আমার মৃত্যুর পরের অনুভূতি !

লিখেছেন লিখেছেন ইমরান সাফওয়ান ২৬ মার্চ, ২০১৩, ০১:৫০:৫১ রাত



আমার প্রিয় স্হানগুলির মধ্যে নানুবাড়িটাই সবার শীর্ষে। বিগত বছরগুলোর মধ্যে দীর্ঘ প্রায় ৪/৫ বছর কোনভাবেই সেখানে যাওয়ার সুযোগ হচ্ছিল না। আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা মাঝে কয়েকবার যেতে পারলেও নানান সমস্যা অথবা ফাইনাল/ইয়ার চেন্জ এক্সাম এ জাতীয় মহা সমস্যায় ফেসে গিয়েছি। অথচ নিকট অতীতে একটি সময় এমন ছিলো যে নানুবাড়িতে না যেয়ে থাকতে পারাটা প্রায় অসম্ভব ছিল।

যাহোক সর্বশেষ বিগত ২০১০ ইং সনে বাবা-মার হজ্বে যাওয়ার সুবাদে আমরা সবাই ''ইদূল আযহা'' উদযাপনের উদ্দেশ্যে বহু কাংখিত ও প্রতিক্ষিত স্হানটিতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম।

৭-১০ দিনের খন্ডকালীন এই অবস্হানকালীন সময়ের আনন্দের অনুভূতি সুযোগ হলে অন্য কোথাও বলা যাবে। তবে এক কথায় বলতে গেলে অসাধারণ। আমার জীবনের শ্রেষ্ট সময় সে কয়টি দিন-রাত।

বাস্তবে না হলেও অন্য কোনভাবে সেই প্রিয় স্হানটিতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো বিগত রমজানের ২৮ তারিখে ।

যাওয়ার পর মহানন্দে ঘুরছি, ফিরছি আর সকলের মধ্যমণি হিসেবে আড্ডার আসরকে রীতিমতো জমিয়ে তুলছি।

হঠাৎ একদিন ঘটিয়ে ফেললাম অবাক করা কান্ড। বিষয়টি খুব স্বাভাবিক থাকলেও কিছু দু:শ্চরিত্রের অধিকারীরা তিলকে তাল বানিয়ে ফেলল। যা নিয়ে পুরো এলাকায় হৈ চৈ শুরু হয়ে গেল। অবশেষে তারা গোপন পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিলো কয়েকজন মিলে আমাকে হত্যা করবে।

এসব কিছুই আমার জানা ছিলনা। থাকার কথাও না। কারণ আমার আম্মা কোন এক কারণে অত্র এলাকার সকলের নিকট সম্মানের পাত্রী। মায়ের সুবাদে ও আমার ব্যক্তিগত কিছু কারণে আমিও সকলের স্নেহভাজন। সুতরাং আমার বিষয়ে এ ধরণের ভয়ন্কর সিদ্ধান্ত কেউ নেবে তা কল্পনাতীত।

যাহোক এর কিছুদিন পর নানুবাড়িতে আমি যে রুমটিতে থাকি সেখানে এশার জামাতের আয়োজন। যথারীতি আমি সামনের কাতারে নামাজে দন্ডায়মান। হঠাৎ বাহির থেকে হৈ হুল্লোর করে বিকট আওয়াজে হুড়মুড় করে ঘরে প্রবেশ করলো কিছু লোকজন। যার অগ্রভাগে আমার শ্রদ্ধাভাজন চাচাতো মামা রামদা হাতে দাড়িয়ে কাকে যেন খুঁজছেন।

বিষয়টি আমি বুঝে ফেলেই ভয়ে নামাজ ছেড়ে দিয়ে চিৎকার শুরু করি। পাশেই আমার নানা, মামা, ভাই ও অন্যান্য আত্নীয়রা থাকলেও কেউ কোন সাড়া শব্দ করছিলনা। সকলে একাগ্রচিত্তে সালাত আদায়ে ব্যস্ত।

আমি যতই কাকুতি-মিনতি করে কেঁদে-কেটে হাতে-পায়ে ধরে বুঝাতে চাচ্ছি যে ‍‌‌‌‍‌''আমার কোন অপরাধ নেই, আমাকে ওরা মেরে ফেলল'' সেদিকে কারো কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। পাশের রুমে আম্মা আমার জন্য কাঁদতে কাঁদতে অস্হির। কিন্তু কি এক কারণে এ পাশটায় আসতে পারছেননা। মায়ের আওয়াজ শুনে আমি আরো দিগ্বিদিক হয়ে ছুটাছুটি করছি। তখন গোটা পৃথিবীটা আমার জন্য একেবারেই সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিলো।

আপনজনেরা সবাই আমার সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করল। স্বার্থপরের মতো কেউ আমার বিপদে এগিয়ে আসলনা। হঠাৎ দেখি ঘাতক মামা নামাজের কাতার বেদ করে আমার একেবারে কাছে এসে রামদা তাক করে দাড়ানো। তার মুখে চোখ পড়তেই ''মামা'' বলে ডাক দিতেই দেখি আমার গর্দান বরাবর রামদা এসে পড়ছে......।

মুহুর্তেই চোখ দুটি বন্ধ করে চিৎকার করতেই ধড়ফড় করে উঠে সম্বিত ফিরে পাই। পরক্ষণেই নিজেকে আবিস্কার করি ঢাকায় বাসায় আমার বিছানায় প্রচন্ড ঘর্মাক্ত হয়ে স্যাতস্যাতে অবস্হায় পরে আছি বালিশের নীচে ।

(পুরোনো লেখার ব্লগীয় সংরক্ষণ)

পূর্বপ্রকাশ: সোনার বাংলা ব্লগ ও সামহোয়ারইন ব্লগ

(০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৫৮)

বিষয়: বিবিধ

১৫২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File