গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বনাম ফ্যাসিবাদ

লিখেছেন লিখেছেন ব্লগ থেকে নাস্তিকদের প্রতিরোধ করুন ০৭ জুন, ২০১৩, ১২:৩৮:২৭ রাত



বিংশ শতাব্দীর শত কোটি মানুষের রক্তের বিনিময়ে বিশ্বব্যাপী অর্জিত হয় মুক্তির সোপাণ স্বরূপ গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। মানুষ স্বাধীনতা চায় মুক্ত থাকার জন্য, উন্নত জীবনের জন্য। আর উন্নত জীবনের জন্য প্রয়োজন সুশাসন ও নাগরিক অধিকার। আর সুশাসন ও নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য সবচেয়ে বড় হাতিয়ার স্বাধীন গণমাধ্যম। স্বাধীন গণমাধ্যম ছাড়া গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কল্পনাও করা যায় না। বর্তমান দুনিয়ার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সবচেয়ে অপরিহার্য অনুষঙ্গ হল গণমাধ্যম। দেশ, জাতি বা সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা গণমানুষের কাছে গুরুত্বের সাথে স্বীকৃত। সংবাদপত্রে প্রকাশিত নানান জনের নানান মতের আলোচনা-সমালোচনা ব্যক্তি তথা সমাজ এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখায়। গণতান্ত্রিক সমাজে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার স্বীকৃতির পথ বেয়েই সংবাদপত্রকে গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য বলে বিবেচনা করা হয়। অতএব গণমাধ্যমের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ কোনো দেশে ও সমাজে ভাল চোখে দেখা হয় না। অবশ্য প্রায় পৃথিবীর সব সরকারই রাজনৈতিকভাবে বলে যে তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। বরং গর্ব করে বলে যে তাদের সময় গণমাধ্যম সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে। কিন্তু বাংলাদেশে বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায় না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই অত্যন্ত ফ্যাসিবাদি কাঁয়দায় বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা আমার দেশ ও চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দেয়। সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে, পৈশাচিক কায়দায় গ্রেফতার করা হয় ‘সত্যপ্রকাশে আপোষহীন’ আমার দেশ এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমানকে। গ্রেফতারের পর জনাব মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডের নামে শারীরিকভাবে ব্যাপক জুলুম-নির্যাতন করা হয়। এরপর দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ে অবশ্য আবার তিনি মুক্ত হন এবং আমার দেশ চালু হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে সাম্প্রতিককালে সরকারের কিছু দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ আর এদেশের অধিকাংশ মানুষের পবিত্র ধর্ম ইসলামের পক্ষে অবস্থান করায় সরকারের অনেক মন্ত্রী, এম.পি তাঁকে প্রকাশ্যে হুমকি-ধুমকি দিতে শুরু করেন। শাহবাগের কথিত বিরিয়ানীর মঞ্চ থেকে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধের দাবি জানায় কতিপয় নাস্তিক। মন্ত্রী-এমপিদের প্রকাশ্য হুমকি আর এধরনের অযৌক্তিক দাবী সরকারের ভিন্নমত সহ্য না করতে পারারই পরিচয় বহন করে। মূলত এখান থেকে দেশের মানুষ গন্ধ পায় ফ্যাসিবাদের। আর এই ফ্যাসিবাদের ফল স্বরূপ আবার অত্যন্ত ঘৃণীত কায়দায় গ্রেফতার করা হয় মাহমুদুর রহমানকে এবং সেই সাথে আমার দেশ প্রেসে তল্লাশির নামে ব্যাপক ভাংচুর করে ছিলগালা করে দেওয়া হয়। যা দেখে দেশের স্বাধীনচেতা মানুষ বিস্ময়ে অবাক হয়ে যায়। যার প্রতিবাদ স্বরুপ গোটা দেশসহ বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশ থেকে আন্দোলন শুরু হয়। সেই সর্বোচ্চ এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের দাবানল এখনও দাউ দাউ করে জ্বলছে। মিডিয়ার উপরে এধরনের অন্যায় হস্তক্ষেপ নতুন কিছু নয়। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বপ্রথম মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্বের চূড়ান্ত ঘোষণা আসে। চারটি সরকার নিয়ন্ত্রীত সংবাদপত্র ছাড়া সমস্ত সংবাদপত্রের ডিকলারেশন বাতিল করা হয়। আবার এই ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগ ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরে মানুষের ধারণা ছিল তাদের পূর্বেকার সংবাদপত্র দখল, সাংবাদিক নির্যাতন এবং ভিন্নমত এর কন্ঠরোধ করার নীতি থেকে বেরিয়ে আসবে। নির্বাচনের পূর্বে আগের সকল অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রদর্শন করে ওয়াদা করেছিল যে তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে গণমাধ্যমের উপর কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না। যদিও নির্বাচিত হয়েই দলতি তাদের সেই পূর্বেকার ফ্যাসিবাদী চরিত্রের দিকে ফিরে গেল। যার ফল স্বরূপ ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ টাইমস, দৈনিক বাংলা, সাপ্তাহিক বিচিত্রা এবং আনন্দ বিচিত্রা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই পত্রিকাগুলো বন্ধের কারণ ছিল, এই চারটি পত্রিকাতে যারা কর্মরত ছিলেন তাদের প্রায় বেশির ভাগই ছিল জাতীয়বাদী আদর্শে বিশ্বাসী। ১৯৭৫,১৯৯৭ আর বর্তমান সময়কালে এই দলটি এইভাবে একটি গণতান্ত্রিক দেশে মিডিয়া বন্ধের মত এই ফ্যাসিবাদী কাজটি করতে একটুও চিন্তা করল না। একটি বারের জন্য মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা ভাবলনা। অবশ্য মরার উপর খাড়ার গাঁ হলো (বিশ্ব সংবাদ মাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিক মাধ্যম টুইটার এ প্রমাণিত) ৫ মের গণহত্যা কে আড়াল করার জন্য আবার দেশের জনপ্রিয় টিভি দিগন্ত আর ইসলামিক টিভি কে মধ্যরাতে বন্ধকরে দেওয়া হয় কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া। উল্লেখ্য এই দুইটি টিভি চ্যানেল ছাড়া অন্য প্রায় ২৩টি চ্যানেল কোননা কোন ভাবেই সরকারের সমর্থক বলে মানুষ মনে করে। অথচ গণতন্ত্রের মূল শর্ত হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং পরমত সহিষ্ণুতা এই দুটোর কোনটিই আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে বলে মানুষ মনে করে না। যেকোন ধরনের অভিযোগ এর ভিত্তিতে প্রেস কাউন্সিলে মামলা করা যেতে পারে। তা না করে সরকার সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করল । অযৌক্তিকভাবে কোন আইনের তোয়াক্কা না করে সরাসরি এই মিডিয়াগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। একটি বিষয় এখন সকলের কাছে সমাদৃত যে ভিন্নমত, স্বাধীন গণমাধ্যম এবং এই সরকার এক সাথে চলে না। আমরা সবাই জানি গণতন্ত্র আর বাকশাল বা ফ্যাসিবাদ একসাথে চলে না- চলতে পারে না । তাই দেশের সর্বস্তরের মানুষ মনেকরে আবিলম্বে এই সকল বন্ধ মিডিয়া খুলে দেওয়ার বিষয়ে সরকারকে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। অন্যথায় এইসব ফ্যাসিবাদী কাজের জন্য ভবিষ্যতে সরকারকে চরম খেসারত দিতে হতে পারে। অতএব আসুন আমরা সবাই শ্লোগান ধরি,

ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক- গণতন্ত্র মুক্তিপাক

ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক- মাহমুদুর রহমান মুক্তিপাক

বিষয়: বিবিধ

১৩২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File