কারামত পর্ব - ২ : গায়েব সংক্রান্ত কারামত
লিখেছেন লিখেছেন সঠিক ইসলাম ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৯:৩৬:১১ রাত
পর্ব-১ : কারামত অস্বীকারকারী কথিত আহলে হাদীস দলের দাবীকৃত ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এর কিছু কারামত
সালাফী ভাইয়েরা গায়েব সংক্রান্ত কোন কারামত দেখলেই শিরকের ট্যাগ লাগাতে অভ্যন্ত। এটা তারা তাদের শায়খদের কাছ থেকে শিখেছে। মতি মাদানী, তাউসিফুর রহমান রাশেদী, মুরাদ বিন আমজাদ, মিরাজ রব্বানীসহ সব ডক্টর বা ডাক্তাররা তাদেরকে এই সবক দিয়েছে। ফলে তারা শিরকের ট্যাগ লাগানোর জন্য মহা উৎসবের আয়োজন করেছে। তাই তাদের রোগের জন্য কিছু প্রতিশোধক দেয়া হলো -
গায়েব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা:
কারামতের সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয় হলো কাশফ ও ইলহামের মাধ্যমে অদৃশ্যের কিছু বিষয় সম্পর্কে অবগত হওয়া। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আক্বিদা হলো, আল্লাহর ওলীদের জন্য কাশফ ও ইলহাম সত্য। এটি কুরআন ও সুন্নাহের সুস্পষ্ট দলিল দ্বারা প্রমাণিত। মূল আলোচনা শুরুর পূবের্ গায়েবের পরিচয় ও এর প্রকারভেদ আলোচনা করা জরুরি।
গায়েব শব্দের অর্থ হলো অদৃশ্য, যা চোখের সামনে নয়। মানুষের চোখের সামনে উপস্থিত নয় এমন জিনিসকে গায়েব বলে।
গায়েব প্রথমত দুই প্রকার।
১. গায়েবে মুতলাক।
২. গায়েবে মুকায়্যাদ।
প্রত্যেকটা আবার দু’ভাগে বিভক্ত। এভাবে গায়েব মোট চার প্রকার।
গায়েবে মুতলাক এর পরিচয়:
وهو الذي ليس للإنسان سبيل إلى العلم به عبر وسائل إدراكه أو حواسه
এমন অদৃশ্য বিষয় যে সম্পর্কে মানুষ তার ইন্দ্রিয় শক্তি বা অন্য কোন মাধ্যম ব্যবহার করে জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম নয়।
গায়েবে মুতলাক আবার দু’প্রকার।
১. এমন কিছু বিষয় যা আল্লাহ তায়ালা মানুষ, ফেরেশতা বা জিনকে ওহী বা অন্য কোন ভাবে জানিয়ে দেন।
যেমন পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
قُلْ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِنَ الْجِنِّ فَقَالُوا إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا
হে নবী আপনি বলুন, আমার নিকট ওহী এসেছে যে একদল জিন পবিত্র কুরআন শুনেছে এবং তারা বলেছে নিশ্চয় আমরা আশ্চর্যজনক কুরআন শুনেছি। [সূরা জিন, আয়াত নং ১, সুরা নং ৭২]
এখানে জিনদের কুরআন শোনার বিষয়টি রাসূল স. ওহীর মাধ্যমে জেনেছেন। আল্লাহ তায়ালা এই অদৃশ্যের বিষয়টি রাসূল স. কে ওহীর মাধ্যমে জানিয়েছেন। মানুষের কাছে বিদ্যমান উপায়-উপকরণ ব্যবহার করে এটা জানা সম্ভব নয়।
২. এমন অদৃশ্য বিষয় যা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা জানেন, কোন সৃষ্টি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়। যেমন, কিয়ামত সংগঠিত হওয়ার মুহূর্ত সম্পর্কে কেউ জানে না। এসম্পর্কে পবিত্র কুরআনে অনেক আয়াত রয়েছে। যেমন, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ
আর তার নিকটই গায়েবের চাবিকাঠি। একমাত্র তিনিই এসম্পর্কে অবগত।
[সূরা আনয়াম, আয়াত নং ৫৯]
সূরা নামালে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
قُلْ لا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ
হে নবী আপনি বলুন, আসমান যমিনের কেউ গায়েব জানে না। একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই গায়েব জানেন। [সূরা নমল, আয়াত নং ৬৫]
এখানে দু’টি বিষয় স্মরণ রাখা জরুরি:
১. গায়েব বা অদৃশ্য বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ তায়ালা জানেন। অন্য কেউ গায়েবের বিষয়ে অবগত নয়। তবে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদেরকে, নবী-রাসূলগণ ওহীর মাধ্যমে ও ওলীদেরকে কাশফ ও ইলহাম বা স্বপ্নের মাধ্যমে বিভিন্ন অদৃশ্যের বিষয় জানিয়ে দেন। একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জানানোর মাধ্যমেই অন্যরা এসম্পর্কে জানতে পারে। সরাসরি অদৃশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত আর কেউ জানে না। এমনকি কোন ফেরেশতাও নয়। আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা অনুযায়ী মাখলুককে অদৃশ্য সম্পর্কে জানান। যেমন জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কে ফেরেশতাদের জ্ঞান থাকলেও মানুষ এসম্পর্কে কিছু জানত না। আল্লাহ তায়ালা ওহীর মাধ্যমে মানুষকে জানিয়েছেন। আবার কিয়ামত সংগঠিত হওয়ার মুহূর্ত সম্পর্কে কোন সৃষ্টিই অবগত নয়।
২. দ্বিতীয় বিষয় হলো, গায়েব বা অদৃশ্য শব্দটি আপেক্ষিক। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার নিকট কোন জিনিস গায়েব অদৃশ্য নয়। আল্লাহ তায়ালা প্রতি-মুহূর্তে সব কিছু সম্পর্কে অবগত, একমাত্র তার ক্ষমতায় সব কিছুই আবর্তিত। সুতরাং অদৃশ্য গায়েব দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সৃষ্টির তুলনায় এটি অদৃশ্য। আল্লাহ তায়ালার নিকট এটি এই অর্থে গায়েব বলা হয় না।
২. গায়েবে মুকায়্যাদ এর পরিচয়:
وهو ما علمه بعض المخلوقات من الملائكة أو الجن أو الإنس وشهدوه . فهذا إنما هو غيب لمن غاب عنه ، وأما من شهده فلا يعد عنده غيبا
এমন অদৃশ্য বিষয় যা সম্পর্কে কিছু মাখলুক বা সৃষ্টি অবগত। যেমন, ফেরেশতা, জিন, অথবা মানুষ যারা সরাসরি তা প্রত্যক্ষ করেছে। এই জাতীয় অদৃশ্য বিষয় কেবল তাদের ক্ষেত্রেই গায়েব হিসেবে প্রযোজ্য যারা বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেনি। কিন্তু যারা সরাসরি বিষয়টি প্রত্যক্ষ করছে তাদের জন্য এটি গায়েব নয়।
যেমন বর্তমানে মদীনায় কী হচ্ছে সেটা আমি জানি না। এজন্য মদীনার বর্তমান অবস্থা আমার জন্য একটি অদৃশ্য বিষয়। কিন্তু যারা মদীনায় অবস্থান করছে, তাদের কাছে মদীনার অবস্থা গায়েব বা অদৃশ্য নয়। এজন্য দ্বিতীয় প্রকার গায়েবকে আপেক্ষিক গায়েব বলে। এই দ্বিতীয় প্রকার গায়েব সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ তায়ালা জানেন, একথা বলা হয় না। বরং বিষয়গুলো মানুষ, জিন ও ফেরেশতাও জানেন। এগুলো আপাত গায়েব হলেও প্রকৃত গায়েব নয়।
গায়েবে মুকায়্যাদ আবার দু’প্রকার:
ক. নাসাবী, গায়েবে নাসাবী হলো যে গায়েব ব্যক্তিকেন্দ্রিক আপেক্ষিক। অর্থাৎ কিছু লোকের নিকট গায়েব হলেও অন্যদের নিকট তা গায়েব নয়। যেমন ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ। যাদের সামনে ঘটনাগুলো ঘটেছে তারা বিষয়গুলো জানে কিন্তু আমাদের সামনে না ঘটায় আমরা তা জানি না। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,
تِلْكَ مِنْ أَنْبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهَا إِلَيْكَ ۖ مَا كُنْتَ تَعْلَمُهَا أَنْتَ وَلَا قَوْمُكَ مِنْ قَبْلِ هَٰذَا
এগুলো গায়েবের সংবাদ, যা আপনার নিকট আমি ওহীরূপে প্রেরণ করেছি। আপনি ও আপনার সম্প্রদায় ইতোপূর্বে এসম্পর্কে অবগত ছিলেন না। [সূরা হুদ, আয়াত নং ৪৯]
খ. মুকায়্যাদ গাইরে নাসাবী: যে গায়েব সময় ও স্থানের সঙ্গে আপেক্ষিক তাকে গায়েবে গাইরে মুকায়্যাদ নাসাবী বলে। যেমন, পবিত্র কুরআনে হযরত সুলাইমান আ: এর মৃত্যুর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে,
فَلَمَّا قَضَيْنَا عَلَيْهِ الْمَوْتَ مَا دَلَّهُمْ عَلَىٰ مَوْتِهِ إِلَّا دَابَّةُ الْأَرْضِ تَأْكُلُ مِنْسَأَتَهُ ۖ فَلَمَّا خَرَّ تَبَيَّنَتِ الْجِنُّ أَنْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ الْغَيْبَ
অত:পর আমি যখন তার উপর মৃত্যুর ফয়সালা করলাম, তারা তার মৃত্যু সম্পর্কে অনবহিত রইল। তবে মাটির পোকা এটা জেনে তার লাঠি খেতে শুরু করলো। এরপর যখন সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো তখন জিন জাতি বুঝতে পারলো যে, তারা গায়েব জানে না। ড়ড়ড়ড়[সূরা সাবা, আয়াত নং ১৪]
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন, তিনিই একমাত্র গায়েব জানেন। কিন্তু কুরআন ও হাদীসের কোথাও এই কথা বলা নেই যে, তিনি গায়েবের বিষয়গুলো অন্য কাউকে জানাবেন না। তিনিই একমাত্র গায়েব জানেন এটা যেমন সত্য, তেমনি আল্লাহ তায়ালা গায়েবের অনেক বিষয় মাখলুককেও জানান, সেটাও সত্য। অর্থাৎ গায়েবের বিষয়ে মাখলুকের কোন স্বাধীন জ্ঞান নেই। এটি সম্পূর্ণ আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার উপর নিভর্শীল। তিনি কাকে, কখন, কোথায় কোন গায়েব সম্পর্কে জানাবেন একমাত্র তিনিই ভালো জানেন। কেউ যদি বলে যে, আল্লাহ তায়ালা কাউকেই গায়েব সম্পর্কে জানাবেন না, জানাতে পারেন না, তবে এটি সম্পূর্ণ কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কথা। আমাদের আজকের আলোচনায় এই বিষয়টি দলিল প্রমাণের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
পবিত্র কুরআনের সুস্পষ্ট দলিল:
১. আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে হযরত মারইয়াম আ. এর ঘটনা উল্লেখ করেছেন,
قَالَ إِنَّمَا أَنَا رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَامًا زَكِيًّا
সে বলল, নিশ্চয় আমি তোমার প্রভূর প্রেরিত দূত। আমি তোমাকে পবিত্র একটি ছেলে দেয়ার জন্য এসেছি। [সূরা মারইয়াম, আয়াত নং ১৯]
সর্বজন বিদিত একটি বিষয় হলো, হযরত মারইয়াম আ. আল্লাহর নবী বা রাসূল ছিলেন না । তিনি একজন সত্যবাদী বিদূষী বুযুর্গ নারী ছিলেন। সুতরাং তিনি যে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অবগত হয়েছেন, সেটি জিবরাইল আ. এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জানিয়েছেন।
২. হযরত মুসা আ. এর মায়ের ঘটনা প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
وَأَوْحَيْنَا إِلَى أُمِّ مُوسَى أَنْ أَرْضِعِيهِ فَإِذَا خِفْتِ عَلَيْهِ فَأَلْقِيهِ فِي الْيَمِّ وَلَا تَخَافِي وَلَا تَحْزَنِي إِنَّا رَادُّوهُ إِلَيْكِ وَجَاعِلُوهُ مِنَ الْمُرْسَلِينَ
“আমি মুসার মায়ের কাছে ওহী পাঠালাম যে, তুমি তাকে দুধ পান করাতে থাকো। যখন তুমি তার জীবনের ব্যাপারে আশঙ্কা করবে, তাকে সাগরে নিক্ষেপ করবে, আর তুমি কোন চিন্তা ও ভয় করবে না। নিশ্চয় আমিই তাকে তোমার নিকট ফিরিয়ে দেবো এবং তাকে আমার রাসূলদের অন্তর্ভূক্ত করবো।”
হযরত মুসা আ. এর মা নবী ছিলেন না। তার নিকট আল্লাহ তায়ালা যে সংবাদ পাঠিয়েছেন এটিও একটি গায়েবের সংবাদ। অর্থাৎ আমি তাকে তোমার নিকট ফিরিয়ে আনবো এবং তাকে রাসূলদের অন্তর্ভূক্ত করবো, এটি নিরেট গায়েবের বিষয়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা আ. এর মাকে এটি পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছেন।
৩. আল্লাহ তায়ালা সূরা কাহাফে হযরত খাজির আ. এর সম্পর্কে বলেছেন,
فَوَجَدَا عَبْدًا مِنْ عِبَادِنَا آتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِنْ عِنْدِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْمًا
অত:পর তারা উভয়ে আমার একজন নেককার বান্দার দেখা পেল, যাকে আমি আমার রহমত দান করেছি এবং আমার পক্ষ থেকে বিশেষ ইলম দান করেছি।[ সূরা কাহাফ, আয়াত নং ৬৫]
হযরত মুসা আ. ও হযরত খাজির আ. এর ঘটনা সবারই জানা রয়েছে। হযরত খাজির আ. অনেকগুলো ঘটনা ঘটান, যেগুলো সব ছিলো গায়েবের সাথে সস্পর্কিত। এই গায়েবগুলো আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেউ জানত না। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সূরা কাহাফের ৬৫ নং আয়াতে বলেছেন, আমি আমার পক্ষ থেকে তাকে বিশেষ ইলম দান করেছি। এখানে বিশেষ ইলম দ্বারা গায়েবের ইলম উদ্দেশ্য।
এ আয়াতের তাফসীরে সকলেই উল্লেখ করেছেন এখানে বিশেষ ইলম দ্বারা গায়েবের ইলম উদ্দেশ্য। কাযী শাওকানী ফাতহুল কাদীরে বলেন,
علمه سبحانه اشياء من علم الغيب الذى استاثر به
আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন কিছু গায়েবের সংবাদ দিয়েছেন যা একমাত্র তিনিই জানেন। [ফাতহুল কাদীর, পৃ.৩৯০, বিন্যাস, ড. সুলাইমান আল-আশরক, প্রকাশনায়, দারুস সালাম রিয়াদ]
ইমাম বাগাভী রহ. এই আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন,
وعلمناه من لدنا علما أي: علم الباطن إلهاما ولم يكن الخضر نبيا عند أكثر أهل العلم
আমি তাকে আমার পক্ষ থেকে বিশেষ ইলম শিখিয়েছি অর্থাৎ ইলহামের মাধ্যমে কিছু বাতেনী ইলম শিখিয়েছি। আর খাজির আ. অধিকাংশ আলেমের মতে নবী ছিলেন না।
[মায়ালিমুত তানজীল, খ.৩, পৃ.৫৮৪]
এ আয়াতের তাফসীরে সব মুফাসসির একই কথা বলেছেন।
দলিল-৪:
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,
يعلم ما بين ايديهم و ما خلفهم و لا يحيطون بشيء من علمه إلا بما شاء
তিনি তাদের অগ্র ও পশ্চাত সম্পর্কে অবগত।তার ইলমের কোন অংশ কেউ অবগত হতে পারে না তবে যাকে তিনি ইচ্ছা করেন অবগত করান।
[সূরা বাকারা, আয়াত নং ২৫৫]
ইমাম বাইহাকী রহ. এই আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন,
ولا يحيطون بشيء من علمه إلا بما شاء أي لا يعلمون من علمه إلا ما شاء أن يعلمهم إياه بتعليمه
তার ইলমের কোন অংশ কেউ জানে না, তবে যাকে ইচ্ছা তিনি তা জানান অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা তাকে বিশেষ ইলম শিক্ষা দেন।
[আল-আসমা ওয়াস সিফাত, ইমাম বাইহাকী রহ. পৃ.১৪৩]
ইমাম ইবনে কাসীর রহ. এই আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন,
وقوله : ( ولا يحيطون بشيء من علمه إلا بما شاء ) أي : لا يطلع أحد من علم الله على شيء إلا بما أعلمه الله عز وجل وأطلعه عليه
অর্থাৎ আল্লাহর ইলমের ব্যাপারে কেউ অবগত হতে পারে না, তবে আল্লাহ তায়ালা কাউকে যদি অবহিত করেন তাহলে সে অবগত হতে পারে।
[তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াতের তাফসীর]
দলিল নং-৫:
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا إِلا مَنِ ارْتَضَى مِنْ رَسُولٍ فَإِنَّهُ يَسْلُكُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ رَصَدًا
অর্থাৎ তিনিই অদৃশ্য সম্পর্কে অবগত। অতএব তিনি তার গায়েবী বিষয় সম্পর্কে কাউকে অবহিত করেন না। তবে তার মনোনীত রাসূল ব্যতীত। সেক্ষেত্রে তিনি তার সামনে ও পেছনে প্রহরী নিয়োজিত করেন।
[সূরা জিন, আয়াত নং ২৬-২৭]
এ আয়াতের তাফসীরে ইবনে কাসীর রহ. বলেন,
وهكذا قال هاهنا: إنه يعلم الغيب والشهادة، وإنه لا يطلع أحد من خلقه على شيء من علمه إلا مما أطلعه تعالى عليه
এখানে তিনি বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা দৃশ্য-অদৃশ্য সব কিছু জানেন। কোন সৃষ্টি তার কোন ইলম সম্পর্কে জানতে পারে না তবে যাকে তিনি জানান, কেবল সেই জানতে পারে।
[তাফসীরে ইবনে কাসীর, খ.৬, পৃ.২৮৪]
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন,
قال علماؤنا: أضاف سبحانه علم الغيب إلى نفسه في غيرما آية من كتابه إلا من أصطفى من عباده....فالله تعالى عنده علم الغيب وبيده الطرق الموصلة إليه لا يملكها إلا هو : فمن شاء إطلاعه عليها أطلعه , ومن شاء حجبه عنها حجبه
আমাদের আলেমগণ বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা কুরআনের অনেক আয়াতে গায়েব সম্পর্কিত জ্ঞানকে নিজের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন, তবে তার নির্বাচিত বান্দাদেরকে কিছু গায়েবের সংবাদ দিয়ে থাকেন। সুতরাং একমাত্র আল্লাহর নিকটই গায়েবের ইলম রয়েছে। গায়েবের ইলম পর্যন্ত পৌছার রাস্তা সম্পর্কে তিনিই পরিজ্ঞাত। তবে তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে গায়েব সম্পর্কে অবহিত করেন, যাকে ইচ্ছা তার থেকে গোপন রাখেন। [তাফসীরে কুরতুবী খ.৭, পৃ.২]
ইবনে হাজার আসকালানী রহ. ফাতহুল বারীতে লিখেছেন,
وأما ما ثبت بنص القرآن أن عيسى عليه السلام قال أنه يخبرهم بما يأكلون وما يدخرون وأن يوسف قال إنه ينبئهم بتأويل الطعام قبل أن يأتي ذلك مما ظهر من المعجزات والكرامات : فكل ذلك يمكن أن يستفاد من الاستثناء في قوله تعالى ( إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِن رَّسُولٍ ) ,فإنه يقتضي إطلاع الرسول على بعض الغيب , والولي التابع للرسول عن الرسول يأخذ وبه يكرم , والفرق بينهما أن الرسول يطلع على ذلك بأنواع الوحي كلها , والولي لا يطلع على ذلك الا بمنام أو إلهام , والله اعلم
কুরআনের স্পষ্ট নস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে হযরত ইসা আ. তারা কী খায় ও সন্চয় করে সে সম্পর্কে বলেছেন এবং হযরত ইউসুফ আ. তাদের খাদ্যের ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, গায়েব সংক্রান্ত এ বিষয়গুলো অবহিত হওয়ার বিষয়টি পবিত্র কুরআনের এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, “ তিনিই গায়েব সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। তিনি কারও সম্মুখে গায়েব প্রকাশ করেন না, তবে তার নির্বাচিত রাসূল ব্যতীত।” কেননা, এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, রাসূলগণ কিছু গায়েব সম্পর্কে অবহিত। আর রাসূলের অনুসারী ওলীগণ তাদের কারণেই কিছু গায়েব সম্পর্কে অবহিত হন এবং তাদের মাধ্যমেই সম্মানিত হন। রাসূল ও ওলীর কিছু গায়েব সম্পর্কে অবহিত হওয়ার ক্ষেত্রে পার্থক্য হলো, রাসূল ওহী পাঠানোর সবগুলো পদ্ধতির মাধ্যমে গায়েব সম্পর্কে অবহিত হন, আর ওলী শুধু স্বপ্ন বা ইলহামের মাধ্যমে গায়েব সম্পর্কে অবহিত হন।” [ফাতহুল বারী, খ.৮, পৃ.৫১৪]
কাযী শাওকানী তাফসীরে ফাতহুল কাদীরে লিখেছেন,
إن الله سبحانه قد يطلع بعض عبيده على بعض غيبه
আল্লাহ তায়ালা কোন কোন বান্দাকে কিছু কিছু গায়েব সম্পর্কে অবহিত করে থাকেন।[ফাতহুল কাদীর, কাযী শাওকানী, খ.৩, পৃ.২০, শামেলা]
يخصص الرسول بالملك في اطلاعه على الغيب، والأولياء يقع لهم ذلك بالإلهام
ফেরেশতাদের মাধ্যমে গায়েব অবহিত হওয়ার বিষয়টি রাসুলগণের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ওলীগণ কিছু কিছু গায়েব সম্পর্কে অবহিত হয়ে থাকেন ইলহামের মাধ্যমে।
[তাফসীরে বায়যাবী, খ.১৩, পৃ.৩৬৪]
সংক্ষিপ্ত কথা হলো, গায়েবের চাবি-কাঠি একমাত্র আল্লাহর নিকট। তিনি ছাড়া কেউ গায়েব জানে না। তবে, ফেরেশতা, নবী-রাসূল, ওলী ও অন্যান্যদেরকে যদি আল্লাহ তায়ালা গায়েব সম্পর্কে অবহিত করান, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে যতটুকু জানান, তারা কেবনল ততটুকুই জানে। (চলবে)
বিষয়: বিবিধ
২১৬৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
==============================
আপনার পোস্টটি বেশ চমৎকার। এটি অনেকের জন্য উপকারে আসবে। জাযাকাল্লাহ খয়রান।
======================
আপনার লিখাগুলি আমার জন্য অনেক উপকারী প্রমাণিত হয়েছে। আমি কি আপনার সাথে কোনভাবে যোগাযোগ করতে পারি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন