অসাধারণ কিছু কথা, কখনও আবেগ, কখনও বাস্তবতা |
লিখেছেন লিখেছেন হরিলুট ২২ মার্চ, ২০১৩, ০৩:১১:৫৫ দুপুর
কলেজ থেকে ফেরার পথে বাসে উঠে দেখি লোকজন ভরে গেছে। পিছনের দিকে পঞ্চাষর্ধো এক লোকের পাশে বসে পড়লাম। লোকটা খুবই বিনয়ী, বসা মাত্র আমাকে বলে, তুমি চাইলে জানালার কাছে বসতে পারো। বললাম, না আঙ্কেল অসুবিধা নেই...থ্যাংকস। কিছুদুর যেতেই বাস থেমে গেলো, যাত্রাবাড়ির চিরপরিচিত জ্যাম! হঠাৎ পাশের লোকটা আমাকে বললো, তোমার কাছে পানি আছে? একটু মুখে দিবো। আমার সাথে পানি না থাকায় বললাম- স্যরি আঙ্কেল, আমার কাছে পানি নেই। লোকটা উদাস নয়নে আকাশের দিকে তাকালো। একটুপর নিজের খেয়ালেই আমাকে বলা শুরু করলো, আমার একটা মেয়ে আছে, হলে থাকে। আমি থাকি লালবাগ, ওখানে আমার একটা মুদি'র দোকান আছে। মেয়েটার মা নেই, বাড়িতে (গ্রামে) আমার ছোট ছেলেটা থাকে তার চাচার সাথে। আমি প্রতিদিনই আমার মেয়ের সাথে কথা বলি, মেয়ে আমাকে জানায় সে ক্লাসে আছে অথবা লাইব্রেরীতে আছে নইলে পড়ছে। আমি খুব খুশী হই, এত খুশী হই যে চোখে পানি চলে আসে। মেয়েটাকে আমি অনেক পড়ালেখা করাতে চাই, যতটুকু সামর্থ্য আছে তা দিয়েই। মেয়ে'র কোন আশাই আমি অপূর্ন রাখিনি, যা চেয়েছে তাই দেয়ার চেষ্টা করেছি। গতকাল বিকেল থেকে মেয়েটার ফোন বন্ধ, তাই আমি হলের এক টিচারকে ফোন দেই, সেই টিচার খোজখবর নিয়ে দেখে আমার মেয়ে ৫ দিন হলো হলে নেই, সে নাকি বাড়ি যাবার জন্য ছুটি নিয়েছে। কথাটা শোনামাত্র আমি টিচারকে বললাম, আমার ভুল হয়েছে স্যার, আমি বাড়িতে ফোন না করেই আপনাকে ফোন করেছি, আমি সত্যি দুঃখিত। তারপর লোকটি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার মেয়ে বাড়িতে যায়নি, কালও ওর সাথে আমার কথা হয়েছে, সে নাকি ক্লাসে ছিলো।
গতরাতে আমি মোটেও ঘুমাতে পরিনি, অনেক খোজখবর নেবার পর মেয়ের বান্ধবী'র কাছে জানতে পারলাম আমার মেয়েটা নাকি এখন কক্সবাজার আছে। এক ছেলের সাথে ৭ দিনের জন্য বেড়াতে গিয়েছে। তোমাকে কথাগুলো কেন বলছি জানি না, তুমি কি বিরক্ত হচ্ছো? আমি মাথা নেড়ে না বললাম। মাথাটা কাজ করছে না, কাউকে কিছু জানাতেও পারছি না, মেয়ের সন্মান চলে যাবে। তাই তোমাকে বলে একটু হালকা হলাম, কিছু মনে করোনা। এই কথা বলে লোকটা আবার আকাশের দিকে তাকালো। আমি স্পষ্ট দেখলাম লোকটা কাদঁছে, তার শরীর কেপে কেপে উঠছে! আমি মলিন চোখে এক বাবা'র কান্না দেখলাম, মেয়ে'র সন্মান চলে যাবার ভয়ে একজোড়া স্বপ্নমাখা চোখের কান্না দেখলাম। বাবা'র বুকের চিৎকার আর আর্তনাদ যেন শুনতে পেলাম আমি, আর সাথে সাথে আম্মু'র মুখটা ভেসে উঠলো... আমি জীবনের অসংখ্যবারের মতো আবারও মনে মনে আম্মু'কে প্রমিজ করলাম এমন কিছু করবো না যেন তারা কষ্ট পায়।
(মা-বাবার মতো আমাদের কে ভালবাসতে পারবে বলেন।সবাইকে বিশেষ অনুরোধ এই পোস্টটি সবার সাথে শেয়ার করবেন)
বিষয়: বিবিধ
৫৪১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন