মুসলিমদের মাঝে অনৈক্যের বিষ বাষ্প ছড়াচ্ছে কথিত আহলে হাদীস গোষ্ঠি
লিখেছেন লিখেছেন সঠিক ইসলাম ০৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:৩৩:২৫ দুপুর
ওরা আসলে কী করছে?
ইংরেজদের শাসনভার এই উপমহাদেশে সিন্দাবাদের ভূতের মত চেপে বসার আগে এদেশগুলোতে কোন ধর্মীয় কোন্দল ছিল না। ছিল মুসলমানদের মাঝে পারস্পরিক সম্প্রীতি। শ্রদ্ধা-ভক্তির এক অনুপম দৃষ্টান্ত। বড়দের সম্মান, ছোটদের স্নেহ করার অপূর্ব উপমা ছিল মুসলমানরা। যেই নজরকাড়া আদর্শ দেখে দলে দলে হিন্দু-বৌদ্ধরা ইসলামের সুশীতল ছায়ায় ভীর জমায়। ধর্মীয় কোন্দলের কেউ কল্পনাই করতো না। এক আলেম আরেক আলেমকে গালি দিবে, মসজিদে একদল মুসলিম আরেক দল মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে যাবে দেদার, এটা ছিল অকল্পনীয় ব্যাপার। সবাই ছিল ফিক্বহে হানাফীর বিশ্ব নন্দিত কুরআন সুন্নাহর মাকবুল ব্যাখ্যার একনিষ্ট অনুসারী।
ইংরেজ পশুরা মুসলমানদের এই অনুপম ভ্রাতৃত্বকে নষ্ট করার ষড়যন্ত্র শুরু করল। দাঁড় করিয়ে দিল বেরেলবীর মাধ্যমে একদল মাজারপূজারী, পীরপূজারী ফিরক্বা। অপরদিকে কাদিয়ানী ফিরক্বা। সেই সাথে শত বছরের কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক গোটা পৃথিবীতে সমাদৃত ঐতিহ্যিক মাযহাব হানাফী মাযহাবকে কলুষিত করতে নামিয়ে দিল মুহাম্মদ হোসাইন বাটালবীকে।
বেদআতিরা শুরু করে দিল কুরআন সু্ন্নাহ রেখে শুধু ব্যক্তি পূজার আরাধনা। পীরকেই সকল বিষয়ের সমাধানদাতা বানিয়ে করতে লাগল শিরক। সাধারণ মানুষকে করতে লাগল বিভ্রান্ত।
অপরদিকে কথিত আহলে হাদীস গোষ্ঠিটি অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কুরআন সুন্নাহের ব্যাখ্যা রেখে অযুর ফরয, গোসলের ফরয না জানা মুসলমানদের শিখাতে লাগল কুরআন ও হাদীসের অনুবাদ পড়েই দ্বীন পালন করতে শুরু করে দাও।
এক কথায় বেদআতিরা ছেড়ে দিল আল্লাহ ও নবীর কিতাব। আর কথিত আহলে হাদীসরা ছেড়ে দিল আল্লাহর প্রিয় বান্দা তথা রিজালুল্লাহদের।
এই প্রান্তিক দুই ফিতনার মাঝামাঝি রাসূল সাঃ এর রেখে যাওয়া পথ, “কিতাবুল্লাহ বুঝতে হবে রিজালুল্লাহ এর নির্দেশনা অনুযায়ী” মত-ও পথের ধারক রয়ে গেলেন দারুল উলুম দেওবন্দের হাক্কানী ওলামায়ে কিরামগণ।
কুরআন কারীম কিতাবুল্লাহকে বুঝাতে আল্লাহ তায়ালা রিজালুল্লাহ নবী কারীম সাঃ কে পাঠিয়েছেন, তেমনি সাহাবাদের বানিয়েছেন রিজালুল্লাহ রাসূল সাঃ এর হাদীসকে বুঝানোর জন্য। ফুক্বাহায়ে কিরামকে নির্ধারিত করেছেন আল্লাহ তায়ালার কুরআনকে বুঝতে হাদীস দিয়ে, আর হাদীস বুঝতে সাহাবাদের আমল দিয়ে। এই সকল কিছুকে মন্থন করে তারা একত্র করলেন ইসলামী ফিক্বহের ভান্ডার।
তো একদিকে দাঁড়িয়ে গেল কিতাবুল্লাহকে অস্বিকারকারীদের দল। অপরদিকে দাঁড়াল রিজালুল্লাহকে অস্বিকারকারীদের দল। মাঝখানে মধ্যপন্থী ওলামায়ে দেওবন্দ রয়ে গেলেন সত্যের অকে প্রোজ্জ্বল আলোকবর্তীকা হিসেবে।
আহলে হাদীস গ্রুপটি নিজেদের ফিতনাবাজীর সরকারী আনুকূল্য পাওয়ার জন্য ইংরেজ সরকারের কাছ থেকে ৩ ই ডিসেম্বর ১৮৮৬ ঈসাব্দে পাঞ্জাব গভর্ণমেন্টের কাছ থেকে রেজিষ্ট্রশন করে। আর সি.পি গভর্নমেন্টের কাছ থেকে ১৪ই জুলাই ১৮৮৮ ঈসাব্দে, আর ইউপি গভর্ণমেন্টের কাছ থেকে ২০ই জুলাই ১৮৮৮ ঈসাব্দ, বোম্বাই গভর্ণমেন্টের কাছ থেকে ১৪ই আগষ্ট ১৮৮৮ ঈসাব্দ, মাদ্রাজ গভর্ণমেন্টের কাছ থেকে ১৫ ই আগষ্ট ১৮৮৮ ঈসাব্দ ও মাদ্রাজ গভর্ণমেন্টের কাছ থেকে ১৫ ই আগষ্ট ১৮৮৮ ঈসাব্দ, এবং বঙ্গদেশ গভর্ণমেন্টের কাছ থেকে ১৮৯০ ঈসাব্দ তারিখে দরখাস্ত মঞ্জুরী করায়।
সেই সময় থেকে ইংরেজদের সাপোর্ট নিয়ে শুরু করে ওদের ঘৃণ্য কার্যক্রম। শুরু করে মুসলমান নামাযীর মনে সন্দেহ সৃষ্টির নোংরা প্রচারণা। মুসলমানকে সন্দিহান করে চলে সে কি হানাফী না মুহাম্মদী? এই উদ্ভট প্রশ্ন দিয়ে। বে নামাযীর পিছনে কোন মেহনত নয়, বেদ্বীনের পিছনে কোন মেহনত নয়, বরং ঈমানদার, নামাযী ব্যক্তিদের মনে ইবাদতের প্রতি সন্দেহ সৃষ্টির নীল নকশা নিয়ে কাজ করতে থাকে। শুরু করে দেয়, মুসলমানদের মাঝে ধর্মীয় বিভক্তি, কোন্দলের এক ভয়ংকর খেলা। মসজিদে মসজিদে হাঙ্গামা, এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে মুশরিক, আকাবীরে ওলামা, যারা আজীবন মেহনত করে এই হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাকে জান্নাতী পরিবেশে রুপান্তরিত করে যাচ্ছেন নিরলস প্রচেষ্টা করে, সেই সকল আল্লাহওয়ালা মানুষদের প্রতি মানুষকে করতে থাকে বিতশ্রদ্ধ। নোংরা খাটো করে উপস্থাপিত করতে থাকে দ্বীনের মশালবাহী ওলামায়ে কিরামদের।
এক কথায় ধর্মীয় কোন্দল আর মুসলমানদের মাঝে অনৈক্য সৃষ্টিই ইংরেজ সৃষ্ট এই কথিত আহলে হাদীসদের কাজ।
মুকাল্লিদ কাকে বলে? আর গায়রে মুকাল্লিদ কাকে বলে?
তাক্বলীদ কাকে বলে? সহজ ভাষায়-পৃথিবীতে যত মানুষ আছে তাদের কেউ নবী দেখেনি। আমরাও কেউ দেখিনি। কিন্তু আমাদের কাছে নবীর আনীত দ্বীন আছে। আমাদের কাছে দ্বীন পৌঁছানোর জন্য নবীজী সাঃ পর্যন্ত যত মাধ্যম আছে সবাই উম্মত। কেউ নবী নয়। তাদের মাধ্যমে আমাদের পর্যন্ত দ্বীন পৌঁছেছে। তো দ্বীন পৌঁছানোকারী ঐ জামাতকে স্বীকার করে তাদের উপর নির্ভর যারা করে তাদের নাম মুকাল্লিদ। আর যারা অস্বীকার করে তাদের নাম গায়রে মুকাল্লিদ।
হযরত মুহাম্মদ আমীন সফদর রহঃ বলতেন-এক রাষ্ট্রে দুই ধরণের ব্যক্তি থাকে। এক রাজা, দ্বিতীয় প্রকার হল প্রজা। এই প্রকার ছাড়া কেউ কোন রাষ্ট্রে থাকতে পারে না। এক রাষ্ট্রে রাতের বেলা এক ব্যক্তি গ্রেফতার হলে তাকে গ্রেফতার হলে পুলিশ তাকে জিজ্ঞেস করল-“তুমি কি প্রজা? সে বলল –“না”। পুলিশ জিজ্ঞেস করল-“তাহলে কি রাজা?” । সে বলল-“না”। তখন পুলিশ বলল-“তাহলে তুমি হলে রাষ্ট্রদ্রোহী! কারণ তুমি এদেশের অধিস্তও নও, আবার প্রশাসনেও নেই। তুমিতো রাষ্ট্রদ্রোহী”। এমনি যারা নিজেরা মুজহাদিতও নয়, আবার কারো তাক্বলীদও করে না, ওরা হল গায়রে মুকাল্লিদ। রাষ্ট্রের পরিভাষায় পুলিশ যাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে তারা আমাদের ভাষায় হল গায়রে মুকাল্লিদ।
তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ী মানেই হল মুকাল্লিদ
সাহাবায়ে কিরামের পরের জামাতের নাম হল-তাবেয়ী। অর্থ হল অনুসারী। যারা পূর্বের অনুসারী। তাদের অনুসারী এই জন্য বলা হয়, যেহেতু তারা সাহাবাদের অনুসরণ করতেন। তারা যদি সাহাবাদের অনুসারী না হতেন, তাহলে তাদের নাম হত-মুহাক্কিকীন। কিন্তু তাদের নাম রাখা হয়েছে তাবেয়ীন, সুতরাং বুঝা গেল তারা মুকাল্লিদ ছিলেন গায়রে মুকাল্লিদ নয়।
এমনিভাবে তাবে তাবেয়ীন মানে হল-তাবেয়ীদের অনুসারী। তাদেরও বলা হয় তাবে তাবেয়ী এইজন্য যে, তারা তাবেয়ীদের মুকাল্লিদ ছিলেন। তারা গায়রে মুকাল্লিদ ছিলেন না।
আমরা সাহাবাদের উপর নির্ভর করি। করি তাবেয়ীর উপর। এমনিভাবে তাবে তাবেয়ীর উপর। এমনিভাবে মুজতাহিদদের উপর। এমনিভাবে যারা আমাদের পর্যন্ত দ্বীন পৌঁছিয়েন তাদের উপর নির্ভর করি। তাই আমরা মুকাল্লিদ। আর যারা তাদের উপর নির্ভর করেনা ওরা হল গায়রে মুকাল্লিদ। ওরা কাউকে মানে না। সাহাবীকেও নয়, তাবেয়ীকেও না, তাবে তাবেয়ীকেও না।
রাসূল সাঃ এর জমানায়ই তাকলীদে শখসী ছিল, ছিল ইজতিহাদও
ইসলামী রাজত্ব যখন বেড়ে গেল রাসূল সাঃ এর জমানায়, তখন রাসূল সাঃ বিভিন্ন এলাকায় সাহাবাদের মুজতাহিদ বানিয়ে প্রেরণ করে পাঠিয়েছেন। তাদের পাঠানো এলাকার লোকদের উপর সেই সাহাবীর তাকলীদ তথা মাযহাবের অনুসরণ করা আবশ্যক।
مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- لَمَّا أَرَادَ أَنْ يَبْعَثَ مُعَاذًا إِلَى الْيَمَنِ قَالَ « كَيْفَ تَقْضِى إِذَا عَرَضَ لَكَ قَضَاءٌ ». قَالَ أَقْضِى بِكِتَابِ اللَّهِ. قَالَ « فَإِنْ لَمْ تَجِدْ فِى كِتَابِ اللَّهِ ». قَالَ فَبِسُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-. قَالَ « فَإِنْ لَمْ تَجِدْ فِى سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- وَلاَ فِى كِتَابِ اللَّهِ ». قَالَ أَجْتَهِدُ رَأْيِى وَلاَ آلُو. فَضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- صَدْرَهُ وَقَالَ « الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِى وَفَّقَ رَسُولَ رَسُولِ اللَّهِ لِمَا يُرْضِى رَسُولَ اللَّهِ
রাসূল সাঃ যখন মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ কে ইয়ামানে পাঠাতে মনস্ত করলেন তখন মুয়াজ রাঃ কে জিজ্ঞেস করলেন-“যখন তোমার কাছে বিচারের ভার ন্যস্ত হবে তখন তুমি কিভাবে ফায়সাল করবে?” তখন তিনি বললেন-“আমি ফায়সালা করব কিতাবুল্লাহ দ্বারা”। রাসূল সাঃ বললেন-“যদি কিতাবুল্লাহ এ না পাও?” তিনি বললেন-“তাহলে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাত দ্বারা ফায়সালা করব”। রাসূল সাঃ বললেন-“যদি রাসূলুল্লাহ এর সুন্নাতে না পাও?” তখন তিনি বললেন-“তাহলে আমি ইজতিহাদ তথা উদ্ভাবন করার চেষ্টা করব”। তখন রাসূল সাঃ তাঁর বুকে চাপড় মেরে বললেন-“যাবতীয় প্রশংসা ঐ আল্লাহর যিনি তাঁর রাসূলের প্রতিনিধিকে সেই তৌফিক দিয়েছেন যে ব্যাপারে তাঁর রাসূল সন্তুষ্ট”। {সূনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৯৪, সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-১৩২৭, সুনানে দারেমী, হাদিস নং-১৬৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২০৬১}
হযরত মুয়াজ রাঃ এ মুখে আমি ইজতিহাদ করব, একথা শুনে রাসূল সাঃ কিন্তু আস্তাগফিরুল্লাহ পড়েননি গায়রে মুকাল্লিদদের মত। অথচ মুয়াজ রাঃ নবীজী সাঃ এর জীবদ্দশায় ইজতিহাদ করার কথা বলেছেন। আর সেখানকার ইয়ামেনের লোকেরা হযরত মুয়াজ রাঃ এর ইজতিহাদের যেন তাক্বলীদ করে সেটারই পরোক্ষ নির্দেশ দিলেন “যাবতীয় প্রশংসা ঐ আল্লাহর যিনি তাঁর রাসূলের প্রতিনিধিকে সেই তৌফিক দিয়েছেন যে ব্যাপারে তাঁর রাসূল সন্তুষ্ট” বলার মাধ্যমে।
সুতরাং নবীজী সাঃ এর জমানায়ই মুয়াজ রাঃ ইজতিহাদ করতেন, আর সে এলাকার লোকেরা তাঁর তাক্বলীদ করতেন।
গায়রে মুকাল্লিদরা বিভ্রান্ত করার জন্য বলে থাকে-তাক্বলীদ বলতে কিছু ছিলনা নবীজী সাঃ এর জমানায়। আমরা বলি শব্দ না থাকাই কি বস্তু না থাকার দলিল? যদি তাই হয়, তাহলে বলুনতো-কুরআনে কি তাওহীদ শব্দ আছে? তাহলে কি কুরআন দ্বারা তাওহীদ প্রমাণিত নয়?
দ্বীনী বিষয়ে সাহাবাদের অনুসরণ আবশ্যক
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين عضوا عليها بالنواجذ তথা তোমাদের উপর আমার সুন্নাত পালন আবশ্যক। আর হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনদের সুন্নাতও আবশ্যক। এটাকে তোমরা মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে রাখ। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪৩, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৬৭৬, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৪৬৮}
এই হাদীসে লক্ষ্যনীয় হল-রাসূল সাঃ সুন্নাত বলেছেন, হাদীস বলেননি। খুলাফায়ে রাশেদীনদের সুন্নাতের কথা বলেছেন মানতে হাদীসের কথা বলেন নি।
সুতরাং বুঝা গেল খুলাফায়ে রাশেদীনদের সুন্নাত তথা আমল আমাদের জন্য পালন করার নির্দেশ নবীজী সাঃ নিজেই দিয়ে গেলেন। এ কারণেই একজন খলীফা যখন কোন দ্বীনী কাজের সূচনা করেন সেটাকে অন্য খলীফা বন্ধ করার কোন অধিকার রাখেন না। তাই হযরত ওমর রাঃ যেই পদ্ধতি জারী করেছেন সেটা হযরত উসমান রাঃ এবং হযরত আলী রাঃ কেউ বন্ধ করেন নি। এমনিভাবে যেই সুন্নাত হযরত উসমান রাঃ শুরু করেছেন সেটাকে হযরত আলী রাঃ বন্ধ করেননি।
একটি কথা ভাল করে বুঝতে হবে হযরত ওমর রাঃ ২০ রাকাত তারাবীহ শুরু করেন নি। বরং তিনি তারাবীহের জামাতের সুন্নাত শুরু করেছেন। হযরত ওমর রাঃ যখন দেখলেন যে, মসজিদে নবীবীতে মুসলমানরা একাকী ২০ রাকাত তারাবীহ পড়ছে, তখন তিনি তাদের সবাইকে একসাথে জামাতে পড়ার জন্য একত্র করে দিলেন। ২০ রাকাতের সুন্নাত তিনি জারী করেন নি, বরং ২০ রাকাতের জামাত জারী করেছেন। যেমনটি বর্ণিত আছে সহীহ বুখারীর ১/২৬৯, হাদীস নং-১৯০৬} দেখুন মূল হাদিস
عبد الرحمن بن عبد القاري أنه قال : خرجت مع عمر بن الخطاب رضي الله عنه ليلة في رمضان إلى المسجد فإذا الناس أوزاع متفرقون يصلي الرجل لنفسه ويصلي الرجل فيصلي بصلاته الرهط فقال عمر إني أرى لو جمعت هؤلاء على قارئ واحد لكان أمثل ثم عزم فجمعهم على أبي بن كعب (صيح البخارى-كتاب صلاة التراويح، باب فضل من قام رمضان، رقم الحديث-1906)
সুতরাং বুঝা গেল-হযরত ওমর রাঃ দ্বীনের মাঝে বৃদ্ধি করেন নি। দ্বীনের মাঝে বৃদ্ধি করা নিষিদ্ধ। এই নিষিদ্ধ হযরত ওমর রাঃ করতে পারেন না। তিনি শুধু দ্বীনকে প্রয়োগ করেছেন কোন কিছু বৃদ্ধি করেন নি।
২০ রাকাত তারাবীহের যেই সুন্নাত হযরত ওমর রাঃ করেছেন তা হযরত উসমান রাঃ বন্ধ করেননি। করেননি হযরত আলী রাঃ ও।
এমনিভাবে জুমআর দুই আজানের সুন্নাত জারী করেছেন। যা পূর্বে ছিলনা। এই সুন্নাতকে হযরত আলী রাঃ জারী রেখেছেন। যা আজো জারী আছে। সে সময় কোন গায়রে মুকাল্লিদ ছিলনা। তাই হযরত উসমান রাঃ এর এজতিহাদী সীদ্ধান্তের বিরোধিতা কেউ করেনি। অথচ হযরত উসমান রাঃ তার এই কর্মের পক্ষে কোন কুরআন সুন্নাহর দলিল পেশ করেন নি। তারপরও সকল সাহাবায়ে বিনা বাক্যব্যয়ে তা মেনে নিয়েছেন। এরই নাম তাক্বলীদ। বুখারী শরীফে এসেছে-তখন এই বিষয়টি ধার্য হয়ে গেল। {বুখারী শরীফ, হাদীস নং-৮৭৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১০৮৯}
সাহাবায়ে কেরাম সবাই মেনে নিলেন। সুতরাং আমরা কারা? যারা বলল যে, এটা মানিনা!
যারা বলে আমরা সাহাবাদের চেয়ে দ্বীন বেশি বুঝ ওরা বেদ্বীন
যারা বলে যে, আমরা সাহাবীদের চে’ দ্বীন বেশি বুঝি, সে বদদ্বীন। যেমন যে ব্যক্তি বলে যে, সে সাহাবীদের চে’ নবীজী সাঃ কে বেশি ভালবাসে, সে যেমন বদদ্বীন। এমনি যারা বলে যে, সাহাবাদের রেখে নবী থেকে দ্বীন বুঝতে চায় তারাও বদ দ্বীন। যে কাজটি করে থাকে গায়রে মুকাল্লিদরা। ওরা সাহাবাদের ব্যাখ্যা রেখে দ্বীনকে বুঝতে চায়।
নবীজী সাঃ দাড়িকে বড় রাখতে বলেছেন, কাটতে কোথাও বলেন নি। এর দ্বারা কি উদ্দেশ্য? হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ এক মুষ্টির পর দাড়ির কেটে ফেলতেন। সুতরাং বুঝা গেল দাড়ি বড় রাখার সীমা হল এক মুষ্টি। সাহাবাদের আমল দলিল না হলে হাদীস মতে দাড়ি বড় রাখতে শুরু করলে সেটা মাটিতে গিয়ে পড়বে।
হযরত ওমর রাঃ এর ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে “নিশ্চয় শয়তান তোমাকে ভয় পায় হে ওমর!” {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৩৬৯০} সুতরাং যেই মাসআলা হযরত ওমর রাঃ বলেন-সেই পথেও শয়তান নেই। হযরত ওমর রাঃ ২০ রাকাত তারাবীহের ফাতওয়া দিয়েছেন। সুতরাং এই মাসআলায় শয়তানের ওয়াসওয়াসা নাই। হযরত ওমর রাঃ যখন এক বারে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত বর্ণনা করেছেন তখন সেই মাসআলায় শয়তানের কোন দখল নাই। কারণ শয়তান হযরত ওমর রাঃ এর পথে আসার সাহস পায়না। রাসূল সাঃ আরো ইরশাদ করেছেন-যদি আমার পর কোন নবী হত তাহলে ওমর হত নবী। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৩৬৮৬}
রাসূল সাঃ এর এসব নির্দেশনাই প্রমাণ করে হযরত ওমর রাঃ এর ফাতওয়া ও তার জারী করা সুন্নাতের গুরুত্ব কত বেশি।
ওরা সালাফী না খালাফী?
গায়রে মুকাল্লিদরা নিজেদের সালাফী বলা ঠিক নয়। কারণ-সালাফ বলা হয় পূর্বসূরীকে যারা মানে। কিন্তু ওরা আসলে কোন সালাফকেই মানে না। যেমন যদি বলা হয়-গায়রে মুকাল্লিদ আলেম আব্দুর রহমান মোবারকপুরী তুহফাতুল আহওয়াজীতে লিখেন-মোজার উপর মাসাহ করার হাদীস ঠিক নয়, ওরা বলে-আমরা ওকে মানি না”।
যদি বলা হয়-আপনাদের কিতাব আওনুল মাবুদে শামছুল হক আজিমাবাদী লিখেন-“পয়গম্বর স্বীয় কবরে জিবীত থাকেন, আর যে রুকু পায় সে ঐ রাকাত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে”। ওরা বলবে-আমরা একে মানি না।
তারপর যদি বলেন-আল্লামা শাওকানী তার কিতাব নাইলুল আওতারে লিখেছেন-“রুকু যিনি পান, তিনি সেই রাকাত পেয়েছেন বলে ধর্তব্য হবে, এবং নবীরা কবরে জিবীত”। ওরা বলবে-আমরা তাকেও মানি না।
যদি বলা হয়-শায়েখ ইবনে তাইমিয়া-২০ রাকাত তারাবীকেই প্রাধান্য দিয়েছেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ মাজমুআ ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়াতে। ওরা বলবে-আমরা তাকেও মানি না।
যদি আরো উপরে গিয়ে বলা হয় যে, ইমাম বুখারী ১ নং খন্ডে ৭৪১ পৃষ্ঠায় তিনি বলেছেন-এক মজলিশে ৩ তালাক দিলে ৩ তালাকই হয়, ওরা বলবে যে, আমরা তাকেও মানি না। আর হযরত ইমাম মুসলিম রহঃ বলেন-যখন কিরাত পড়া হয়, তখন চুপ থাক। ওরা বলবে যে, আমরা তাকেও মানি না।
যদি আরো উপরে গিয়ে বলা হয়-ইমাম আবু হানীফা রহঃ ইমাম শাফেয়ী মাসায়েল বলেছেন। ওরা বলবে-আমরা তাদেরও মানি না।
যদি বলা হয়, আরো উপরে গিয়ে হযরত ওমর রাঃ তারাবীহ ২০ রাকাত বলেছেন, এবং ৩ তালাককে ৩ তালাক বলে ফাতওয়া দিয়েছেন। ওরা বলবে-আমরা তাকেও মানি না।
এবার বলুনতো-পূর্ণ উম্মতের মাঝে সালাফ [পূর্ববর্তী] আছে কে? যাকে তারা মানে? ওরা সালাফী? না খালাফী [পরবর্তী]?
শুধু সহীহ হাদীস দেখলেই তা আমলযোগ্য হলে দ্বীন আর দ্বীন থাকবে না
শুধু হাদীস সহীহ হলেই তা আমলযোগ্য হয়ে যায় না। বরং এর মাঝে অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে হবে এ ব্যাপারে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী।
১-বুখারী মুসলিমে এসেছে যে, রাসূল সাঃ জুতাসহ নামায পড়তেন জুতা পরিহিত অবস্থায় কেন ওরা নামায পড়ে না?
২-সহীহ হাদীসে নেকাহে মুতআ জায়েজের কথা আছে।
মুর্খতার কারণে সহীহ দেখে যদি আমল করে তাহলে বলবে নেকাহে মুতআ জায়েজ।
৩-সহীহ হাদীসে কেবল দাড়ি লম্বা করার নির্দেশ আছে,কোথাও কাটার কথা নাই। যদি সহীহ হাদীস মানতে যান,তাহলে আপনি জীবনেও দাড়ি কাটতে পারবেন না। দাড়িতে হাত দেবার কোন অধিকার আপনার নেই সহীহ হাদীসের উপর আমল করতে চাইলে।
৪-সহীহ হাদীস দ্বারা প্রশ্রাব খাওয়া জায়েজ প্রমাণিত। শুধু চোখ বন্ধ করে সহীহ হাদীস মানলে প্রশ্রাব খাওয়া জায়েজ বলতে হবে।
এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে যা সহীহ বর্ণনায় এসেছে,কিন্তু তা আমলযোগ্য নয়।সবাইকে কুরআন সু্নাহ থেকে আমল করতে বললে কি অবস্থা হবে দ্বীনের একবার ভাবা যায়?
কথিত আহলে হাদীসের ঈমান নবীর উপর নাকি শর্তের উপর?
“কাফেররা নবীর উপর বিশ্বাস রাখেনি, রেখেছে তাদের দাবিকৃত বিষয়ের উপর। এমনিভাবে আপনারা মন থেকে এই কথা দূরিভূত করে দিন যে, গায়রে মুকাল্লিদদের ঈমান নবী সাঃ এর উপর। কখনোই নয়। বরং তাদের ঈমান হল ইমামদের শিখানো শর্তের উপর।
যেমন কাফেররা নবী সাঃ কে বলত যে, ‘যা আমরা বলছি, তা আল্লাহ তায়ালা থেকে বলিয়ে নাও। অথবা আল্লাহ তায়ালা থেকে করিয়ে নাও। যদি এমন করতে পার তাহলে তা মানব। নতুবা নয়। এমনিভাবে গায়রে মুকাল্লিদ কথিত আহলে হাদীসরা একটি বিষয় উত্থাপন করে দেয়, আর বলে যে, এর হুবহু শব্দ আল্লাহর নবী সাঃ থেকে বলিয়ে নাও। তাহলে আমরা মানব। নতুবা এর আগে নবীজী সাঃ যা কিছু নিজে বলেছেন তা আমরা মানবনা”।
প্রিয় ভাইয়েরা! একবার খেয়াল করে দেখুন। গায়রে মুকাল্লদদের আপনি যতই সহীহ হাদীস দেখান না কেন। ওদের শর্ত অনুযায়ী না হলে তারা তা মানবে না। বলবে, বুখারীতে দেখাও, মুসলিমে দেখাও। নতুবা সিহাহ সিত্তায় দেখাও। নুতবা মানব না। যদিও হাদীসটি সহীহ হয়।
এর মানে এই দাঁড়ায় যে, ওরা যেন নবীজী সাঃ কে পরামর্শ দিচ্ছে যে, আপনি যদি এরকম শব্দে হাদীস বলেন, আর তা ইমাম বুখারী বা ইমাম মুসলিম বা সিহাহ সিত্তায় স্থান পায় তাহলে আমরা মানব, নতুবা আপনার কথা ডাষ্টবিনে নিক্ষেপ করব” নাউজুবিল্লাহ।
একটি ধোঁকাবাজী প্রশ্ন
ইংরেজদের দোসর গায়রে মুকাল্লিদরা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রশ্ন করে থাকে যে,ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মাযহাবের আগের মানুষ কোন মাযহাবের অনুসরণ করতো?
ওদের জিজ্ঞেস করুন-বুখারী শরীফ,মুসলিম শরীফ,আবু দাউদসহ সিহাহ সিত্তার কিতাব লিখার আগে কোন হাদীস ছিল? তখন কি সহীহ হাদীস ছিলনা? তখনকার মানুষ কি সহীহ হাদীসের উপর আমল করেন নি? যেই তিন জমানাকে রাসূল সাঃ শ্রেষ্ঠ জমানা বলেছেন, সেই তিন জমানায় সহীহ হাদীসের উপর আমল হয়নি? বুখারী মুসলিমসহ সিহাহ সিত্তাহ সংকলিত না হবার কারণে?
বুখারী মুসলিম সংকলিত হবার আগে যেমন তখনকার মানুষ বিক্ষিপ্ত সহীহ হাদীসের উপর আমল করতেন, তেমনি ইমাম আবু হানীফা রঃ, ইমাম শাফেয়ী রহঃ, ইমাম মালেক রহঃ, ইমাম আহমাদ রহঃ মাসায়েল সংকলিত করে সুবিন্যাস্ত করার আগে বিক্ষপ্ত মাসাআলাকে একত্র করেছেন। কোন নতুন মাসআলা বাড়াননি।
হযরত উসমান রাঃ এর আমলের আগে ৭ কিরাতে কুরআন পড়া হতো। যখন হযরত উসমান রাঃ এক কিরাতে কুরআন একত্র করলেন। তখন এটি আবশ্যক হয়ে গেল। গোটা পৃথিবীতে সেই একই পদ্ধতিতে কিরাত পড়া হয় কুরআনের। তো কি দাঁড়াল? বিক্ষিপ্ত কেরাতকে হযরত উসমান রাঃ এক করে দিলেন।
এমনি চার মাযহাবের অবস্থা। বিক্ষিপ্ত মাসায়েলকে একত্র করেছেন নতুন কোন বিষয় জারি করেন নি।
এখন সময় এসেছে ওদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলার। সোচ্চার হওয়ার।বয়কট করতে হবে ওদের সর্ব প্রকার সামাজিক অবস্থান থেকে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই ভয়ংকর ফিতনা থেকে বাঁচার তৌফিক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
২১৪৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দেওবন্দী, রেরেলভী,অমুক পীর হক্কানী তমুক পীর মাজার পূজারী, অমুক আলেম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাজির নাজির তমুক পীর তার বিরোধী-সবাই আবার হানাফি!!!
জমীয়ত আহলে হাদিস, আহলে হাদিস আন্দোলনসহ আরো কিছু সংগঠন, তাদের সবাই আহলে হাদিস!!!
========
মোদ্দ কথা আমি মুসলিম। দলিল চাওয়ার অধিকার যেমন আমার আছে তেমনি কোন আলেমকে অনুসরণ করাও অধিকার আছে। আমি একেবারেই মূর্খ অথচ আপনি আমাকে বুখারি পড়তে বলবেন এটা যেমন অন্যায়, তেমনি শিক্ষিত ব্যক্তিকে বেহেশতী জেওর থেকে ওযু করতে গিয়ে বিভিন্ন অঙ্গ ধৌত করার সময় কঠিন কঠিন সব দোয়া চাপিয়ে দিবেন অথচ দলিল দিবেন এটাও অন্যায়।
===============
বুখারিতে আছে উমার দেখলেন নববীতে ২০ রাকাত তারাবীহ চলছে তখন তিনি এটা জামাআতে পড়ার ব্যবস্থ করে দিলেন।। ভাই আপনি যদি এটা বুঝাতে চান তাহলে আমি বলবো, বুখারিতে আসলেই কি ২০ রাকাত আছে নাকি এটা আপনি তৈরি করলেন নাকি আমি ভুল বুঝলাম। জবাব আশা করছি।
এক নং দলীল
عن أبي سلمة بن عبد الرحمن أنه أخبره : أنه سأل عائشة رضي الله عنها كيف كانت صلاة رسول الله صلى الله عليه و سلم في رمضان ؟ فقالت ما كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي ثلاثا . قالت عائشة فقلت يارسول الله أتنام قبل أن توتر ؟ . فقال يا عائشة إن عيني تنامان ولا ينام قلبي (صحيح البخارى- أبواب التهجد، باب قيام النبي صلى الله عليه و سلم بالليل في رمضان وغيره1/154)
হযরত আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা রাঃ এর কাছে জানতে চান নবীজী সাঃ এর নামায কেমন হত রামাযান মাসে? তিনি বললেন-রাসূল সাঃ রামাযান ও রামাযান ছাড়া ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না। তিনি ৪ রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা। তারপর পড়তেন ৪ রাকাত তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা বিষয়ে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন ৩ রাকাত। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন-তখন আমি বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার পূর্বে শুয়ে যান? তিনি বললেন-হে আয়েশা! নিশ্চয় আমার দু’চোখ ঘুমায় আমার কলব ঘুমায়না। (সহীহ বুখারী-১/১৫৪)
জবাব
১. এই হাদিসে ইযতিরাব তথা অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা থাকায় এ দিয়ে দলিল দেয়া ঠিক নয়। আল্লামা কুরতুবী রহঃ বলেন-আমি আয়েশা রাঃ এর এই বর্ণনাটি অনেক আহলে ইলমদের কাছে জিজ্ঞাসা করেছি অনেকেই এতে অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা আছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। (ফাতহুল বারী শরুহুল বুখারী-৩/১৭)
২. খোদ হযরত আয়েশা রাঃ থেকে ১৩ রাকাত তারাবীহের কথা সহীহ সনদে বর্ণিত আছে। সুতরাং হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা দূর করতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন-“সঠিক কথা হল এ ব্যাপারে আমি যা উল্লেখ করেছি এগুলো সব ভিন্ন সময় ও ভিন্ন পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল” অর্থাৎ নবীজী একেক সময় একেক রাকাত নামায পড়েছেন তারাবীহের ক্ষেত্রে।(ফাতহুল বারী-৩/১৭)
এর মাধ্যমে কথিত আহলে হাদিসদের “৮ রাকাতের মাঝেই তারাবীহ নামায সীমাবদ্ধ এরচে’ বেশী তারাবীহ নামায নেই” এই দাবিটি বাতিল হয়ে যাচ্ছে। খোদ আহলে হাদিসদের আলেম মাওলানা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী বলেন-নিশ্চয় একথা প্রমাণিত যে রাসূল সাঃ ১৩ রাকাত তারাবীহ পড়েছেন ফজরের দু’রাকাত সুন্নত ছাড়াই।(তুহফাতুল আহওয়াজী-২/৩)
৩. এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হল নবীজী সাঃ এক সালামে ৪, ৪ রাকাত করে তারাবীহ আর শেষে এক সালামে ৩ রাকাত বিতর পড়েছেন, অথচ কথিত আহলে হাদিসদের আমল এর বিপরীত। তারা তারাবীহ দুই দুই রাকাত করে পড়েন। আর বিতর এক রাকাত বা তিন রাকাত দুই সালামে পড়েন। সুতরাং যেই হাদিস দলিলদাতাদের কাছে আমলহীন এর দ্বারা দলিল দেয়া যায়?
৪. আসল কথা হল এই যে, এই হাদিসটি তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে সংশ্লিষ্ট। এতে তারাবীহের কথা বর্ণিত নয়। নিম্নে এ ব্যাপারে কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করা হল।
“হাদিসে মূলত তাহাজ্জুদের বর্ণনা এসেছে” একথার দলিল
১. হাদিসের শব্দ ما كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يزيد في رمضان ولا في غيره (নবীজী সাঃ রামাযান ও রামাযান ছাড়া অন্য সময় বাড়াননা) এটাই বুঝাচ্ছে যে, প্রশ্নটি করা হয়েছিল রামাযান ছাড়া অন্য সময়ে যে নামায নবীজী পড়তেন তা রামযানে বাড়িয়ে দিতেন কিনা? এই প্রশ্নটি এজন্য করা হয়েছে যেহেতো বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে রাসূল সাঃ রামাযানে আগের তুলনায় অনেক নামায পড়তেন ও ইবাদত করতেন, তাই এই প্রশ্নটি করাটা ছিল স্বাভাবিক। আর রামযান ছাড়া কি তারাবীহ আছে? যে রামাযানের আগেই তারাবীহ আর বিতর মিলিয়ে ১৩ রাকাত নবীজী পড়তেন? নাকি ওটা তাহাজ্জুদ? তাহাজ্জুদ হওয়াটাই কি সঙ্গত নয়? সুতরাং এটাই স্পষ্ট বুঝা যায় তারাবীহ নয় প্রশ্ন করা হয়েছে তাহাজ্জুদ নিয়ে যে, নবীজী তাহাজ্জুদের নামায রামাযান ছাড়া যে ক’রাকাত পড়তেন তা থেকে রামাযানে বাড়িয়ে পড়তেন কিনা? এর জবাবে আয়েশা রাঃ বললেন-১৩ রাকাত থেকে বাড়াতেননা তাহাজ্জুদ নামায।
২. এই হাদিসের শেষাংশে এই শব্দ আছে যে قالت عائشة فقلت يارسول الله أتنام قبل أن توتر ؟ (তারপর আয়েশা রাঃ বললেন-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার আগে ঘুমান?) এই বিষয়টি তারাবীহ এর ক্ষেত্রে কল্পনাতীত যে নবীজী সাঃ তারাবীহ নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়েন আর সাহাবীরা বিতর পড়ার জন্য নবীর জন্য অপেক্ষমাণ থাকেন। বরং এটি তাহাজ্জুদ এর ক্ষেত্রে হওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত নয়কি?
৩. মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই হাদিসকে তারাবীহ এর অধ্যায়ে উল্লেখ করেননি। বরং তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। ইমাম মুহাম্মদ বিন নসর মারওয়াজী তার কিতাব “কিয়ামুল লাইল” এর “عدد الركعات التى يقوم بها الامام للناس فى رمضان”(রামযানে ইমাম কত রাকাত তারাবীহ পড়বে) অধ্যায়ে অনেক হাদিস আনলেও আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত এই হাদিসটি সহীহ হওয়া সত্বেও তিনি আনেননি। সাথে এদিকে কোন ইশারাও করেননি।
৪. মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই হাদিসকে তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার অধ্যায়ের পরিবর্তে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। যেমন ইমাম বুখারী রহঃ তার প্রণিত বুখারী শরীফে এই হাদিসটি নিম্ন বর্ণিত অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন-
(ক) বিতর অধ্যায়-(১/১৩৫)
(খ) নবীজী সাঃ এর রাতে (নামাযের উদ্দেশ্যে) দান্ডয়মানতা রামযানে ও রামযান ছাড়া-(১/১৫৪)
(গ) রামযানে (নামাযের উদ্দেশ্যে) দান্ডয়মানতার ফযীলত অধ্যায়-(১/২৬৯)
(ঘ) নবীজী সাঃ এর দু’চোখ ঘুমায় মন ঘুমায়না-(১/৫০৩)
প্রথম অধ্যায়ে বিতরের রাকাত সংখ্যা আর দ্বিতীয় অধ্যায়ে তাহাজ্জুদ রামাযানে বেশি পড়তেন কিনা তা জানা আর তৃতীয় অধ্যায়ে রামাযানে বেশি বেশি নামাযের ফযীলত আর চতুর্থ অধ্যায়ে নবীজী ঘুমালে যে তার অযু ভাঙ্গেনা তার কারণ বর্ণনা জন্য হাদিস আনা হয়েছে। তারাবীহের রাকাত সংখ্যা বুঝানোর জন্য কোথায় এসেছে এই হাদিস???
৫. আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী এই হাদিসের ব্যাক্ষায় বলেন-আর আমার কাছে এটি প্রকাশিত হয়েছে যে, ১১ রাকাতের থেকে না বাড়ানোর রহস্য এটি যে, নিশ্চয় তাহাজ্জুদ ও বিতরের নামায রাতের নামাযের সাথে খাস। আর দিনের ফরয যোহর ৪ রাকাত আর আসর সেটাও ৪ রাকাত আর মাগরীব হল ৩ রাকাত যা দিনের বিতর। সুতরাং সাযুজ্যতা হল-রাতের নামায দিনের নামাযরের মতই সংখ্যার দিক থেকে সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে। আর ১৩ রাকাতের ক্ষেত্রে সাযুজ্যতা হল-ফযরের নামায মিলানোর মাধ্যমে কেননা এটি দিনের নামাযই তার পরবর্তী নামাযের জন্য।(ফাতহুল বারী শরহুল বুখারী-৩/১৭)
ইবনে হাজার রহঃ এর এই রহস্য বা হিকমত বর্ণনা কি বলছেনা এই হাদিস দ্বারা তাহাজ্জুদ উদ্দেশ্য তারাবীহ নামায নয়? এই বক্তব্যে তাহাজ্জুদের কথা স্পষ্টই উল্লেখ করলেন ইবনে হাজার রহঃ।
তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের মাঝে পার্থক্য
কথিত আহলে হাদিসরা বলেন “তাহাজ্জুদ আর তারাবীহ একই” তাদের এই দাবিটি ভুল নিম্নবর্ণিত কারণে
১. তাহাজ্জুদের মাঝে ডাকাডাকি জায়েজ নয় তারাবীহতে জায়েজ।
২. তারাবীহের সময় ঘুমানোর আগে তাহাজ্জুদের সময় নির্ধারিত নয় তবে উত্তম ঘুমের পর।
৩. মুহাদ্দিসীনে কিরাম তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের অধ্যায় ভিন্ন ভিন্ন লিখেছেন।
৪. তাহাজ্জুদ নামাযের হুকুম কুরআন দ্বারা প্রমাণিত যথা সূরা ইসারার ৭৯ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَى أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا অর্থাৎ আর রাতে তাহাজ্জুদ পড় এটি তোমার জন্য নফল, অচিরেই তোমাকে তোমার রব প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন।
আর তারাবীহের ব্যাপারে আল্লাহর নবী বলেন-নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা রামযানের রোযা তোমাদের উপর ফরয করেছেন আর আমি তোমাদের উপর এতে কিয়াম করাকে সুন্নত করেছি (সুনানে নাসায়ী-১/৩০৮)
সুতরাং বুঝা গেল তাহাজ্জুদ আল্লাহর আয়াত আর তারাবীহ নবীজীর বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত।
৫. তাহাজ্জুদের হুকুম মক্কায় হয়েছে আর তারাবীহের হুকুম মদীনায় হয়েছে।
৬. ইমাম আহমাদ রহঃ ও তারাবীহ তাহাজ্জুদ আলাদা বিশ্বাস করতেন(মাকনা’-১৮৪)
৭. ইমাম বুখারী রহঃ এর ক্ষেত্রে বর্ণিত তিনি রাতের প্রথমাংশে তার সাগরীদদের নিয়ে তারাবীহ পড়তেন আর শেষ রাতে একাকি তাহাজ্জুদ পড়তেন। (ইমাম বুখারী রহঃ এর জীবনী)
৮. তাহাজ্জুদ এর নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত অর্থাৎ বিতরসহ বেশি থেকে বেশি ১৩ রাকাত আর কমপক্ষে ৭ রাকাত। আর তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার ক্ষেত্রে খোদ আহলে হাদিস ইমামদের স্বাক্ষ্য যে এর কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নবীজী সাঃ থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত নয়।
২ নং দলিল
عن جابر بن عبد الله قال : صلى بنا رسول الله صلى الله عليه و سلم في رمضان ثمان ركعات والوتر فلما كان من القابلة اجتمعنا في المسجد ورجونا أن يخرج إلينا فلم نزل في المسجد حتى أصبحنا فدخلنا على رسول الله صلى الله عليه و سلم فقلنا له : يا رسول الله رجونا أن تخرج إلينا فتصل بنا فقال : كرهت أن يكتب عليكم الوتر (قيام الليل-90)
হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-রাসূল সাঃ আমাদের সাথে রামযানে ৮ রাকাত নামায ও বিতর নামায পড়লেন, তারপর যখন পরদিন হল আমরা মসজিদে একত্রিত হলাম এবং আকাংখা করলাম নবীজী সাঃ আমাদের কাছে আসবেন। আমরা মসজিদে অবস্থান করতে লাগলাম। প্রভাত হয়ে গেল। তখন আমরা গেলাম নবীজী সাঃ এর কাছে। তাকে বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আকাংখী ছিলাম আপনি আমাদের কাছে যাবেন এবং আমাদের নিয়ে নামায পড়বেন, তখন তিনি বললেন-আমি এটি পছন্দ করছিলামনা যে, তোমাদের উপর বিতর ফরয হয়ে যাক।(কিয়ামুল লাইল-৯০)
জবাব
এই হাদিসটি নিয়ে কথিত আহলে হাদিসরা সবচে’ বেশি খুশি হতে দেখা যায়। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হল এই হাদিসটি দুর্বল। শুধু একজন নয় এই হাদিসের তিনজন রাবীর ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেছেন তারা গ্রহণযোগ্য নয়। দেখুন মুহাদ্দিসীনে কিরাম কি বলে এই হাদিসের বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে।
ইবনে হুমাইদ রাজী
১. হাফেজ জাহাবী রহঃ বলেন-তিনি দুর্বল
২. ইয়াকুব বিন শি’বা রহঃ বলেন-তিনি অনেক অগ্রহণীয় হাদিস বর্ণনা করেন।
৩. ইমাম বুখারী রহঃ বলেন-এতে আপত্তি আছে।
৪. আবু জুরআ রহঃ বলেন-তিনি মিথ্যাবাদী।
৫. ইসহাক কু’সজ রহঃ বলেন-আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি তিনি মিথ্যাবাদী।
৬. সালেহ জাযরাহ রহঃ বলেন-প্রত্যেক বিষয়ে সে হাদিস বর্ণনা করে। আল্লাহর উপর অধিক অপবাদ আরোপকারী আমি তাকে ছাড়া কাউকে দেখিনি। সে লোকদের হাদিস পরিবর্তন করে ফেলে।
৭. আল্লামা ইবনে খারাশ রহঃ বলেন-আল্লাহর কসম সে মিথ্যাবাদী
৮. ইমাম নাসায়ী রহঃ বলেন-সে গ্রহণযোগ্য নয়। (মিযানুল ই’তিদাল-৩/৪৯-৫০)
ইয়াকুব বিন আব্দুল্লাহ আশআরী
# ইমাম দারা কুতনী রহঃ বলেন-সে শক্তিশালী নয় (মিযানুল ই’তিদাল-৩/৩২৪)
ঈসা বিন জারিয়া
১. আল্লামা ইয়াহইয়া বিন মায়ীন রহঃ বলেন-তার কাছে অগ্রহণীয় হাদিস আছে।
২. ইমাম নাসায়ী বলেন-তার হাদিস অগ্রহণীয়।
৩. ইমাম নাসায়ী বলেন-তার হাদিস পরিত্যাজ্য।
৪. আবু দাউদ রহঃ বলেন-তার হাদিস অগ্রহণীয়।
৫. আল্লামা জাহাবী বলেন-তিনি দুর্বলদের মাঝে শামীল (মিযানুল ই’তিদাল-২/৩১১)
এছাড়া এ হাদিসটি “বুলুগুল মারাম” কিতাবে হযরত জাবের রাঃ থেকেই বর্ণিত কিন্তু সেখানে রাকাত সংখ্যার কথা উল্লেখ নেই। দেখুন বুলুগুল মারাম-৪২-৪৩
এছাড়াও এ হাদিসে আরেকটি সমস্যা আছে, তাহল-এই হাদিসে বিতর ফরয হবার আশংকার কথা বলা হয়েছে অথচ অন্য সহীহ হাদিসে তারাবীহ ফরয হয়ে যাবার আশংকা উল্লেখে করা হয়েছে। (মিযানুল ই’তিদাল-২/৪২-৪৩)
প্রিয় পাঠক/পাঠিকাদের হাতেই ছেড়ে দিলাম এই হাদিস দিয়ে হুকুম প্রমাণিত করার ভার। এরকম দুর্বল হাদিস দিয়ে এরকম মতবিরোধপূর্ণ বিষয় কি প্রমাণিত হয়?
৩ নং দলিল
و حدثني عن مالك عن محمد بن يوسف عن السائب بن يزيد أنه قال أمر عمر بن الخطاب أبي بن كعب وتميما الداري أن يقوما للناس بإحدى عشرة ركعة ( موطأ مالك-98)
মুহাম্মদ বিন ইউসুফ সায়েব বিন ইয়াজীদ রহঃ থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয় ওমর রাঃ ওবাই বিন কাব রাঃ ও তামীমে দারী রাঃ কে মানুষের সাথে ১১ রাকাত নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।(মুয়াত্তা মালিক-৯৮)
জবাব
এই হাদিস দিয়েও দলিল দেয়া ঠিক নয়। কারণ-
১. হাদিসটির শব্দে পরস্পর বিরোধীতা রয়েছে। যেমন এই হাদিসের সূত্রের একজন বর্ণনাকারী মুহাম্মদ বিন ইউসুফ তার সাগরীদ ৫ জন। তার মধ্যে ৩জন ১১ রাকাত আর ১জন ১৩ রাকাত ও ১জন ২১ রাকাতের বর্ণনা নকল করেন। এছাড়া যারা ১১রাকাতের কথা বর্ণনা তাদের বর্ণনার শব্দেও রয়েছে বিস্তর ফারাক। যথা-
ক. ইমাম মালিক এনেছেন ওমর রাঃ ওবাই বিন কাব রাঃ ও তামীমে দারী রাঃ কে মানুষের সাথ ১১ রাকাত নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
খ. হযরত ইয়াহইয়া আল কাত্তান বর্ণনা করেন-ওমর রাঃ ওবাই বিন কাব ও তামিমে দারী এর কাছে লোকদের একত্র করেন আর তারা দু’জন ১১ রাকাত নামায পড়াতেন।
গ. আব্দুল আজীজ বিন মুহাম্মদ রহঃ এর বর্ণনায় এসেছে-আমরা হযরত ওমর রাঃ এর আমলে ১১ রাকাত নামায পড়তাম।
বর্ণনাকারীর বর্ণনার ঠিক নেই, সাথে সাথে যারা এক কথা বলেছেন তাদের বক্তব্যটিও পরস্পর বিরোধী এমন বর্ণনা পরিত্যাজ্য। (ইলাউস সুনান-৭/৪৮)
২. এই বর্ণনাটি হযরত ওমর রাঃ থেকে আরেকটি সহীহ ও শক্তিশালী বর্ণনার বিপরিত। হযরত ওমর রাঃ থেকে ২০ রাকাত তারাবীহের কথা ইমাম মালিক রাহঃ তার মুয়াত্তার ৪০ নং পৃষ্ঠায় ও হাফেজ ইবনে হাজার ফাতহুল বারীর ৪ নং খন্ডের ২১৯ নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন। সুতরাং বুঝা গেল এই বর্ণনাটি আমলযোগ্য নয়।
৩. ইমাম মালিক রাহঃ নিজেই এই বর্ণনাটি আমলযোগ্য মনে করেননি, তাই তিনি নিজে ৮ রাকাতের কথা বলেননা।
৪. যদি হযরত ওমর রাঃ থেকে ১১ রাকাতের বর্ণনাটি সহীহ হত তাহলে পরবর্তীতে হযরত উসমান রাঃ ও আলী রাঃ থেকে এরকম বর্ণনা ও আমল প্রমাণিত হত, অথচ তাদের থেকে এরকম বর্ণনা প্রমাণিত নয়।
৫. এটাও হতে পারে যে, প্রথমে হযরত ওমর রাঃ এর কাছে নবীজী থেকে ৮ রাকাতের বর্ণনা এসেছিল কিন্তু পরবর্তীতে ২০ রাকাতের বর্ণনাটি পৌঁছলে তিনি ৮ রাকাতের বর্ণনাটি পরিত্যাগ করেন।
এই সকল কারণে এই হাদিসটি আমলযোগ্য হিসেবে বাকি থাকেনা।
আহলে হাদিস ইমামদের বক্তব্য তারাবীহের রাকাত সংখ্যার ব্যাপারে
১. শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন-আর যারা ধারণা করে যে, নিশ্চয় রামযানের দন্ডায়মানতার নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রমাণিত আছে নবীজী সাঃ থেকে যার উপর বাড়ানো কমানো যাবেনা সে ভুলের মাঝে আছে।(ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়া-২/৪০১)
২. আল্লামা ইবনে সুবকী রহঃ বলেন-জেনে রাখ! নিশ্চয় রাসূল সাঃ কি বিশ রাকাত তারাবীহ পড়েছেন না তার চে’ কম পড়েছেন তা তার থেকে বর্ণিত নেই (শরহুল মিনহাজ)
৩. আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহঃ বলেন-নিশ্চয় ওলামায়ে কিরাম মতান্যৈক্য করেছেন এর সংখ্যার ক্ষেত্রে, যদি তা নবীজী সাঃ থেকে প্রমাণিত বিষয় হত তাহলে তাতে মতবিরোধ হতনা।(আল মিসবাহ-৭৪)
৪. মাওলানা ওয়াহীদুজ্জামান বলেন-তারাবীহ নামাযের নির্দিষ্ট রাকাত নেই।( নাজলুল আবরার-১/১২৬)
৫. আবুল খায়ের নুরুল হাসান খাঁ বলেন-মোটকথা হল নির্দিষ্ট সংখ্যা নবী থেকে প্রমাণিত নয়।( আল উরফুল জাদি-৮৪)
৬. নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান বলেন-নিশ্চয় তারাবীহ নামায সুন্নত মৌলিকভাবে। যেহেতো নবীজী সাঃ তা রাতে পড়তেন তার পর তা ছেড়ে দিয়েছেন উম্মতের প্রতি দরদে যেন তা ফরয না হয়ে যায়, আর এর কোন নির্দিষ্ট রাকাতের কথা সহীহ হাদিসে নেই, কিন্তু নবীজী সাঃ এর একথা জানা যায় যে, তিনি রামাযানে এত ইবাদত করতেন যা অন্য সময়ে করতেননা।(আল ইনতিকাদুর রাজী’-৬১)
উল্লেখিত দলীল ভিত্তিক পর্যালোচনা দ্বারা আশা করি পরিস্কার হয়েছে যে, আট রাকাত তারাবীহের পক্ষে কোন দলীলই মূলত নেই। তাই কতিপয় বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী এসব ইবাদত গাফেল ব্যক্তিদের বলুন যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মনোনীত ঘর বাইতুল্লাহ শরীফ আ রাসূল সাঃ এর রওযা মুবারক সংশ্লিষ্ট মসজিদে নববীতে আবহমান কাল ধরে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়া হচ্ছে। তাহলে মসজিদে নববী ও বাইতুল্লাহ শরীফে তারাবীহের ক্ষেত্রে বিদআত করা হচ্ছে?
মন্তব্য করতে লগইন করুন