কী অপরাধ শিবির ও শিবির সভাপতির???
লিখেছেন লিখেছেন ব্লগ থেকে নাস্তিকদের প্রতিরোধ করুন ২২ মে, ২০১৩, ০৫:১৭:০৬ বিকাল
৫০ দিনেরও বেশীদিন তাকে রিমান্ডে নিয়ে তাকে পৈশাচিক নির্যাতন করা হয়। তার পা ও হাতের নখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। চোখের মধ্যে আঙ্গুল দিয়ে চোখ নষ্ট করা হয়েছে। দিনরাত তার উপর অমানুষিক নির্যাতন করায় তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ইনজেকশন দিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে পুনরায় নির্যাতন করে পুলিশ! তার বুকে বুটের দাগ, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কালো হয়ে গেছে। অজ্ঞান অবস্থায় তাকে আদালেত হাজির করা হয়। এ দৃশ্য কেমন করে সহ্য করবে শিবিরের লক্ষ লক্ষ জনশক্তি!!
৩১ মার্চ। রাজধানীর শ্যামলীতে এক আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার পথে সাদা পোশাকের একদল পুলিশ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেধাবী ছাত্রনেতা মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে।
রিমান্ডের নামে নির্মম নির্যাতনে ছেলের জীবন এখন সংকটাপন্ন বলে দাবী করেছেন তার মা তৈয়বা খাতুন। ৮ এপ্রিল এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি দাবী করেন, ‘আমার ছেলে নির্দোষ। ছোটবেলা থেকে সে কখনও কোন ধরনের অন্যায় কাজের সাথে জড়িত না থাকলেও এই সরকারের নির্দেশে তাকে মিথ্যা মামলায় আটক করে নির্যাতন চালানো হচ্ছে।’ তিনি দাবী করেন, ‘আমার ছেলে নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, নিয়মিত কুরআন ও হাদীস অধ্যয়ন করে। নামাজ পড়া, কুরআন হাদীস পড়া কী অপরাধ? তাকে যে অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন শুধু নয় বানোয়াট এবং হয়রানিমূলক।’
ফেসবুকে কেন্দ্রীয় সভাপতির একান্ত প্রিয় জাকিউল ইসলামের স্ট্যাটাস পড়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। চোখের পানি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তিনি লিখেছেন: ‘সিএমএম কোর্টে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না। কেন্দ্রীয় সভাপতির গর্বিত মা কোর্টে দেলাওয়ার হোসেন ভাইকে দেখে বলেন, আমি কেন্দ্রীয় সভাপতির মা, আমি কেন্দ্রীয় সভাপতির মা, আমি কেন্দ্রীয় সভাপতির মা। তুমি কোন দোষ করোনি, আমি ধৈর্য ধারণ করেছি। তুমি ধৈর্য ধারণ করো। আল্লাহ তোমার সাথে আছেন। তার চোখে পানি এবং আইনজীবি সহ সকলকেই কাঁদতে দেখা যায় কোর্টে। তখন কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, আমি খাব্বাব, খুবাইব (রা এর নির্যাতনের কাহিনী পড়েছি। এখন আমি সহ আমাদের ভাইয়েরা এই পরীক্ষা দিচ্ছে। আমার জন্য চিন্তা করো না।’
দেশের মানুষ আজ ভালো নেই। একটি কঠিন সময় পার করছে আমাদের প্রিয় এই জন্মভূমি। চারিদিকে অশান্তি। অস্থিতিশীল গোটা জনপদ। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি-সংঘাতের কবলে প্রতি মুহুর্তে ভারাক্রান্ত আপামর জনতা। বিশেষ করে ইসলাম প্রিয় জনতা আজ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যারাই ইসলামের পক্ষে সুদৃঢ় অবস্থান নিচ্ছেন, নানাভাবে সবাই বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছেন, ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতায় সরকারের রোষানলে পড়েছে মেধাবীদের প্রিয় সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির।
১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্র“য়ারী শিবিরের প্রতিষ্ঠা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে এই সংগঠনটি। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরীর মহান ভিশন নিয়ে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে তারা। ইতিমধ্যে মেধা ও নৈতিকতার সমন্বয়ে একদল যোগ্য, দক্ষ ও চরিত্রবান লোক তৈরী করতে তারা সক্ষম হয়েছে ।
কথা ও কাজের অসাধারণ প্রতিফলনে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের আপামর ছাত্রজনতার হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে ছাত্রশিবির। সারাদেশে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে যখন হাজারো প্রশ্ন, সেই জায়গায় ছাত্রশিবির আগামী দিনে দেশ ও জাতির কল্যাণে একদল আদর্শ নেতৃত্ব গড়ে তুলতে অনবদ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে।
যাদের মাঝে আল্লাহ ও রাসূল (সা এর প্রতি আনুগত্য, খোদাভীতি, আদর্শের সঠিক জ্ঞানের পরিসর, সাংগঠনিক প্রজ্ঞা, শৃঙ্খলা বিধানের যোগ্যতা, মানসিক ভারসাম্য, উদ্ভাবনী ও বিশ্লেষণী শক্তি, কর্মের দৃঢ়তা, অনঢ় মনোবল এবং আমানতদারিতার মতো গুণাবলী আছে, তারাই এ সংগঠনের নেতৃত্বের উপযুক্ত হিসেবে স্বীকৃতি পায়। সরকারের উচিৎ ছিলো, এই ধরনের একটি সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা করা। অথচ দেখা যাচ্ছে যে, এরাই আজ সরকারের রোষানলে! তাদের শেষ করার পরিকল্পনা করছে সরকার। তাদের থামিয়ে দিতে পারলেই যেন সরকার সফলতা পাবে!
প্রতিষ্টালগ্ন থেকেই বাঁধার পাহাড় মাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ছাত্রশিবির। শত বাঁধা বিপত্তি সত্ত্বেও থেমে যায়নি এ কাফেলা। দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী শাহাদাত বরণ করেছেন। অসংখ্য অগণিত নেতা-কর্মীরা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। দিনের পর দিন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে সময় কাটাচ্ছেন হাজারো জনশক্তি। বিশেষ করে এই মুহুর্তে কারাগারে আছেন অসংখ্য কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল। কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্যদের মধ্যে কারাগারে আছেন কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আতিকুর রহমান, শামছুল আলম গোলাপ, আবু সালেহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, দেলাওয়ার হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান আশু ও সাজ্জাদ হোসাইন।
২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী ফারুক হত্যাকান্ডের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার করা হয় শামছুল আলম গোলাপ ভাইকে। ৩টি বছর থেকে তিনি কারারুদ্ধ। রিমান্ডে নিয়ে তাকে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আমার প্রিয় বন্ধু ইয়াহইয়াকে গ্রেফতার করার পর নির্মম নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে তার এক হাতের হাড্ডি ভেঙ্গে যায়। একইভাবে নির্যাতনের শিকার ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সভাপতি প্রিয় ভাই সাজ্জাদ হোসাইন।
আমার প্রিয় বন্ধু আ.স.ম. ইয়াহইয়া। ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে আলিম পর্যন্ত এক সাথে পড়াশুনা করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্র সে। গ্রেফতার হওয়ার পর আমার ক’জন বন্ধু তার বাড়িতে গিয়েছিলাম, তার পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেয়ার জন্য। কিন্তু সান্ত্বনার বাণী আমাদের কাছে নেই। কী বলে তাদের সন্তোষ্ট করবো! মায়ের বুক ফাটা আর্তনাদ আর বোনদের আহাজারি যেন আকাশ বাতাস ভারি করে তুলেছিলো!!
‘হতাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না, তোমরাই জয়ী হবে, যদি তোমরা মু’মীন হও।’ (সূরা আলে ইমরান: ১৩৯) তাই শত কষ্টের মাঝেও আমরা হতাশ হতে চাই না। সত্য, শান্তি আর মুক্তির পথে এগিয়ে যেতে চাইলে বাঁধা বিপত্তি আসবেই। কুরআন ও হাদীসের আলোকে জীবন-যাপন করতে চাইলে ব্যথা বেদনা সহ্য করতে হবে। আদম (আ থেকে শুরু করে বিশ্বনবী (সা পর্যন্ত যত নবী রাসূল পৃথিবীতে এসেছিলেন, সবাই আল্লাহর গোলামীর দিকে আহবান করতে গিয়ে বাঁধাগ্রস্থ হয়েছেন। কেয়ামত পর্যন্ত এ পথে যারাই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে, তাদেরকে কন্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিতে হবে। কেননা, এই পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়।
হে আল্লাহ! এ দেশের দিকভ্রান্ত ছাত্রসমাজের আশার আলো, মুক্তির ঠিকানা ইসলামী ছাত্রশিবিরকে সাহায্য কর। শিবির সভাপতি মেধাবী ছাত্রনেতা দেলাওয়ার হুসাইনকে হেফাজত কর, সুস্থ কর, জালিমের জুলুম থেকে মুক্ত কর;আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দাও। সত্য পথের যাত্রীদের প্রতি রহম করো। দৃঢ় ঈমান, সাহসীকতা ও বুদ্ধিমত্তার সমন্বয়ে পথ চলার সুযোগ দাও। সবরের যোগ্যতা দাও। তোমার সন্তোষ অর্জনের জন্য উপযুক্ত করো। আমীন ॥
বিষয়: বিবিধ
১৬৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন