হাদিস কেন মানতে হবে ???
লিখেছেন লিখেছেন সরল পথিক ১৯ মার্চ, ২০১৩, ০২:৫৯:৪৭ রাত
আসসালামু আলাইকুম ।
ইসলামে আল ক্বুর'আনের পরে যেটির গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি তা হল হাদিস । 'হাদিস' সরাসরি আল্লাহর 'অহি' ।ক্বুর'আন 'অহিয়ে মাতলু' যা তেলাওয়াত করা হয় ।কিন্তু হাদিস 'অহিয়ে গায়ের মাতলু' যা তেলাওয়াত করা হয় না ।
আল্লাহ বলেন, 'রাসূল তাঁর ইচ্ছামত কিছু বলেন না । কেবলমাত্র অতটুকু বলেন, যতটুকু তাঁর নিকটে 'অহি করা হয় ।' (সূরা নাজম ৫৩/৩-৪)
তিনি অন্যত্র বলেন, আল্লাহ আপনার উপরে নাযিল করেছেন কিতাব ও হিকমত (সুন্নাহ) এবং আপনাকে শিখিয়েছেন,যা আপনি জানতেন না, আপনার উপরে আল্লাহর অনুগ্রহ অপরিসীম ।(সূরা নিসা ৪/১১৩)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, 'জেনে রাখো ! আমি ক্বুর'আন প্রাপ্ত হয়েছি ও তার ন্যায় আরেকটি বস্ত । সাবধান ! এমন একটি সময় আসছে যখন বিলাসী মানুষ তার গদিতে বসে বলবে, তোমাদের জন্য এ ক্বুর'আনই যথেষ্ট । সেখানে যা হালাল পাবে, তাকেই হালাল জানবে এবং সেখানে যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ কর্তৃক হারাম করার অনুরুপ ।(আবুদাঊদ,তিরমিযী,মিশকাত হা/১৬৩) । তাছাড়া হাদিস হ'ল ক্বুর'আনের ব্যাখ্যা স্বরূপ ।যেমন আল্লাহ বলেন, 'আমরা আপনার নিকটে 'যিকর' নাযিল করেছি,যাতে আপনি লোকদের উদ্দেশ্যে নাযিলকৃত বিষয়গুলি তাদের নিকটে ব্যাখ্যা করে দেন এবং যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে ।' (সূরা নাহল ১৬/৪৪)
এছাড়া নবী (সাঃ ) এর পরবর্তি যুগে যেসব আলেমগণ দুনিয়াতে এসেছিলেন তারাও হাদিস অনুসরণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে গেছেন ।
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) (৮০-১৫০হিঃ) বলেন,তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে নিজ নিজ রায় অনুযায়ী কথা বলা হ'তে বিরত থাক, তোমাদের জন্য সুন্লাতের অনুসরণ করা অপরিহার্য ।যে ব্যক্তি সুন্নাতের অনুসরণ থেকে বেরিয়ে যাবে,সে পথভ্রষ্ট হবে ।(আব্দুল ওয়াহহাব শা'রানী(৮৯৮-৯৭৩হিঃ) কিতাবুল মীযান (দিল্লী : আবামালুল সাতাবে,১২৮৬হিঃ )১ম খন্ড,পৃষ্ঠা ৬৩,১৮ লাইন ) তিনি আরো বলেন, 'আমার কথা অনুযায়ী ফত্ওয়া দেওয়া হারাম ঐ ব্যক্তির জন্য যে আমার গৃহীত দলীল সম্পর্কে অবগত নয় ।
লাইন ২২
তিনি আরো বলেন,'যখন সহীহ হাদিস পাবে,জেনো সেটাই আমার মাযহাব '।(ইবনু আবেদীন, শামী রাদ্দুস মুহতার শরহ দুর্রে মুখতার (দেউবন্দ ১২৭২হিঃ)১/৪৬পৃঃ)
ইমাম মালিক (রহঃ)( ৯৩-১৭৯হিঃ) বলেন, 'আমি একজন মানুষ মাত্র । আমি ভুল করি,সঠিকও বলি ।অতএব আমার সিধান্তগুলি তোমরা যাচাই কর ।যেগুলি ক্বুর'আন ও সুন্নাহ অনুযায়ী পাও,সেগুলি পরিত্যাগ কর ।(ইউসুফ জয়পুরী হাক্বীক্বাতুল ফিক্বহ, বোম্বাই : পরিবর্ধিত সংস্করণ,তাবি)পৃঃ৭৩
'রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ব্যতীত দুনিয়াতে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার সকল কথা গ্রহনীয় অথবা বর্জনীয় । (শাহ ওয়ালিউল্লাহ, ইক্বদুল জীদ উর্দু অনুবাদসহ,লাহোর:তাবি) ৯৭ পৃঃ ৩য় লাইন ।
ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪হিঃ) বলেন,'যখন তোমরা আমার কোন কথা হাদিসের বরখেলাপ দেখবে,তখন হাদিসের উপর আমল করবে এবং আমার কথাকে দেওয়ালে ছুঁড়ে মারবে'।তিনি একদা স্বীয় ছাত্র ইবরাহীম মুযানীকে বলেন,'হে ইবরাহীম !তুমি আমার সকল কথার তাক্বলীদ করবে না । বরং নিজে চিন্তা ভাবনা করে দেখবে কেননা এটা দ্বীনের ব্যাপার ।'(ইক্বদুল জীদ ৯৭ পৃঃ ৭ম লাইন)
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১হিঃ) বলেন, 'তুমি আমার তাক্বলীদ কর না । তাক্বলীদ কর না ইমাম মালিক, আওযাঈ,নাখঈ বা অন্য কারও।'বরং নির্দেশ গ্রহন কর ক্বুর'আন সুন্নাহর মূল উত্স থেকে, যেখান থেকে তাঁরা সমাধান গ্রহন করতেন '।(ইক্বদুল জীদ ৯৮ পৃঃ ৩য় লাইন)
এছাড়া নবী (সাঃ ) এর হাদিসের অনুসরণ প্রসঙ্গে একটি হাদিস,'আবু রাফে (রাঃ) থেকে বর্ণিত,রাসূল (সাঃ)বলেন,'আমি যেন তোমাদের কাউকে এরূপ না দেখি যে, সে গদিতে ঠেস দিয়ে বসে থাকবে, আর তার কাছে আমার কোন আদেশ বা নিষধাজ্ঞা পৌঁছলে সে বলবে যে,আমি এসব কিছু জানিনা ।যা আল্লাহর কিতাবে পাব,তারই আমরা অনুসরণ করব ।(আবু দাঊদ, আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী, মিশকাত, আলবানী হা/১৬২)
উপরে উল্লেখিত ক্বুর'আন,হাদিস ও ইমামদের বক্তব্য থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, একজন মুসলিমকে অবশ্যই আল ক্বুর'আনের সাথে সাথে হাদিসকে অবশ্যই হাদিসকে অনুসরণ করতে হবে । আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে ইসলামকে জানার, বুঝার ও পালন করার তওফীক দান করুক,আমিন ।
বিষয়: বিবিধ
১২৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন