মুগ্ধতা ও অনুপ্রেরণার গল্প

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব ১৯ জুন, ২০১৪, ০৯:২৯:৩৮ রাত

॥ ১ ॥

আল-কুরআনের গল্প দিয়েই আজকের আসর শুরু করা যাক।

পড়ছিলাম সূরা আন-নূর, ‘আত-তাফসীর আত-তাবারী’ থেকে। এখান থেকে আজ একটি অনুপ্রেরণার গল্প শোনাবো। রেডি?

চলুন, তার আগে আমরা গল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট দুটো আয়াহ এক নজরে দেখে নেই?

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوابُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَاذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ (27) فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا فِيهَا أَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوهَاحَتَّى يُؤْذَنَ لَكُمْ وَإِنْ قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَى لَكُمْوَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ (28)

“হে মু’মিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে প্রবেশ করো না, যে পর্যন্ত আলাপ-পরিচয় না কর এবং গৃহবাসীদের সালাম প্রদান না কর। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম, যদি স্মরণ রাখ। যদি গৃহে কাওকে না পাও, তবে অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করো না। যদি তোমাদের বলা হয় ফিরে যাও, তবে ফিরে যেও। এতে তোমাদের জন্যে অনেক পবিত্রতা আছে এবং তোমরা যা কর, আল্লাহ তা ভালোভাবে জানেন।” (২৭, ২৮)


এবার গল্পে আসি।

একজন মুহাজির সাহাবী। আল-কুরআনের প্রতি ছিলো তাঁর অনুপম ভালোবাসা। সে ভালোবাসা আবার আমাদের মতো মৌখিক দাবীতে সীমাবদ্ধ নয়। গভীর ভালোবাসতেন আল-কুরআনকে। এ যে প্রিয়তম মালিকের পক্ষ থেকে দেয়া উপহার! তিনি বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন পরম মমতায়।

কেমন ছিলো সেই ভালোবাসা? সিদ্ধান্ত নিলেন, আল-কুরআন থেকে একটু একটু করে ঐশী নির্দেশনা জানবেন। আর জানা অংশটুকুর যথাসাধ্য প্রতিফলন ঘটাবেন প্রতিদিনের যাপিত জীবনে।

আল্লাহর উপর ভরসা রেখে নেমে গেলেন মিশনে। শুরু হলো কুরআনের সাথে পথচলা। একটি দু’টি করে অর্জিত আল-কুরআনের ‘ইলমের ‘আমালে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন।

আমরা যে আয়াহ দুটো লক্ষ্য করেছি, এবার তিনি সেই অংশে এলেন। জানলেন। এবার তো মানতে হয়!

যথারীতি ‘আমাল শুরু হলো। পরিচিত-অপরিচিত অনেকের দুয়ারে গেলেন। অনুমতি নিলেন, সালাম বিনিময় করলেন। অতঃপর তাদের গৃহে প্রবেশ করলেন। কোথাও আবার অনুমতি না পেলে ফিরে এলেন।

ব্যস, প্রথম আয়াহ’র উপর ‘আমাল হয়ে গেলো। তিনি অত্যন্ত খুশি। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন।

কিন্তু দ্বিতীয় আয়াহ?

“যদি তোমাদের বলা হয় ‘ফিরে যাও’, তাহলে ফিরে যেও।”

বিপত্তি এখানেই। তাঁকে যে কেউ ফিরে যেতে বলছে না! দীর্ঘ প্রতীক্ষা তাঁর। এ বাড়ি ও বাড়ি অনেক বাড়ি গেলেন। কিন্তু কেউ তাঁকে ফেরার কথা বলেন না।

তাঁর মনেও এতটুকু শান্তি নেই। আল-কুরআনের একটি আয়াহ তবে কি তিনি ‘আমাল করতে পারবেন না? অস্বস্তি আর অতৃপ্তি... বুকে কেবল একটি আয়াহ’র ‘আমালের তৃষ্ণা...

তারপর থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি চাতকের মতো প্রতীক্ষার প্রহর গুণেছিলেন, কখন সে সুবর্ণ সুযোগটি আসবে তাঁর...!

নাহ, আসে নি। পারেন নি। অতৃপ্তই রইলেন। কিন্তু জান্নাতুল ফিরদাউসের অনন্ত তৃপ্তিটা নিশ্চিত করে নিলেন নিজের জন্যে!

॥ ২ ॥

আহমাদ ইবন হাম্বাল (রহিমাহুল্লাহ)। কে তিনি? বলতে পারলেন না? আরে ওই যে, ‘মুসনাদ আহমাদ’ এর সংকলক যিনি! এইবার মনে পড়লো তো? এটি প্রসিদ্ধ হাদিসগ্রন্থগুলোর একটি।

সে এক বিস্ময়মানব ছিলেন তিনি! প্রিয়নবীকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভালোবাসতেন। অসম্ভব ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন তাঁর বাণী, আল-হাদীসকেও!

বিস্ময়মানব কেনো বললাম? তিনি কী করতেন জানেন, যে কোন হাদীস নিজে একবার ‘আমাল করা ব্যতীত তিনি তাঁর গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করতেন না! আমার কাছে যে সফটকপি আছে, তাতে মোট হাদীস সংখ্যা ২৭,৬৭৭টি! চিন্তা করা যায়!!?

বিশ্বাস হয়? তিনি নিজেই বলছেন, এমনকি একবার একটি হাদিস সামনে এলো; যেখানে জানতে পারলেন প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অসুস্থতার কারণে শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন এবং শিঙ্গা লাগানো ব্যক্তিটিকে পারিশ্রমিক হিসেবে এক দিনার প্রদান করেছিলেন।

ওহ! অনেকে আবার ভাবছেন, এটা আবার কী? এটা প্রাচীন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। শিঙ্গা লাগিয়ে শরীর থেকে দূষিত রক্তগুলো বের করে আনা হতো।

এবার দেখুন তাঁর কাণ্ড! তাঁর কোন অসুস্থতা নেই, বরং পরিপূর্ণ সুস্থ তিনি। সুতরাং শিঙ্গা লাগানোরও প্রয়োজন নেই! অথচ কেবল হাদিসটির উপর ‘আমাল করার স্বার্থে নিজে শিঙ্গা লাগালেন, ঐ ব্যক্তিকে এক দিনার হাতে তুলে দিলেন। তারপর একটি হাদিসের উপর ‘আমাল করে তৃপ্ত হলেন। অনন্য ভালো লাগায় আন্দোলিত হলেন।

॥ ৩ ॥

অনুভবে কান পেতে শুনুন তো, গল্প দু’টো আপনাকে কিছু বলতে চায় কি না!

যদি শুনে থাকেন, আমি কিন্তু বুঝে ফেলেছি আপনি ইতোমধ্যে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন!

তবে হ্যাঁ, আপনার সিদ্ধান্তের সাথে সাথে আল্লাহর সাহায্যও কিন্তু প্রয়োজন! কিন্তু কিভাবে? চিন্তার কারণ নেই, আমাদের দ্বিতীয় গল্পে বর্ণিত হাদিসগ্রন্থে রয়েছে চমৎকার সমাধান।

প্রিয় নবীজি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাতুল ফাজর-এর পর এই দু’আটি করতেন:



اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا ، وَرِزْقًا طَيِّبًا ، وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً.

“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি উপকারী ‘ইলম, পবিত্র জীবিকা এবং (আপনার কাছে) গ্রহণীয় ‘আমাল।”



আপনার স্মৃতিশক্তিরও এক পশলা পরীক্ষা হয়ে যাক! দেখুন তো দু’আটি মুখস্থ করতে কতক্ষণ লাগে আপনার? মুখস্থ হবার পর জানাবেন কিন্ত!

[আরবি ফন্ট এখানে স্পষ্ট দেখা না গেলে কমেন্ট বক্সে একটি ইমেজ দেওয়া হয়েছে, ওখানে দেখে নিন।]

ব্যস!

আল্লাহর হাতে তুলে দিলেন আপনার বাসনাটিকে, দিনের শুরুতেই!

দেখবেন, দিন শেষে কী এক জান্নাতী আবেশে মন-প্রাণ ভরে যাচ্ছে...!

আত্মতৃপ্তির আনন্দে উদ্বেলিত হৃদয়ে প্রশান্তির ঢেউ খেলে যাচ্ছে...!

বদলে যাবার, বদলে দেবার অনুপ্রেরণায় সিক্ত হচ্ছেন আপনি...!

বিষয়: বিবিধ

১৬৯২ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

236599
১৯ জুন ২০১৪ রাত ০৯:৩০
236603
১৯ জুন ২০১৪ রাত ০৯:৩৫
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : ভালো লাগলো পড়ে। মনে এক ধরনের প্রশান্তি পাচ্ছি। Rose Rose
২৩ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৮
184508
আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ! শুকরিয়া ভাইয়া। Good Luck
236609
১৯ জুন ২০১৪ রাত ১০:০১
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৩ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৮
184509
আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও। দু'আ করবেন। Good Luck
236610
১৯ জুন ২০১৪ রাত ১০:১১
ফেরারী মন লিখেছেন : জাজাকাল্লা খায়র...
২৩ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৮
184510
আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব লিখেছেন : ওয়া ইয়্যাক Good Luck
236642
২০ জুন ২০১৪ রাত ১২:১৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : You are right. I am really pleased to read it. Janakallah khairan.
২৩ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৯
184511
আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব লিখেছেন : ওয়া ইয়্যাক Good Luck
236693
২০ জুন ২০১৪ সকাল ০৫:৫৫
লেখার আকাশ লিখেছেন : শিঙ্গা লাগানোকে এখানে কাপিং বলে। যদিও কাটা-ছিড়াকে ভয় লাগে তবু রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাহ ভেবে করিয়েছি। আল্লাহ পাক দয়া করে এটি কবুল করুন। বুখারী শরিফের হাদিসে আছে মি'রাজের সময় প্রতি আসমান থেকে ফেরেশতারা মুসলিম উম্মাহর জন্য শিঙ্গা প্রেসক্রাইব করেছেন সব ধরনের রোগের উপশমকারি হিসাবে। অনেক ভাল লাগল লেখাটি।
২৩ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৯
184512
আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব লিখেছেন : শুকরিয়া ভাইয়া। দু'আ করবেন। Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File