স্বদেশীর ওপর গণহত্যা
লিখেছেন লিখেছেন ব্লগ থেকে নাস্তিকদের প্রতিরোধ করুন ২১ মে, ২০১৩, ০৩:০৫:৪২ দুপুর
বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই হতভাগা ও অসহায়। সবাই আজ নির্মম-নির্যাতন ও জুলুমের শিকার। সমাজে দলে দলে, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে চলছে এক অবিরাম সংগ্রাম। চারদিকে শুধু শাসকের হুঙ্কার আর শাসিতের আর্তচিত্কার। জাতি আজ পথহারা ও মতহারা মানুষ চিত্কার করে বলছে আমরা বাঁচতে চাই। নির্যাতিত-নিষ্পেষিত জুলুমের স্বীকার মানুষের চোখের পানিও যেন শুকিয়ে গেছে। কিন্তু রয়ে গেছে শুধু হাহাকার আর অন্তঃক্রন্দন। স্বদেশীদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে জুলুম-নির্যাতনের নতুন এক জঘন্য ইতিহাস সৃষ্টি করল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার। দিনবদলের মতো স্লোগানে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই শুরু করে দিল নিজ দলের নেতাকর্মীদের ভাগ্য বদলের কাজ। ভিনদেশী একটি রাষ্ট্রের চাপে নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীর বিচার যুক্ত করলেও আসল ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে বাদ দিয়ে নিরপরাধ ইসলামি নেতাদের গ্রেফতার করে। বিচারের নামে সেই প্রহসনের (বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের ভাষায়) নাটকের দ্বিতীয় রায় দেয়ার পর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দলবাজ মিডিয়ার বদৌলতে আর নাস্তিকদের মিলনমেলা বসে শাহবাগে। অবশ্যই অনেকে সেই শাহবাগকে বিরিয়ানির মঞ্চ বলে আবার কেউবা পিকনিকের স্পট বলেও আখ্যায়িত করেছেন। এই তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ধর্মভিত্তিক দল বন্ধের আওয়াজ তোলা হয়। তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের নায়েকরা আগে থেকে ইসলাম, হজরত মোহাম্মদের (সা.) চরিত্র নিয়ে নানা বিষোদ্গার চালিয়ে যায়। তথাকথিত গণজাগরণ করে সেই বিদ্বেষের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়া হয়। শাহবাগি নাস্তিকদের এই বিদ্বেষের বিরুদ্ধে জেগে উঠল ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ তীব্র প্রতিবাদে কেঁপে উঠল। শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ আলেমেদ্বীন আল্লামা শাহ আহমেদ শফীর (দা. বা.) নেতৃত্বে সারা দেশের আলেম সমাজ, মুসলিম যুবসমাজ, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাসহ সর্বস্তরের মানুষ জেগে উঠল। গ্রাম-গঞ্জে, শহর-বন্দরে, পাড়া-মহল্লায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটাই দাবি নাস্তিকদের শাস্তি আর ১৩ দফার বাস্তবায়ন। সব দলের, সব মতের মানুষ একত্রিত হলো। সবাই ঐক্যবদ্ধ হলো বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামের ছায়াতলে। হেফাজতে ইসলামের আহ্বানে রাসুল (সা.)-এর শানে দেশের প্রায় ১৬ কোটি মুসলমান সাড়া দিয়ে হাজার বছরের সর্ববৃহত্ লংমার্চ সফল করে এক ইতিহাস সৃষ্টি করল। সরকার হেফাজতের ১৩ দফার দাবিগুলো যৌক্তিক হলে মেনে নেয়ার আশ্বাস দিল। প্রধানমন্ত্রী বলল, তাদের অনেক দাবি এরই মধ্যে পূরণ করা হয়েছে। হেফাজতও সরকারকে এক মাসের সময় দিল। দেশের মুসলমানদের আশা ছিল এর মধ্যে সরকার ১৩ দফা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিবে। তা না করে উল্টো সরকার নানা হুমকি-ধামকি দিয়ে হেফাজতের এই কোটি কোটি মুসলমানের যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করে নানা ভয়ভীতি আর গ্রেফতার করে এই আন্দোলনকে নিস্তব্ধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকার তা পারেনি। সর্বস্তরের জনগণ ঈমানি চেতনা নিয়ে ৫ মে শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকা অবরোধ করে ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের উদাত্ত আহ্বান জানাল। দেশের কোটি কোটি মুসলমান যোগ দিল। ছয়টি পয়েন্টে সর্বোচ্চ শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধের পর নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষ এসেছিল ঢাকার শাপলা চত্বরে। কিন্তু দুপুর ১২টার পর থেকে পল্টন মোড় থেকে সরাসরি হেফাজতের নিরস্ত্র, নিরীহ কর্মীদের ওপর গুলি চালানো শুরু করল ফ্যাসিস্ট সরকারের পুলিশ বাহিনী। মুহুর্মুহু টিয়ারশেল, রাবার বুলেট আর সাউন্ড গ্রেনেডের আওয়াজে চতুর্দিক প্রকম্পিত হতে লাগল। আশ্চর্যের বিষয় হলো এত কিছুর মাঝেও শাপলা চত্বরে চলল হেফাজতের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ। তা দেখে বোঝার উপায় নে, আশপাশে এত সংঘর্ষ চলছে। বিকাল ঘনিয়ে সন্ধ্যা হলো তবুও নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ একটি মুহূর্তের জন্যও বন্ধ করল না। সন্ধ্যায় ঘোষণা এল ‘একদল সাদা পোশাকধারী পুলিশ আল্লামা শাহ আহমেদ শফি সাহেবকে সমাবেশে আসতে বাধা দিচ্ছে। শফি সাহেবের কাছ থেকে নির্দেশ এল রাতে শাপলা চত্বরে জিকিরের সঙ্গে সঙ্গে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের। একদিকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা জিকিরে মশগুল আর অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট পুলিশ বাহিনী একের পর এক মারণাস্ত্র ব্যবহার করে যাচ্ছে। রাত বাড়ার পরপরই শান্তিপূর্ণ অবস্থানকারীদের ওপর গণহত্যা চালাতে শুরু হলো সব আয়োজন। প্রথম বিদ্যুত্ বিচ্ছিন্ন করে লাইট বন্ধ করে দেয়া হলো। তারপর গভীর জিকিরে মশগুল ও ঘুমন্ত মানুষের ওপর শুরু করল ইতিহাসের বর্বরতম আক্রমণ। বৃষ্টির মতো গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হাজার হাজার তৌহিদি জনতাকে শহীদ করল বর্তমান পুলিশ বাহিনী। পত্র-পত্রিকা আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসে ৫ মে’র সেই হৃদয়বিদারক কাহিনী। স্বদেশী জনগণের ওপর বর্বর পুলিশের এমন আক্রমণ দেখে শিহরে উঠে শরীর। নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। চারদিকে ধর্মপ্রাণ মানুষের লাশের মিছিল, শহীদ পথযাত্রীদের আর্তনাদ, হাহাকারে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠল। বাঙালির জাতির ইতিহাসের আরেকটি ২৫ মার্চের অবতারণা হলো। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। আর ২০১৩ সালের ৫ মে গণহত্যা চালাল নিজ দেশের ঘাতক বাহিনী।
ফ্যাসিস্ট সরকারের এই বর্বরতম হত্যাকাণ্ড একদিন স্বাধীন বাংলাদেশে দেখতে হবে, তা ভাবতে পারেনি এদেশের মানুষ। তবে এটুকু জানি, ‘পাপ নাকি বাপকেও ছাড়ে না’। ইতিহাস সাক্ষী খুনিরা কখনও ছাড় পায় না। ৫ মে’র ঘাতকদের একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে এদেশের জনগণ। নির্মূল হবে ফ্যাসিবাদ। ধর্মপ্রাণ মানুষ ফিরে পাবে তার স্বাধীনতা, স্বকীয়তা। জয় হবে সত্যের। জয় হবে ইসলামের।
বিষয়: বিবিধ
১৬১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন