বর্তমান আওয়ামী সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের চিত্র

লিখেছেন লিখেছেন সঠিক ইসলাম ০৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ০১:৩১:৩০ রাত

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার প্রকৃত চিত্র এবং মিডিয়ার ব্লেইম গেইম

সংখ্যালঘুদের নিয়ে নোংরা রাজনীতি !

উদোর গিন্ডি বুদেরি ঘাড়ে!!!

আওয়ামীলীগের সংখ্যালঘু নির্যাতন; কিছু বাস্তব চিত্র

সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখলাম বেশিরভাগ ঘটনার সাথেই আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোই জড়িত রেফারেন্সসহ কিছু ঘটনা উল্লেখ করলাম।

গত ৭ ডিসেম্বর ২০১৩, বগুড়ায় যুবলীগ নেতৃবৃন্দের অত্যাচারের ভয়ে সংখ্যা লঘু সম্প্রদায় এলাকা ছাড়ছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায়। এর আগে ৪ ডিসেম্বর ২০১৩ প্রথম আলোর এক সংবাদে বলা হয় বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার গন্ডগ্রামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর এক যুবলীগ নেতার নির্যাতন বন্ধের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা বগুড়া পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আবদুর রউফের অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধ বিক্ষোভ করে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়।

এর আগে ২ নভেম্বর ২০১৩ পাবনার সাঁতিয়ার বনগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। যার সাথে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকরা জড়িত বলে দেশের শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ১০ নভেম্বরের প্রথম আলো পত্রিকার সংবাদে সিপিবি ও বাসদ এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘটনার সাথে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু জড়িত বলে দাবি করেছে।

সরকারীদল কর্তৃক সারা দেশে নিরীহ, অসহায় এবং সংখ্যালঘুদের জমি দখল করে নেয়ার মহোৎসবের উপর ১৩ এপ্রিল ২০১৩ আমার দেশ একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর সারাংশ নি¤œরূপ:

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) : ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলাধীন কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দু’পাশের সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার গ্রাম পাঙ্গাসী বাজারের হাট পেরিপেরির জায়গাসহ জনগণের যাতায়াতের সরকারি রাস্তার অংশ নিয়ে পাকা ভবন নির্মাণ করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা। দক্ষিণ চট্টগ্রাম : দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পৌরসভা এলাকায় রাতের আঁধারে জোর করে এক নিরীহ পরিবারের জায়গা দখল করে নিয়েছে প্রতাপশালীরা। গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) : শ্যামল চন্দ্র নামে লঘু পরিবারের এক যুবক অপহরণের শিকার হয়েছে। সুদের টাকা দিতে না পারায় সুদখোররা মঙ্গলবার দুপুরে নিজ বাড়ি থেকে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি হিন্দু পাড়ার কল্যাণ মাস্টারের বাড়ির গাছ কেটে নিচ্ছে স্থানীয় যুবলীগ ক্যাডাররা। কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের চর ধুলাসার মৌজায় ভুয়া ওয়ারিশ সাজিয়ে আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়ের কয়েক কোটি টাকা দামের ১২ একর জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বরিশাল : বানারীপাড়ায় জালিয়াতির মাধ্যমে এক সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখলের পাঁয়তারা করছে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা। বাগেরহাট : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে বিত্তহীন এক সংখ্যালঘু সম্প্র্রদায়ের বাড়িতে ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। অস্ত্রের মুখে ডাকাতরা নগদ টাকা ও মোবাইল সেটসহ কমপক্ষে ১০-১৫ হাজার টাকার মালামাল লুট করে নিয়েছে

২৯ এপ্রিল ২০১২, প্রাইম নিউজ বিডির একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ক্ষমতাসীন দলের নেতা সামসুর রহমান মল্লিক ঐ এলাকার দেবেন চন্দ্র দাসকে তাঁর বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পায়তারা করেছে।

১৩ এপ্রিল ২০১৩ আমার দেশ পত্রিকার আরেকটি প্রতিবেদনে উল্লেক করা হয়, সিলেটে মামলা তুলে নিতে মানবাধিকার কর্মীকে আ.লীগ নেতা হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। এমনকি হাসপাতালের বেডে শুয়েও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীর সহকারী মনিন্দ্র রঞ্জন দে। প্রসঙ্গত, গত ২২ মার্চ রাতে লামাবাজার মহাপ্রভুর আখড়া থেকে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের শোকসভা শেষে নগরীর যতরপুর নিজ বাসায় ফিরছিলেন মনিন্দ্র। বন্দরবাজার মাশরাফিয়া হোটেলের সামনে আসামাত্র ১০-১২ জনের একদল দুর্বৃত্ত তাকে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে মারধর করে বাম পায়ের গোড়ালির উপরের রগ কেটে ফেলে।

এদিকে চাঁদা না দেয়ায় সাতক্ষীরায় এক সংখ্যালঘু ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহত করেছে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা। এ সময় তারা দোকোনে থাকা মূর্তি ভাংচুরসহ নগত ২ লাখ টাকা লুট করেছে। এদিকে পিরোজপুরের নাজিরপুরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কালীমন্দির, প্রতিমা ভাংচুর, লুটপাট, মন্দিরের গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ৩১ মার্চ বগুড়ার সোনাতলার গড়চৈতন্যপুর গ্রামে পূজা মন্ডপের ৮টি প্রতিমা ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা (১ এপ্রিল, দৈনিক আমার দেশ)।

গত ১০ মার্চ ২০১৩ দৈনিক আমারদেশের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয় চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেয় আ.লীগের বিদ্রোহী গ্রুপ যেখানে পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। এদিকে এ ঘটনার সাথে জড়িয়ে অনেক সাধারণ মানুষকে মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে টাকা কামাচ্ছে সরকারদলীয় নেতা কর্মীরা। প্রতিবেদনে আরো বলা হয় গত সপ্তাহে বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর পুলিশের গুলির পর আওয়ামী লীগ নেতাদের উস্কানি ও অংশগ্রহণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়। আর এই নাশকতার জন্য পরিকল্পিতভাবে বেছে নেয়া হয় বাঁশখালীর দরিদ্র সংখ্যালঘু পরিবার ও তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। সহিংসতার মাঝে পড়ে দয়াল হরিনাথ শীল নামের এক বৃদ্ধ মারা যান।

গত ১১ মার্চ ২০১৩, টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌরসভার চন্দবাড়ি গ্রামের সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের হাত থেকে রক্ষা পেতে থানায় বিচার দাবি করেছে বলে উল্লেখ করেছে দৈনিক আমার দেশ। এতে বলা হয় সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে নানা অত্যাচার-নির্যাতনের পর এখন তাদের গ্রামছাড়া করার পাঁয়তারা করছে। সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা গতকাল সন্ধ্যায় দলবেধে থানায় হাজির হয়ে জানমালের নিরাপত্তা চেয়ে এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবিতে লিখিত অভিযোগ করে। লিখিত পিটিশনে গ্রামের সংখ্যালঘু নেতা রংলাল চন্দ্র পাল অভিযোগ করেন, পার্শ্ববর্তী হাটবৈরাণ গ্রামের মৃত হাবিবের ছেলে ফারুখ, মৃত আছর আলীর ছেলে মনির এবং চন্দবাড়ী গ্রামের মৃত ইবরাহিমের ছেলে লতিফ এবং ফজর আলীর শরীফ সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা আদায় করে আসছে। চাঁদা না দেয়ায় এর আগে তারা বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে কয়েক দফা ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। বেশকজনকে মারপিটও করে। গত শনিবার সন্ত্রাসীরা পাড়ায় চড়াও হয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি এবং ১০ ঘণ্টার মধ্যে তা পরিশোধ না করলে সবাইকে গ্রামছাড়া এবং বউ-ঝিদের উঠিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়ে যায়।

গত ২৭ মার্চ ২০১৩ বিএনবি নিউজে বলা হয় কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত দয়ারামপুর ঘোষপাড়ায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীন বিরোধের জের ধরে দলীয় মিছিলে যোগ না দেয়ায় তিনটি হিন্দু পরিবারের উপর হামলা করে এবং ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাটের চালায়।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ মওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতার সুযোগ নিতে আওয়ামী লীগ নেতারা চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে সংখ্যা লঘুদের উপর চরম নির্যাতন চালায় এবং এর দায়ভার তদন্ত ছাড়াই বিরোধী দলের উপর চাপিয়ে দেয়।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকায় চাপাতি দিয়ে বিশ্বজিৎ নামের এক হিন্দু যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। দিবালোকে টিভি ক্যামেরার সামনে উপর্যুপরি আঘাতের মাধ্যমে বিশ্বজিৎকে হত্যা করা হলেও আজো এর কোনো বিচার হয়নি।

গত ২৯ সেপ্টম্বর ২০১২ তারিখে উত্তম কুমার বড়ুয়া নামে এক যুবক কর্তৃক পবিত্র কুরআন শরীফ অবমাননাকে কেন্দ্রকে রামু ও উখিয়ায় বৌদ্ধ মন্দিরে চালানো হয় রাতভর হামলা। এনিয়ে সরকারি দল কোনো তদন্ত ছাড়াই বিরোধী দলকে দোষারোপ করে। অথচ ঘটনার মাত্র কয়েক দিন পর ৬ অক্টোবর দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় বেরিয়ে আসে আসল খবর। ঘটনার মূল নায়ক উত্তম কুমার বড়ুয়ার সঙ্গে মোবাইলে তর্ক করা এবং হুমকি দেয়ার পর তার বিরুদ্ধে মিছিলের প্রথম আয়োজন করেছিলেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সেই মিছিলে প্রধানত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও অংশ নিয়েছিলেন। লোক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিছিলটি মারমুখী হয়ে উঠেছিল। ওই মিছিলের লোকজনই রামু উপজেলা সদরে বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধ বসতীতে হামলা চালিয়েছে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগও তারাই করেছে। দ্বিতীয় দিন তথা ৩০ সেপ্টেম্বরও আওয়ামী লীগের নেতারাই কোর্টবাজার স্টেশনে মিছিল করেছেন। মিছিলে ও সহিংস কর্মকান্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন। নেতাদের নামও এসেছে সংবাদপত্রের খবরে।

বাঁশখালীতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেয় আ.লীগের বিদ্রোহী গ্রুপ : পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক, মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে টাকা কামাচ্ছে সরকারদলীয়রা।

*গত ১৯ সেপ্টেম্বর পিরোজপুরের নাজিরপুরে রুহিতলাবুনিয়া গ্রামে মন্দিরের জমি দখল করার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন মাঝি ও অপর আওয়ামী লীগ নেতা মনোরঞ্জন গোলদার গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হয় ২৫ জন। মনোরঞ্জনের দাবি, ৪০ বছর ধরে শ্রী শ্রী গোবিন্দ মন্দিরের কমিটির নিয়ন্ত্রিত জমিটি দখলের জন্য আলাউদ্দিন মাঝির লোকজন হামলা করে প্রতিমাসহ মন্দিরের আসবাবপত্র ভাংচুর করে।

এছাড়াও সারা দেশে সংখ্যা লঘুদের উপর আওয়ামী লীগের হামলার কিছু দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হলো:

*১১ আগস্ট ২০১৩ রাজধানীর সূত্রাপুর ৭৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা হাজী ইসলাম ও সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেনের নেতৃত্বে শতাধিক দলীয় লোক দক্ষিণ মৈশুরি ২২২, লালমোহন সাহা স্ট্রিটে শ্রী শ্রী রাধাকাস্ত ঠাকুরানী লক্ষ্মী জনার্ধনচক্র বিওবিগ্রহ মন্দিরে হামলা করে। তাদের হামলায় ৩৫টি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ওই হামলার পর এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ৩৫টি হিন্দু পরিবার।

*গত ১২ জুলাই নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার নাকইলে ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর এক পল্লীতে আওয়ামী লীগ কর্মী শরীফুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল ভূমিদস্যু জমি দখলের জন্য হামলা চালায়। এ সময় ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। হামলাকারীরা সংখ্যালঘু নারী-পুরুষদের মারধর করে।

*গত ২৫ মে রাজশাহীর চারঘাটে জমির সীমানা নিয়ে বিরোধে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী আজহার উদ্দিন তার দলবল নিয়ে অনিলচন্দ্র মূলের বাড়িতে হামলা চালায়। দুর্বৃত্তরা অনিলচন্দ্র, তার স্ত্রী বাসন্তী রানী, ছেলে শ্যামলচন্দ্র মন্ডল, তার ভাই অভিচরণ মন্ডল, অভিচরণ মন্ডলের স্ত্রী শান্তা রানীকে কুপিয়ে জখম করে।

*১৭ মে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজারের সিঙ্গরপুর পানপুঞ্জিতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সমাধি দখল করে ক্রুস গুঁড়িয়ে দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মতিন ও তার সহযোগীরা। হামলাকারীরা প্রয়াত এক মন্ত্রীর সমাধি গুঁড়িয়ে দেয় এবং আরও ১০টি সমাধির ক্রুস গুঁড়িয়ে দিয়ে সমাধি দখল করে নেয়।

*গত ১৪ মে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের উজয়মারিতে ২২টি সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখল করে নেন আওয়ামী লীগের এক কর্মী। ওই জমিতে ইটভাটা তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি। দখলে বাধা দেয়ায় রমেশ মন্ডলসহ তিনজন আহত হন।

*গত ২০ এপ্রিল ঢাকার কেরানীগঞ্জের আতাশুর গ্রামে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে সালাউদ্দিন, সালাম, মোস্তফা, সাজু, সাজ্জাদ, পিন্টুর নেতৃত্বে একটি দল জমি দখল করতে গেলে বাধা দেয়ায় অজিত করাতি ওরফে খিরমহনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় আহত হয়েছিল ১০ জন হিন্দু।

*৫ মার্চ নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামে হিন্দু তিন পরিবারের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। কয়েক বছর আগে আওয়ামী লীগ কর্মী আবদুর রাজ্জাকের ছেলে রেজাউলসহ কয়েকজন স্থানীয় হিন্দু নবকুমারের ছেলে প্রদীপ কুমারকে রামদা দিয়ে কোপায়। এতে রেজাউলসহ তিনজনের নামে মামলা হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ওরা মামলাটি তুলে নিতে চাপ দেয়। মামলা না তোলায় সন্ত্রাসীরা নবকুমারের জমি থেকে পাট কেটে নেয়। নবকুমার আরেকটি মামলা করলে তার ভাই শৈলেন্দ্রনাথকে কয়েক দফা মারধর ও বাড়ি লুট করা হয়। ফের ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করা হয়। সন্ত্রাসীরা বাড়িতে গিয়ে নবকুমারকে মামলা ওঠানোর জন্য সাদা স্ট্যাম্পে সই দিতে বলে। রাজি না হওয়ায় সন্ত্রাসীরা তার পরিবারের সদস্যদের সামনে বাবা-ছেলে ও মা সুধারানীকে বেদম মারধর করে। বাবা ও ছেলেকে টেনেহিঁচড়ে আবদুর রাজ্জাকের বাড়িসংলগ্ন একটি শিমুল গাছে বেঁধে মারধর করা হয়। পরে গলায় রামদা ধরে তাদের কাছ থেকে মামলা তুলে নিতে কাগজে সইও নেয়া হয়। পরে তাদের বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

* সংখ্যালঘু নির্যাতনের ন্যক্কারজনক কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। স্থানীয় এমপির ছেলে বন বিভাগের গাছ কেটে জায়গা দখলের পর ওই জমিসংলগ্ন জেলেপাড়ার ৭০/৮০টি হিন্দু পরিবারের চলার পথ বন্ধ করে দেন। পরিবারগুলোর অভিযোগ, তাদের উচ্ছেদের জন্য এসব করা হয়েছে।

*গত ৫ এপ্রিল সীতাকুন্ডে সংখ্যালঘুদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ, নির্যাতন ও হামলা-মামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করায় সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রতিরোধ ও কল্যাণ কমিটির সভাপতি আমিরাবাদ মায়াকুঞ্জের বাসিন্দা অমরেন্দ্র মল্লিককে পিটিয়ে এলাকাছাড়া করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। অমরেন্দ্রের বাড়িতে হামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে ও তাকে উলঙ্গ করে বেধড়ক মারধর করে। পরে তাদের প্রকাশ্যে পেটাতে পেটাতে পৌর ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। ভবনের একটি কক্ষে আটকে রেখে পৌর মেয়র শফির নেতৃত্বে বাবা ও ছেলেকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন অমরেন্দ্র। ওই সময় অমরেন্দ্রের বিবাহিত মেয়ে বাবা ও ভাইয়ের খোঁজে কাঁদতে কাঁদতে পৌর ভবনে এলে তাকে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়।

*গত বছর ২২ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়ার তাজপুর গ্রামে দেবোত্তর সম্পত্তি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে বাড়িতে ও খড়ের পালায় দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করে। এতে রাজবিহারী ঘোষ নামের এক বৃদ্ধ দগ্ধ হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। ঐক্য পরিষদের নেতা অ্যাডভোকেট রানা দাসগুপ্ত বলেন, সরেজমিন অনুসন্ধানে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ এসেছে।

* ২০ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার দেবহাটার ঢেবুখালিতে ৩০০ বিঘার একটি ঘের দখল করে নেয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতায় একটি বাহিনী।

* ২৫ জুলাই নরসিংদীর পলাশের চরসিন্দুর গ্রামে শ্মশানের জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের চারটি বাড়িঘর ও মূর্তি ভাংচুর এবং তাদের বাড়িতে লুটপাট করা হয়।

* ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয় দেয়া একদল সন্ত্রাসী বন্দুক উঁচিয়ে কাফরুল থানার পুলিশের সামনেই ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী রীতা গমেজের বাড়ির একাংশ দখল করে নেয়। রীতার পরিবার থানায় অভিযোগ করতে গেলে থানা তা আমলে নেয়নি।

* ২৮ সেপ্টেম্বর মাদারীপুরের রাজৈরের খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সাতপাড় গ্রামে রামমোহন মন্ডলের পূজামন্ডপে পুলিশ এক তরুণীকে উত্ত্যক্ত করে। পূজারিরা এর প্রতিবাদ করায় মধ্যরাতে এসআই কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের সদস্যরা প্রতিমা ভাংচুর করে।

* ২২ আগস্ট রাজধানীর সূত্রাপুরের ৯৫, ঋষিকেশ দাস লেনে আওয়ামী লীগ আশ্রিত সন্ত্রাসীরা এক হিন্দু পরিবারের বাড়ি দখল করতে গিয়ে ওই পরিবারের ৯ জনকে মারধর, লুটপাট ও পরে তাদের অপহরণ করে। এর আগে তাদের বাড়িটি বিক্রি করার জন্য ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়া হয়েছিল।

* ১৪ জুন খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ের বরাইতলি গ্রামে ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর ৩০০ একর জমি স্থানীয় দুর্বৃত্তরা দখল করার চেষ্টার সময় ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর সদস্যরা বাধা দিলে সংঘর্ষ বাধে। এতে ১৪ ব্যক্তি আহত হন।

*২০০৯ সালের মে মাসে সাতক্ষীরার আবাদের হাটের ঘোষাল পরিবারের ৩৮ বিঘা জমি দখল করে নেয় স্থানীয় যুবলীগের এক ক্যাডার ও তার সহযোগীরা।

*১৯ এপ্রিল দিনাজপুর সদর উপজেলার পাড়বড়ইল গ্রামের ১১৩টি ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদ করে জোতদারকে জমি দখল করে দিয়েছে পুলিশ। এ সময় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ওইসব পরিবারের ঘরবাড়ি।

*২০০৯ সালের ৩১ মার্চ সাতক্ষীরা দেবহাটার কালাবাড়িয়ায় মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ ঘোষের মালিকানাধীন ৩০০ বিঘার ঘের দখল করে নেয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। ১৯৭৯ সালে সুভাষ ঘোষের বাবা ওই জমি সরকারের কাছ থেকে নিলামে কেনেন। দখলে বাধা দিলে তার স্বজনদের পিটিয়ে আহত করা হয়।

*৫ মার্চ সাতক্ষীরা সদর উপজেলার যুগিপোতা গ্রামের রবিন মন্ডলের ১২ বিঘা জমির চিংড়িঘের দখল করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ আশ্রিত তিন সন্ত্রাসী। এতে বাধা দেয়ায় রবিন মন্ডলকে তারা মারধর করে। পরে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার সহযোগিতায় এ ঘটনায় উল্টো রবিন মন্ডলের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলা করা হয়।

২৮মে, ২০১২, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরে ৩৩ বছরের বন্দোবস্তীয দোকান দখল করে নিয়েছে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা। থানা পুলিশ ব্যবহার করে দখল সমঝে নিয়েছে বলে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারে জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগিরা অভিযোগ করেন।

১৫ মার্চ ২০১৩ ট্রুথ রিভিলার নামের একটি ওয়েব সাইটে উল্লেখ করা হয় ‘সাতক্ষীরাতেও তান্ডব চালাচ্ছে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা, সংখ্যালঘু নির্যাতনে ভাংছে দেশের সব রেকডর্’। পিরোজপুরেও সরকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে হিন্দুরা দলমত নির্বিশেষে গণস্বাক্ষর দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অত্যাচারের প্রতিকারের আবেদন জানিয়েছেন।

এদিকে ২ এপ্রিল ২০১৩ ব্রহ্মণবাড়িয়ায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। সংখ্যালঘুরা তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

২০ এপ্রিল কেরানীগঞ্জে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সম্পত্তি দখল করতে গিয়ে অজিত করাতি ওরফে ক্ষীরমোহনকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ সময় চারটি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। অজিত করাতিকে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ফুটেজ ক্যামেরায় ধারণ করায় পুলিশ সাংবাদিকদের লাঞ্ছিতও করে।

১১ জুলাই দোহারের নারিশা পূর্বচর গ্রামে সংখ্যালঘু নৃপেন মালাকারের জমিতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দখল করে নেয় সরকার দলীয় ক্যাডারা।

২২ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া গ্রামের সিকদারবাড়িসহ চার সংখ্যালঘু পরিবারের পানের বরজ ও খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয় সরকার সমর্থকরা। পরিষদ নেতারা অভিযোগ করেন, বরিশালের অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনের মন্দিরে গত কোরবানির সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা গরু ঝুলিয়ে কোরবানি দিয়েছেন।

বিষয়: বিবিধ

৩০৮১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

160250
০৮ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৬:৪৪
ব্যাসদেব লিখেছেন : সংখ্যালঘু তো মুসলিমরা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File