মাযহাব ও তাকলীদের পক্ষ্যে ভারত উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ আলেম শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী (র.) এর ফতোয়া- যাকে আহলে হাদীসগণও মান্য করেন

লিখেছেন লিখেছেন সঠিক ইসলাম ১১ জানুয়ারি, ২০১৪, ০২:৫৫:২২ দুপুর

ইমরান ভাই লিখেছে -

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহদ্দিস দেহলবি (রহ) বলেছেন,

"আল ইনসাফ ফী বায়ানিল আসবাবীল ইখতিলাফ গ্রন্থে"

"প্রথম ২০০ হিজরীর আগে নিদৃস্ঠ কোন মাযহাব ত্বাকলিদ করার প্রচলন ছিলোনা। বরং এসব ফিকহি গ্রন্থ পড়ে রচিত হয়েছে" (বাংলা অনুদিত মতবিরোধ পূর্ন বিষয়ে সঠিক পন্থা অবলম্বনের উপায় গ্রন্থের অধ্যায় ৯)


এবার আমি তার বই এর কিছু অংশ নিজে টাইপ করে দিলাম, দেখুন তিনি বর্তমানে যে কোন এক মাজহাবের তাকলীদ করাকে ওয়াজিব বলেছেন, আর আহলে হাদীসরা তাকে ইমাম মেনেও তার নাম দিয়ে কিভাবে মিথ্যাচার করে। আমার এ পোষ্ট এর একটি লাইন যদি কেউ মিথ্যা প্রমাণ করতে পারে তবে আমি তাকে এক লক্ষ্ টাকা পুরস্কার দিব !

হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (র.) এর প্রসিদ্ধ কিতাব

আল-ইনসাফ ফী বায়ানি আসবাবিল ইখতিলাফ-

মতবিরোধপূর্ণ বিষয়ে সঠিকপন্থা অবলম্বনের উপায়।

কিতাবটির সূচিপত্র :

১. মতবিরোধমুক্ত সোনালী যুগ : রাসূলুল্লাহ (স.) এর যুগ।

২. মতবিরোধের ইতিহাসের সূচনা যুগ : সাহাবায় কেরামগণের যুগ।

শাইখাইনের কর্মনীতি

মতপার্থক্যের ভিত্তি সুচনা ও কারণ

প্রথম কারণ : রাসূলের হাদীস জানা না থাকার পার্থক্য

দ্বিতীয় কারণ : রাসূলের কাজের ধরণ নির্নয়ের পার্থক্য

তৃতীয় কারন : ধারণাগত বিশ্লেষণের পার্থক্য

চতুর্থ কারণ : ভুলে যাবার কারনে মতপার্থক্য

পঞ্চম কারণ : রাসুলের (স.) বক্তব্যের সঠিক উদ্দেশ্য আয়ত্ত না করার পার্থক্য

ষষ্ঠ কারণ : সামঞ্জস্য বিধানগত পার্থক্য

৩. মতবিরোধের ইতিহাসের দ্বিতীয় যুগ : তাবেয়ীগণের যুগ।

তাবেয়ীগণের মতপার্থক্য

ফিকাহ সংকলনের সূচনা

৪. মতবিরোধের ইতিহাসের তৃতীয় যুগ : তাবে তাবেয়ীগণের যুগ।

উলামায় তাবে তাবেয়ীন

তাবে তাবেয়ী আলিমগণের চিন্তা ও কর্মপদ্ধতি

৫ প্রসিদ্ধ ফিকহি মাযহাবসমূহ

ইমাম মালিক ও মালিকী মাযহাব

ইমাম আবু হানীফা ও হানাফী মাযহাব

ইমাম শাফেয়ী ও শাফেয়ী মাযহাব

৬. আহলে হাদীস

হাদীসের অনুসৃতি

হাদীস সংকলনের যুগ

হাদীস বিশারদগণের ফিকাহ এর প্রতি মনোযোগ

নতুন উসুলে ফিকাহ

উসূলগুলোর উৎস

ফিকাহর এই পদ্ধতির সাফল্য

হাদীসের চুলচেরা বিশ্লেষণের যুগ

এক: আবু আব্দুল্লাহ আল বুখারী

দুই:মুসলিম নিশাপুরী

তিন:আবু দাউদ সিজিস্তানী

চার:আবু ইসা তিরমিযী

৭. আহলুর রায়

ইজতিহাদী রায়ের প্রবণতা

তাখরীজের কারণ

তাখরীজ কি?

মাযহাবী মুজতাহীদ

কিছু মাযহাব প্রসারিত আর কিছু মাযহাব সংকুচিত হবার কারণ

৮. সঠিক পন্থা ও সুষম নীতি

সঠিক পন্থা হলো মধ্যপন্থা

আহলে হাদীসের বাড়াবাড়ি

আহলুর রায়ের বাড়াবাড়ি

৯. তাকলীদ

তাকলীদবিহীন যুগ

ব্যক্তিকেন্দ্রিক তাকলীদের সুচনা

তাকলীদের অপরিহার্যতা এবং এর সঠিক অর্থ

একটি অভিযোগ এবং তার জবাব

কখন নির্দিষ্ট ইমামের তাকলীদ করা ওয়াজিব

১০. ইজতিহাদ

ইজতিহাদে মতলক

মুজতাহিদ মতলকের প্রকারভেদ

মুজতাহিদ মতলক মুসতাকিল এবং তার বৈশিষ্ট্য

মুজতাহিদ মতলক মুনতাসিব

মুজতাহিদ ফিল মাযহাব

প্রাচীনরা উসুলে ফিকাহ সংকলন করেননি কেন ?

চার মাযহাবের ইজতিহাদের ইতিহাস

১১. চতুর্থ হিজরী শতাব্দীর পর ফিকহী মতপার্থক্যের গতিধারা

১২. মতবিরোধপূর্ণ বিষয়ে সঠিকপন্থা অবলম্বনের উপায়

এবার আমরা অত্র কিতাবের মাযহাব ও তাকলীদ বিষয়ক কিছু অংশ দেখব যে, শাহ ওয়ালিউল্লাহ (র.) মাযহাব ও তাকলীদের ব্যাপারে কি বলেছেন।



পঞ্চম অধ্যায় : প্রসিদ্ধ মাযহাবসমূহ


এর দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ইমাম আবু হানীফা ও হানাফী মাযহাব অংশে তিনি লিখেছেন - ইমাম আবু হানীফা কঠোর ভাবে ইব্রহীম নাখয়ীর স্বখেয়ালের উলামায় তাবেয়ীনের মসলক অনুসরন করেন। কদাচিতই তিনি তাদের অনুসরণ থেকে বিচ্যুত হতেন। এই মসলকের ভিত্তিতে পূর্ণ দক্ষতার সাথে মাসায়েল বের করার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বিরাট মর্যাদার অধিকারী। মাসায়েল তাখরীজের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অত্যন্ত বাস্তবধর্মী ও যুক্তিবাদী। তার পুরো দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল ক্ষুদ্র ও খুটিনাটি বিষয়গুলোর বিশ্লেষণের প্রতি। তুমি যদি তার সম্পর্কে আমার মন্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে চাও, তবে ইমাম মুহাম্মদের 'কিতাবুল আছার', আব্দুর রাযযাকের 'জামে' এবং আবু বকর ইবনে শাইবার 'মুসান্নেফ' গ্রন্থ থেকে ইব্রাহীম নাখয়ীর বক্তব্যগুলো বেছে বেছে বের করে নাও। অতপর আবু হানীফার মাযহাবের সাথে সেগুলো মিলিয়ে দেখো। তুমি দেখতে পাবে, দুয়েকটি জায়গা ছাড়া কোথাও তার কদম ইব্রাহীম নাখয়ীর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও মসলক থেকে বিচ্যুত হয়নি। আর সেই ব্যতিক্রম দুয়েকটি জায়গায়ও আবু হানীফা নিজের পক্ষ থেকে অভিনব কোন পন্থা অবলম্বন করেন নি, বরং কুফারই অন্য কোন না কোন ফকীহর অনুসরণ করেছেন।

আবু হানীফার ছাত্রদের মধ্যে সর্বাধিক মশহুর ছিলেন আবু ইউসুফ। হারুনুর রশীদের শাসনকালে ইনি প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন। তার অপর অনছাত্র মুহাম্মদ ইবনুল হাসান গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা ও সংকলনের দিক থেকে অন্য সকলের তুলনায় অগ্রগণ্য ছিলেন। দরস ও তাদরীসের ক্ষেত্রেও ছিলেন অনন্য। প্রথমত তিনি আবু হানীফা এবং আবু ইউসুফের নিকট থেকে ফিকাহর জ্ঞান লাক করেন। অতপর মদীনায় গিয়ে ইমাম মালিকের নিকট থেকে ফিকাহর জ্ঞান লাভ করেন। অতপর নিজেই চিন্তা গবেষণার কাজ শুরু করেন। স্বীয় উস্তাদ আবু হানীফা ও আবু ইউসুফের প্রত্যেকটি মাসআলা মুআত্তার আলোকে পর্যালোচনা করেন। যেগুলোর মধ্যে মিল খুজে পেয়েছেন, সেগুলো তো আনন্দ চিত্তেই গ্রহণ করেছেন। আর যেগুলোতে উভয়ের মধ্যে মতপার্থক্য পেয়েছেন, সেগুলোর ব্যাপারে পুনরায় গবেষণা করেছেন। তন্মধ্যে যেটিকে কোন সাহাবী বা তাবেয়ীর মতের অনুরুপ পেয়েছেন, সেটির ব্যাপারেও হানাফী মসলককেই গ্রহণ করেন। আর যেটিকে দূর্বল কিয়াস ও দূর্বল ইস্তিম্বাতের উপর প্রতিষ্ঠিত পেয়েছেন এবং ফকীহদের অনুসৃত সহীহ হাদীস ও অধিকাংশ আলেমদের মতের বিপরীত পেয়েছেন, সেটির ব্যাপারে নিজের মাযহাব ত্যাগ করে অর্থাৎ আবু হানীফা ও আবু ইউসুফের সাথে একমত না হয়ে সাহাবী কিংবা তাবেয়ীদের মধ্য থেকে এমন কারো মত গ্রহণ করেছেন, যার মতটি তার কাছে সর্বাধিক যুক্তযুক্ত মনে হয়েছে।

আবু হানীফার এ দুজন ছাত্র তারই মত যথাসম্ভব ইব্রাহীম নাখয়ীর মাযহাবের অনুসরণ করেছেন। তবে দুটি অবস্থায় কখনো কখনো উস্তাদের (আবু হানীফা) সাথে মতপার্থক্য হয়েছে।:

১. কখনো এমন হয়েছে যে, আবু হানীফা ইব্রাহীম নাখয়ীর মাযহাবের ভিত্তিতে কোন মাসআলা বের করেছেন, কিন্তু আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মদ এই তাখরীজকে গ্রহণ করেন নি।

২. কখনো এমন হতো যে, কোন একটি মাসআলার ব্যাপারে ইব্রাহীম নাখয়ীসহ কুফার অন্যান্য ফকীহদের মধ্যে মতপার্থক্য পাওয়া যেতো, যেখানে কোন একটি মতকে অগ্রাধিকার দেবার প্রশ্ন দেখা দিতো। এমতাবস্থায় অনেক সময় তাদের মত আবু হানীফার মতের অনুরুপ হতো না।

আগেই বলেছি, ইমাম মুহাম্মদ গ্রন্থ রচনা ও সংকলনের প্রতি দৃষ্টিবান ছিলেন। তিনি এই তিন জনের (ইব্রাহীম নাখয়ী, আবু হানীফা, আবু ইউসুফ) রায়সমূহ সংকলন করে ফেলেন, যার ফলে উপকৃত হতে থাকে অসংখ্য মানুষ। পরবর্তী সময় হানাফী আলিমগণ অত্যান্ত গুরুত্ব সহকারে তার গ্রন্থাবলীর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন। তারা এগুলোর সার নির্যাস বের করেন, তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন এবং সহজে বুঝবার উপযোগী করে তোলেন। সেগুলোর ভিত্তিতে আরো অনেক মাসায়েল ইস্তেম্বাত করেন এবং দলিল-আদিল্লা যুক্ত করে সেগুলোকে মজবুত করেন। অতপর তারা এসব গ্রন্থাবলী সাথে নিয়ে সমুদ্র পেরিয়ে প্রাচ্যের দিকে ছড়িয়ে পড়েন আর সেসব গ্রন্থের সকল মাসায়েল আবু হানীফার মযহাব বলে গন্য হতে থাকে।

এভাবে আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মদের মাযহাবও আবু হানীফার মাযহাব বলেই গন্য হতে থাকে। তিনজনকে একই মাযহাবের সাথে একাকার করে ফেলা হয়। অথচ এরা দুজনই ছিলেন স্বাধীন মুজতাহীদ। আবু হানীফার সাথে মূলনীতি ও খুটিনাটি বিষয়ে তাদের মতপার্থক্য মোটেও কম ছিল না। তাদেরকে একই মাযহাব বলে গন্য করার কারণ ছিল এই যে,

১. একটি ব্যাপারে তাদের তিনজনের মধ্যেই মিল ছিলো অর্থাৎ তারা তিনজনই একজনের (ইব্রাহীম নাখয়ী) মাযহাবের অনুসারী।

২. দ্বীতিয়ত, মাবসুত এবং জামেউল কাবীর গ্রন্থে তাদের তিন জনের মাযহাবই একত্রে সংকলিত হয়েছে।

নবম অধ্যায় : তাকলীদ :

তাকলীদ বিহীন যুগ :


জেনে রেখো, পহেলা এবং দ্বিতীয় হিজরী শতাব্দীতে কোন নির্দিষ্ট ফিকহী মাযহাবের তাকলীদ করার প্রচলন ছিল না। তখন মুসলমানদের মধ্যে দুই শ্রেনীর লোক ছিল। এক শ্রেনীর লোকেরা ছিলেন আলিম আর অপর শ্রেনীর লোকেরা ছিলেন সাধারণ মুসলমান। সাধারণ মুসলমানরা সর্বসম্মত বা মতবিরোধহীন মাসআলাসমূহের ক্ষেত্রে মুজতাহিদগণের তাকলীদ করতেন না, বরঞ্চ সরাসরি শরীয়ত প্রণেতা আলাইহিস সালামের অনুসরণ করতেন। তারা ওযু গোসল প্রভৃতির নিয়ম পদ্ধতি এবং নামায যাকাত প্রভৃতির বিধান তাদের মুরব্বিদের নিকট থেকে অথবা নিজেদের এলাকার আলিমদের থেকে শিখতেন এবং সেই অনুযায়ী আমল করতেন। আর যখন বিরল ঘটনা ঘটতো তখন মত ও মাযহাব নির্বিশেষে যে কোন মুফতী তারা পেতেন তার নিকটই সে বিষয়ে ফতোয়া চাইতেন। ইবনে হুমাম তার 'আত-তাহরীর' গ্রন্থের শেষ দিকে লিখেছেন, :-

"সেকালে লোকেরা কখনো একজন আলিমের নিকট ফতোয়া চাইতেন আবার কখনো আরেকজন আলিমের নিকট। কেবল একজন মুফতির নিকটই ফতোয়া চাওয়ার নিয়ম ছিল না"।

আলিম শ্রেনীর লোকেরা আবার দুই ধরনের ছিলেন।

১. এক ধরনের আলিম ছিলেন তারা, যারা কিতাব, সুন্নাহ এবং আছারে সাহাবার উপর গবেষণা ও অনুসন্ধান কাজে নিজেদের জ্ঞান ও বুদ্ধি-বিবেককে পূর্ণশক্তি প্রয়োগ করেন এবং এতোটা উচ্চতর যোগ্যতা অর্জন করেন যে, জনগন ফতোয়ার ব্যাপারে তাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। আর তারা ফতোয়া দানের ক্ষেত্রে এতোটা বুৎপত্তি লাভ করেন যে, সাধারণত সকল মাসায়েলের জবাব দানের যোগ্যতা অর্জন করেন। কোন মাসায়েলের জবাব দান থেকে বিরত থাকার ঘটনা তাদের ক্ষেত্রে কদাচিতই ঘটতো। জ্ঞান গবেষণা ও ফতোয়া দানের ক্ষেত্রে এমন বুৎপত্তির অধিকারী আলীমদেরকেই বলা হয় "মুজতাহিদ"।

এরুপ (ইজতিহাদী) যোগ্যতা দুভাবে অর্জিত হয়। কখনো সম্ভাব্য সকল পক্রিয়ায় প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে রেওয়ায়েত সংগ্রহ করার মাধ্যমে এ যোগ্যতা অর্জন করা হয়। কারণ, আহকামের একটা বিরাট অংশ রয়েছে হাদীসের মধ্যে। আরেকটা বিরাট অংশ রয়েছে সাহাবায় কেরাম, তাবেয়ী এবং তাবে তাবেয়ীগণের আছারের মধ্যে। (তাই একজন মুজতাহিদ অত্যন্ত সাফল্যের সাথে এই রেওয়ায়েতের ভান্ডার থেকে মাসায়েল অবগত হতে পারেন)। আর এ কথাতো পরিস্কার যে, একজন চোখ-কান খোলা বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন আলিম ভাষা এবং বাক্য প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে অনবহিত থাকেন না। তাছাড়া এমন ব্যাক্তিকে বিরোধপূর্ণ রেওয়ায়েতের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের নিয়ম পদ্ধতি এবং দালায়েলের তারতীব নির্ধারন প্রভৃতি বিষয়েও বুৎপত্তির অধিকারী হতে হয়। এরুপ যোগ্যতার বাস্তব উদাহরন হলেন দুই মহান ইমাম, আহমদ ইবনে হাম্বল এবং ইসহাক ইবনে রাহুইয়া (রাHappy

আবার কখনো তাখরীজের তরীকাসমূহকে পূর্ণভাবে আত্মস্থ করা এবং প্রত্যেকটি বিষয়ে ফিকাহর ইমামগণ বর্ণিত উসূলী নিয়ম কানুন আয়ত্ত করার মাধ্যমে এ যোগ্যতা অর্জিত হয়। তবে সেইসাথে হাদীস এবং আছারের একটা যুক্তিসংগত পুঁজি আয়ত্ত থাকা শর্ত। এরুপ ইজতিহাদী যোগ্যতার পূর্ণাঙ্গ উদারণ হলেন দুই মহান ইমাম, আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মদ ইবনুল হাসান (র.)।

২. আরেক ধরনের আলিম ছিলেন তারা, যারা কুরআন ও সুন্নাহর উপর এতোটাই বুৎপত্তি রাখতেন যে, ফিকাহর মূলনীতি এবং মৌলিক মাসআলাসমূহ বিস্তারিত দলিল প্রমাণের সাথে অবগত হবার যোগ্যতা রাখতেন। কিছু কিছু প্রাসঙ্গিক মাসআলার ক্ষেত্রে নিজেরাই রায় প্রতিষ্ঠার যোগ্যতা রাখতেন। অবশ্য এরুপ কিছু কিছু মাসআলার ক্ষেত্রে আবার নীরবতা অবলম্বন করতেও বাধ্য হতেন এবং এসব ক্ষেত্রে অন্যান্য বিশেষজ্ঞ আলিমগণের পরামর্শ গ্রহণ করতেন। কেননা, স্বাধীন মুজতাহিদের মতো তারা ইজতিহাদের পরিপূর্ণ যোগ্যতা রাখতেন না। অতএব এসব আলিম কিছু কিছু মাসায়েলের ক্ষেত্রে ছিলেন গায়রে মুজতাহিদ। সাহাবী এবং তাবেয়ীগণের ব্যাপারেতো মুতাওয়াতির বর্ণনার মাধ্যমে একথা প্রমাণিত যে, যখনই তাদের নিকট কোন হাদীস পৌছতো, তখন তারা কোন প্রকার বাধা নিয়মের তোয়াক্কা না করেই তার উপর আমল করতেন।

ব্যক্তিকেন্দ্রিক তাকলীদের সূচনা :

তৃতীয় হিজরী শতাব্দী ব্যাক্তিগত পর্যায়ে মুজতাহিদদের তাকলীদের বার্তা নিয়ে আসে। লোকেরা একজন নির্দিষ্ট মুজতাহিদের মাযহাব অনুসরণের বন্ধনে নিজেদেরকে বন্দী করে নেয়। এক ব্যাক্তির তাকলীদ করার বন্ধন থেকে খুব নগন্য সংখ্যক লোকই মুক্ত থাকে।
এরুপ তাকলীদ করাকে লোকেরা তখন অপরিহার্য বানিয়ে নিয়েছিল। এর একটি বিশেষ কারনও ছিল। তা হলো, কোন ফিকাহ চর্চাকারী কোন অবস্থাতেই দুটি অবস্থা থেকে মুক্ত ছিল না।

১. একটি হলো এই যে: হয়তো তার যাবতীয় প্রচেষ্টা নিবদ্ধ হয় ইতিপূর্বে মুজতাহিদগণ যেসব মাসায়েলের জবাব দিয়ে গিয়েছিলেন, সেগুলো অবগত হওয়া, সেগুলোর দলীল প্রমাণ আয়ত্ত করা, সেগুলোর প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করা এবং কোনটির উপর কোনটি অগ্রাধিকারযোগ্য তা নির্নয় করার কাজে। এটান ছিল একটা বড় কঠিন কাজ। এমন একজন মুজতাহিদ ইমামের অনুসরণ ছাড়া এ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব ছিল না, যিনি ফিকাহর প্রতিটি অধ্যায়ে মাসআলাকে বিভক্ত করে বর্ণনা করেছেন এবং দলীল প্রমাণযুক্ত করে মাসআলাসমূহকে শক্তি ও সমৃদ্ধি দান করেছেন। এরুপ ইমামের অনুসরণ এজন্যে প্রয়োজন ছিল যাতে তার প্রদত্ত দলিল প্রমান ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের সাহায্যে যাবতীয় মাসায়েল খাতিয়ে দেখা যায় এবং একটিকে আরেকটির উপর অগ্রাধিকার দেয়া যায়। এরুপ কোন মুজতাহিদ ইমামের ইকতিদা করার সুযোগ না পেলে তার জন্যে একজন সফল ফকীহ হবার পথ জটিল হয়ে পড়তো। আর এ কথাতো অনস্বীকার্য যে, কোন কাজের সহজ পথ খোলা থাকতে জটিল পথে অগ্রসর হবার কোন অর্থ হয় না।

ফিকাহর এই গবেষক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে একটি কথা খুবই বাস্তব যে, তিনি তার ইমাম মুজতাহিদের (যার অনুসরণ তিনি করেছেন) কোন বক্তব্যকে উত্তম মনে করে তার সাথে একমত হবেন। আবার কোন কোন বক্তব্যের সাথে দ্বিমতও পোষণ করবেন। এক্ষেত্রে সামগ্রিক পর্যালোচনায় যদি তার ঐকমত্য অধিক হয় আর মতপার্থক্য হয় কম, তবে এই গবেষক ফকীহকে সেই ইমাম মুজতাহিদের মাযহাবের 'আসহাবুল উজুহ' এর অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হয়। (আসহাবুল উজুহ সেইসকল আলিমগণকে বলা হয়, যারা কোন ইমাম মুজতাহিদের মুকাল্লিদ এবং তার মূলনীতি ও বক্তব্যকে ভিত্তি করেই মাসায়েল ইস্তেম্বাত করেন বটে, কিন্তু প্রাসঙ্গিক মাসায়েলের ক্ষেত্রে নিজস্ব বিশেষ বিশেষ দলিল পমাণের ভিত্তিতে ইমাম মুজতাহিদের সাথে আবার মতপার্থক্যও করেন। এ ধরনের ইখতিলাফি মতামতও সেই ইমাম মুজতাহিদের মাযহাবের অংশ বলে গণ্য করা হয়।) পক্ষান্তরে মতপার্থক্য যদি অধিক হয়, তবে তাকে উক্ত মাযহাবের 'আসহাবুল উজুহর অন্তর্ভূক্ত গণ্য করা হয় না। কিন্তু তা সত্বেও তাকে ঐ ইমামের মাযহাবের ফকীহ বলেই গণ্য করা হয়। তবে ইনি ঐ সমস্ত লোকদের থেকে আলাদা বৈশিষ্টের অধিকারী, যারা অপর কোন ইমামের এবং তার মাযহাবের অধিকাংশ মূলনীতি ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ইকতিদা করেন।

তাছাড়া, এই আলিমের ইজতিহাদের মধ্যে এমনসব মাসআলার জবাবও পাওয়া যায়, যেসব বিষয়ে তার পূর্বেকার ফকীহদের ইজতিহাদে কোন জবাব পাওয়া যায়নি। এমনটিতো হবেই। কারণ, মানুষ নিত্য নতুন সমস্যার সম্মুখীন হয় আর ইজতিহাদের দরজাও রয়েছে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। এমতাবস্থায় ইজতেহাদ করাতো তার জন্যে অপরিহার্য হয়ে পড়ে। তাই এ ধরনের (নতুন) ঘটনায় তিনি স্বীয় ইমামের চিন্তা বাদ দিয়ে সরাসরি কুরআন, সুন্নাহ এবং আছার অনুসন্ধান করেন এবং মাসআলা ইস্তেম্বাত করেন। তবে এরুপ নতুন মাসায়েল নি:সন্দেহে ঐসব মাসায়েলের তুলনায় অনেক কম, যেগুলোর জবাব পূর্ববর্তী ইমাম ও আলিমগণ প্রদান করেছেন। এরুপ মুজতাহিদকে সম্পর্ক রক্ষাকারী স্বাধীন মুজতাহিদ (মুজতাহিদ মতলক মুনতাসিব) বলা হয়।

২. দ্বিতীয় অবস্থা হলো এই হতে পারে যে, তিনি ঐ সমস্ত মাসায়েল অবগত হবার জন্যে সর্বাধিক মনোনিবেশ করবেন, যেগুলো ফতোয়া জিজ্ঞাসাকারীরা জিজ্ঞাসা করে, অথচ পূর্ববর্তী ইমাম ও আলিমগণ সেগুলোর জবাব দিয়ে যান নি। এই ফকীহ এমন একজন ইমাম মুজতাহিদের ইকতিদা করার ক্ষেত্রে পূর্বোক্ত ফকীহর চাইতেও অধিক মুখাপেক্ষী, যার সংকলিত ফিকহী মূলনীতি থেকে প্রতিটি অধ্যায়ে তার জন্যে ফায়দা হাসিল করা সম্ভব। কেননা, ফিকহী মাসায়েল সমূহ তো পুতির মালার মতো একটার সাথে আরেকটা গ্রথিত এবং সকল প্রাসঙ্গিক বিষয় মূল বিষয়ের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। এমতাবস্থায় তিনি যদি সকল মাযহাবের ফিকাহর যাচাই বাছাই এবং সকল মুজতাহিদের ইজতিহাদের চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করেন, তবে তিনি নিজেকে এমন এক অথৈ সমুদ্রে নিক্ষেপ করবেন, জীবনভর চেষ্টা করেও যা অতিক্রম করা সম্ভব হবে না এবং সম্ভবত জীবনেও কুলকিনারয় পৌছুতে পারবেন না। সুতরাং তার জন্যে পথ একটাই খোলা থাকে। তা হলো, অতীতে যেসব মাসায়েলের জবাব দেয়া হয়েছে, সেগুলোর ভিত্তিতে চিন্তা গবেষণা করে প্রাসঙ্গিক মাসায়েলসমূহের জবাব দেবেন। তবে ইমাম মুজতাহিদের সাথে তার কোথাও মতপার্থক্য হবে না যে তা নয়। কখনো কখনো কুরআন, সুন্নাহ, আছার ও স্থায়ী কিয়াসের ভিত্তিতে ইমামের সাথে তার মতপার্থক্য হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু তা হবে মতৈক্যের তুলনায় নেহাত কম। এরুপ মুজতাহিদকে মুজতাহিদ ফীল মাযহাব (মাযহাবের অন্তর্ভূক্ত মুজতাহিদ) বলা হয়।

তৃতীয় একটা অবস্থা এই হতে পারে যে, প্রথমত: তিনি ঐ সমস্ত মাসায়েল জানার জন্যে তার পুরো প্রচেষ্টা নিয়োজিত করবেন, ইতিপূর্বে মুজতাহিদ ও আলিমগন যেগুলোর জবাব প্রদান করেছেন। অত:পর কোন এক পর্যায়ে গিয়ে নিজের মনোনিত ও পছন্দনীয় মাসায়েলগুলোর ভিত্তিতে আরো অধিক প্রাসঙ্গিক মাসায়েল বের করার কাজে আত্মনিয়োগ করবেন। কিন্তু এরুপ করতে পরাটা একেবারেই অসম্ভব ও অবাস্তব। কেননা, ওহী অবতীর্ণের বরকতময় যুগ এই লোকদের অনেক আগেই অতীত হয়ে গেছে। সে কারনে এ সময়কার প্রত্যেক আলিম অসংখ্য জরুরী ইলমী বিষয়ে অতীত আলিমগণের মুখাপেক্ষী। তাকে অতীত আলিমগণের সুত্রেই জানতে হবে হাদীসসমূহের মতন ও সনদগত পার্থক্য, রাবীগণের মর্যাদাগত পার্থক্য, হাদীসের বিশুদ্ধতা ও দূর্বলতাগত তারতম্য এবং মতবিরোধপূর্ণ হাদীস ও আছারসমূহের মধ্যে সমতা বিধানের পন্থা। তাদের সূত্রেই তাকে জানতে হবে কোনসব হাদীস ফীকাহর উৎস ? জটিল ও অপ্রচলিত শব্দাবলীর বিশ্লেষণ কিভাবে করতে হয় ? উসুলে ফিকাহর জ্ঞান লাভ করার পন্থা কি ? এবং ঐ সকল মাসায়েল পূর্ণ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং পারস্পরিক বিরোধের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে বর্ণনা করা পন্থা কি, যেগুলো অতীত মুজতাহিদ ও আলিমগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে ? তাছাড়া ঐসকল বিরোধপূর্ন রেওয়ায়েত ও মাসয়েল সম্পর্কে চিন্তা গবেষণা করার পর সেগুলোর ফয়সালা করা এবং সেগুলোকে দলিল প্রমাণের কষ্টিপাথরে যাচাই করার পন্থাও তাকে তাদের সূত্রে গহণ করতে হবে। এই অসংখ্য জিনিসের জ্ঞান লাভ করতে করতে যখন তিনি জীবন সায়াহেৃ এসে পৌছুবেন, তখন আরো জরুরী ও প্রাসঙ্গিক মাসায়েল উদ্ভাবন করার কাজে আত্মনিয়োগ করা তার পক্ষে কেমন করে সম্ভব হতে পারে ? আর মানুষ যতো মেধাবীই হোক না কেন, তার একটা সীমা আছে। এ সীমার বাইরে কিছু করতে সে অক্ষম

অবশ্য চিন্তা গবেষণা ও দৃষ্টিভঙ্গির এই পূর্ণতা ঐসব আলিমরা অবশ্যি লাভ করেছিলেন, যারা ওহী বন্ধ হবার কাছাকাছি যুগে ইজতিহাদের শিরচুড়ায় আরোহণ করেছিলেন। কারন, তাদের ইজতিহাদের যুগ এবং ওহী বন্ধ হবার সময়ের মধ্যে খুব বেশী ফারাক ছিল না। তখন জ্ঞান বিজ্ঞান এ সময়কার মতো বেশুমান শাখা প্রশাখায় সম্প্রসারিত হয়নি এবং ইজতিহাদকৃত মাসায়েলের বিরাট সম্ভার সমুপস্থিত ছিল না। কিন্তু তা সত্বেও মাত্র গুটিকয়েক লোকের পক্ষেই এই পূর্ণতা লাভ করা সম্ভব হয়েছিল। আর এ গুটিকয়েক লোকের অবস্থাও এরুপ ছিলো যে, তাদের পূর্ণতার সমস্ত বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকা সত্বেও তারা স্বীয় উস্তাদগণের অনুসরণের বন্ধন থেকে মুক্ত ছিলেন না। উস্তাদগণের ইলমী পথ-নির্দেশনার সাহায্যেই তারা ইজতিহাদের পথে পা বাড়ান। কিন্তু যেহেতু তারা এই শাস্ত্রে যথেষ্ট পরিশ্রম করে গেছেন এবং চিন্তা গবেষণার বিরাট ভান্ডার সৃষ্টি করে গেছেন, সেহেতু তারা স্বাধীন ও স্বয়ংসম্পূর্ণ ইমাম ও মুজতাহিদের মর্যাদা লাভ করেছিলেন।

তাকলীদের অপরিহার্যতা :

মোটকথা, মুজতাহিদ ইমামগনের মাযহাব অনুসরণ করাটা এমন একটি কুদরতী রহস্য, যা আল্লাহ (হিকমত ও কল্যাণের খাতিরে) আলিমদের অন্তরে ইলহাম করে দিয়েছেন। আর এ ব্যাপারে সচেতনভাবে হোক কিংবা অচেতনভাবে, তারা একমত হয়েছেন।`


শাফেয়ী ফকীহ ইবনে যিয়াদ ইয়ামেনীর বক্তব্যে আমাদের উপরোক্ত মতের প্রতি সমর্থন রয়েছে। দুটি প্রশ্নের জবাবে ইমাম বুলকীনী ইমাম শাফেয়ীর মতের বিপক্ষে ফতোয়া দিয়েছিলেন, তার জবাবে ইবনে যিয়াদ ইয়ামেনী বলেন: "তোমরা ততোক্ষণ পর্যন্ত বুলকীনীর বক্তব্যের মর্ম উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে না, যতোক্ষণ না তার ইলমী মর্যাদা অবগত হবে। তিনি ছিলেন মুজতাহিদ মতলক মুনতাসিব, গায়রে মুস্তাকিল এবং আতলুত তাখরীজ ও তারজীহ। 'মুজতাহিদ মতলক মুনতাসিব' বলে আমি বুঝাচ্ছি, তিনি এমন ব্যাক্তি যিনি ঐ ইমামের মাযহাবে অগ্রগণ্যতার অধিকার রাখেন, যে ইমামের মাযহাবের সাথে তিনি সম্পর্কিত। এমনকি মাযহাবের ভিতরে প্রাধান্য পাওয়া কোন মতেরও তিনি বিরোধিতা করার যোগ্যতা রাখেন। শাফেয়ী মাযহাবের প্রাচীন ও পরবর্তী অধিকাংশ শ্রেষ্ঠ আলিমের অবস্থাই অনুরুপ। সম্মুখে তাদের বৃত্তান্ত ও মর্যাদাগত ক্রমক পর্যালোচনা উল্লেখ করা হবে। বুলকীনীকে যারা মুজতাহিদ মতলক মুনতাসিব বলে গণ্য করেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ছাত্র আবু যুরআ। তিনি বলেন, " একবার আমি আমার উস্তাদ ইমাম বুলকীনীকে জিজ্ঞেস করলাম : শাইখ তকীউদ্দীন সবকী ইজতিহাদের রাজপথে চলেন না কেন, তার মধ্যে তো ইজতিহাদের সমুদয় শর্তাবলী বর্তমান ? তিনি কি কারনে তাকলীদ করেন ? আবু যুরআ বলেন, আমি লজ্জায় তার (বুলকীনীর) নাম আর উল্লেখ করলাম না। অথচ তার সম্পর্কেও আমার একই প্রশ্ন! আমার প্রশ্ন শুনে তিনি চুপ থাকেন। অত:পর আমি নিজেই জবাব দিতে লাগলাম: আমার মতে, সেই সরকারী চাকুরী চলে যাবার ভয়ে তিনি এমনটি করছেন, যা চার মাযহাবের ফকীহদের জন্যে নির্ধারিত রয়েছে। কারণ, যে ব্যাক্তি চার মাযহাব থেকে খারিজ হয়ে স্বাধীনভাবে ইজতিহাদ করবেন, তার সরকারী চাকরী হবে না। বিপারপতির পদ তার জন্য হারাম হয়ে যাবে। লোকেরা তার কাছে ফতোয়া চাইতে আসবে না এবং তাকে বেদাতী বলে আখ্যায়িত করবে। আমার বক্তব্য শুনে তিনি মুচকি হাসলেন এবং এর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করলেন।" কিন্তু আবু যুরআর বক্তব্যের প্রতি আমার মন সায় দেয় না। এই নিকৃষ্ট স্বার্থ তাদেরকে কী করে ইজতিহাদ থেকে বিরত রাখতে পারতো তা আমার বুঝে আসে না। ইজতিহাদের সমূদয় শর্তাবলী তাদের মধ্যে বর্তমান থাকা সত্বেও বিচারপতির পদ এবং উপার্জনের উপায় উপকরণ তাদেরকে ইজতিহাদ থেকে বিরত রাখবে, এমন অবস্থা থেকে তাদের মর্যাদা তো অনেক উর্দ্ধে ছিল। এই মনীষীদের সম্পর্কে এরুপ খারাপ ধারনা কিছুতেই বৈধ হতে পারে না। কেননা, ইজতিহাদের পূর্ণ যোগ্যতা যাদের রয়েছে, তাদের জন্যে ইজাতিহাদ করা যে ওয়াজিব এ ব্যাপারে আলিমগণ সর্বসম্মত রয়েছে, একথা আগেই আলোচিত হয়েছে। সুতরাং চাকুরী বাকুরী বা পার্থিব সুযোগ সুবিধার জন্যে তারা একটি ওয়াজিব বিষয়কে সারা জীবন পরিত্যাগ করেছেন, এমন কাথা কি করে বিশ্বাস করা যেতে পারে ? এমন ধরণের মন্তব্য করা আবু যুরআর পক্ষে কী করে উচিত হতে পারে ? তিনি কেমন করে বুলকীনীর ব্যাপারেও এ মন্তব্য পযোজ্য মনে করেন ? অথচ জালালুদ্দীন সুয়ূতী তার 'শরহুত তানবীহ' এর তালাক অধ্যায়ে লিখেছেন :

"ইমামগণের মতামতের মধ্যে যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় (অর্থাৎ একই বিষয়ে একজন ইমামের যে একাধিক মত দেখা যায়), তার কারণ হলো তাদের ইজতিহাদের পরিবর্তন হওয়া। যখন তারা যে জিনিসকে সঠিক বললেন, তাদের ইজতিহাদের দৃষ্টিতে সে সময়ের জন্য সেটাই সঠিক। আর সে কিতাবের গ্রন্থকার হলেন এমন ব্যাক্তি যার ইজতিহাদের মর্যাদাকে অস্বীকার করা যেতে পারে না। একথা অনেক আলিমই স্পষ্টভাষায়

বলেছেন যে, উল্লেখিত গ্রন্থকার, ইবনে সব্বাগ, ইমামুল হারামাইন এবং গাযালী মুজতাহিদ মতলকের মর্যাদায় উপনীত হয়েছিলেন। ফতোয়ায়ে ইবনুস সিলাহে যে বলা হয়েছে 'এরা ইজতিহাদে মতলক নয় বরঞ্জ ইজতিহাদ ফিল মাযহাবের মর্যাদায় উপনীত হয়েছিলেন', তার অর্থ, তারা 'মুজতাহিদ মতলক মুসতালিক' (স্বাধীন একচ্ছত্র মুজতাহিদ) ছিলেন না। বরঞ্চ তারা ছিলেন, 'মুজতাহিদ মতলক মুনতাসিব' (সম্পর্কযুক্ত স্বাধীন মুজতাহিদ)। ইজতিহাদে মতলক দুই প্রকার হয়ে থাকে। এক. ইজতিহাদে মতলক মুসতাকিল এবং দুই. ইজতিহাদে মতলক মুনতাসিম। স্বয়ং ইবনে সিলাহ তার কিতাবুল ফতোয়া এবং নববী তার শরহে মুহাযযাব গ্রন্থে ইজতিহাদে মতলককে দুই প্রকার বলেছেন। প্রথমটি হলো মুসতাকিল আর দ্বিতীয়টি হলো মুনতাসিব। চতুর্থ হিজরী শতাব্দীর প্রথম দিকে প্রথমোক্ত ধরনের ইজতিহাদের দরজা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে, যা এখন আর খোলার কোন সম্ভাবনা নেই। শেষোক্ত ধরণের ইজতিহাদের দরজা খোলা রয়েছে। কিয়ামতের শর্তাবলী প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত খোলা থাকবে। কোন যুগেই তা থেমে যাওয়া বৈধ নয়। কারণ তা ফরযে কিফায়া। একথা আমাদের আলিমগণ স্পষ্টভাবেই বলেছেন। মাউরিদী তার গ্রন্থ 'আল-হাদীতে', রুইয়ানী তার 'আল-বাহারে'এবং বগবী তার 'আত-তাহযীব' গ্রন্থে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলেছেন। এ ছাড়াও আরো অনেক আলিম তাদের গ্রন্থাবলীতে কথাটি পরিষ্কার করে লিখেছেন। প্রকাশ থাকে যে, ইজতিহাদ ফীল মাযহাব দ্বারা এ ফরযে কিফায়া আদায় হতে পারেনা। ইবনে সিলাহ একথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন এবং নববীও 'শরহে মুহাযযাব' এ তা পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন। আমিও আমার 'আর রদ্দু আলা মান আখলাদা ইলাল আরদি ওয়া জাহালা আন্নাল ইজতিহাদা ফী কুল্লি আসরিন ফারদুন' গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলেছি। এই আলিমগণ (যাদের কথা উপরে উল্লেখ করেছি) কেবল শাফেয়ী হবার কারনে 'মুজতাহিদ মতলক মুনতাসিব' হওয়া থেকে মুক্ত হতে হতে পারেন নি। নববী এবং ইবনে সিলাহ তার 'তবকাতে' স্পষ্টভাষায় এ সত্যটি প্রকাশ করেছেন। ইবনে সাকীও একই কথা বলেছেন। এ কারনেই তোমরা দেখতে পাচ্ছ এই মনীষীরা শাফেয়ী মাযহাবের গ্রন্থাবলী রচনা করেছেন এবং তাদের ফিকহী গ্রন্থাবলীকে শাফেয়ী মাযহাবের ফিকাহর কিতাব বলা হয়। শাফেয়ী হিসাবে তারা ফতোয়া দিয়েছেন এবং তাদের ফতোয়াসমূহকেও শাফেয়ী মাযহাবের ফতোয়া বলা হয়। যেমন এই গ্রন্থকার এবং ইবনে সিবাগকে বাগদাদের নিযামিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতার দায়িত্ব অর্পন করা হয়। ইমামুল হারামাইন এবং গাযালীকে নিশাপুরের নিযামিয়া মাদ্রাসায় এবং ইবনে আব্দুস সালামকে কায়রোর মাদ্রাসায়ে জাবীয়া এবং যাহিরিয়ার ইনচার্জ নিয়োগ করা হয়। আর ইবনে দাকীকুল ঈদকে মাদ্রাসায়ে সিলাহিয়ার দায়িত্ব অপর্ণ করা হয়, যা নাকি আমাদের ইমাম শাফেয়ী (র.) এর কবরের পাশেই অবস্থিত ছিল। তাছাড়া মাদ্রাসায়ে ফাজিলিয়া এবং কামিলিয়ার দায়িত্বও অর্পন করা হয়। অবশ্য যিনি এর চাইতে উর্ধ্বে উঠে 'ইজতিহাদ মতলক মুসতাকিল' এর মর্যাদায় উপনীত হন তিনি শাফেয়ী হওয়া থেকে মুক্ত হতে পারেন। তার মতামতকেও শাফেয়ী ফিকাহর অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হয় না। কিন্তু আমি যতোটা জানি একমাত্র আবু জাফর ইবনে তাবারী ছাড়া আর কেউ এ মর্যাদায় উপনীত হতে পারেননি। তিনি প্রথমত শাফেয়ীই ছিলেন। পরে একটি স্বাধীন ফিকহী মাযহাবের মুজতাহীদ ইমামের মর্যাদা লাভ করেন। এ কারনেই রাফেযী প্রমুখ বলেছেন : তার (তাবারীর) মতামত (শাফেয়ীর) মাযহাবের মধ্যে গণ্য নয়। "

সুয়ূতীর ভাষ্যে ইবনে সবকীর যে মর্যাদা পরিস্কার হলো, আমার মতে তা আবু যারআর মতের চাইতে উত্তম। আর আমার মতে এটাই প্রকৃত ঘটনা। কিন্তু তিনি যে বললেন, ইবনে জাবীরকে শাফেয়ী মাযহাবের অন্তর্ভূক্ত গণ্য করা যাবে না, একথা আমি সমর্থন করি না। কেননা আল্লামা রাফেয়ীই (সুয়ূতী যার কথা উদ্বৃত করেছেন) তার কিতাবুয যাকাতের শুরুতে লিখেছেন : "ইবনে জারীর তাবারীর মতামত আমাদের মাযহাবের মতামত বলে গণ্য নয়। অবশ্য তিনি নিজে আমাদের মাযহাবের লোক।" নববী তার 'আত-তাহযীব' গ্রন্থে লিখেছেন : আবু আসিম ইবাদী ইবনে জরীরকে শাফেয়ী ফকীহদের অন্তর্ভূক্ত বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, তিনি আমাদের প্রথম সারির আলিমদের অন্তর্ভূক্ত। তিনি রবি মুরাদী এবং হাসান জাফরানী থেকে শাফেয়ী ফিকাহর জ্ঞান লাভ করেন"। তাকে শাফেয়ীর সাথে সম্পর্কিত করার অর্থ হলো তার ইজতিহাদ ও দলীল গ্রহণ পদ্ধতি এবং সেগুলোর বিন্যাস শাফেয়ীর ইজতেহাদের সাথে সামঞ্জস্যশীল। কোথাও যদি সামাঞ্জস্য নাও হয়, তাতে তার বিশেষ গুরুত্ব লাভ হয়না। আর এতে করে (শাফেয়ীর) মাযহাব থেকে মুক্তও হয়ে যান না। মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল আল-বুখারীও এই পর্যায়েরই একজন। তাকেও শাফেয়ী ফকীহদের মধ্যে গণ্য করা হয়। তাকে যারা শাফেয়ী ফকীহদের মধ্যে গণ্য করেছেন, তাদের অন্যতম হলেন শাইখ তাজুদ্দীন সবকী। তার মত : "ইমাম বুখারী হুমাইদী থেকে এবং হুমাইদী শাফেয়ী থেকে ফিকাহ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।" আমাদের আল্লামা শাইখও বুখারীকে শাফেয়ী বলে গন্য করতেন। তার দলীল হলো সবকীর বক্তব্য। আমরা উপরে নববীর যে বক্তব্য উল্লেখ করেছি, তাও এ বক্তব্যের সমর্থক। শাইখ তাজুদ্দীন সবকী তার তবকাত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন : "কোন তাখরীজকারী যদি এমন কোন তাখরীজ করেন যা সম্পূর্ণ বিরল ও অসাধারণ, তবে এই তাখরীজকারীর জীবনে যদি মাযহাব ও তাকলীদ প্রভাবশালী হয় তবে তাকে (শাফেয়ী) মাযহাবের লোক বলে গণ্য করা হবে। যেমন : শাইখ আবু হামিদ গাযালী ও কিফাল।" তাছাড়া সবকী তার তবকাতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ইমাম আবুল হাসান আশআরী সম্পর্কেও লিখেছেন : "তিনিও শাফেয়ী ফকীহদের অন্তর্ভূক্ত। শাইখ আবু ইসহাক মরুযী থেকে তিনি ফিকাহ শিখেছেন। 'কিতাবুল আনওয়ারে'ও তাকলীদ সম্পর্কে আমাদের মতের সমর্থন রয়েছে। এর গ্রন্থকার লিখেছেন : " যেসব লোক নিজেদেরকে শাফেয়ী, আবু হানীফা, মালিক এবং আহমদ ইবনে হাম্বলের মাযহাবের সাথে সম্পৃক্ত করেন, তারা কেয়ক শ্রেণীর মানুষ। প্রথমত, সাধারণ মানুষ। এরা সরাসরি নয়, বরঞ্চ ঐসব আলিম ও ফকীহদের মাধ্যমে ইমামদের তাকলীদ করেন, যারা নিজেদেরকে ইমামের মাযহাবের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। যেমন শাফেয়ী মাযহাবের সাধারণ সেই মাযহাবের ফকীহ ও আলিমগণের মাধ্যমেই ইমাম শাফেয়ীর মাযহাবের তাকলীদ করেন। দ্বিতীয়ত, ঐসব লোক যারা মুজতাহিদের মর্যাদায় পৌছেছেন। যদিও একজন মুজতাহিদ আরেকজন মুজতাহিদের তাকলীদ করেন না, কিন্তু তা সত্বেও এদেরকে ইমাম মুজতাহিদের প্র্রতি সম্পৃক্ত করা হয়। কারণ, তারা ইজতিহাদের পদ্ধতি, দলীল ও যুক্তি গ্রহণের ধরন ও বিন্যাসরীতি ইমাম মুজতাহিদ মতলক থেকেই গ্রহণ করেছেন। তৃতীয়ত, উপরোক্ত দুই শ্রেনীর মধ্যবর্তী শ্রেনী। এরা যদিও ইজতেহাদের দরজা লাভ করেন নি, কিন্তু ইমাম কর্তৃক গৃহীত ইজতিহাদের নীতিমালা এদের নিকট সুস্পষ্ট ছিল। এরা এ ব্যাপারে যোগ্য ছিলেন যে, ইমামের যেসব মতামত ও মাসআলায় যুক্তি প্রমাণ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ছিল না, তারা ইমামের অপর যু্ক্তি প্রমাণ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সম্বলিত মাসআলার ভিত্তিতে সেগুলোর জবাব দিতে পারতেন। এরা মূলত: ইমামেরই মুকাল্লিদ ছিলেন, যেমন প্রথমোক্ত শ্রেণীর লোকেরা এদের ইস্তিম্বাত করা বক্তব্য মতামত অনুসরণ করেও ইমামেরই মুকাল্লিদ"

একটি অভিযোগ এবং তার জবাব :

প্রশ্ন করা যেতে পারে,

"শরীয়ত যখন একটিই, তখন সে শরীয়তে একটি জিনিস এক সময় ওয়াজিব না থাকা আর অপর সময় ও ওয়াজিব হয়ে যাওয়াটা কেমন ব্যাপার ? একই শরীয়তে তো এমনটি হতে পারে না। সুতরাং 'প্রথমত মুজতাহিদ মুসতাকিল- এর ইকতিদা ওয়াজিব ছিল না, পরে তা ওয়াজিব হয়ে যায়।' এটা পরস্পর বিরোধী নয় কি ?

এর জবাবে আমি বলব : প্রকৃতপক্ষে ওয়াজিব তো হচ্ছে, উম্মতের মধ্যে এমনসব লোক বর্তমান থাকা, যারা প্রাসঙ্গিক বিধানসমূহকে মজবুত দলীল প্রমাণের দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত করার যোগ্যতা রাখেন। সমস্ত হকপন্থী লোকেরা এই ওয়াজিবের ব্যাপারে সর্বসম্মত। একইভাবে এই বিষয়টিও সর্বসম্মত যে, যে জিনিস কোন ওয়াজিব বিধান লাভ করার মাধ্যম, স্বয়ং সে জিনিসটিও ওয়াজিব। আর কোন ওয়াজিব বিষয় লাভ করার যদি একাধিক মাধ্যম বা পন্থা থাকে, তবে সেগুলোর কোন একটি পন্থা গ্রহণ করা ওয়াজিব। কিন্তু কোন ওয়াজিব বিষয় লাভ করার উপায় বা পন্থা যদি একটিই বর্তমান থাকে, তবে সেটিই ওয়াজিব। যেমন, ক্ষুধায় এক ব্যাক্তির জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। আর ক্ষুধা নিবারনের কয়েকটি উপায় বা পন্থা তার নিকট রয়েছে। সে ইচ্ছা করলে খাবার কিনে খেতে পারে, বাগান থেকে ফল পেড়ে খেতে পারে অথবা খাওয়ার উপযুক্ত প্রানী শিকার করে খেতে পারে। এখন এ ব্যাক্তির জন্য তিনটি উপায়ের যে কোন একটি অবলম্বন করা ওয়াজিব, নির্দিষ্ট নির্দিষ্ট একটি নয়। কিন্তু সে যদি এমন কোন স্থানে থাকে যেখানে কোন ফল এবং শিকার পাবার সুযোগ নেই, তবে সেক্ষেত্রে পয়সা দিয়ে খাবার ক্রয় করেই ক্ষুধা্ নিবারন করা তার জন্য ওয়াজিব। (আলোচ্য মাসআলাটি এ দৃষ্টান্তের সাথে তুলনীয়)। এই মূল ওয়াজিব হাসিল করা জন্যও অতীত আলিমগণের নিকট কয়েকটি পন্থা ছিল। সুতরাং কয়েকটা পথের মধ্যে যে কোন একটিকে অবলম্বন করাই ছিলো তার জন্যে ওয়জিব, নির্দিষ্ট একটিকে অবলম্বন করা নয়। অতপর তারা যখন একটি পথ (অর্থাৎ তাকলীদের পথ) অবলম্বন করলেন, তখন সেই একটি ছাড়া বাকী সব পথ বন্ধ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় সকলে জন্যে এই একটি পথের অনুরনই ওয়াজিব হয়ে পড়ে। উলামায় সলফ হাদীস লিখতেন না। কিন্তু আধুনিক কালে কি দেখছো ? এখন হাদীস লেখা ওয়াজিব হয়ে পড়েছে। কারণ, মৌখিকভাবে হাদীস বর্ণনার ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং গ্রন্থাবলীর মাধ্যম ছাড়া এখন আর হাদীস জানার উপায় নেই।

(আরবী ভাষার) ব্যাকরণ ও ভাষাতত্বের ব্যাপারেও একই কথা। উলামায়ে সলফ এগুলির প্রতি কিছুমাত্র মনোযোগ আরোপ করতেন না। কারণ, আরবী ছিল তাদের মাতৃভাষা। সুতরাং তারা এ বিষয়ে শিক্ষালাভের মুখাপেক্ষী ছিলেন না। অথচ আমাদের যুগের আলিমদের জন্যে আরবী ভাষাতত্ব ও ব্যাকরণ শেখা ওয়াজিব হয়ে পড়েছে। কারণ ইসলামের প্রাথমিক যুগের আরবী থেকে বর্তমান সময়টার ব্যাবধান বিরাট। এরকম আরো অনেক উদাহরনই পেশ করা যেতে পারে।

চার মাযহাবের ইজতিহাদের ইতিহাস

-------------------------------------------------------------- যে ব্যাক্তি দীর্ঘ সময়কাল ধরে মাযহাবসমূহের বিশ্লেষণমূলক অধ্যায়ন করেছেন, তার কাছে একথাও গোপন থাকতে পারে না যে, যেসব হাদীস ও আছারের উপর শাফেয়ীর মাযহাবের বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠিত সেগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংকলিত ও সম্পাদিত। এ কথাগুলো সকল আহলে ইলেমেরই জানা এবং এগুলো থেকে তারা উপকৃতও হয়েছেন। এটা এই মাযহাবের এমন একটা মর্যাদা, যা আর কোন মাযহাবই লাভ করতে পারেনি। এই সংকলিত ও সম্পাদিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে যেগুলোর উপর শাফেয়ী মাযহাবের ভিত প্রতিষ্ঠিত, সেগুলোর একটি হলো মুয়াত্তা, যা নাকি শাফেয়ীর অনেক আগেই সংকলিত হয়েছে। শাফেয়ী এই গ্রন্থটিকে তার মাযহাবের ভিত হিসেবে গ্রহণ করেন।

অধিকাংশ ফিকহী ঐকমত্য থাকার কারণে যদিও বুখারীকে শাফেয়ীর প্রতি সম্বন্ধযুক্ত (মুনতাসিব) করা হয়, তবুও এতে কোন সন্দেহ নেই যে, অনেক বিষয়ে তিনি আবার শাফেয়ীর সাথে মতপার্থক্যও করেছেন। সে কারনে যেসব মাসায়েলে তিনি শাফেয়ীর সাথে মতপার্থক্য করেছেন, সেগুলো শাফেয়ী মাযহাবের বলে গণ্য হয় না।

আবু দাউদ এবং তিরমিযী তারা দুজনই মুজতাহিদ মতলক মুনতাসিব। তবে তাদের ইনতিসাব আহমদ ইবনে হাম্বল এবং ইসহাক ইবনে রাহুইয়ার প্রতি। ইবনে মাজাহ এবং দারেমীর অবস্থাও অনুরুপ।

আর মুসলিম, মুসনাদে শাফেয়ীর সংকলক আব্বাসুল আসাম এবং অন্য যাদের কথা উল্লেখ করেছি এরা সবাই এককভাবে শাফেয়ীর অনুসারী।

এ যাবত আমি যা কিছু আলোচনা করলাম, তার মর্ম যদি তুমি উপলব্ধি করে থাকো, তবে অবশ্য তোমার কাছে এ সত্য উদঘাটিত হবে যে, ঐ ব্যাক্তি নি:সন্দেহে ইজতিহাদে মতলক থেকে বঞ্চিত হবে, যে শাফেয়ীর মাযহাবের সাথে শত্রুতা পোষণ করবে। আর যে ব্যাক্তি শাফেয়ী এবং আসহাবে শাফেয়ীর ইলমী ফয়েজ থেকে বিমুখ তার কর্মকান্ড মূলত হাদীসের ইলম অস্বীকারেরই নামান্তর।

বিষয়: বিবিধ

৫২৪৮ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

161358
১১ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:২৭
লাঠীপেটা লিখেছেন : ভাই সহিহ হাদিস পেলেও কি মাজাব মানতে হবে আর হানাফী মাজাব না মেনে যদি সাফি মাজাব মানি তা হলে কি চলবে? আর নাসিরুদ্দীন আলবানী কি মুসলিম?
১১ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:২৩
115688
হাবিবুল্লাহ লিখেছেন : ভাই সহিহ হাদিস পেলেও কি মাজাব মানতে হবে? এটা কোন ধরণের প্রশ্ন। মাযহাব আর হাদিস দুই রকম হল কখন থেকে? যা হাদিস তাই তো মাজহাব।
আলেমদের মত বিরোধ কেন হয় সেটা অন্য প্রসংগ। কিন্তু এখানে প্রশ্নের ধরণ দেখে বুঝতে পারছি এটা আহলে হাদিসের বিভ্রান্তিমূলক প্রশ্নগুলোর একটি।
যাইহোক এখন হয়ত বলবেন হাদিস মানলেইত হল আবার মাজহাব কেন?এই তো?
আমার কথাও তাই যা হাদিস তাই মাজহাব। তবে হাদিসের ব্যাখ্যা অনেক সময় বিভিন্ন আলেমের মতে বিভিন্ন হতে পারে। তবে প্রায় সবগুলো মত কাছাকাছি থাকে। এখানে আহলে হাদিসের শয়তানগুলো চোখ বন্ধ করেই বলে দেয় যে ইমাম আবুহানিফা নাকি সবগুলো কথা হাদিসের উলটাই বলেছেন। এখানেই মিথ্যাবাদিরা নিপাত যাক।
আলবানি মুসলিম হবে না কেন? তার অনুসারীরা হানাফিদের কাফের মনে করলে সেটা তিনি সমর্থন করতেন কিনা আমার জানা নাই। যদি আমার জানা থাকতো যে আহলে হাদিসের মত চোখ বন্ধ করে তিনি হাদিস অস্বীকার করতেন তাহলে নির্ঘাত তাকে কাফের বলে দিতাম। এখন যেহেতু তার সমপর্কে সেরকম কিছু জানি না তাই কিছুই বললাম না।
১১ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৩
115711
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : আমার সকল পোষ্ট পড়লেই উত্তর পেয়ে যাবেন। নি:সন্দেহে আলবানী মুসলিম যদিও সে ইমাম বুখারীর ইমান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, তাই সে মুসলিম তবে বিভ্রান্ত !
161377
১১ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:১৬
হাবিবুল্লাহ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
161378
১১ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:২০
মাটিরলাঠি লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খাইরান।
161393
১১ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৮
ঈগল লিখেছেন : লিখাটি পড়লাম না। কারণটি হল, আমি মাযহাব মানার পক্ষে। কিন্তু আমি নিজে আমার সমস্যার সমাধানগুলি সহীহ বুখারী এবং মুসলিম থেকে গ্রহণ করি। কারণ অতীত বর্তমান প্রায় সব ফকীহই এই দুই গ্রন্থকে কালামে পাকের পরে সর্বোচ্চ সহীহ বলে সীকৃতি দিয়েছেন। এই দুই গ্রন্থ থেকে সমাধান না পেলে তখন আমি হানাফি মাযহাবের দারস্থ হয়। প্রশ্ন হচ্ছে আমি কি অন্যায় করছি?
=========
প্রশ্ন নং ২- শত শত হাদিস রয়েছে যেগুলি একদল মুহাদ্দেস বলেছেন সহীহ আরেক দল বলেছেন দয়ীফ। উদাহণ স্বরুপ- রফয়ুুল ইয়াদাইন না করার হাদিস সমূহ। রফইল ইয়াদাইন না করার হাদিস সমূহ নিয়ে মুহাদ্দিস এবং ফকীহগনের মধ্যে চরম বির্তক রয়েছে, সহীহ নাকি দয়ীফ, কোনটি বেশি উত্তম ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রশ্নটি হচ্ছে আমি কি বির্তকের দিকে যাব নাকি সর্বজন গৃহিত সহী বুখারীর হাদিস আমল করবো? আমার জন্য কোনটি উত্তম হবে? আশা করছি উত্তর পাব।
==========
মন্তব্য- ভাই, আমি দেখছি আপনি মাযহাব নিয়ে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এটাকি ঠিক হচ্ছে। আমার ধারণা,এর থেকেও কঠিন সমস্যার মধ্যে আমরা রয়েছি। মাযহাব মানা না মানা নিয়ে শত শত শতাব্দী থেকে বির্তক চলে আসছে। কোন সমাধান হয়েছে কি? সুতরাং বাদ দেন না। নতুন কিছু, ক্রিয়েটিভ কিছু করুন না।
১১ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৭
115729
সঠিক ইসলাম লিখেছেন :
সমাধানগুলি সহীহ বুখারী এবং মুসলিম থেকে গ্রহণ করেন কোন সমস্যা নাই।


এই ফতোয়া কোন সহিহ হাদীসে আছে ? নিচে একটি প্রশ্ন করেছিলাম আপনাকে, শাহ ওয়ালি উল্লাহ র. এর অভিমত সহিহ হাদীস বিরোধী হলে তা যদি পরিত্যাগ ই করেন তবে তাকে আবার দলীল হিসেবে উপস্থাপন করলেন কেন ? ইবনে তাইমিয়া, আব্দুল ওহাব, ইবনে বায, আলবানীকে মানতে হবে কোন সহিহ হাদীসে আছে ? কোন হাদীস সহিহ আর কোন হাদীস গায়রে সহিহ এটি কোন সহিহ হাদীসে বলে দেয়া হইছে ?
161394
১১ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০২
ইমরান ভাই লিখেছেন : সম্পুর্ণ কমেন্টসটাই দিয়ে দিলাম সবার বোঝার সুবিধার্তে কমেন্টস লিংক সহ...

ইমরান ভাই লিখেছেন : ভাই, স্বালীন ভাবে অনেক আলোচনাই করা যায় কিন্তু কিছু লোক আছে যারা স্বালীন ভাবে আলোচনায় গালিগালাজ শুরু করে। তারা ভুলে যায় মুনাফিকের লক্ষন

এই মাযহাবের বিভক্তির কারনে কাবা ঘড়ের সামনে ৪ মুসল্লাহয় ৪ মাযহাব ইমাম নিযুক্ত করে নামাজ পড়ত ইতিহাস তার স্বাক্ষী

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহদ্দিস দেহলবি (রহ) বলেছেন,
"আল ইনসাফ ফী বায়ানিল আসবাবীল ইখতিলাফ গ্রন্থে"
"প্রথম ২০০ হিজরীর আগে নিদৃস্ঠ কোন মাযহাব ত্বাকলিদ করার প্রচলন ছিলোনা। বরং এসব ফিকহি গ্রন্থ পড়ে রচিত হয়েছে" (বাংলা অনুদিত মতবিরোধ পূর্ন বিষয়ে সঠিক পন্থা অবলম্বনের উপায় গ্রন্থের অধ্যায় ৯)

ভাই, অনেক ফাতাওয়াই জানি মাযহাবিদের যা কোরআন সহিহ সুন্নার বিপরীত কিন্তু তা বলবোনা কেননা "দাওয়াত দিবো আল্লাহ ও তার রসুলের (সা) দিকে" কে কি করেছে ফাতাওয়া দিয়েছে সেটা পড়ে। যদি কোরআন ও সহিহ হাদিসের সাথে মেলে তাহলে মানব নাহলে না।

এখন এ কথা বললে মুসলিম হয়ে যায় "ওহাবী" যদিও তারা "ওহাবী" গালী হিসেবে ব্যাবহার করে তাবে এর অর্থ সত্যিই খুব সুন্দর "আল্লাহর নাম আলওহাব তার সাথে বী যৃুক্ত" হলে হয় ওহাবী অর্থ "দাতার বান্দা" সুবহানাল্লাহ এই নামে আমি সত্যিই খুব খুশি

তাই কোরআন ও সহিহ সুন্নার দিকে আহবান এর দাওয়াত থাকবেই তাতে বিরুদ্ধবাদীরা যাই বলুক।
আর আল বিদায়া ওয়াননিহায়া ৮ খন্ড পেলে জানাবো ইনশাআল্লাহ।


লিংক
১১ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:৩২
115709
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : জ্বি, আমার এই পোষ্ট ই প্রমাণ করবে যে, আপনার উপরিউক্ত মন্তব্য (দেহলভী র. মাজহাবের বিরোধী ছিলেন)কতটা চরম নির্লজ্ব মিথ্যাচার !
১১ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩২
115716
ইমরান ভাই লিখেছেন : অবশ্যই জারা পড়বে তারা জানবে সত্যটা কি?
শাহ ওয়ালীউল্লাহ (রহ) যে সকল কথা কোরআন ও সহিহ হাদিস অনুযায়ী হবে তা সকলে মানবে আর যা কোরআন ও সহিহ হাদিস অনুযায়ী হবে না তা সবাই ত্যাগ করবে যদি মুসলিম হয়।
১১ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪০
115718
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : তাহলে তার মন্তব্যকে আবার দলীল হিসেবে উপস্থাপন করলেন কেন ?
১১ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
115740
ইমরান ভাই লিখেছেন : তার মন্তব্যর মাধ্যমে জানা যায় ২০০ হিজরির আগে মাযহাব ছিলো না
১১ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:১১
115744
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : কেউ বলল "আমি আজকে সকালে ভাত খাইনি, তবে দুপুরে আমি ভাত খেয়েছি" এখন আপনি যদি তার কথার প্রথম অংশটিকেই শুধু প্রচার করে বলতে চানযে তিনি আজকে ভাতই খাননি, তাহলে কি সেটা আপনার মিথ্যাচার নয় ? দুশ হিজরীর আগে মাযহাব ছিল এমন দাবী কি কেউ করেছে ? কিন্তু পরে মাযহাব মানার আবশ্যকতা কেন আসল সেটা তো এ পোষ্ট এই দেহলভী র. এর বিস্তারিত অভিমত তুলে ধরেছি, মাথায় কি ঘিলু বলতে কিছু আছে ? আর আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম যে, শাহ ওয়ালি উল্লাহ র. এর অভিমত সহিহ হাদীস বিরোধী হলে তা যদি পরিত্যাগ ই করেন তবে তাকে আবার দলীল হিসেবে উপস্থাপন করলেন কেন ? ইবনে তাইমিয়া, আব্দুল ওহাব, ইবনে বায, আলবানীকে মানতে হবে কোন সহিহ হাদীসে আছে ? কোন হাদীস সহিহ আর কোন হাদীস গায়রে সহিহ এটি কোন সহিহ হাদীসে বলে দেয়া হইছে ?
161395
১১ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০৬
ঈগল লিখেছেন : হাবিবুল্লাহ ভাই লিখেছেনঃ ----এখানে আহলে হাদিসের শয়তানগুলো---------। ইনসাফের সহিত বলুন তো ভাই, এই ধরনের শব্দ কি ঢালাও ভাবে ব্যবহার করা জায়েজ? মাযহাবের আলোকেই উত্তর দেন।
আমি জানি হাবিবুল্লাহ ভাই একজন আলেম মানুষ। তার কি খুবই দরকার ছিল উক্ত শব্দ ব্যবহার করা।
মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করছি তিনি আমাদেরকে আরেকটু সহনশীল হওয়ার তাওফিক দেন।
161417
১১ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৫
ঈগল লিখেছেন : সম্মাণিত ভাই, আপনার দুটি লিংকে ক্লিক করেছি। কিন্তু আমি সমাধান পাই নি। বরং সমস্যা বাড়িয়েছেন। যেমন, এখন কোন সালাফি ভাই যদি বড় বড় হানাফি ফকীহদের (রহঃ)কিতাব থেকে প্রমাণ করেন যে রফইল ইয়াদাইন করার কথা হানাফিরাও বলে তাহলে কি সসম্যা কমবে?? সুতরাং ওহেদুজ্জান সাহেব কি ফতোয়া দিলেন সেটা ধার্তব্য নয়।
================

দয়া করে ৪ নং কমেন্টের প্রশ্নের উত্তর যদি সংক্ষেপে দেন তাহলে উপকৃত হবো ইনশাআল্লাহ।
এবং মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, তিনি যেন সত্য বুঝতে এবং মানতে আমাকে সাহায্য করেন।
১১ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৯
115725
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : এবার তাহলে নিচের পোষ্ট গুলো পড়ুন।

http://www.bdtomorrow.org/blog/blogdetail/detail/4803/TrueIslam/30222

http://jamiatulasad.com/?p=1127

http://jamiatulasad.com/?p=1648

http://www.peaceinislam.com/hafiz/3878/

http://www.somewhereinblog.net/blog/asksumon0000/29536515

১১ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪২
115738
ইমরান ভাই লিখেছেন : @ঈগল ভাই, আপনার উত্তর কিছুটা দিয়েছি ৪ নং কমেন্টসে দেখেন প্লিজ..
161446
১১ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৩৫
মনসুর লিখেছেন : মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
161495
১১ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:৩৩
ঈগল লিখেছেন : ৪ নং কমেন্টের শেষ উত্তর হিসেবে আপনি লিখেছেন
'সমাধানগুলি সহীহ বুখারী এবং মুসলিম থেকে গ্রহণ করেন কোন সমস্যা নাই।'

জাযাকাল্লাহ খয়রান। এটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট। আপনার জবাব আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আপনিও সত্যের সাথে আছেন ইনশাআল্লাহ। তবে আমরা মানুষ। আল্লাহ আমাদের ভুল করি ক্ষমা করবেন বলে আশা করছি।
========
আপনার দ্বিতীয় অংশের ব্যাপারে আমার বলার কিছুই নাই। যারা তাদের অন্ধ অনুসরণ করে তাদেরকে এই প্রশ্ন করা যেতে পারে।
========================
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্যের উপর দৃঢ় রাখুন এবং আমাদের অন্তরকে সত্যের প্রতি অনুরাগী করে দিন এই দোয়া করে এই পোষ্ট থেকে বিদায় নিচ্ছি।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File