আবু দাউদ শরীফের একটি হাদীস এবং আমার ছোট্ট ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন সোহাগী ২১ মার্চ, ২০১৩, ১২:৫১:২৬ দুপুর
হাদীস শরীফে এসেছে, হুজুর (সাঃ) তার বিভিন্ন সাহাবীর অবস্থা জানার জন্য কখনো কখনো রাত্রিবেলায় বের হতেন। কে কী করছে, তিনি তা পর্যবেক্ষন করতেন। একবার তিনি বের হলেন তাহাজ্জুদের সময়। বের হয়ে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) এর বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন দেখলেন, হযরত আবু বকর একেবারে কাতরভাবে মিনতিস্বরে, মৃদুকন্ঠে তাহাজ্জুদের মাঝে তেলাওয়াত রত। তিনি আরেকটু অগ্রসর হলেন এবং হযরত ওমর (রাঃ) কে দেখলেন। তিনি খুবই উচ্চস্বরে তাহাজ্জুদের মাঝে তেলাওয়াত করছিলেন। তার তেলাওয়াতের ধ্বনি বাহিরে পর্যন্ত শোনা যাচিছল। যাক, হুজুর (সাঃ) উভয়ের এই অবস্থা দেখার পর ফিরে এলেন।
তারপর তিনি তাদের উভয়কে ডাকলেন এবং সর্বপ্রথম সিদ্দীকে আকবর (রাঃ) কে বললেন, আজ রাতে তাহাজ্জুদের সময় আপনার বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম যে, আপনি খুবই মৃদুকন্ঠে তাহাজ্জুদের নামাযে তেলাওয়াত করছিলেন, তো এত নিুস্বরে তেলাওয়াত করছিলেন কেন? উত্তরে সিদ্দীকে আকবর (রাঃ) খুব সুন্দর একটি কথা বললেন। তিনি বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! যে সত্তার নিকট আমি প্রার্থনা করছিলাম, যার সাথে আমার সম্পর্ক গড়েছিলাম, আমি যাকে আমার প্রার্থনা শোনাতে চাচ্ছিলাম, তাকে তো শুনিয়ে দিয়েছি। সুতরাং আওয়াজ উচুঁ করার কিই বা প্রয়োজন? এজন্য আমি মৃদুকন্ঠে তেলাওয়াত করছিলাম।
অতঃপর তিনি ফারূকে আ’যম (রাঃ) কে তার উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করার কারন জিজ্ঞেস করলেন। তিনি উত্তর দিলেন - আমার উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করার কারন, মানুষ যেহেতু ঘুমে বিভোর, তাই তারা যেন জাগ্রত হয়ে যায় এবং শয়তান যেন ভেগে যায়। যেহেতু যত উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করা হবে, শয়তান তত বেশী ভাগতে থাকবে। এ কারনে আমি উচ্চ কন্ঠে তেলাওয়াত করছিলাম।
এবার একটু লক্ষ্য করুন, উভয়ের কথাই আপন আপন স্থানে সঠিক। সিদ্দীকে আকবর (রাঃ) এর কথাও সঠিক যে, যাকে শোনতে চেয়েছি তাকে তো শুনিয়ে দিয়েছি। সুতরাং অন্য কাউকে শোনানোর প্রয়োজন কিসের? ফারূকে আ’যম (রাঃ) এর কথাও সঠিক যে, ঘুমন্ত লোকদের জাগানো ও শয়তানকে তাড়ানো আমার উচ্চস্বরে তেলাওয়াতের উদ্দেশ্য। তবুও হুজুর (সাঃ) তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আবু বকর! তুমি তোমার বুঝ অনুযায়ী তেলাওয়াত করেছ মৃদু ও নিুস্বরে। আর হে ওমর তুমি তোমার বুঝ অনুযায়ী তেলাওয়াত করেছ উচ্চস্বরে।
কিন্তু যেহেতু তোমরা উভয়ে নিজ বুঝ অনুযায়ী এ পথ বেছে নিয়েছ, সেহেতু এটি পছন্দনীয় পথ নয়। পছন্দনীয় পথ সেটি, যা আল্লাহ তায়লা বলেছেন যে, একবারে নিুস্বরেও নয়, একেবারে উচ্চকন্ঠেও নয়, বরং উভয়ের মাঝামাঝি স্বরে তেলাওয়াত করতে হবে। এর মাঝেই রয়েছে নূর ও বরকত। তাতেই রয়েছে ফায়দা ও ফযীলত। তাই এ পদ্ধতিই অবলম্বন কর। [ আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, হাদীস নং- ১৩২৯]
মুসলমানদের যে কোন ধরনের মতভেদ থেকে দূরে রাখার জন্য রাসুল (সাঃ) এর যে কি প্রানান্তকর প্রচেষ্টা ছিল তা উপরের হাদীসটি থেকে বুঝা যায়। এ ধরনের দ্ব্যর্থহীন, পরিস্কার বক্তব্য তাহাজ্জুদের নামাযের মত একটি বিষয়ে নিয়ে যদি রাসুল (সাঃ) দিয়ে থাকেন, তাতেই বুঝা যায় আল্লাহর রাসুল (সাঃ) তার উম্মতের জন্য সকল বিষয়েই এ ধরনের দ্ব্যর্থহীন সমাধান দিয়েছেন যা আমাদের মতো কাঙ্গালরা বুঝতে পারছি না বা বুঝেও না বুঝার ভান করছি।
তা না হলে মুসলমানদের মাঝে আজ এত মতভেদ হয় কি করে? আজ আমরা শিয়া, সুন্নী, ওহাবী, সালাফী, কট্ট্ররপন্থী, উদারপন্থী, চরমপন্থী, পীরপন্থী, দেওবন্দ মতাদর্শী, সুফীবাদ, ইলিয়াসী মতবাদ, মওদূদীবাদ কত নামেই না বিভক্ত অথচ সবাই আবার রাসুল কেই নেতা মানি। তাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা আজ বিদুরিত হউক সকল মতবাদ জেগে উঠুক আল্লাহর সৈনিকরা যারা শুধু রাসুলের (সাঃ) কথাই মানবেন তাকেই দিবেন সকল ব্যক্তি মতের উর্ধে স্থান।
আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়াত করুন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৪২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন