হেফাজতে ইসলাম কি নতুন রাজনৈতিক শক্তি ?

লিখেছেন লিখেছেন সোহাগী ১০ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:২১:৩৮ সকাল

হেফাজতে ইসলাম একরকম হঠাৎ করেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে বড় ধরণের সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে গত শনিবার তাদের ১৩ দফা দাবিতে লংমার্চ শেষে ঢাকায় যে বিশাল সমাবেশ তারা করেছে, সেটা দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন।

হেফাজতে ইসলামের এই শক্তি দেখে বড় রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের সমীহ করে কথা বলছে, কোনো কোনো দল ইতোমধ্যে তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার চেষ্টাও চালিয়েছে।

হেফাজতে ইসলাম মাঠে নেমেছিল তাদের ভাষায় ‘নাস্তিক ব্লগারদের’ শাস্তির দাবিতে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল তাদের ১৩ দফা দাবিনামায় অনেক কিছুই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। হেফাজত নেতারা এমন কথাও বলেছেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যারাই রাষ্ট্রক্ষমতায় আসুক, তাদের দাবিকে আমলে নিতে হবে।

অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, হেফাজতে ইসলাম কি একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে?

হেফাজতে ইসলাম মূলত কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক একটি ধর্মীয় সংগঠন। কিছুদিন আগে পর্যন্ত এর নামও অনেকের অজানা ছিল। মূলত বাংলাদেশে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনের মাধ্যমে তারা সবার নজরে আসে।

বাংলাদেশে এধরণের ধর্মীয় আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক মঞ্চে আবির্ভূত হওয়ার অতীত নজির আছে। হেফাজতে ইসলামের ক্ষেত্রেও কি তাই ঘটতে যাচ্ছে?

সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আমানউল্লাহ কবির বলেন,“ভবিষ্যতে হেফাজতে ইসলাম তাদের দাবিনামার ভিত্তিতে বা তাদের চিন্তা চেতনার সমর্থনে একটা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দাঁড়াবে। আমি কিন্তু মনে করি, এটা প্রাথমিক পর্যায়। এখন বীজ বপন করা হচ্ছে,যেটা মহীরূহ হয়ে উঠবে।”

হেফাজতে ইসলামের সাথে রয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোট নামের একটি দলের নেতা আব্দুল লতিফ নিজামী। তিনি বলেছেন, ৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে লেখক তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে আন্দোলন বা এরপরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন আলাদা আলাদাভাবে আন্দোলন করেছে। সেগুলো পরে ইসলামপন্থী দল হিসেবে রাজনীতিতে এসেছে।

হেফাজতে ইসলামও কি সেই পথে হাঁটতে যাচ্ছে?

আব্দুল লতিফ নিজামীর বক্তব্য হচ্ছে, তারা নিজের দল ছেড়ে নতুন কোনো দল গঠন করবেন না। তিনি বলছিলেন, “এটা রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলে এতবড় সমাবেশ করাও সম্ভব নয়। সংগঠনটিও গুরুত্ব হারাবে। এছাড়া অরাজনৈতিক ব্যক্তি যারা আছেন, তারাও থাকবেন না।”

তবে সাংবাদিক আমানউল্লাহ কবির মনে করেন, প্রধান দু’টি দলের সম্পর্কে যে টানাপোড়েন থাকছে তাতে পরিস্থিতিই হেফাজতে ইসলামকে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঠেলে দিতে পারে।

তিনি বলেন, “এখন বিএনপিকে দমনের চেষ্টা চলছে। সেটা যদি অব্যাহত থাকে তবে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হবে। সেই জায়গায় হেফাজতে ইসলাম যাদের প্রতিনিধিত্ব করছে এই শক্তিটাই আত্নপ্রকাশ করবে। তখন গণতন্ত্রও থাকবে না এবং দেশে ধর্ম ভিত্তিক ‘মৌলবাদী’শক্তির উত্থান হবে।”

হেফাজতে ইসলামের মুল নেতৃত্ব অবশ্য এ ধরণের বক্তব্য মানতে রাজি নন। আবদুল লতিফ নিজামী বলেন, “ইসলামী দলগুলোর কিছু নেতা হেফাজতে ইসলামে রয়েছেন ঠিকই। তারা রাজনৈতিক এজেন্ডা বাদ রেখে এখানে কাজ করছেন। কোন পরিস্থিতিই হেফাজতে ইসলামকে রাজনৈতিক দিকে ঠেলে দিতে পারবে না।” সূত্র: বিবিসি।

বিষয়: রাজনীতি

১২১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File