ইসলামে জাতীয়তাবাদের বিষয়টি নিয়ে উত্তর করেছেন শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ

লিখেছেন লিখেছেন সঠিক ইসলাম ২৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৯:১৭:০২ রাত

প্রশ্নঃ ইসলামে জাতীয়তাবাদের বিষয়টি নিয়ে আমার সহকর্মীদের সাথে আমার একটি আলোচনা হয়েছে, এতে আমার মনে বেশ কিছু প্রশ্ন জাগ্রত হয়েছে, আশা করি শরীয়াহর আলোকে প্রশ্নগুলোর সদুত্তর প্রদান করবেন।

১- প্রথমেই বলছি, ধরুন যেকোন একটি স্বাধীন দেশ যেখানে মুসলিমরা সংখ্যাপ্রধান, যদি তারা তাদের স্বাধীনতা দিবস পালন করে তাহলে ইসলামী শরীয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে এ স্বাধীনতা দিবস পালন কতটুকু সঠিক?

২-এটা কি আসাবিয়াহ? নাকি জাহিলিয়াহ? বা হারাম?

৩- শরীয়াহ অনুসারে আসাবিয়াহ’র সঠিক সংজ্ঞা কি?

৪- একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সেই ভূমি বা দেশের প্রতি অনুভূতি কিরূপ হওয়া উচিত যেখানে আমরা জন্ম গ্রহণ করেছি, বেড়ে উঠেছি, শিক্ষা গ্রহণ করেছি কিংবা চাকরি করছি? আমরা কি সেই ভূমির প্রতি ভালোবাসা অনুভব করতে পারি? এটা কি আসাবিয়াহ? জাতীয় উদযাপন যেগুলো ইসলামের শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক নয় সেগুলো কি আমরা উদযাপন করতে পারি? কি কি ধরণের জাতীয় উৎসব পালন নিষিদ্ধ আর কোনগুলো অনুমোদিত?

৫- কোন নির্দিষ্ট একটি দেশের পাসপোর্ট ব্যবহারের বিষয়ে কি বলবেন? যেখানে কোন একটি দেশের সাথে সংযুক্ততা কিংবা সংলগ্নতাকে জাহেলিয়া কিংবা আসাবিয়াহ বলে ধরা হয় কি?

৬- ইতিহাসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) গণের জীবন হতে কিছু উদাহরণ দেবেন কি, যাতে আমরা জানতে পারি তারা নিজেদের জন্ম ভূমির প্রতি কিংবা তাদের বসবাসকৃত ভূমির প্রতি কি ধরনের ভালোবাসা পোষণ করতেন?

প্রশ্নটির উত্তর করেছেন শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ,

আলহামদুলিল্লাহ,

প্রথমতঃ

স্বাধীনতা দিবস কিংবা এ ধরণের কোন দিবস পালনের অনুমতি নেই, কারণ তা কুফফারদের অনুকরণের দোষে দুষ্ট। ভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে, এটি এক প্রকারের বিদ’আত (অভিশপ্ত নব আবিষ্কৃত বিষয়)। কাজেই, এ ধরণের উদযাপন একই সাথে পাপকাজ এবং বিদ’আত।

ইবন আল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেন,

ঈদ শব্দটি দ্বারা এমন কিছুকে বোঝানো হয়ে থাকে যা বার বার ঘটে থাকে, সময় এবং স্থান উভয়ের দিক থেকেই।

সময়ের দিক থেকে, যেমন আমরা বলতে পারি, আরাফার দিন, কুরবানীর দিন এবং মিনায় অবস্থানকালের দিন ইত্যাদি মুসলিমদের জন্য ঈদ। এটাই আবু দাউদ এবং অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে,

আর স্থানের দিক হতে, উদাহরণস্বরূপ আবু দাউদের বর্ণনা হতে,

একজন লোক জানতে চাইল, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমি বাওয়ানাহতে একটি উট কুরবানী করার শপথ করেছি”। তিনি বলেন, “সেখানে কি মুশরিকদের কোন মূর্তি আছে, কিংবা তা কি তাদের কোন উৎসবের স্থান?” সে বলল, “না”। তিনি বললেন, “তাহলে তোমার শপথ পূর্ণ করে নাও”। এবং তিনি আরও বললেন, “আমার কবরকে উৎসবের স্থানে পরিণত করো না”।

ঈদ শব্দটি নেয়া হয়েছে মু’আওয়াদা শব্দের( যা বার বার ফিরে আসে) এবং ইতিয়াদ(যে কাজ বারবার করা হয়) একই শব্দমূল হতে। যদি এটি কোন স্থান নির্দেশ করে, তাহলে এটা সেই স্থানের কথা বলে যেখানে লোকেরা নিয়মিতভাবে জমায়েত হয় কোন উপাসনা কিংবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে, যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আল মাসজিদ আল হারাম (মক্কার পবিত্র মসজিদ), মিনা, মুযদালিফা, আরাফা এবং আল-মাশায়ির এর স্থানসমূহকে লোকসকলের নিয়মিত জমায়েত এর জন্য এবং একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন, এবং কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারিত করেছেন,আর সেই স্থানগুলোতে ইবাদতের দিনগুলোকে ঈদ হিসেবে নির্ধারিত করেছেন ।

মুশরিকদেরও স্থান এবং সময়ের দৃষ্টিকোণ হতে ঈদ (অর্থাৎ বিভিন্ন বার্ষিকী, দিবস ইত্যাদি) ছিল, (যেমন নির্দিষ্ট স্থান বা সময়ে সকলের জমায়েত) কিন্তু যখন ইসলামের আগমন ঘটল, এগুলো সব নির্মূল হল এবং তাওহীদবাদীদের জন্য ঈদ আল ফিতর এবং ঈদ আল আযহা ও মিনার দিবসের দ্বারা এগুলো সব প্রতিস্থাপিত হল। এবং এটা সেই স্থানগুলোকেও প্রতিস্থাপন করল যেখানে তারা উৎসব পালনের জন্য পবিত্র ঘর কা’বা, আরাফা, মিনা এবং আল মাশায়ির এর সাথে জমায়েত হত। - ইগাছাত আল লাহফান, ১/১৯০

মুসলিমদের জন্য হারাম কাজসমূহের মধ্যে একটি হল কুফফারদের অনুকরণ করা, বিশেষ করে তাদের উৎসবের অনুকরণ। এই উৎসবের বিষয়টি এবং নব আবিষ্কৃত উদযাপনসমূহ হল সেই বিষয়গুলোর একটি যেগুলো সম্পর্কে মুসলিমরা একেবারে উদাসীন হয়ে পড়েছে , শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম সমূহের পর হতে। অনেকেই পড়িমড়ি করে অন্য বিজাতির অনুকরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে,তাদের উৎসব উদযাপনের অনুকরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের কেউ কেউ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন (মিলাদ) পালনের বিদ’আত চালু করেছে, ইসরা আর মিরাজের রাত পালনের চল করেছে, আর এই জাতীয় উৎসবসমূহের তালিকা মুসলিমদের মধ্যে দিনের পর দিন কেবল বেড়েই চলেছে।

আমরা 10070 নং প্রশ্নের জবাবে একটি উদ্ধৃতি সংযুক্ত করেছি স্টান্ডিং কমিটি হতে,জাতীয় ছুটির দিবস ও অন্যান্য উদযাপনের বিষয়ে সেখানে আলোচনা করা হয়েছে। ফতওয়াটি দেখার অনুরোধ রইল।

দ্বিতীয়ত,

এই নিষিদ্ধ ও নব আবিষ্কৃত উদযাপনসমূহ সেই পুরনো গোত্রপ্রীতি ও বর্ণবাদকে উসকে দেয়, একই সাথে এ ধরনের দিবস উদযাপন মাধ্যমে ইউরোপীয় কলোনিয়ালিস্টদের দ্বারা মুসলিম ভূমিকে বিভক্ত করার কাজটিকে অনুমোদন দান করে, মুসলিমদের মধ্যে বিভাজন রেখা টেনে তারাই এক অভিন্ন মুসলিম ভূমিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভক্ত করেছে আর এক জাতিকে দলে উপদলে ভাগ করে দিয়েছে।

আল্লাহ বলেন, (আয়াতের অর্থঃ)

“হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন”। (আল হুজুরাত ১৩)

আল্লাহ মানব জাতিকে আদম ও তাঁর স্ত্রী হতে সৃষ্টি করেছেন, আর তাদের সন্তানাদি হতেই অন্যান্য সকল মানুষদের সৃষ্টি করেছেন, গোত্র, জাতি আর বর্ণের বৈচিত্র সৃষ্টি করেছেন। সকল মানুষের উৎপত্তি আদম ও হাওয়া (আ) হতে, আর কোন বর্ণ বা জাতি অন্যের চেয়ে শ্রেয়তর নয়। বরং আল্লাহর নিকট সবাই সমান তাদের উৎস, উৎপত্তির দিক হতে, আর যারা আল্লাহকে অধিক ভয় করে তারাই শ্রেষ্ঠ আর আল্লাহর সামনে সর্বাধিক সম্মানিত।

এরপরেও লোকেরা আজকে বিভিন্ন জাতিতে বিভক্ত হয়েছে, দেশে কিংবা বর্ণে, যাই হোক না কেন এসব বিভক্তি যেন

কেবল একটি পরিবারের ভাঙ্গনের গল্প, যেভাবে এক পিতা এবং এক মাতা হতে ভাইয়ে ভাইয়ে আলাদা হয়ে যায়।

এই আসাবিয়াহ’র ত্রুটিটি বর্তমানে অধিকাংশ দেশেই দেখা যাচ্ছে, আজকাল লোকেরা অধিকাংশ দেশেই নিজেদেরকে ছোট ছোট দলে উপদলে বিভক্ত করছে, কখনো জন্মভূমি, কখনো জাতি-গোষ্ঠী কিংবা নিছক গায়ের বর্ণের ভিত্তিতে, আর এটা সেই জাহেলি যুগে আউস ও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে চলে আসা আসাবিয়াহ’রই একটি উচ্ছিষ্ট অংশ।

হযরত মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করছেন, আউস ও খাযরাজের মধ্যে কয়েক শতাব্দী ধরে শত্রুতা ছিল,অথচ ইসলাম গ্রহণের পর তারাও বিভেদ ভুলে পরস্পরের ভাই ভাই হয়ে যায় এবং এর ফলে উভয়ের বিবাদে সুবিধাভোগী ইহূদীরা চোখে আঁধার দেখতে থাকে। তারা লোক নিযুক্ত করে যে, তারা যেন আউস ও খাযরাজের সভাস্থলে গমন করে এবং তাদেরকে তাদের পুরাতন যুদ্ধ-বিগ্রহ ও শত্রুতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাদের নিহত ব্যক্তিদের কথা যেন নতুনভাবে তাদের মনে করিয়ে দেয় এবং এভাবে যেন তাদেরকে উত্তেজিত করে তুলে। এ ঔষধ একদা তাদের উপর পড়েও যায় এবং উভয় গোত্রের মধ্যে পুরাতন অগ্নি প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠে। এমনকি তাদের মধ্যে তরবারী চালানোরও উপক্রম হয়। সেই অজ্ঞতার যুগের চিৎকার গণ্ডগোল শুরু হয়ে যায় এবং একে অপরের রক্ত পিপাসু হয়ে উঠে। স্থির হয় যে, তারা প্রাণ খুলে যুদ্ধ করবে এবং পিপাসার্ত ভূমিকে রক্ত পানে পরিতৃপ্ত করবে। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সংবাদ জানতে পেরে তৎক্ষণাত ঘটনাস্থলে এসে হাজির হন এবং উভয় দলকে শান্ত করে দেন। অতঃপর তিনি তাদের উভয় দলকে বলেন, “পুনরায় তোমরা অজ্ঞতা যুগের ঝগড়া শুরু করে দিলে? আমার বিদ্যমানবস্থায় তোমরা পরস্পরের মধ্যে তরবারী চালনা শুরু করলে?” অতঃপর তিনি তাদেরকে এই আয়াতটি পাঠ করে শুনিয়ে দেন।

“আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুন্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমুহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার”। (আলে ইমরান ১০৩)

যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের প্রতি এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন, তারা অনুশোচনা করলেন, নিজেদের ভুল বুঝতে পারলেন, এরপর তারা মিটমাট করে নিলেন এবং অস্ত্র ফেলে দিলেন।

চতুর্থতঃ ইসলাম একজন মুসলিমকে তাঁর মাতৃভূমি তথা যে দেশে সে বসবাস করে কিংবা বেড়ে উঠেছে সেদেশকে ভালোবাসতে নিষেধ করে না। বরং ইসলাম যে বিষয়টির নিন্দা করে তা হল এগুলো (দেশপ্রেম,জন্মভূমি) র উপর ভিত্তি করে কাউকে ভালোবাসা কিংবা ঘৃণা করা অথবা কারো প্রতি আনুগত্য বা অসহযোগিতার মাত্রা নির্ধারণ করা। একই দেশের নাগরিক না ভিন দেশের নাগরিক, তার উপর ভিত্তি করে কখনো কাউকে ভালোবাসা কিংবা ঘৃণা করা উচিত নয়, নিজ দেশের একজন সাধারণ নাগরিক ভিন দেশের একজন মুসলিমের চেয়ে অধিক নিকটের কেউ নয়। বরং আমাদের ওয়ালা আল বারাহ (বন্ধুত্ব ও অসহযোগিতা), ঘৃণা অথবা ভালোবাসা এসবের ভিত্তি হল ইসলাম ও তাকওয়া।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কাকে এই কারণে অত্যন্ত ভালোবাসতেন কারণ তা ছিল আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ভূমি, কিন্তু তিনি সেখানে ( মক্কায় ) বসবাসকারী কোন কাফিরকে ভালোবাসতেন না, বরং তিনি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন কারণ তারা রাসূলের নিজের স্বদেশী লোক হলেও তারা ইসলামে বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং মুসলিমদের হত্যা করেছে।

না তিনি আর না তাঁর কোন সাহাবা কোনদিন আল্লাহর আইন-কানুনের উপরে মক্কার প্রতি ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। কাজেই যখন আল্লাহ নিষেধ করলেন যে হজ্জ এবং এর পরবর্তী তিন দিন ব্যতীত কেউ মক্কায় অবস্থান করো না, তারা তা মান্য করলেন। যারা মক্কা থেকে হিজরত করেছিলেন তারা কেউ মক্কায় থেকে যাননি কিংবা সেখানে ফেরত যান নি। মক্কার প্রতি (জন্মভূমির) প্রতি ভালোবাসা তাদেরকে আল্লাহর অবাধ্যতা করায়নি, এর থেকে খারাপ কিছু করা দূরে থাকুক।

আজকে আসাবিয়াহ এর মাত্রা এতই বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যে, মুসলিম সংখ্যাপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও আগের যুগের শিরকের স্থানগুলোকে (দেশীয় সংস্কৃতি,হাজার বছরের ঐতিহ্য ইত্যাদি বলে) পুনঃসংস্কার করা হচ্ছে, সম্মান দেখানো হচ্ছে ! জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে কারণ তা একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করে, কাজেই লোকজন পতাকার সম্মানে কিয়াম করে (দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করে) স্যালুট করে, এমন (ভাবে দাঁড়িয়ে নীরবতায়) ভক্তি সহকারে তা করে যা তাদের সালাতেও দেখা যায় না, অথচ তখন তারা তাদের রবের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।

পঞ্চমতঃ পাসপোর্ট ব্যবহারকে আসাবিয়াহ (গোত্রবাদ) বা জাহেলিয়াহ হিসেবে গণ্য করা হয় না কারণ পাসপোর্ট শুধুমাত্র একজন মানুষকে চিহ্নিত করার সরল উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, যে লোকটি কোন দেশে বা এলাকার নাগরিক। আর যদি দেখা যায় যে, নিজেদের পাসপোর্ট তথা জন্মভূমি কিংবা বসবাসের স্থানকে নিয়ে কেউ গর্ব-বড়াই করছে আর অন্যদের কাছে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার চেষ্টা করছে, কিংবা জাতিগত অহংবোধ প্রকাশ করছে তাহলে এটা নি:সন্দেহে নিন্দনীয়।

ষষ্ঠতঃ ইতোমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কাকে ভালোবাসতেন এবং তিনি মক্কার প্রতি ভালোবাসার থেকে আল্লাহর প্রতি আনুগত্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

বর্ণিত আছে, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কাকে বলেছেন, “তুমি কত সুন্দর ভূমি, আর তুমি আমার কাছে কত প্রিয় ! আমার নিজেদের লোকেরা যদি আমাকে সেখান থেকে বের করে না দিত, তাহলে আমি কখনো অন্য কোথাও বসবাস করতাম না” (তিরমিযি,৩৯২৬ সহীহ)

সীরাহ জীবনী গ্রন্থসমূহ পাঠ করলে আমরা মক্কা থেকে হিজরতকারী সাহাবাদের জীবনেও একই ঘটনা দেখতে পাই। আর সবার ক্ষেত্রেই সাধারণভাবে যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে তা ছিল, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিংবা সাহাবাগণ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) মক্কাকে এত বেশি ভালোবাসতেন তার কারণ, সেটা ছিল আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় স্থান।

তিরমিযিতে বর্ণিত ৩৯২৫ নম্বর বর্ণনায় এসেছে, “তুমিই হলে আল্লাহর ভূমিগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম, আল্লাহর নিকট আল্লাহর ভূমিগুলোর মধ্যে তুমিই সবচেয়ে পছন্দনীয়” । ইবন হাজর একে সহীহ বলেছেন।

স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষ তার বেড়ে উঠার স্থানের প্রতি যে আবেগ অনুভব করে তা শরীয়াহর দৃষ্টিকোণ হতে নিন্দনীয় নয়, কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না এই ভালোবাসার কারণে সে ইবাদতের কার্যাবলী থেকে ও আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ কোন স্থানের প্রতি ভালোবাসার থেকে আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদাহ অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

আর একারণেই আমরা দেখতে পাই, সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম),মুহাজির আনসার নির্বিশেষে সকলেই নিজেদের স্বদেশভূমি ত্যাগ করেছেন এবং ভিন্ন দেশে গমন করেছেন,অন্যান্য দেশে ইসলামের ডাক পৌঁছে দিয়েছেন।

তারা যে উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন (দাওয়াত ও জিহাদ) তা কিছু নির্দিষ্ট ভূমি কিংবা ভবনের প্রতি ভালোবাসা আসক্তি-সংযুক্তির থেকে অনেক অনেক মহৎ।

আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

বিষয়: বিবিধ

১১৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File