয়েই খায় তাঁরা।
মসুরের ডাল আমার কিভাবে যে এত প্রিয় হল এখনও বুঝতেই পারি নি। তবে এই মসুরের ডাল নিয়ে আমার কিছু মজার এবং দুঃখের স্মৃতি আছে। এইরকম কয়েকটা ঘটনা আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করছি। আশা করি ভালো লাগবে।
ঘটনাঃ ১
তখন আমি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তাম।
আব্বু সরকারি চাকুরি করার সুবাদে রেশন পান। চাল, ডাল, গম, চিনি, তেল এগুলোই মুলতঃ বাসায় আনতেন। চালে প্রচুর গন্ধ থাকলেও অন্য উপাদান গুলো ভালোই থাকে। তবে চাল ডাল বাসায় আনার আগে আব্বু নমুনা নিয়ে আসতেন। আম্মা সায় দিলেই তবে বাসায় চাল ডাল আসত। এইরকম একবার আব্বু খবরের কাগজ মুড়িয়ে মসুরের ডাল এনেছিলেন। এনেই উনি আমাদের পড়ার টেবিলে রেখে ওয়াশ রূমে গিয়েছিলেন। এই ফাঁকে আমি কাগজ খুলে কিছু ডাল বের করে কাঁচাই চাপানো শুরু করছিলাম। ডাল খাওয়া অবস্থায় আব্বু এসে দেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু দেখে না দেখার ভান করেছিলেন। আব্বু অনেক রাগি এবং বদমেজাজী হলেও মাঝে মাঝে বেশ রসিকতা করতেন। আব্বু আম্মারে ডেকে এনে বললেন, কি জমানা আসছে দেখছ নি?
- কি হইছে?
- আরে বলিও না। ডাইল এইগুলা দেখ তো।
- ডাইল দেখার কি আছে?
- আরে এই ডাইল দু নাম্বার। আফ্রিকার জংগলে চাষ হয়।
- তো কি হইছে?
- আরে এই ডাইল আসল ডাইলের সাথে মিক্স করি বাজারে সাপ্লাই দেয়। আর এই ডাইল খাইলে মাইনষের ক্যান্সারের মত ভয়ানক রোগ হয়। তাও আবার রান্ধি খাইলে। কিন্তু কাঁচা খাইলে আরও বেশি সমস্যা হয়।
- কি সমস্যা হয়?
- কাঁচা খাওয়ার আধা ঘন্টার মইধ্যে মরি যাইবার সম্ভাবনাও থাকে।
- কি কও আবোল তাবোল।
- আরে হাচা কইতেছি। সেই জন্যেই তো তোমারে দেখাইতে আইনছি।
আম্মা আব্বুর কথা শুনার পর আমি তাড়াতাড়ি করে টেবিল থেকে উঠে গেছি। দৌড়ে ওয়াশ রূমে চলে গেছি। তারপর মুখের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে গার্গল করে বমি করছি। আম্মা বমির শব্দে ওয়াশ রূমের দিকে চলে আসেন। আমাকে বলেন, কি হইছে রে? আমি কাঁদো কাঁদো করে আম্মারে বলছি, আম্মা আমি তো ডাইল এগুলা কাঁচা চাবাই ফালাইছি! আম্মা হাসতে হাসতে বলেন, আরে তোর বাপ মিছা কথা কইছে। তুই উঠি আসার পর আমারে বলছে।
আমার মুখটা ভালোই ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিল সেইদিন।
ঘটনাঃ ২
এই ঘটানাতেও আমি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি।
আব্বু প্রতিদিন দুপুর বেলা বাসায় খাইতে আসতেন। আব্বুর অফিসের পাশেই আমাদের বাসা ছিল। আব্বু যখন দুপুর বেলায় খাইতে আসতেন তখন আমরা তিন ভাই বোন ঘুমের ভান ধরে পড়ে থাকতাম। আব্বু ভাত খেয়ে চলে যাওয়ার পরই চলে যেতাম ব্যাট বল নিয়ে খেলতে।
একদিন দুপুর বেলা আব্বু আসছে। আমরা তিন ভাই বোন শুয়ে আছি। কি কারনে আম্মা যেন আমার ছোট বোনকে ডাক দিছে। আমি ভাবছি আব্বু নিশ্চিত খাওয়ার কিছু আনছে। আমাদের দুই ভাইরে রেখে ছোট বোনকে খাওয়ানোর জন্য আম্মা ওরে ডাকতেছে। আমি ঘুম থেকে উঠে দিলাম দৌড়। হঠাৎ আম্মার হাতের সাথে বাড়ি খেয়ে আমি বিশাল এক চিৎকার দিলাম। স্টিলের বাটিতে থাকা এক বাটি টগবগে গরম ডাল আমার পিঠের উপর পড়ছে। সাথে সাথে আম্মা আমারে দিছে দুই তিন ঘা! আব্বু এসে আমারে টেনে হিঁচড়ে ওয়াশ রূমে নিয়ে গেলেন। টানা আধা ঘন্টারও বেশি আমার পিঠে ঠান্ডা পানি ঢালা হইছিল। এই যন্ত্রনা আমাকে ১৪ দিন বাসায় বসিয়ে রাখছিল। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আউট ডোর থেকে দেওয়া বার্নল ক্রিম আরও বেশি যন্ত্রনাদায়ক ছিল। ভাগ্যিস স্যান্ডো গেঞ্জি পড়া ছিল। তা না হলে আজও এই দাগ বহে বেড়াতে হত।
এই ঘটনার পর আমি অনেকদিন মসুরের ডাল খাই নাই। জলাতঙ্ক রোগী যেমন পানি খেতে পারে না। তেমনি আমিও ডাল দেখলে ভয় পেয়ে যেতাম। না পারতে কখনও খেয়ে ফেললেও পরে বমি করে ফেলে দিতাম।
ঘটনাঃ ৩
ইন্টারমিডিয়েটে আমি হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করেছি।
তখন ১ম বর্ষে পড়ি। রাতের খাবার খাওয়ার জন্যে ডাইনিং বয় ডেকে গিয়েছিল। আমরা রুমের সদস্যরা খাওয়ার জন্যে একসাথে বের হয়েছিলাম। ডাইনিংয়ে ভিড় ছিল প্রচুর। তাই ডাইনিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে পার্শ্ববর্তী রুমের বন্ধুদের সাথে গল্প করছিলাম। বেশ কিছুক্ষন গল্প করার পর ডাইনিংয়ে ঢুকার সুযোগ পেয়েছিলাম। তখনও অনেকে খাচ্ছিল। আমাদের ব্লকের এক বন্ধু ছিল ভাত খাওয়া শেষে ডাল খেত। ঐ দিনও দেখলাম সে ডাল খাচ্ছিল। ডাল খেতে খেতে হঠাৎ করে দেখি সে ইয়াক বলে চিৎকার দিয়ে উঠল। ঠিক ঐ সময়ই আমাদের ঐ রাতের হোস্টেল গার্ড টিচার ডাইনিংয়ে ঢুকেছিলেন। ( স্যাররাও আমাদের সাথে খাইতেন )। স্যার বললেন, কী হয়েছে?? ঐ বন্ধু জবাব দিল, '' স্যার, ডালের মধ্যে এইটা কী??" স্যার পরখ করে দেখলেন এবং ডাইনিংয়ের ম্যানেজারকে বললেন সব ডাল ফেলে দিতে। হোস্টেলের যাবতিয় রান্না বান্না আমাদের হোস্টেলের সামনের পুকুরের পানি দিয়ে সম্পাদন করা হত। ডাল রান্না করার জন্যে পুকুর থেকে বালতি বালতি পানি তুললে তো মাঝারি সাইজের একটা ব্যাঙ ও ডাল সমেত সিদ্ধ হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। ঐ বন্ধু ডালের মধ্যে একটা আস্ত সিদ্ধ হয়ে যাওয়া ব্যাঙ পেয়েছিল। এই ঘটনা নিজ চোখে দেখার পর বেশ কিছুদিন কোথাও ডাল খাইনি।
ঘটনাঃ ৪
এই ঘটনার সাথে হয়ত অনেকেই পরিচিত।
ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
একদিনে দুই পরীক্ষা ছিল। সকালের পরীক্ষা শেষ হয়েছিল ১২টার দিকে। দুপুরের খাবার খেতে আলাওল হলে গিয়েছিলাম এক ফ্রেন্ডের সাথে। টোকেন কেটে খেতে বসছি। আমি প্লেট ধুয়ে একটা ময়লা ফেলার বোলে পানি ফেলছি। পাশে বসা এক ভাই বললেন, আরে ভাই আপনি এইটা কি করলেন? আমি বললাম, কি ভাই?
- আরে আপনি ডালের বোলে হাত ধুয়ে পানি ফেলে দিয়েছেন।
আমার তো জিহ্বে কামড় পড়ল!
বিশ্বাস করেন আর নাই করেন আমার কাছে ডালকে ময়লা পানি বলেই মনে হয়েছিল। এই ধরনের ফালতু কালারের ডাল আমি আগে কখনও দেখি নাই। বিশ্বাস, এই ডালের চাইতে হাত ধোয়া পানি অনেক সুন্দর…
আরও ছোটখাটো অনেক ঘটনা আছে। সব গুলো পড়িয়ে আপনাদের কেবি খরচ করাতে চাই না।
এখনও আমি প্রচুর ডাল খাই। ব্যচেলর থাকি। কাজের খালাকে ডেইলী ডাল পাকাতে বলা হয়েছে। যদিও তেমন সুস্বাদু হয় না। মাঝে মধ্যে আমি নিজেই পাকিয়ে ফেলি। তবে ডাল খাওয়া কমিয়ে দিব ভাবছি। যত সমস্যা মেদে। আর মেদ গিয়ে আঘাত হানতেছে আমার ভূড়ির উপর।
ও শালার ভাই ভূড়ি,
উড়িয়ে দেব মেরে তুড়ি!
পেটটাকে বানিয়ে খাল,
রোজ খাব মসুরের ডাল!!! :p :p
বিষয়: বিবিধ
১৫৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন