মাযহাব সংক্রান্ত কয়েকটি ওয়াসওয়াসার জবাব
লিখেছেন লিখেছেন সঠিক ইসলাম ১০ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:২৯:৫৭ দুপুর
গায়রে মুকাল্লিদ হওয়া একটি অসুস্থ্যতা। আর এ অসুস্থ্য হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হল দু’টি। যথা- ১- অজ্ঞতা। ২- দাম্ভিকতা। প্রতিটি প্রশ্নের জবাব আলাদা আলাদাভাবে উদ্ধৃত করে উত্তর দেয়া হল, যাতে করে বুঝতে সুবিধা হয়।
২ নং প্রশ্ন
আমি কোন ইমামকে নির্দিষ্ট করে কথা বলিনি এবং কারো বিরুদ্ধাচারন করে কথা বলিনি। আমার শুধু জানার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আপ্নারা ইমাম আবু হানিফা (রাহ:ল এর কথা বেশি বলেছেন]
উত্তর
কারণ এ উপমহাদেশে মুসলমান পরিচয়ধারী সকলেই ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মাযহাবের অনুসারী। কতিপয় পথভ্রষ্ট গায়রে মুকাল্লিদ নামধারী ছাড়া। যখন থেকে এ উপমহাদেমে ইসলাম এসেছে, তখন থেকেই এ উপমহাদেশে হানাফী মাযহাব প্রতিষ্ঠিত। ইসলামের দাওয়াত নিয়ে যারা এসেছিল, তারাও হানাফী ছিল। যারা মুসলমান হয়েছেন, তারাও হানাফী ছিল।
এ উপমহাদেশে যত মুসলিম হাকিম বংশীয়, যত গোলাম বংশীয় আর যত ঘুরি বংশীয়, আর যত খিলজী বংশীয়, সাদাত বংশীয়, তুঘলোক বংশীয়, আর সুরী অথবা মোগল বংশীয় বাদশা ছিল, সবাই ছিলেন সুন্নী হানাফী। এই দেশে ইসলাম, কুরআন-হাদিস আনয়নের ভাগ্য কেবল হানাফীদেরই ললাটেই আছে। সুতরাং নওয়াব সিদ্দীক হাসান খানও একথা স্বীকার করে লিখেন যে, “যখন থেকে ইসলাম এ এলাকায় আসে, তখন থেকে হিন্দুস্তানের মুসলমানদের সার্বিক অবস্থা হল এই যে, যেহেতো অধিকাংশ লোক বাদশার মত-পথ এবং মাযহাবের অনুসরণকেই পছন্দ করে, একারণেই সূচনা থেকে এখন পর্যন্ত তারা হানাফী মাযহাবেই প্রতিষ্ঠিত। আর এখানে এই মাযহাবের আলেম এবং ফারেগীনরাই বিচারক আর মুফতী ও হাকিম হয়ে থাকে”। (তরজুমানে ওহাবিয়্যাহ-১০)
৫৮৯ হিজরীতে সুলতান মুয়িজুদ্দীন সাম ঘুরী আসলেন। আর দিল্লী পর্যন্ত পদানত করেন। সে সময় থেকে নিয়ে ১২৭৩ হিজরী পর্যন্ত আপনারা এই দেশের ইতিহাস পড়ে দেখুন। মাহমুদ গজনবী রহ. থেকে নিয়ে আওরঙ্গজেব পর্যন্ত, এমনকি সাইয়্যিদ আহমাদ শহীদ বেরলবী রহ. পর্যন্ত কোন গায়রে হানাফী গাজী, বিজেতা অথবা মুজাহিদ পাওয়া যাবেনা।
কাশ্মীরের ব্যাপারে ঐতিহাসিক ফেরেস্তা লিখেন-“আমি দেখেছি এই দেশের সবাই ছিলেন হানাফী মাযহাবপন্থী”।(তারীখে ফেরেস্তা-৩৩৭) আর এর পূর্বে রাশেদী এর বরাতে তিনি লিখেন-“হযরত শায়েখ আব্দুল হক সাহেব মুহাদ্দেসে দেহলবী রহ. বলেন-”اهل الروم وما وراء النهر والهند كلهم حنفيون، ” অর্থাৎ মা ওরাউন নাহার এবং হিন্দের সবাই ছিলেন হানাফী”। (তাহসীলুত তায়াররুফ-৪৬) আর হযরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী রহ. বলেন-“আহলে ইসলামের বড় অংশ ইমাম আবু হানীফা রহ. এর অনুসারী ছিল”। (মাকতুবাত-২/৫৫) শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহ. বলেন-“সকল শহরের আর সকল দেশের বাদশা ছিল হানাফী। আর কাযী, অধিকাংশ শিক্ষক ও অধিকাংশ সাধারণ মানুষ ছিল হানাফী” (কালিমাতে তায়্যিবাত-১৭৭)
যেহেতু এ উপমহাদেশে সকল মুসলমানই হানাফী মাযহাবের অনুসারী। আগেও ছিল। এখনো আছে। কতিপয় বিভ্রান্ত গায়রে মুকাল্লিদ ছাড়া। আর আমরাও হানাফী মাযহাবের উপর গবেষণাকারী, তাই স্বাভাবিকভাবেই মাযহাবের বিরুদ্ধে বক্তব্য আসলে আমরা হানাফী হিসেবে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর নামই বেশি ব্যবহার করবো। এবং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর জবাব দিব। আর এ উপমহাদেশে যারাই প্রশ্ন করে মাযহাবের বিরুদ্ধে, তারা মূলত হানাফীদের বিরুদ্ধেই প্রশ্ন করে। কারণ এ উপমহাদেশেতো শাফেয়ী বা হাম্বলী কিংবা মালেকী মাযহাবের অনুসারী নেই। থাকলেও হাতে গোনা। তাই অভিযোগ দাঁড়ায় হানাফীদের বিরুদ্ধেই। তাই ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর নাম উল্লেখ করাটা কি অযৌক্তিক হয়ে গেছে ভ্রাতা?
৩ নং প্রশ্ন
ঈমাম আবু হানিফা (রাহ: ) কি নিজ হাতে কোনো গ্রন্থ রচনা করে গেছেন? যার দারা আমরা বুঝবো যে কথা গুলো তার বলা অথবা হাদিস গুলো তিনি সহিহ বলেছেন। কিভাবে বিশ্বাস করবো তিনি বলেছেন কিনা? কোনো বিষয়ে যদি সন্দেহ থাকে!
উত্তর
বাহ! ভাল যুক্তি দিয়েছেন। আমরা এ কারণেই বলি যে, নাস্তিক হওয়ার প্রথম শর্ত হল গায়রে মুকাল্লিদ হওয়া। কোন মুকাল্লিদ নাস্তিক হতে পারে না। আপনার প্রশ্নটি পুরোপুরি গায়রে মুকাল্লিদ মার্কা হয়েছে। মাশাআল্লাহ ভাল প্রশ্ন।
কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে, আপনিতো দু’দিন পর নাস্তিকদের মত প্রশ্ন করে বসবেন যে, আল্লাহ তাআলা কি নিজ হাতে তার কালাম রচনা করেছেন? যার দ্বারা আমরা বুঝতে পারবো যে কথাগুলো তার নামে বলা হচ্ছে তা তারই বলা? কিভাবে বিশ্বাস করবো যে, আল্লাহ তাআলাই বলেছেন কি না? যদি কোন আয়াতের ক্ষেত্রে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। [যেমন নাস্তিকরা বিভিন্ন আয়াত বিষয়ে সন্দেহ করে থাকে।]
এরকম প্রশ্ন যে, আপনি ক’দিন পর করবেন না, তার কোন নিশ্চয়তা কি আপনি দিতে পারেন?
এরকম জঘন্য প্রশ্ন যদি আপনাকে কোন নাস্তিক করে বসে তাহলে আপনার কাছে কী জবাব আছে? আশা করি এমন প্রশ্ন আপনি অন্তত কোনদিন করবেন না। আল্লাহ তাআলা মাফ করুন।
কুরআনের প্রতিটি আয়াত সনদের সাথে নবীজী সাঃ থেকে প্রমাণিত নয়। তাই বলে কুরআনের আয়াত আল্লাহ তাআলার বাণী নয়?
ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর দিকে নিসবত করা ফিক্বহে হানাফীর কিতাব ইমাম আবু হানীফা রহঃ পর্যন্ত সনদ প্রমাণিত নয়, তাই বলে ফিক্বহে হানাফী ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর নয়?
দুই প্রশ্নের এক জবাব।
সেটি হল, কুরআন আল্লাহ তাআলা নিজে লিখেন নি। কিন্তু কুরআন আল্লাহর কালাম। যদিও কুরআনের প্রতিটি আয়াতের কোন সনদ রাসূল সাঃ পর্যন্ত নেই। তবু তা আল্লাহর কালাম। দলীল হল, মুতাওয়াতির সূত্রে তথা নিরবচ্ছিন্নভাবে ধারাবাকিতায় আমাদের পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার কালাম কুরআন পৌঁছেছে। যারা পৌঁছেয়েছেন, তারা সবাই সাক্ষ্যি দিয়েছেন এটি আল্লাহর কালাম।
এ তাওয়াতুরের কারণে আমরা বিশ্বাস করি এটি আল্লাহর কালাম। এর জন্য কোন দলীলের প্রয়োজন নেই।
ঠিক তেমনি ইমাম হানীফা রহঃ এর দিকে নিসবত করা তার মাযহাবের মাসায়েল আমাদের পর্যন্ত বিভিন্ন কিতাবের মাধ্যমে মুতাওয়াতির সূত্রে পৌঁছেছে, তাই এর জন্যও কোন সনদের প্রয়োজন নেই। কারণ কোন বিষয় তাওয়াতুরের দরজায় পৌঁছলে তার দলীল প্রয়োজন হয় না। মুতাওয়াতির হওয়াটাই একটি বড় দলীল।
এ কারণেই আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ শরহু নুখবাতিল ফিকারের মাঝে লিখেছেনঃ
والمتواتر لا يُبْحثُ عن رجاله بل يجب العمل به من غير بحث
অর্থাৎ মুতাওয়াতির বিষয়ের ক্ষেত্রে রাবী বিষয়ে আলোচনা করা হবে না। বরং তার উপর আলোচনা-পর্যালোবনা ছাড়া আমল করা আবশ্যক। {শরহু নুখবাতিল ফিকার-৪২}
আশা করি আপনার প্রশ্নটি অজ্ঞতা সূচক প্রশ্ন তা বুঝে এসেছে।
৪ নং প্রশ্ন
আপ্নাদের কোনো যৌক্তিক কথা বললে আপ্নারা ভাবেন ডা : জাকির নায়িক বলেছে, এবং ইমাম আবু হানিফা (রাহ বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে। কিন্তু আপ্নাদের মনে কেন এই সংসয়। তাহলে কি সমস্ত যৌক্তিক প্রস্ন ইমাম আবু হানিফা (রাহ এর বিরুদ্ধে যাই।
উত্তর
যুক্তি দেখলে নয়, বরং যুক্তির নামের খোড়া যুক্তি দেখলে সন্দেহ হয়, এটি খোড়া যুক্তির ভাগার ডাক্তার জাকির নায়েক থেকে ধার করা কি না? যুক্তি দেখলে সন্দেহ হয় না, বরং যুক্তির নামে অযুক্তি দেখলে সংশয় জাগে। আশা করি বুঝেছেন।
আর মাযহাব বিরোধী প্রশ্ন আসলে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বিরুদ্ধে প্রশ্ন এসেছে, একথা আমরা কেন মনে করি? এ প্রশ্নের জবাব ইতোপূর্বে ২ নং প্রশ্নে জবাবে অতিক্রান্ত হয়েছে। তাই এখানে আবার দ্বিতীয়বার বলার প্রয়োজন নেই। দুই নং প্রশ্নটির উত্তর আবার পড়ে নিন।
৫ নং প্রশ্ন
আপ্নারা কি আমাকে গ্রান্টি দিয়ে বলতে পারবেন যে হযরত মুহাম্মাদ (সা ছারা কোনো মানুষের জিবনে কোনো ভুল নাই এবং ইমাম আবু হানিফা (রাহ নিজে বলে গেছেন তার তার প্রত্তেকটা কথা নির্ভুল।
উত্তর
মুজতাহিদদের ভুল হতে পারে না একথা কখনো আমরা বলেছি নাকি? ভুল হতে পারে না এক বিষয়, আর ভুল হয়নি আরেক বিষয়। আমরা বলি ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মাসআলা বলতে ভুল হয়নি। ভুল হতে পারে না একথা আমরা বলি না। যদি ধরি সব মাসআলাই ভুল, তবু ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মুকাল্লিদদেরতো কোন সমস্যা নেই। কারণ মুজতাহিদের ভুলের উপরও একটি সওয়াব। সঠিক হলেতো দুইটি। যা আগের পোষ্টে স্পষ্টই হাদীসের উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে। তারপরও এ প্রশ্নটি আবার করা আপনার নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক।
উক্ত হাদীসটি আবার পড়ে নিন-
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ فَأَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ فَأَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ
হযরত আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম বলতে গিয়ে ইজতিহাদ করে, আর তার ইজতিহাদ সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদে ভুল হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৯১৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৫৮৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৭৬}
৬ নং প্রশ্ন
যদি তিনি বলে থাকেন তার সব মাসায়ালাগুলো সব সাহিহ,তাহলে তিনি একথাগুল বলে গেলেন কেন ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর অসিওত:
১-যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, জেনো সেটাই আমার মাজহাব’। [হাশিয়াহ ইবনে আবেদীন ১/৬৩]
২- আমরা কোথা থেকে গ্রহণ করেছি, তা না জেনে আমাদের কথা গ্রহণ করা কারো জন্য বৈধ নয় হাশিয়াহ ইবনে আবেদীন ৬/২৯৩]
৩- যে ব্যক্তি আমার দলীল জানে না, আমার কথা দ্বারা ফতোয়া প্রদান করা তার জন্য হারাম [ ড. অছিউল্লাহ বিন মুহাম্মাদ
আববাস, আত-তাক্বলীদ ওয়া হুকমুহু ফী যুইল কিতাব ওয়াস-সন্নাহ, পৃঃ ২০]
৪- নিশ্চয়ই আমরা মানুষ। আমরা আজকে যা বলি, আগামীকাল তা থেকে ফিরে আসি [ ড. অছিউল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আববাস, আত-তাক্বলীদ
ওয়া হুকমুহু ফী যুইল কিতাব ওয়াস-সন্নাহ, পৃঃ ২০]
উত্তর
উক্ত বক্তব্যগুলো যাচাই বাছাই ছাড়া আপনি নিশ্চয় কারো অন্ধ তাকলীদ করে কপিপেষ্ট করেছেন। এটি নিশ্চিত। যদি আপনি হাশিয়ায়ে ইবনে আবিদীন কিতাবটি দেখতেন। আর যদি আল্লাহ তাআলা আপনাকে কিতাবটি বুঝার তৌফিক দিতেন, তাহলে আপনি এরকম দাম্ভিকতার সাথে কিছু মিথ্যা, কিছু অর্থ বিকৃত করা বক্তব্য সম্বলিত আর কিছু আগে পরের বক্তব্য বাদ দেয়া ধোঁকাবাজীপূর্ণ বক্তব্যগুলো উদ্ধৃত করতেন না।
মিথ্যাচারের নমুনা দেখুন-
ধোঁকাবাজী নং-১
“যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, জেনো সেটাই আমার মাজহাব’। [হাশিয়াহ ইবনে আবেদীন ১/৬৩]”
এটি জঘন্য মিথ্যাচারমূলক বক্তব্য। ইমাম আবু হানীফা রহঃ একথা এভাবে বলেননি। এটি ধোঁকাবাজ আর মিথ্যুকদের সৃষ্টি ধুম্রজাল। আর রেফারেন্সও দেয়া হয়েছে ভুল। রেফারেন্সটি হবে- ১/১৬৭, জাকারিয়া লাইব্রেরী। ইমাম আবু হানীফা রহঃ বলেছেন-
اذا صح الحديث فهو مذهبى তথা যখন হাদীস সহীহ হয়, তাহলে সেটিই আমার মাযহাব। {হাশিয়ায়ে ইবনে আবেদীন-১/৬৩}
“পাবে” শব্দ আরবীতে কোথায় আছে? এটি গায়রে মুকাল্লিদদের বানানো শব্দ। একথা ইমাম আবু হানীফা রহঃ বলেননি। পাবে শব্দ থাকলে আরবীতে থাকতো وجد কিন্তু উক্ত ইবারতের কোথাও এ শব্দটি নেই। তাহলে “পাবে” অর্থ কোত্থেকে আমদানী করা হল?
যিনি বলছেন, হাদীস সহীহ হলে, সেটি তার মাযহাব, তিনি কি করে গায়রে সহীহ হাদীসের উপর তার মাযহাব প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন? একথাইতো সুষ্পষ্ট প্রমাণ যে, ইমাম আবু হানীফা রহঃ তার মাযহাবের ভিত্তি রেখেছেন কেবল সহীহ হাদীসের উপর। কোন দুর্বল হাদীসের উপর তিনি তার মাযহাব প্রতিষ্ঠা করেননি। এ ব্যাপারে আরো জানতে আগের পোষ্টটি আবার পড়ুন।
বাংলায় “পাবে” শব্দ বাড়িয়ে বক্তব্যটিকে বিকৃতকারীর নাম আহলে হাদীস হয় না, হয় আহলে ধোঁকা।
ধোঁকাবাজী নং-২
“আমরা কোথা থেকে গ্রহণ করেছি, তা না জেনে আমাদের কথা গ্রহণ করা কারো জন্য বৈধ নয়।হাশিয়াহ ইবনে আবেদীন ৬/২৯৩]”
এ বক্তব্যটি যেভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে। সাধারণ পাঠকগণ বুঝবেন যে, এটি বুঝি ইমাম সাহেবের মুকাল্লিদদের উদ্দেশ্যে ইমাম আবু হানীফা রহঃ বলে গেছেন। অথচ এ বক্তব্যটি তিনি মুকাল্লিদদের উদ্দেশ্যে বলেন নি। বলেছেন মুজতাহিদদের উদ্দেশ্যে। তাই এটিই একটি ধোঁকাবাজিমূলক বক্তব্য।
যদি তিনি এটি মুকাল্লিদদের উদ্দেশ্যেই বলে গিয়ে থাকেন, তাহলে প্রশ্নকারীর কাছে আমাদের আবেদন, উক্ত কিতাবের মূল আরবিটা দিন। তাহলে আপনার মিথ্যার খোলস খুব সহজেই বেরিয়ে আসবে।
ধোঁকাবাজী নং-৩
তোমার জন্য আফসোস হে ইয়াকুব (আবু ইউসুফ)! তুমি আমার থেকে যা শোন তাই লিখে নিও না। কারণ আমি আজ যে মত প্রদান করি, কাল তা প্রত্যাখ্যান করি এবং কাল যে মত প্রদান করি, পরশু তা প্রত্যাখ্যান করি [ ড. অছিউল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আববাস, আত-তাক্বলীদ ওয়া হুকমুহু ফী যুইল কিতাব ওয়াস-সন্নাহ, পৃঃ ২০]
এ বক্তব্যেরও আরবী ইবারত কাম্য হানাফী নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে। গায়রে মুকাল্লিদ দাবিদার ভ্রান্ত কারো কিতাব থেকে নয়। অথচ এখানে উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে একজন গায়রে মুকাল্লিদের লেখা বই থেকে। তাই হানাফী নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ থেকে এ বক্তব্যটিকে ইমাম আবু হানীফা রহঃ থেকে প্রমানিত দেখাতে হবে। কেননা, অর্থ বিকৃতি ও মিথ্যা কথা বলা গায়রে মুকাল্লিদদের মাযহাবের মূল ভিত্তি।
যদি উক্ত বক্তব্যটি সঠিক হয়, তাহলেও কোন সমস্যা নেই। কারণ ইমাম সাহেব একথা কাকে বলছেন? গায়রে মুজতাহিদকে না মুজতাহিদকে?
ইমাম আবু হানীফা রহঃ বক্তব্যটি কি মুকাল্লিদকে লক্ষ্য করে না মুজতাহিদকে লক্ষ্য করে?
নিশ্চয় মুজতাহিদকে লক্ষ্য করে। ইমাম আবু ইউসুফ মুজতাহিদ ফিল মাযহাব ছিলেন। মুজতাহিদ ফিল মাযহাব বলা হয়, যিনি ইমামের নির্দিষ্ট করা মূলনীতির আলোকে দলীলের আলোকে স্বীয় মূলনীতি নির্ধারণের যোগ্যতা রাখেন। যে মূলনীতির আলোকে তিনি নিজেই কুরআন ও হাদীসে অবর্ণিত মাসায়েলকে বের করতে পারেন। তার নাম মুজতাহিদ ফিল মাযহাব।
এমন মুজতাহিদের জন্য শুধু ইমামের দলীলের উপর নির্ভর করে মাসআলা মেনে নেয়া জায়েজ নয়, যতক্ষণ না তিনি উক্ত মাসআলার দলীল নিজে যাচাই বাছাই করে নিশ্চিত হন।
তাহলে যেহেতু ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ নিজেই মুজতাহিদ ছিলেন। আর মুজতাহিদের জন্য দলীল ছাড়া ইমামের বক্তব্য মেনে বৈধ নয়, তাই তাকে ইমাম আবু হানীফা রহঃ সতর্ক করে বলেছেন যে, “হে ইয়াকুব (আবু ইউসুফ)! তুমি আমার থেকে যা শোন তাই লিখে নিও না।”
যেহেতু কুরআন ও হাদীসে যেসকল মাসআলা বর্ণিত নেই। সেসব ক্ষেত্রে সমাধান কেবল মুজতাহিদের স্বীয় ইজতিহাদ। আর ইজতিহাদী সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হতে পারে। তাই ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ এর মত মুজতাহিদের জন্য যাচাই বাছাই ছাড়া ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বক্তব্য মেনে নেয়া বৈধ নয়।
কিন্তু এর দ্বারা মুকাল্লিদের মেনে নেয়ার কি কথা রইল? এ কথাতো মুকাল্লিদের জন্য বলাই হয়নি। তাহলে মুকাল্লিদদের ক্ষেত্রে কেন ধোঁকাবাজির সাথে এ বক্তব্য উদ্ধৃত করা হচ্ছে?
ধোঁকাবাজী নং-৪
যে ব্যক্তি আমার দলীল জানে না, আমার কথা দ্বারা ফতোয়া প্রদান করা তার জন্য হারাম [ ড. অছিউল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আববাস, আত-তাক্বলীদ ওয়া হুকমুহু ফী যুইল কিতাব ওয়াস-সন্নাহ, পৃঃ ২০]
এটিও একটি ধোঁকাবাজিমূলক প্রশ্ন। একেতো এ বক্তব্যটি ইমাম আবু হানীফা রহঃ থেকে প্রমানিত কি না? তাই সন্দেহ আছে। কারণ গায়রে মুকাল্লিদরা প্রচুর পরিমাণ মিথ্যা রেফারেন্স দিয়ে থাকে। আর অনবরত মিথ্যা কথা বলে থাকে। তাই প্রথমে উক্ত বক্তব্যটি যতক্ষণ পর্যন্ত হানাফী কোন নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে আরবী ইবারতসহ না দেখাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এর কোন বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। কারণ মিথ্যুক কত কথাই বলতে পারে।
আর যদি উক্ত বক্তব্যটি প্রমাণিত করতেও পারে, তাহলে দেখা যাবে যে, উক্ত বক্তব্যটি পূর্বের মত ইমাম আবু হানীফা রহঃ মুজতাহিদদের উদ্দেশ্য করেই বলেছেন। মুকাল্লিদদের উদ্দেশ্য করে বলেননি। তাই এ অপরিচিত গায়রে মুকাল্লিদের লেখা বইয়ের রেফারেন্স দেয়া বক্তব্যটি দ্বারা ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর পক্ষ থেকে মুকাল্লিদদের তাকলীদ করা নিষিদ্ধ হওয়া প্রমানিত হয় না।
ধোঁকাবাজী নং-৫
নিশ্চয়ই আমরা মানুষ। আমরা আজকে যা বলি, আগামীকাল তা থেকে ফিরে আসি [ ড. অছিউল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আববাস, আত-তাক্বলীদ
ওয়া হুকমুহু ফী যুইল কিতাব ওয়াস-সন্নাহ, পৃঃ ২০]
এ ধোঁকাবাজীর ব্যাপারেও আমাদের পূর্বোক্ত বক্তব্যটি প্রযোজ্য। তথা আগে হানাফী নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে উক্ত বক্তব্যটি ইমাম আবু হানীফা রহঃ বলেছেন, তা প্রমাণ করতে হবে মূল আরবী ইবারত দিয়ে। তারপর বিশ্বাস হবে যে, আসলেই ইমাম আবু হানীফা রহঃ এমন বলেছেন। নতুবা ফাসেক মিথ্যুকের কথাকে অন্তত আমরা বিশ্বাস করি না।
তারপরও যদি তা ইমাম আবু হানীফা রহঃ থেকে প্রমাণিত করেও, তবুও মুকাল্লিদের কোন সমস্যা নয়। কারণ আমরা জানি যে, মুজতাহিদের ভুল হলেও একটি সওয়াব। আর সঠিক হলে দুটি সওয়াব। সুতরাং মুজতাহিদের যারা মুকাল্লিদ তাদের ঘাবড়ানোর কোন কারণ নেই। ভুল হলেও সওয়াব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না। তাই চিন্তার কোন কারণ নেই।
ধোঁকাবাজী নং-৬
‘আমি যদি আল্লাহর কিতাব (কুরআন) ওরাসূলুললাহ (ছা-এর কথার (হাদীছ) বিরোধী কোন কথা বলে থাকি,তাহ’লে আমার কথাকে ছুঁড়ে ফেলে দিও [ছালেহ ফুল্লানী, ইক্বাযু হিমাম, পৃঃ ৫০]
এখানেও একই কথা প্রযোজ্য। আগে তা হানাফী নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বক্তব্য প্রমাণ করতে হবে। নতুবা এটি মিথ্যাচার বৈ আর কিছু নয়। যা তাদের মজ্জাগত স্বভাব।
আর যদি প্রমানিত হয়, তাহলে দেখা যাবে, ইমাম সাহেব রহঃ এর বক্তব্যটি মুজতাহিদের জন্য ছিল। গায়রে মুজতাহিদ তথা মুকাল্লিদের জন্য ছিল না। সুতরাং এ বক্তব্যের দ্বারা মুকাল্লিদের ক্ষেত্রে কোন কিছুই প্রমাণিত হচ্ছে না।
৭ নং প্রশ্ন
আপ্নারা বলেন তার মাসায়াল গুলা সব সহিহ তাহলে হাদিস সঙ্কলনের যুগ আসার আগেই ইমাম আবু-হানিফার (র.) ৩০০ (মতান্তরে ২৯৯) টি ফতোয়া বাতিল হয়েছে . বাতিল করেছেন ইমাম আবু-হানিফার (র.)-এরই শ্রেষ্ঠ ছাত্র ইমাম আবু-ইউসুফ (র.)।
উত্তর
এ তথ্য আপনাকে কে দিল? এর কি রেফারেন্স আছে? হানাফী নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে প্রমাণ করুন। কোন ফাসেক মিথ্যুক গায়রে মুকাল্লিদের কিতাব থেকে নয়। হানাফী নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে প্রমাণ দিন।
আরেকটি কথা জেনে রাখা উচিত যে, ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ, ইমাম মুহাম্মদ রহঃ এর বক্তব্য মূলত ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বক্তব্যই। তিনি ইজতিহাদ করতে গিয়ে একেক সময় একাধিক বক্তব্য দিয়েছেন। তারপর একটি মতকে দলীলের ভিত্তিতে প্রাধান্য দিয়েছেন। এর মাঝে কখনো কখনো ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ বা ইমাম মুহাম্মদ রহঃ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর একাধিক বক্তব্যের মাঝে একটি মতকে নিয়েছেন। আর ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কাছে প্রাধান্য পাওয়া বক্তব্যের বিরোধীতা করেছেন দলীলের ভিত্তিতে। তাহলে যে সকল মাসমাআলায় ইমাম আবু ইউসুফ এবং ইমাম মুহাম্মদ রহঃ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কাছে প্রাধান্য পাওয়া বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন, তাও মূলত ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বক্তব্যই। কি মূলনীতির ভিত্তিতে তারা বিরোধীতা করেছেন, তাও ফিক্বহে হানাফীর উসুলের কিতাব “উসূলে মাসায়িলিল খিলাফিয়্যাহ লিদ দাবুসী” নামক কিতাবে রয়েছে। তাই আপনি যেভাবে বলেছেন যে, ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ফাতাওয়া বাতিল করে দিয়েছেন, তা ফিক্বহে হানাফী সম্পর্কে অজ্ঞতা-মুর্খতার কারণে বলেছেন। এর কোন ভিত্তি নেই।
৮ নং প্রশ্ন
তার মাসায়াল গুল কি সব সনদ আকারে বর্নিত? যার মাধ্ধমে আমরা বিস্বাস করব যে তিনি সব মাসায়াল গুল সহিহ হাদিস মতাবেক প্রদান করেছেন।
উত্তর
আপনার বোকামীসূলভ প্রশ্নের জবাব ইতোপূর্বে ৩ নং প্রশ্নের জবাবে চলে গেছে। আমার ভয় হচ্ছে, আপনি দু’দিন পর নাস্তিকের মত প্রশ্ন করে বসবেন যে, কুরআনের প্রতিটি আয়াত যে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, একথার কোন সনদ আল্লাহ তাআলা পর্যন্ত প্রমাণিত আছে?
এর উত্তরটি জানতে আবার পড়ুন- ৩ নং প্রশ্নের জবাব।
৯ নং প্রশ্ন
অন্ধ অনুসরনের যে ব্যাখ্যাটা সেটা বুদ্ধিজীবীদের মতে যখন কেও চোখে দেখেনা আর যে দেখে তার সাহায্য নিয়ে চলে কারন তার বিস্বাস আছে সে তাকে পথ চিনে নিয়ে যাবে তার সন্ধেও থেকেই লাভ নাই কারন সে অন্ধ,আর যে ব্যাক্তি চোখে দেখা সত্তেও অন্নজনকে অনুসরন করে চলে যদিও তার সন্ধেও হই,একে বলে চখ থাকা সত্তেও অন্ধের মতো অনুসরন করা।
উত্তর
আপনার বাংলা বানান খুবই উঁচু মানের। তাই আমার মত সাধারণ পাঠকদের বুঝতে খুব কষ্ট হয়েছে। কয়েকবার পড়ার পর আপনার মুহাবুদ্ধিযুক্ত ব্যাখ্যাটি অনুধাবন করতে পেরেছি।
আপনি বলতে চাচ্ছেন, আপনার মাঝে কুরআন ও হাদীস থেকে মাসআলা ইজতিহাদ করার ক্ষমতা বিদ্যমান? আপনি অন্ধ নন। কুরআন ও হাদীসের অন্তর্নিহিত অর্থ আপনি বুঝতে সক্ষম। আপনি চক্ষুসমান। অন্ধ নন। তাহলে একটু যাচাই করে নেন, আপনার চোখটি আছে কি না? নাকি অন্ধ হয়েও চক্ষুসমানের অভিনয় করে বেড়াচ্ছেন।
দেখুন চক্ষুসমান মুজতাহিদ হওয়ার জন্য কি কি শর্ত বিজ্ঞজন নির্ধারণ করেছেন-
ইজতিহাদের শর্তাবলী:
সালাফের সময় থেকে এ পর্যন্ত অনেক আলিম এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আল্লামা হামিদী (রহ.) ‘ইহকাম’ গ্রন্থে, ইমাম গাজালী (রহ.) ‘আল-মুসতাফা’ গ্রন্থে এবং ইবনে খালদুন (রহ.) ‘আল-মুকাদ্দিমা’য় এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
ইজতিহাদ প্রসঙ্গে এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও একশ্রেণীর মানুষ এর কোন প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনা। অথচ এ শর্তগুলো পূর্ণ করা ছাড়া কাহারো জন্য ইজতিহাদের ময়দানে অবতীর্ণ হওয়ার কোন অবকাশ নেই। দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যায়, অযু হলো নামাজের শর্ত। কেহ যদি অযু ছাড়া নামাজ পড়ে তার নামাজ হওয়া তো দূরের কথা, এ নামাজই তার ধ্বংসের কারণ হবে। তদ্রুপ যোগ্যতা অর্জন না করে যে লোক ইজতিহাদে লিপ্ত হয়, তারও ধ্বংস অনিবার্য।
আল্লামা শাওকানী (রহ.) ইজতিহাদের যে শর্তাদি বর্ণনা করেছেন তা এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল।
প্রথম শর্ত :
আরবী ভাষায় বুৎপুত্তি। নাহব, সরফ, বালাগাত ইত্যাদি শোস্ত্রে গভীর জ্ঞানের পাশাপাশি আরবী ভাষার রীতি ও উপস্থাপনা সম্পর্কেও বুৎপুত্তি থাকা জরুরী। কেননা, কুরআন ও সুন্নাহ, যা ইজতেহাদের মূল সূত্র তা আরবী ভাষায়।
দ্বিতীয় শর্ত :
উলুমুল কোরআন বিষয়ে পারদর্শিতা। বিশেষত রসূলুল্লাহ (স.), সাহাবা ও তাবেয়ীন থেকে বর্ণিত কোরআন মজিদের তাফসীর, আসবাবে নুজুল ও নাসিখ-মানসূখ সম্পর্কে বুৎপুত্তি থাকা অপরিহার্য।
তৃতীয় শর্ত :
উলুমুল হাদিস বিষয়ে পারদর্শিতা। উলুমুল হাদিসের পরিভাষা ও ইলমু আসমাইর রিজাল সম্পর্কে অবগতি এর অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া বিদ্যমান উপকরণাদির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মাসআলার যত হাদিস সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা সম্ভব তা পরিপূর্ণভাবে থাকাও ইজতিহাদরে জন্য জারুরী।
ফিক্বহু আহলিল ইরাক ওয়া হাদিসুহুম গ্রন্থে মুজতাহিদ হওয়ার জন্য যেসব বিষয় থাকাকে আবশ্যক সাব্যস্ত করা হয়েছে তা নিম্নরূপ-
১-আরবী ভাষা সম্পর্কে প্রাজ্ঞতা। তথা আরবীর নাহু, সরফ, ফাসাহাত ও বালাগাত, বর্ণনাশৈলী, কাদীম আরবী পরিভাষা ইত্যাদি।
২- কুরআন সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান। তথা কুরআনের নাসেখ, মানসূখ, শানে নুজুল, শাব্দিক ও অন্তর্নিহিত অর্থসহ পুরো কুরআনের আহকামের আয়াত নখদর্পনে থাকা।
৩- সুন্নাহ সম্পর্কে প্রাজ্ঞতা। তথা হাদীসের সনদ ও মতন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা, শানে ওরূদ, নাসেখ মানসূখ, সনদের রাবীদের জীবনী মুখস্ত, রাবীদের ব্যাপারে ইমামদের মতামত, হাদীসটির ইতিহাস, এতদসংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়।
৪- ফিক্বহী মূলনীতি সম্পর্কে প্রাজ্ঞতা। তথা উসুল, ফুরু সম্পর্কে থাকতে হবে পূর্ণ প্রাজ্ঞতা।
৫- ইজমায়ে উম্মত সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা।
৬- শরীয়তের মাকসাদ সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা।
৭- স্বভাবজাত ফিক্বহী যোগ্যতা থাকা।
এবার চক্ষুসমান দাবিদার ভাইটির কাছে আমাদের উল্লেখিত চক্ষুসমানের কোন গুণটি আপনার মধ্যে পরিপূর্ণ আছে? তাহলে কি আপনি অন্ধ হয়েও চক্ষুসমান হওয়ার ভান করছেন? এরকম ধোঁকাবাজির মানে কি?
১০ নং প্রশ্ন
আমার শেষের দিকে প্রস্ন ছিল একজন ইমাম এমন এক প্রস্নের সম্মুখ হলেন যার হাদিস উনার জানা নাই। সেখেত্রে তিনি ইজতিহাদ অনুযায়াই মাসায়ালা প্রদান করলেন। কিন্তু পরবর্তিতে ওই বিষয়ের হাদিস জানা গেল যা ওই মোতের বিরুদ্ধে যাই, সেখেত্রে কোনটা অনুসরন যোগ্য।যেমন আপ্নি বললেন হানাফি মতে নারিকে স্পর্শ করলে অজু ভাঙবেনা,শাফেয়ী মতে অজু ভেঙে যাবে(কুরান অনুযায়ী)।কিন্তু হাদিসে আছে আমাদের প্রিও নবিজী হযরত মুহাম্মদ (সা তার স্ত্রী কে চুম্বন করার পর অজু না করে নামাজে গেলেন। অর্থাৎ কুরানে বলা আয়াত সহবাসের খেত্রে বুযাচ্ছে। হইত হাদিস টা আবু হানিফা(রাহ যেনেছিলেন শাফেয়ী (রাহ এর কাছে পইছাইনি। কিন্তু আম রা জানার পর কাকে মানব শাফেয়ী অনুসারী হলে হানাফি অনুসরন করব। নাকি জানার পর ভুলটাই মানব যদিও মাকে কিয়ামতের দিন আমাকে ধরা হবে।
উত্তর
আপনার এ প্রশ্নটি যৌক্তিক। সেই সাথে ফিক্বহ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে উদ্ভুত। আপনি ফিক্বহের কিতাবগুলো ভাল করে অধ্যায়ন করলে এ প্রশ্নটি আপনি করতেন না।
আপনার বক্তব্য যে, একজন মুজতাহিদ ইমাম হাদীস না পেয়ে ইজতিহাদী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তারপর হাদীস পেয়ে তার মতটিকে বাদ দিয়ে দিবেন।
এখানেই আপনার ভুল। আপনি নিজের অজ্ঞতার সাথে মুজতাহিদ ইমামদেরকে তুলনা করছেন।
মুজতাহিদ ইমাম সাহেব হাদীস জানতেন না, তাই কিয়াস করেছেন, এ বক্তব্যটি তখন গ্রহণীয় হবে, যখন উক্ত মতের পক্ষে ইমাম সাহেব কোন হাদীসের দলীল উপস্থাপন না করে থাকেন। কিন্তু যদি তিনি তার মতের পক্ষে হাদীসের দলীল উপস্থাপন করে থাকেন, যদিও তা পরবর্তী কোন রাবীর কারণে দুর্বল হয়ে গেছে। তবু কিন্তু আপনি একথা বলতে পারবেন না যে, ইমাম সাহেব হাদীস পাননি তাই কিয়াস করে মত দিয়েছেন।
কিন্তু তিনি হাদীসের ভিত্তিতে জবাব দেয়ার পর উক্ত হাদীস জঈফ হওয়ার কারণে আপনি একথা বলতে পারেন না যে, ইমাম সাহেব হাদীস না পাওয়া এমন মত দিয়েছেন।
যদি তার পক্ষে হাদীসের কোন দলীল না’ই থাকে, তাহলে আপনার বক্তবটি সহীহ হয়। কিন্তু আপনি এমন কোন মাসআলা দেখাতে পারবেন, যাতে মুজতাহিদ ইমাম কিয়াস করে মাসআলা বলেছেন, অথচ এ ব্যাপারে কোন হাদীস আছে? নিশ্চয় পারবেন না।
এতটুকু পারবেন যে, ইমাম সাহেব একটি হাদীসের ভিত্তিতে মাসআলা বলেছেন, পরবর্তী রাবীর কারণে উক্ত হাদীসটি আর সহীহ থাকেনি, দুর্বল হয়ে গেছে। অর্থাৎ ইমাম সাহেব পরবর্তী রাবীর কারণে উক্ত হাদীস দুর্বল, তথা দুর্বল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত তার মাযহাব। আর কখনো মাযহাবের বিপরীত মতটি সহীহ হাদীস হতে পারে।
আশা করি পরিস্কার বুঝতে পেরেছেন। যদি ইমামের মাযহাবের পক্ষে যে কোন ধরণের কোন হাদীস থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার বক্তব্যটি একটি অসার বক্তব্য হয়। আর যদি কোন হাদীসই না থাকে, তাহলে আপনার বক্তব্যটি সহীহ হয়। কিন্তু আমাদের চ্যালেঞ্জ এমন কোন মাসআলা দেখাতে পারবেন না, যে মাসআলা বিষয়ে হাদীস আছে, কিন্তু মুজতাহিদ ইমাম হাদীস রেখে কিয়াস করেছেন।
১১ নং প্রশ্ন
আমার শেষ প্রস্ন ইমাম গনের সব কথা যদি ঠিক হবে তাহলে তারা একথা গুল বলল কেন।
উত্তর
একেতো একথাগুলো তারা বলেছেন কি না? তাই নিশ্চিত নয়। আগে তারা বলেছেন নির্ভরযোগ্য হানাফী কিতাব থেকে দেখান। তারপর এর জবাব দেয়া যাবে। তাছাড়া ইতোপূর্বে এ ব্যাপারে উত্তর গিয়েছে। তা দেখে নিন।
আপনার কাছে আমাদের প্রশ্ন
একাধিক সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূল সাঃ কড়া ভাষায় তার থেকে হাদীস লিখতে নিষেধ করেছেন। যেমন-
عن أبي سعيد الخدري أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال لا تكتبوا عني ومن كتب عني غير القرآن فليمحه وحدثوا عني ولا حرج ومن كذب علي – قال همام أحسبه قال – متعمدا فليتبوأ مقعده من النار
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা আমার কোন কথা লিপিবদ্ধ করো না। কুরআন ছাড়া অন্য কিছু যদি কেউ আমার থেকে লিপিবদ্ধ করে থাকে, তাহলে সে যেন তা মিটিয়ে ফেলে। আমার কোন কথা তোমরা মৌখিকভাবে বর্ণনা করতে পার। এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে যদি কেউ ইচ্ছে করে আমার উপর মিথ্যারোপ করে, তাহলে সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নেয়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩০০৪, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-১২২৯}
عن أبي سعيد – يعني الخدري – قال : كنا قعودا نكتب ما نسمع من النبي صلى الله عليه و سلم فخرج علينا فقال : ” ما هذا تكتبون ؟ ” فقلنا : ما نسمع منك فقال : ” أكتاب مع كتاب الله ؟ أمحضوا كتاب الله وأخلصوه ” قال : فجمعنا ما كتبناه في صعيد واحد ثم أحرقناه بالنار
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। আমরা রাসূল সাঃ থেকে যা শুনতাম তা লিপিবদ্ধ করতাম। একদিন তিনি আমাদের কাছে আসলেন, এবং জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এগুলো কি লিখছ? আমরা বললাম, আপনার থেকে যা কিছু শুনি তা। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কিতাবের সাথে আরেক কিতাব বানাতে চাচ্ছ? আল্লাহর কিতাবকে একক গ্রন্থ হিসেবে থাকতে দাও এবং তাকে মিশ্রণমুক্ত রাখ। আবু সাঈদ খুদরী বলেন, এ কথা শুনে আমরা ইতোপূর্বে যা কিছু লিখেছিলাম, তার সমুদয় এক মাঠে একত্রিত করলাম, তারপর সেগুলোকে জ্বালিয়ে দিলাম। {মাযামাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-৬৭২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১১০৯২}
فقال له زيد إن رسول الله صلى الله عليه و سلم أمرنا أن لا نكتب شيئا من حديثه فمحاه
হযরত জায়েদ বিন সাবেত রাঃ বলেনঃ আমাদেরকে রাসূল সাঃ হাদীস না লিখতে নির্দেশ দিলেন। তাই আমরা তা মুছে ফেললাম। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৬৪৭}
তারপরও সিহাহ সিত্তার সংকলকগণ যে, হাদীস লিখলেন রাসূল সাঃ এর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে। এ নিষেধকৃত এসব হাদীস মানা কতটুকু ঠিক? এভাবে হাদীস লিখে তা রাসূল সাঃ এর দিকে নিসবত করা কি জায়েজ হয়েছে?
দয়া করে কুরআন ও সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে জবাব দিন।
এর জবাব দিলে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর নিষেধাজ্ঞা সত্বেও তার মাযহাবের তাকলীদ বিষয়ক প্রশ্নের আরো বিশদ জবাব দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
৪৬৭০ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তো কেন আমরা ঐক্যমতের দিকে না গিয়ে ভিন্নমত প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এতো চেষ্টা করতেছি? ইহুদী-খ্রীষ্টান-মুসলমানদের ঐক্যমত তো দূরের কথা আমরা মুসলমানদের মধ্যেও ভিন্নমত প্রতিষ্ঠা করার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি – কেন?
ওদের জিজ্ঞেস করুন-বুখারী শরীফ,মুসলিম শরীফ,আবু দাউদসহ সিহাহ সিত্তার কিতাব লিখার আগে কোন হাদীস ছিল? তখন কি সহীহ হাদীস ছিলনা? তখনকার মানুষ কি সহীহ হাদীসের উপর আমল করেন নি? যেই তিন জমানাকে রাসূল সাঃ শ্রেষ্ঠ জমানা বলেছেন, সেই তিন জমানায় সহীহ হাদীসের উপর আমল হয়নি? বুখারী মুসলিমসহ সিহাহ সিত্তাহ সংকলিত না হবার কারণে?
বুখারী মুসলিম সংকলিত হবার আগে যেমন তখনকার মানুষ বিক্ষিপ্ত সহীহ হাদীসের উপর আমল করতেন, তেমনি ইমাম আবু হানীফা রঃ, ইমাম শাফেয়ী রহঃ, ইমাম মালেক রহঃ, ইমাম আহমাদ রহঃ মাসায়েল সংকলিত করে সুবিন্যাস্ত করার আগে বিক্ষপ্ত মাসাআলাকে একত্র করেছেন। কোন নতুন মাসআলা বাড়াননি।
হযরত উসমান রাঃ এর আমলের আগে ৭ কিরাতে কুরআন পড়া হতো। যখন হযরত উসমান রাঃ এক কিরাতে কুরআন একত্র করলেন। তখন এটি আবশ্যক হয়ে গেল। গোটা পৃথিবীতে সেই একই পদ্ধতিতে কিরাত পড়া হয় কুরআনের। তো কি দাঁড়াল? বিক্ষিপ্ত কেরাতকে হযরত উসমান রাঃ এক করে দিলেন।
এমনি চার মাযহাবের অবস্থা। বিক্ষিপ্ত মাসায়েলকে একত্র করেছেন নতুন কোন বিষয় জারি করেন নি।
@ইসলাম,
আপনি এর উত্তর দিলেইতো হয়ে যায়।
তাহলে সবাই সেই একটি মাযহাব কেই অনুসরন করতো।
আর ভালো করে দেখেন, ফিক্বহ্ এর কিতাব গুলো হাদিস গ্রন্থ সংকলন হাবর কতো পড়ে লিখা হয়েছে?
ঘুড়ে আসুন সুন্নার দিকে
আর আপনি বলেন যে ভাঙ্গন মেনে নিছে সবাই; এসব ইতিহাস যসি সত্যই হয় কেউ কি সমর্থন করবে ভাঙ্গনের? চার খন্ড যদি মানতেই পারেন তাইলে তো আরও খন্ড মানবেনই আজ হোক আর কাল হোক এবং তা প্রতিহত করতেই পারবেন না, কেননা ভাঙ্গনই তো মেনে নিছেন – অতএব আরও ভাঙ্গন হইতেই থাকবে যতক্ষন না আপনারা ভাঙ্গনের বিরূদ্ধে যাবেন।
প্রথমত ৪ মাযহাব
৪ মাযহাবের ভিতরে আবার আরো ভাগ,
উদাহরন হিসেবে হানাফি মাযহাব কেই ধরি (কেননা আমাদের দেশে হানাফি মাযহাব অনুসারী বেশী)
১.দেওবন্দী
২.ব্রেলভী
৩.তাবলীগি
৪.কাদিয়ানী
৫.ফুরফুরা
৬.দেওয়ান বাগী
৭.আটরশী
৮.চরমোনাই
৯.মাইজভান্ডারী
১০.আর পীরেরতো শেষ নাই
আরোও অনেক......
অথচ, আল্লাহ বলেছেন, "ওয়া তাসিমু বি হাবলিল্লাহি জামিয়া ওলা তাফার রাকু"
তাই কোরআন ও সুন্নার দিকে আহবান করলে হয়েযায়....
১.ওহাবী
২.আহলেহাদিস
৩.সালাফী
কোরআনে আল্লাহ বলেছেন,
"তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়োনা যে রখম ইহুদি/নাসারা (কাফির) রা তাদের দ্বীনে করেছিল"
এখন যারা একদল হবার জন্য কোরআন ও সহিহ হাদিসের দিকে ডাকে তারাই খারাপ.
কেনইবা তারা তাদের বাপ দাদার ধর্ম থেকে ফিরে আসেবে তাইতো এতো সঠিক ইসলামের নামে বেঠিক ভ্রান্তি ছরানোর তালে।
মক্কার মুশরিক দেরকে আল্লাহর পথে ডাকলে তারাও বলতো আমরা আমাদের বাপ দাদার ধর্ম ত্যাগ করবো???
১. দেওবন্দী-তাবলীগী-চরমনাই-ফুরফুরা এক।
২. ব্রেলভী-আটরশি-মাইজভান্ডারী-দেওয়ানবাগী বেদাতী (যেমন বেদাতী আহলে হদসরা) ওরা মাজহাব মানলেইবা কি আর না মানলেইবা কি ।
৩. কাদিয়ানীদেরকে যারা হানাফী বলে তাদের মত জাহেলদের মুখে জুতা মারা উচিত।
এবার আমরা দেখি মুসলিম উম্মাহকে মুশরিক ফতোয়াদানকারী আহলে হদসরা নিজেরা কয় ভাগে বিভক্ত। যারা নিজেদেরকে এক দল অপরদলকে কাফের ফতোয়া দিয়েছে ! অথচ চার মাযহাবের প্রত্যেকেই অপরের উপর পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। সামান্যতম বিরোধও তাদের মাঝে নেই।
http://www.cifiaonline.com/salafigroupsinworld.htm
মুনাফিকের লক্ষন তো আপনার জানা আছে নিশ্চই?
"মানুষকে গালিগালাজ করে" (বুখারী)
আমি ভাগগুলোকে আলাদা করে দেখিয়েছি আর আপনি দুই দলের মধ্যে আরোও ভাগ করে দেখিয়েছেন এতে পার্থক্য কি হলো? ভাগতো আপনিও করলেন। ভাত খেলেন ঠিকই সরাসরি না খেয়ে একটু ঘুরায়ে খেলেন। স্বভাবটা জটিল।
আর ভালোকরে ইতিহাস খুজে দেখুন "গোলাম আহমদ কাদিয়ানী" প্রথম জীবনে একজন হানাফি আলেম ছিলেন।
না জানলে জানার চেস্ঠা করুন।
আপনি যে ভাগ করেছেন এগুলো দ্বীনের মাঝে ভাঙ্গন নয়। একজন শিক্ষক যদি তার শিক্ষকতা ছাড়া অন্য কোন কাজ করে তবে কি তার শিক্ষকতা নষ্ট হয়ে যায়। একজন লোক যেমন শিক্ষক হতে পারে এট এ টাইম সে জিহাদীও হতে পারে, মুবাল্লিগও হতে পারে। ঠিক তেমনি দেওবন্দীরা ইলমে দ্বীনের খেদমত করে, তাবলীগ জামাত দ্বীনের তাবলিগ ও দাওয়াতের খেদমত করে ফুরফুরা-চরমোনাই সাধারন মুসলিমকে আল্লাহওয়ালা বানানোর খেদমত করে। এতে দ্বীনের ভাঙ্গন হয় না, এক একজন ইসলামেরই এক এক সেক্টরের খাদেম। আপনাদের বহু দলই অপর আহলে হদস দলকে কাফের ফতোয়া দিয়েছে, কিন্তু চার মাজহাবের কোন আলেম-ইমাম তো দূরের কথা একজন সাধারন অনুসারী অপর মাজহাবের অনুসারীকে সামান্য কটু কথা বলেছে মাজহাবী ইখতিলাফের কারনে এমন একটি প্রমান দেখানতো পারলে !
কারণ হিসেবে বলবো "আপনাদের লক্ষনটাইতো মুনাফিকের সাথে মিলে"
কে জাহেল সেটা আল্লাহই ভালো জানেন।
আপনার কথায় মনে হচ্ছে সে নিজেকে নবী দাবী করার জন্য হানাফী মাজহাবই দায়ী।
আপনি ভুল বুঝলে আমার করার কিছু নাই।
আমি বলেছি,
আর ভালোকরে ইতিহাস খুজে দেখুন "গোলাম আহমদ কাদিয়ানী" প্রথম জীবনে একজন হানাফি আলেম ছিলেন।
সে নবী দাবী করার আগে একজন হানাফি আলেম ছিল।
সব কাদিয়ানী কাফের এবং তারা হানাফি না কিন্তু গোলাম আহমেদ কাদিয়ানী নবী দাবি করার পূর্বে একজন হানাফি আলেম ছিলেন। না জানলে জানেন।
তাই কাদিয়ানী দলটাকে অনেকে হানাফি থেকে ভাগ হয়ে আসা দল হিসেবে চিন্হিত করে।
এখন যদি আসাদুল্লাহ গালীব নিজেকে নবী দাবী করে তবে তার জন্য কি আহলে হদস দায়ী হবে ?
আপনিতো দুই দিন আগেও পোস্ট দিছেন আহলে হাদিস এর এক আলেমের বই থেকে উধৃতি দিয়ে এবং প্রমান করতে চেয়েছেনআহলে হাদিস ও শিয়ারা একই(?) তাহলে সকল আহলে হাদিস কি বিভ্রান্ত হয়ে যায়??
দেওবন্দিরা ব্রেলভী দেরকে আর ব্রেলভীরা দেওবন্দী দেরকে যে কাফের বলে তার উদাহরন নাই দিলাম।
আর কেউ যদি কাউকে কাফের বলে (ব্যাক্গিত ভাবে) তাহলে তো সমাধান হাদিসেই আছে উভয়ের যে কোন একজন কাফের।
বলার আগে জানুন তবে নিরপেক্ষ মনভাব নিয়ে।
আর এরখম শিক্ষক বারাতে থাকেন আর দলে দলে ভাগ হতেই থাকেন এটা তো পুরানা স্বভাব।
ব্রেলভী সম্পর্কে আপনার কোন জ্ঞানই নেই, ফুরফুরা যেই ব্রেলভী সেই সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীকে দেওবন্দীরা ও মাওলানা মৌদুদী (র) উভয়েই মুজাদ্দিদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কিন্তু মাজার পুজারী যেই ব্রেলভী তথা আহমদ রেযা খা ব্রেলভী সে ব্রেলভীকে দেওবন্দীরা হানাফী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়না।
এর জবাব আগেই দিয়েছি যা আপনার ঘিলুতে ঢুকছেনা
এক এক দল ইসলামের ই এক এক বিভাগের খেদমত করে যাচ্ছে, কেউ ই কারো প্রতিপক্ষ নয়, এবং কেউই স্বয়ং সম্পূর্ণ নয়, বরং এক দল এর খেদমত অপর দলের খেদমতের মুখাপেক্ষী। এতএব দ্বিন এবং এর বিস্তৃত অঙ্গন বা বিভাগ এর ব্যাপারে জাহেল দের দ্বারাই একে ইসলামে ভাঙ্গন হিসেবে চিহিৃত করা সম্ভব !
আপনার এই লিঙ্কে তো কাউরে ছাড়া বাদ রাখে নাই – ওহাবী, তাবলীগী, দেওবন্দী, মওদুদী সবগুলারেই এখানে সালাফী বলছে দেখা যাচ্ছে।
আমাদের উচিৎ ও,আই,সি বন্ধ কইরা দিয়া – মুসলিম ইউনিয়ন বানানো; সেন্ট্রালী চলবে সব – একেক জায়গায় শুধু গভর্নর থাকবে – কিন্তু আদেশ-নিষেধ সব ইউনিয়নেরটা মানতে হবে। এ মুসলিম ইউনিয়ন ছাড়া হবে না আর কিছু।
এক জাতি না হইতে পারলে কোন লাভ হবে না; আমল দিয়া কেউ পার পাবে?
মন্তব্য করতে লগইন করুন