আমি তো মানুষ না, আমি তো রিক্সাওয়ালা……..

লিখেছেন লিখেছেন হরিলুট ২৩ মার্চ, ২০১৩, ১০:৩৪:৩২ রাত



আজ অফিস শেষ করে গুলশান-১ থেকে হেটে বাড্ডা লিংক রোড এর দিকে যাচ্ছিলাম । হটাৎ ফুটপাতে মানুষের জটলা দেখে দাড়িয়ে গেলাম। প্যান্টের পিছনের পকেটে মানিব্যাগ থাকার কারনে শক্ত করে চেপে ধরে ভীড়ের মাঝে উকি মেরে দেখি লুঙ্গিপরা একটি লোককে বেল্ট দিয়ে মারছে তার থেকে অর্ধেক বয়সের একটি ছেলে। বেল্ট দিয়ে কিছুক্ষন মারার পর ছেলেটি সোলেমান খান ষ্টাইলে লোকটির বুকে ফ্লাইংকিক মেরে তাকে রাস্তায় ফেলে দিলো। তারপর একহাতে চুলের মুঠি ধরে অন্যহাতে সমানে থাপ্পর মেরে যাচ্ছে আর বলছে খানকির পোলা তোর মায়েরে আমি…….

পিছন থেকে কয়েকজন লোককে উদাসভাবে বলতে শুনলাম ভাই হইছে ছাইড়া দেন। এই কথা শুনে ছেলেটি মনে হয় আরো বেশী উৎসাহ পেল, মাইরের মাত্রা বাড়িয়ে বললো ওর আইজক্যা বাচন নাই খানকির পোলায় আমারে চিনে না! এভাবে আরও কিছুক্ষন মারার পর ছেলেটি মনে হয় কিছুটা হাপিয়ে উঠেছে, তাই বললো তুই রাস্তায় গড়াগড়ি দে তাইলে তোরে ছাইড়্যা দিমু। লোকটি আরও মারের ভয়ে একটুও সময় নষ্ট না করে সাথে সাথে রাস্তায় গড়াগড়ি দিতে লাগলো। সেটা দেখে ভিড়ের মধ্যে থেকে কাকে যেন হাসতেও শুনলাম মনে হলো । নাকি আমার মনের ভুল ঠিক বুঝতে পারলাম না । অবশ্য রাস্তায় গড়াগড়ি দেয়ার দৃশ্যটা হটাৎ করে কেউ দেখলে তারও হাসি পাওয়ার কথা, মনে হচ্ছিল যেন সার্কাস পার্টির কোন জোকারের অভিনয়। কিন্তু আগের দৃশ্যপট দেখেও যিনি রাস্তায় গড়াগড়ি দেয়ার দৃশ্য দেখে হাসতে পারেন তার মধ্যে মনুষত্ব্ আছে বলে মনে করি না।

যাহোক, কিছুক্ষন পর কয়েকজন লোক ছেলেটিকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিলো। ভীড় আস্তে আস্তে হালকা হতে লাগলো । আমি দড়িয়ে থাকলাম লুঙ্গিপরা লোকটির পরিনতি দেখার জন্য । লোকটির মুখের কাছে ফেটে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল, সে ছেড়া জামা দিয়ে মুখ মুচছিলো আর ফুপিয়ে কাদছিলো । আমি লোকটির কাছে গিয়ে বললাম মামা কি হইছিলো? জবাবে সে বললো, বাজান আমার কুনো দুষ নাই । হে আইয়া কইলো এই রিকসা যাইবা, আমি না কইছি হেইজন্য ………..। লোকটি কথাগুলো বলছে আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে । দেখে খুব মায়া হলো। ওনাকে বললাম মামা চলেন ওই চায়ের দোকানে একটু পানি খান ভালো লাগবে । জবাবে আমাকে বললেন, বাজান আমি তো নফল রোজা রাখছি আইজক্যা । একটুপর মাগরিবের আজান দিবে ইফতারি করন লাগবে, আফনের কষ্ট করন লাগতো না আফনে যান গা । একথা শুনে ওনাকে বললাম মামা আপনাকে আমি ইফতারি করাতে চাই । উনি আমার প্রস্তাবে একটু ইতস্ততা বোধ করলেন । পরে বললেন ঠিক আছে চলেন । আমি ওনার রিক্সায় উঠে বসলাম ।আমরা মধ্যবাড্ডার একটা হোটেলের সামনে নামলাম । আজান হলো । উনি ইফতারি শুরু করলেন । খাওয়ার ফাকে আমাকে বললেন বাজান ইফতারির সময় হইয়া আসতাছে, এইজন্য হে যখন আমারে যাইতে কইছে আমি ভাড়া লইতে পারি নাই । কিন্তু না যাওয়ানের লাইগা আমারে মারব এইটা বুঝতে পারি নাই । অর বয়সের আমার একটা পুলা আছে রাজশাহী ভার্সিটি পড়ে । আল্লায় হেরে মাফ করুক ।

একথা শুনে আমি আর কোন কথা খুজে পাচ্ছিলাম না । ওনার প্রতি শ্রদ্ধায় আমি আপ্লুত হলাম । ওনাকে শুধু বললাম মামা আপনাকে এভাবে মারধর করলো আপনি কিছু বললেন না কেন? আপনার এই শক্তিশালী দেহ নিয়ে শুধু মার খেলেন!! আপনি একটা মার দিলেতো ওই ছেলের দাড়াতে পারার কথা না । মুচকি হেসে সে বললো, বাজান আমি তো মানুষ না, আমি তো রিক্সাওয়ালা । এতগুলা মানুষের সামনে আমারে বিনা দোষে মারলো কেউ একটু আগায়া আসলো না…………….

এই হলো আমাদের নৈতিকতা । এই হলো আমাদের মূল্যবোধ । এই আমরা মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত । কথা শেষ । ভাল থাকবেন সবাই ।

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File