কথিত আহলে হাদীসদের সকল মতবাদই কি কুরআন হাদীস সমর্থিত?
লিখেছেন লিখেছেন সঠিক ইসলাম ১০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০২:৫০:৪৪ রাত
আমাদের দেশের নামধারী আহলে হাদীসরা যদি সত্যিই কুরআন ও হাদীসের উপর আমল করতো, তাহলে আমাদের তাদের বিরোধিতা করার কোন প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু তারা নাম কুরআন হাদীসের নিলেও অনুসরণ করে মূলত তাদের নফসের। কুরআন ও হাদীসের নয়। এর অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। নিম্নের তাদের কয়েকটি মতবাদ উপস্থাপন করা হল, যার পক্ষে কুরআন ও সহীহ হাদীসের কোন দলিল তাদের কাছে নেই।
কুরআন হাদীস বিরোধী আহলে হাদীস মতাদর্শের কিছু নমুনা নিচে উপস্থাপন করা হল-
মতবাদ-১
গায়রে মুকল্লিদদের নিকট কাফেরদের জবাই করা পশু হালাল। আর তা খাওয়া জায়েজ। {গায়রে মুকাল্লিদ আলেম নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান সাহেব রচিত দলীলুত তালেব-৪১৩,
গায়রে মুকাল্লিদ আলেম নূরুল হাসান খান রচিত উরফুর জাদী-২৪৭,
নিজেদের আহলে হাদীস দাবী করে কুরআন হাদীসের রেফারেন্স না দিয়ে এখানে তারা আল্লামা শাওকানী রহঃ অন্ধ তাকলীদ করেছেন। এ কুরআন হাদীসের দলিল ছাড়া এ তাকলীদ কি [কথিত আহলে হাদীসদের বক্তব্য অনুসারে] শিরক নয়?
মতবাদ-২
একই সময়ে যতজন মহিলাকে ইচ্ছে বিয়ে করা জায়েজ। চার জনই হতে হবে এর কোন সীমা নেই। {গায়রে মুকাল্লিদ আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান রচিত যফরুল লাজী-১৪১, ১৪২, এবং উরফুল জাদী-১১৫}
এ মতবাদটি সরাসরি কুরআনের আয়াত বিরোধী। এখানে ও কথিত আহলে হাদীসরা কুরআন হাদীস ছেড়ে আল্লামা শাওকানী রহঃ এর অন্ধ তাকলীদের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন।
মতবাদ-৩
স্থলভাগের ঐ সকল প্রাণী হালাল, যার শরীরে রক্ত নেই। {গায়রে মুকাল্লিদ আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান রচিত বুদূরুল আহিল্লাহ-৩৪৮}
এ বক্তব্যটির পক্ষে কথিত আহলে হাদীসদের পক্ষে কুরআন হাদীসের কী দলিল আছে? কোত্থেকে নাজীল হল এ মতবাদ?
মতবাদ-৪
মৃত প্রাণী পাক, নাপাক নয়। {দলীলুত তালেব-২২৪}
কুরআন বা হাদীসের কোন বর্ণনার উপর ভিত্তিশীল এ বানানো মতবাদ?
মতবাদ-৫
নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান সাহেব লিখেন-“শুকর নাপাক হওয়ার উপর আয়াত দিয়ে দলিল দেয়া গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তা পাক হওয়াকেই বুঝায়। {বুদূরুল আহিল্লাহ-১৫, ১৬}
তাহলে কথিত আহলে হাদীসদের মতে শুকর পাক? এ মতবাদ কোত্থেকে আমদানী হল?
মতবাদ-৬
হায়েজ নেফাসের রক্ত ছাড়া মানুষ ও সকল প্রাণীর রক্ত পাক। {দলীলুত তালেব-২৩০, বুদুরুল আহিল্লাহ-১৮, উরফুল জাদী-১০}
কুরআনের কোন আয়াত বা কোন হাদীসের ভিত্তিশীল এ উদ্ভট মতবাদ?
মতবাদ-৭
ব্যবসায়িক সম্পদে কোন জাকাত নেই। {বুদুরুল আহিল্লাহ-১০২}
কুরআনের কোন আয়াত বা কোন হাদীসের ভিত্তিশীল এ মতবাদ?
মতবাদ-৮
হাদীসে বর্ণিত ছয়টি বস্তু ছাড়া বাকি সকল বস্তুতে সুদ নেয়া জায়েজ। {দলীলুত তালেব, উরফুল জাদী, আল বুনয়ানুল মারসূস, বুদূরুল আহিল্লাহ ইত্যাদি গ্রন্থ।
কুরআনের কোন আয়াত বা হাদীস দ্বারা এ মতবাদ প্রমাণিত?
মতবাদ-৯
গোসল ছাড়াই নাপাক ব্যক্তি কুরআন কারীম স্পর্শ করা, উঠানো, রাখা, হাত লাগানো জায়েজ। {দলীলুত তালেব-২৫২, উরফুল জাদী, আল বুনইয়ানুল মারসূস}
এ মতবাদের পক্ষে কী দলিল আছে?
মতবাদ-১০
স্বর্ণ রোপার অলংকারে যাকাত আবশ্যক নয়। {বুদুরুল আহিল্লাহ-১০১}
কুরআন হাদীসের কোথায় আছে এ মতবাদ?
মতবাদ-১১
মদ নাপাক ও অপবিত্র নয়, বরং তা পাক। {বুদূরুল আহিল্লাহ-১৫, দলীলুত তালেব-৪০৪, উরফুর জাদী-২৪৫}
কী দলিল আছে এ মতবাদের?
মতবাদ-১২
স্বর্ণ রোপার অলংকারে কোন সূদ নেই। তাই যেভাবে ইচ্ছে কম-বেশি করে তা ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ। {দলীলুত তালেব-৫৭৫}
কি দলিল আছে এ মতবাদের?
মতবাদ-১৩
বীর্য পাক। {বুদূরুল আহিল্লাহ-১৫}
কুরআনে কারীমের কোন আয়াত বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এ মতবাদ?
মতবাদ-১৪
সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ার আগেই জুমআর নামায পড়া জায়েজ। {বুদূরুল আহিল্লাহ-৭১}
কোন স্থানে রাসূল সাঃ বলেছেন যে, সূর্য হেলার আগেই জুমআর নামায পড়া জায়েজ? এ ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস আছে কি?
মতবাদ-১৫
জুমআর নামাযের জন্য জামাত হওয়া জরুরী নয়। যদি দুইজন ব্যক্তিও হয়, তাহলে একজন খুতবা পড়বে, তারপর উভয়ে মিলে জুমআর নামায পড়ে নিবে। {বুদূরুল আহিল্লাহ-৭২}
মতবাদ-১৬
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট জুমআর নামায অন্যান্য নামাযের মতই কেবল খুতবা ছাড়া। আর কোন বিষয়ে পার্থক্য নেই। {বুদুরুল আহিল্লাহ-৭২}
প্রথমত একথারতো হাদীস বলতে হবে যে, জুমআর নামায ও অন্যান্য নামাযে কোন পার্থক্য নেই।
দ্বিতীয়ত রাসূল সাঃ জুমআর নামাযের মাঝে অন্যান্য নামাযের মাঝে অনেকগুলো পার্থক্যের কথা বলেছেন। যেমন-
জুমাআর নামাযের জন্য গোসল নির্ধারণ করেছেন। অন্যান্য নামাযের জন্য নয়।
খুশবো লাগাতে বলেছেন। অন্য নামাযের ক্ষেত্রে বলেন নি।
মহিলাদের জন্য জুমআর নামায সাকিত করেছেন, অন্যান্য নামায নয়।
মুসাফিরের জন্য জুমআর নামায ফরজ নয়, অন্যান্য নামায ফরজ।
অসুস্থের উপর জুমআর নামায ফরজ নয়, কিন্তু অন্যান্য নামায ফরজ।
এছাড়া আরো অনেক পার্থক্য আছে। তারপরও একথা বলা যে, শুধু খুতবা ছাড়া জুমআ ও অন্যান্য নামাযে কোন পার্থক্য নেই বড়ই আশ্চর্যজনক কথা।
মতবাদ-১৭
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট দারুল হরবে জুমআ পড়া জায়েজ আছে। {বুদুরুল আহিল্লাহ-৭৪}
কোন হাদীসে রাসূল সাঃ দারুল হরবে জুমআর নামায পড়ার হুকুম দিয়েছেন?
মতবাদ-১৮
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট তেলাওয়াতে সেজদা দেওয়ার জন্য নামাযী ব্যক্তির যেসব শর্ত তা পাওয়া জরুরী নয়। {বুদুরুল আহিল্লাহ-৬৮}
মানে হল অজু ছাড়া, কিংবা যেকোন অবস্থায়ই সেজদায়ে তেলাওয়াত দেয়া জায়েজ।
যে কোন অবস্থায় সেজদায়ে তেলাওয়াত দেয়া যায়, এ ব্যাপারে রাসূল সাঃ এর কোন নির্দেশ বা আমল আছে?
মতবাদ-১৯
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট মুক্তাদীর যদি ইমামের পিছনে নামাযে কোন ভুল হয়, তাহলে মুক্তাদীর জিম্মায় সেজদায়ে সাহু দেয়া ওয়াজিব। {বুদুরুর আহিল্লাহ-৬৮}
এর মানে হল সে সময় মুক্তাদীর ইমামের অনুসরণের কোন দরকার নেই।
এ ব্যাপারে কোন দলিল আছে কি যে, মুক্তাদী ভুল করলে ইমামের পিছনে থাকা সত্বেও তার উপর সেজদা আবশ্যক? কিংবা সে সময় ইমামের ইক্তিদা করা আবশ্যক থাকে না?
মতবাদ-২০
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট যুবক নারী-পুরুষের জন্য রূপার গহনা পড়া জায়েজ আছে। {বুদূরুল আহিল্লাহ-৩৫৬, দলীলুত তালেব-৪৩৫}
পুরুষের জন্য রূপার গহনা পড়া জায়েজ কোন হাদীসের দলিলের ভিত্তিতে বলা হল?
মতবাদ-২১
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট বন্দুকের গুলিতে যে প্রাণী মারা হয়, তা খাওয়া জায়েজ আছে। {বুদূরুল আহিল্লাহ-৩৩৫}
গুলি চাপ দিয়ে হত্যা করে, কিংবা পুড়ে ফেলে, ধারালো ছুড়ির মত কাটে না। তাই এ দাবির পক্ষে কুরআন হাদীসের দলিল উপস্থাপন করা দরকার। কিন্তু কোথায় কুরআন এবং হাদীস?
মতবাদ-২২
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট যদি কেউ ইচ্ছেকৃত নামায ছেড়ে দেয়, তারপর তা কাযা করে, তাহলে এ কাযা পড়ার কোন ফায়দা নেই। এ নামায কবুল হবে না। এর কাযা আদায় করাও তার জিম্মায় ওয়াজিবও নয়।{দলীলুত তালেব-২৫০}
তাহলে লোকটি সারা জীবন গোনাহগারই থাকবে?
এ মতবাদের পক্ষে কুরআনের কোন আয়াত বা হাদীস আছে? হাসান বসরী রহঃ, দাউদ জাহেরী রহঃ ও ইবনে হাজম রহঃ এর বক্তব্যতো আপনাদের কাছে দলীল হতে পারে না। এটাতো মুকাল্লিদদের কাজ। আর মুকাল্লিদরাতো আপনাদের ভাষায় মুশরিক। নাউজুবিল্লাহ।
মতবাদ-২৩
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট সকল প্রাণীর প্রস্রাব পাক। {বুদূরুল আহিল্লাহ-১৪,১৫,১৬}
ফুক্বাহাদের বক্তব্য রেখে কুরআন হাদীসের কী আছে এ মতবাদের পক্ষে?
মতবাদ-২৪
মরে ভেসে উঠা মাছ ছাড়া সমুদ্রের সকল প্রাণী হালাল, চাই জীবিত হোক বা মৃত। {বুদূরুল আহিল্লাহ-৩৩৩, উরফুল জাদী-২৪৭}
ইমাম শাফেয়ী রহঃ ও ইমাম মালেক রহঃ এর মুকাল্লিদ যদি আপনারা না হয়ে থাকেন, তাহলে এ দাবীর পক্ষে হাদীস পেশ করুন। নতুবা হাদীস পড়–ন-যাতে রাসূল সাঃ বলেছেন যে, আমার জন্য দু’টি মৃত প্রাণী হালাল করা হয়েছে, একটি হল টিড্ডি, অপরটি হল মাছ। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩৩১৪}
এ হাদীসটি এসে অন্য হাদীসের ব্যাপকতাকে খাস করে দিয়েছে।
মতবাদ-২৫
গায়রে মুকাল্লিদের নিকট স্বর্ণ-রূপার পাত্র ব্যবহার করা জায়েজ। {বুদূরুল আহিল্লাহ-৩৫৪}
ইমাম আবু হানীফা রহঃ, ইমাম শাফেয়ী রহঃ প্রমুখদের তাকলীদ যেহেতু তারা করেন না, তাই তাদের বক্তব্য উদ্ধৃত না করে কুরআন হাদীসের দলিল দিন এ মতবাদের পক্ষে।
মতবাদ-২৬
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট কেউ কোন মহিলার সাথে যিনা করে, তাহলে উক্ত মহিলার মেয়েকে যিনাকারী বিয়ে করতে পারবে, যদিও সেই মেয়েটি তারই যিনার কারণে জন্ম নিয়ে থাকে। {উরফুল জাদী-১১৩}
গায়রে মুকাল্লিদ হিসেবে ইমাম শাফেয়ী রহঃ বা ইমাম রাজী রহঃ এর মতামতের তাকলীদ না করে কুরআন হাদীসের দলিল দিন এ ভুল মতাবাদের পক্ষে।
মতবাদ-২৭
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট হস্তমৈথুন করে বীর্যপাত করা, কিংবা অন্য কোন পদ্ধতিতে বীর্যপাত করা এমন ব্যক্তির জন্য জায়েজ যার স্ত্রী নেই। আর যদি তার গোনাহ করার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে ওয়াজিব বা মুস্তাহাব এভাবে বীর্যপাত করা। {উরফুল জাদী-২১৪}
গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা কারো তাকলীদ করে ফুক্বাহাদের বক্তব্য উদ্ধৃত না করে কুরআন হাদীস থেকে এ মতবাদের কোন দলিল দিয়ে সাব্যস্ত করলেন?
মতবাদ-২৮
গায়রে মুকাল্লিদের নিকট কুরবানীর একটি বকরী অনেক ব্যক্তির পক্ষ থেকে যথেষ্ঠ। চাই তা শত ব্যক্তির পক্ষ থেকেই করা হোক না কেন! {বুদূরুল আহিল্লাহ-৩৯১}
এ মতবাদের পক্ষে কুরআন হাদীসের কী দলিল আছে?
মতবাদ-২৯
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট রাসূল সাঃ এর রওজা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ নয়। {উরফুল জাদী-২৫৭}
কোন হাদীসে এসেছে যে, রাসূলের রওজা যিয়ারত নবীজী সাঃ করেছেন? কিংবা কোন হাদীসে এসেছে যে, রাসূল সাঃ এর রওজা জিয়ারতের জন্য সফর করা না জায়েজ?
গায়রে মুকাল্লিদ হয়ে থাকলে কোন ব্যক্তির উক্ত পেশ না করে হাদীস পেশ করুন।
মতবাদ-৩০
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট নাপাক পড়ার দ্বারা কোন পানিই নাপাক হয় না। পানি কম হোক বা বেশি হোক। নাপাকটি পায়খানা প্রস্রাব হোক অন্য কিছু হোক। হ্যাঁ, যদি রং বা গন্ধ যদি প্রকাশ পায়, তাহলে নাপাক হয়ে যাবে। {উরফুল জাদী-৯}
কম পানিতেও নাপাক পড়লে তা নাপাক হয় না, শুধু গন্ধ হলে বা রং পাল্টে গেলে নাপাক হবে, একথার দলীল কোন হাদীস?
সাহাবীর কথা, বা ফুক্বাহাদের কথাতো গায়রে মুকাল্লিদের কাছে দলিল হতে পারে না। তাহলে এ মতবাদ কিভাবে সাবিত হল?
মতবাদ-৩১
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট অজু ছাড়া ব্যক্তি কুরআন শরীফ স্পর্শ করতে পারে। {উরফুল জাদী-১৫}
এ মতবাদের পক্ষে কী দলীল আছে ফুক্ব্হাদের কওল ছাড়া?
মতবাদ-৩২
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট যদি নামাযী ব্যক্তি নাপাক শরীরে নামায পড়ে, তাহলে তার নামায বাতিল হয় না। তবে সে গোনাহগার হবে। {বুদূরুল আহিল্লাহ-৩৮}
এ মতাবাদের পক্ষে ইবনে মাসউদ রাঃ বক্তব্য, কিংবা হানাফী ফক্বীহদের কথাতো আপনাদের পক্ষে দলীল হতে পারে না, এর পক্ষে কুরআন হাদীসের কী দলীল আছে?
মতবাদ-৩৩
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট শরীর থেকে যতই রক্ত বের হোক এতে অজু ভাঙ্গবে না। {দস্তুরুল মুত্তাকী-২৯}
কুরআন হাদীসের কোন দলীলের ভিত্তিতে মতবাদ প্রতিষ্ঠিত?
মতবাদ-৩৪
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট মুসাফির ব্যক্তি মুকিম ইমামের পিছনে ইক্তেদা করবে না, যদি ইক্তেদা করতেইহয়, তাহলে শেষের দুই রাকাতে ইক্তেদা করবে। {আল বুনইয়ানুল মারসুস-১৬৩}
এ মতবাদ কুরআনের কোন আয়াত বা নবীজী সাঃ এর কোন হাদীস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত?
মতবাদ-৩৫
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট মাথা মুন্ডানো খেলাফে সুন্নাত এবং খারেজীদের আলামত। {আল বুনইয়ানুল মারসূস-১৬৯}
এ মতবাদের পক্ষে ফক্বীহদের বক্তব্য রেখে কুরআন হাদীসের দলীল কই?
মতবাদ-৩৬
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট আল্লাহ শব্দে জিকির করা বেদআত। {আল বুনইয়ানুল মারসূস-১৭৩}
এ মতবাদের পক্ষে কুরআন হাদীসের কী দলীল আছে?
মতবাদ-৩৭
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট কতিপয় সাহাবাগণ ফাসেক ছিলেন (নাউজুবিল্লাহ)। এমনকি হযরত মুয়াবিয়া রাঃ কবীরা গোনাহ ও বিদ্রোহ করেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। {আল বুনইয়ানুল মারসূস-১৮৪}
আক্বায়েদের কিতাবের রেফারেন্স, বা ফুক্বাহদের কথা না বলে কুরআন হাদীসের বক্তব্য উপস্থাপন করুন কোথায় আছে যে, সাহাবাগণ ফাসেক ও গোনাহে কবীরার মুরতাকিব ছিলেন?
মতবাদ-৩৮
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট মহিলাদের নামায পূর্ণ শরীর ঢাকা ছাড়াও জায়েজ আছে, চাই একাকী নামায পড়–ক বা অন্যান্য মহিলাদের সাথে নামায পড়–ক, কিংবা স্বীয় স্বামীর সাথে নামায পড়–ক, বা অন্য কোন মাহরামের সাথে নামায পড়–ক, এ সর্বাবস্থায়ই নামায সহীহ হয়ে যাবে। সর্বোচ্চ মাথা ঢাকা থাকলেই হবে। {বুদূরুল আহিল্লাহ-৩৯}
নামায সহীহ হওয়া এটা শরয়ী হুজ্জত, তাই এর পক্ষে কুরআন হাদীসের দলিল আবশ্যক। গায়রে মুকাল্লিদগণ এটা কোন দলীলের ভিত্তিতে বলে থাকেন?
মতবাদ-৩৯
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট নামাযী ব্যক্তির কাপড় পাক হওয়া শর্ত নয়। যদি কেউ কোন ওজর ছাড়াই ইচ্ছেকৃত নাপাক কাপড় পরিধান করে নামায পড়ে নেয় তাহলে নামায হয়ে যাবে। {দলীলুত তালেব-২৬৪, উরফুল জাদী-৩২, বুদূরুল আহিল্লাহ-৩৯}
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট যেহেতু সাহাবাদের আমল হুজ্জত নয়, তাই এসব উপস্থাপন না করে হাদীস উপস্থাপন করুন এ মতবাদের পক্ষে।
মতবাদ-৪০
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট টাখনুর নিচে পায়জামা পরিধান করার দ্বারা অজু ভেঙ্গে যায়। {দস্তুরুল মুত্তাকী-২৯}
টাখনুর নিচে পায়জামা পরিধান করলে অজু ভেঙ্গে যায় এমন হাদীস কোথায় আছে? গোনাহ হওয়া এক বিষয়, আর অজু ভাঙ্গা আরেক বিষয়। এতটুকু বুঝার ক্ষমতাও কি আপনাদের হয়নি?
মতবাদ-৪১
রমজান মাসে রোজাবস্থায় যদি কেউ ইচ্ছেকৃত খেয়ে ফেলে তাহলে গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট উক্ত ব্যক্তির জিম্মায় কাফফারা আদায় করা আবশ্যক নয়। {দস্তুরুল মুত্তাকী-১০৩}
মতবাদ-৪২
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট পর্দার বিধান কেবল মাত্র রাসূল সাঃ এর সম্মানিত স্ত্রীগণের জন্যই নাজিল হয়েছে। উম্মতের মহিলাদের জন্য নয়। [আল বুনইয়ানুল মারসূস-১৬৮}
উম্মতী মহিলাদের জন্য পর্দা জরুরী নয়,এমন কথা কুরআন হাদীসের কোথায় আছে?
মতবাদ-৪৩
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট সজারু খাওয়া জায়েজ। যেহেতু হারাম হওয়ার কোন হাদীস প্রমানিত নেই। {বুদূরুল আহিল্লাহ-৩৫১}
এ হযরতদের কাছে জিজ্ঞাসা সজারু খবীশ প্রাণী হওয়ার জন্য কোন হাদীসের দলীল লাগবে? এ প্রাণী খবীশ প্রাণী হারাম সে হাদীসের অন্তর্ভূক্ত নয়?
মতবাদ-৪৪
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট কাফেরদের থেকে হিলা করে সুদ খাওয়া জায়েজ। {আল বুনইয়ানুল মারসূস-১৭৩}
এ মতবাদের পক্ষে কুরআন হাদীসের কী দলীল আছে? গায়রে মুকাল্লিদ হয়ে মুকাল্লিদদের মত ব্যক্তির বক্তব্যের দলীল কেন দেয়া হয়?
মতবাদ-৪৫
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট পশু জবাই করার সময় বিসমিল্লাহ না বলে থাকলে খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বললেই খাওয়া জায়েজ হয়ে যাবে। {উরফুল জাদী-২৪১}
এ মতবাদের দলীল কি? ইমাম বুখারীর বক্তব্যতো আপনাদের পক্ষে দলীল হতে পারে না। দলীল দিতে হবে কুরআন ও হাদীস থেকে।
মতবাদ-৪৬
কাফের অবস্থায় যদি কোন কাফের মান্নত করে, তাহলে উক্ত কাফের মুসলমান কাফের অবস্থায় করা মান্নত পূর্ণ করা ওয়াজিব। {উরফুল জাদী-২৫৭}
তাহলেতো কাফের অবস্থায় কাযাকৃত সকল ইবাদতও কাযা করা উচিত। তাই নয়কি? যাহোক এ উদ্ভট বক্তেব্যের পক্ষে কুরআন হাদীসের দলীল কি?
মতবাদ-৪৭
ফরজ আদায়কারী ব্যক্তি নফল আদায়কারীর পিছনে ইক্তেদা করলে শুদ্ধ হবে গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট। {উরফুল জাদী-৩৭}
সাহাবীদের বক্তব্য যেহেতু গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট দলীল নয়, তাই নফল আদায়কারীর পিছনে ফরজ আদায়ের ইক্তেদা সহীহ হয় মর্মে সহীহ হাদীস উপস্থাপন করা উচিত। কিন্তু হাদীস কোথায়?
মতবাদ-৪৮
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট নাবালেগ ছেলে যদি বালেগ ব্যক্তিদের ইমামতি করে, তাহলে এ ইমামতী সহীহ আছে। [উরফুল জাদী-৩৮}
রাসূল সাঃ এর কওল বা ফেল এ ব্যাপারে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করা উচিত। কিন্তু আছে কি কোন দলীল?
মতবাদ-৪৯
গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট ঈদের নামায একাকী একজন ব্যক্তির দ্বারাও সহীহ হয়ে যায়। এজন্য জামাত হওয়া জরুরী নয়। {বুদূরুল আহিল্লাহ-৭৮}
এ ব্যাপারে রাসূল সাঃ থেকে কোন কওলী, ফেলী বা তাক্বরীরী হাদীস আছে? তবে কোন যুক্তিতে এ মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হল?
মতবাদ-৫০
গায়রে মুকাল্লিদগণ নামাযের বিভিন্ন রুকনকে ফরজ, সুন্নাত মুস্তাহাব বলে মন্তব্য করে থাকেন। কিন্তু প্রশ্ন হল যেহেতু তারা কোন ব্যক্তির অনুসরন তথা তাক্বলীদকে শিরক মনে করেন, শুধু কুরআন ও হাদীসই দলীল বলে প্রচার করে থাকেন, তাহলে ফরজ, সুন্নাত, ওয়াজিব ও মুস্তাহাব ইত্যাদি পরিভাষা কুরআন হাদীসের কোথায় আছে? এসব কুরআনের কোন আয়াতে আছে? হাদীসের কোন কিতাবে আছে?
যদি না থাকে, তাহলে তারা এসব বলে নিজেদের সংজ্ঞা অনুযায়ী গায়রে মুকাল্লিদ থাকেন কী করে?
শেষ কথা
প্রিয় পাঠকবৃন্দ!
এখানে গায়রে মুকাল্লিদ বা কথিত আহলে হাদীসদের কিছু মতবাদ বর্ণনা করা হল। আপনারাই লক্ষ্য করুন-যাদের পবিত্রতা, নাপাকী, হালাল-হারাম, জায়েজ-নাজায়েজ, সুন্নাত-বেদআত ইত্যাদি বিষয়ের উপর সামান্য জ্ঞানও নেই, তারাই দাবি করছে যে, তারা হাদীসের উপর আমল করেন। আর মুকাল্লিদরা সবাই মুশরিক ফির রিসালাত।
যদি কেউ চারজনের বদলে আটজন মহিলাকে বিয়ে করে নেয়, তাহলে কোন সমস্যা নেই।
যদি বদনা ভরা পানিতে কিছু প্রস্রাব পড়ে যায়,তাতে কোন সমস্যা নেই! পানি পাক! যতক্ষণ না রং, গন্ধ বা স্বাদ পাল্টে না যাবে!
জীনা করে উক্ত মহিলার বাচ্চাকে বিয়ে করা জায়েজ!
যদি বেশ্যা মহিলা তওবা করে, তাহলে বেশ্যাগিরি করে কামানো টাকা হালাল হয়ে যাবে!
রক্ত, বীর্য, পশুর প্রস্রাব পবিত্র!
সূদ নিতে ইচ্ছে হলে হীলা করে নিতে পারবে!
সূর্য পশ্চিম দিগন্তে সামান্য হেলে পড়ার আগেই জুমআর নামায পড়তে পারবে!
সমুদ্রের কচ্চপ, কাঁকড়া, ব্যাঙ, সামুদ্রিক কুকুর সব খাওয়া জায়েজ!
আল্লাহ আল্লাহ জিকিরই যেহেতু বেদআত, তাহলে আর থাকলোই কি?
যে সাহাবাগণের উপর দ্বীনের ভিত্তি, তারাই যদি ফাসেক হন তাহলে আর কী থাকে?
মদ নাকি নাপাকই না!
শরীর থেকে যতই রক্ত ঝরুক, অজু এতই মজবুত যে এতে ভাঙ্গবে না!
কিন্তু পায়জামা টাখনু থেকে একটু নিচে নামলেই সাথে সাথেই অজু ভেঙ্গে যাবে!
কাফেরদের জবাইকৃত পশু খাওয়া জায়েজ!
মহিলাদের গহনায় কোন যাকাত নেই। তারা একদম স্বাধীন এ ব্যাপারে!
ব্যবসায়ীরা গায়রে মুকাল্লিদদের মুবারকবাদ দেয়া দরকার। কারণ বন্দুকের গুলিতে মারা প্রাণী একদম হালাল! তাই তাদের ব্যবসা করার সুযোগ গেল বেড়ে।
পুরুষদের জন্য রূপার গহনা পরিধান করা জায়েজ!
পর্দার বিধান শুধু রাসূল সাঃ এর সম্মানিত স্ত্রীগণের জন্যই খাস। অন্য কোন মহিলাকে পর্দা করতে হবে না। বেপর্দা হয়ে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াতে পারবে।
মাথা ঢেকে রেখে কাপড় খোলা রাখা অবস্থায়ও মহিলাদের জন্য নামায পড়া জায়েজ আছে!
মোটকথা গায়রে মুকাল্লিদ হতে পারলে দুনিয়াটাই জান্নাত হয়ে যাবে, সব কিছুই করা যাবে মনের খুশি মত।
বিষয়: বিবিধ
৩১১৯ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখানে জানুন
আলোর আভা লিখেছেন : নাম সঠিক ইসলাম সঠিক ভাবে ইসলাম পালন করেন ইসলামের ভিতরে বিভ্রান্তি ছড়াইয়েন না ।
রসুল (সা) বলেছেন,
"যে আমার পরে জীবিত থাকবে, সে বহু মতভেদ দেখতে পাবে। অতএব, তোমরা আমার সুন্নাহ (পথ ও আদর্শ) এবং আমার পরবর্তী সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ অবলম্বন করো। তা দৃঢ়ভাবে ধারন করো, দাতে কামড়ে ধরে। আর দ্বীনে নবরচিত কর্ম থেকে সাবধান থেকো কারণ প্রত্যেক নবরচিত (দ্বীনি) কর্মই হল বেদ'আত। আর প্রত্যেক বেদ'আতই হল ভ্রস্ঠতা।
(আহমাদ, আবু দাউদ ৪৬০৭, তিরমিজি ২৮১৫, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ১৬৫)
মন্তব্য করতে লগইন করুন