সম্পদ দ্রুত দ্বিগুণ করতে কত সময় লাগে?
লিখেছেন লিখেছেন সঠিক ইসলাম ০৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:৩৯:৩৫ সকাল
ব্যাংক-বীমায় ডিপোজিটের দ্বিগুণ হওয়ার সময়টি সবার জানা। অর্থলগ্নির অন্যান্য বৈধ উপায়ে দ্বিগুণের সময়টিও জানেন অনেকেই। কোনটিই ৫ বছরের কম নয়। রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখানো মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানিগুলো সময় চাইতো কমপক্ষে একবছর। সবচেয়ে বিতর্কিত ‘ইউনিপেটুইউ’ পর্যন্ত ৬ মাসের আগে লগ্নির দ্বিগুণ করার স্বপ্ন দেখাতো না। কিন্তু কত দ্রুততম সময়ে সেটা বাস্তব হতে পারে তা হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি। আপনি কি জানেন চাইলে মাত্র ১৭ দিনেই দ্বিগুণ করতে পারেন আপনার সম্পদ। হারিয়ে দিতে পারেন বিশ্বের সেরা ধনাঢ্যদেরও। আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। বৈষয়িক হলে মাত্র ১৭ দিন থেকে ২২ দিনেই দ্বিগুণ হতে পারে আপনার সম্পদ। তবে এজন্য আপনাকে হতে হবে জাতীয় সংসদের একজন এমপি বা মন্ত্রী। হ্যাঁ, এভাবেই সম্পদকে দ্বিগুণ করেছেন ৯ম জাতীয় সংসদের অন্তত অর্ধশত মন্ত্রী-এমপি। সম্পদ দ্রুত দ্বিগুণ হওয়ার দিক দিয়ে হয়তো তারা হারিয়ে দিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনাঢ্য ব্যক্তিদেরও। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোন কোন মন্ত্রী-এমপির সম্পদ ৩০ দিনের কম সময়েই দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কারও কারও লেগেছে দুই মাস। কারও কারও এক বছরেই তাদের সম্পদ ফুলে ফেঁপে ২০-২২ গুণ হয়ে গেছে। আর পাঁচ বছরে হয়ে গেছে শতাধিক গুণ। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় প্রত্যেক প্রার্থীই গোঁজামিল হিসাব দিয়েছেন। হলফনামায় উল্লেখ করেছেন শুধু বৈধ আয়ের হিসাব। ২০০৮ সালের হলফনামায় কৃষিজমি, বাড়ি-গাড়িসহ অন্যান্য সম্পদের মূল্য যা দেখিয়েছিলেন পাঁচ বছর পরে এসে তা একই দেখিয়েছেন। নামে বেনামে গেড়েছেন সম্পদ। এরকম গোঁজামিল হিসাব দেয়া সম্পদের পরিমাণ দেখেই অনেকের চক্ষু চড়কগাছ। এদিকে শেয়ার বাজারে ধস নামার পর এই বাজার নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নানা বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। শেয়ারবাজারকে ‘দুষ্টু ক্যাসিনো’ বা জুয়া খেলার বাজার হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। অথচ নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় জমা দেয়া তথ্যে তিনি নিজেকে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
দ্রুততম সময়ে সম্পদ দ্বিগুণ হওয়ার রেকর্ডটি করেছেন সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান। তার সম্পদ দ্বিগুণ হতে সময় লেগেছে প্রায় ১৭ দিন। পাঁচ বছরে তার সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১০৯ গুণ। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে হলফনামায় দেয়া তথ্যে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ২০১৩ সালে এসে তার সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। দ্রুত সম্পদ বাড়ানোর দিক দিয়ে দ্বিতীয় রেকর্ডটি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ভাইপো ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ২০০৯ সালেই প্রথম ঢাকা-১০ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি । তার সম্পদ দ্বিগুণ হতে সময় লেগেছে মাত্র ২০ দিন। আর পাঁচ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ৯১ গুণ। হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী গতবারের ৩ কোটি ৮১ লাখ ৪৮ হাজার ১১৩ টাকার সম্পদের পরিমাণ পাঁচ বছরের ব্যবধানে বেড়ে হয়েছে ৩৪৭ কোটি ১৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।
সম্পদ দ্রুত বাড়ানোর ক্ষেত্রে তৃতীয় হয়েছেন নবম জাতীয় সংসদের হুইপ মির্জা আজম। তিনি জামালপুর-৩ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তার সম্পদ দ্বিগুণ হতে সময় লেগেছে মাত্র ২২ দিন। গত পাঁচ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৮০ গুণ। হলফনামায় জমা দেয়া তথ্য অনুসারে ২০০৮ সালে তার সম্পদের মূল্য ছিল ২৪ লাখ ৩৬ হাজার ৮৭৭ টাকা। এ বছর জমা দেয়া হলফনামায় তার সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ কোটি ৪৮ লাখ ২৫ হাজার ৪২৫ টাকা। আওয়ামী লীগ নেতা সামশুল হকের সম্পদ দ্বিগুণ হতে সময় লেগেছে মাত্র ২৩ দিন। তিনি চট্টগ্রাম-১২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত পাঁচ বছওে তার নগদ টাকা বেড়েছে ৭৭ গুণ। দশম জাতীয় সংসদের হলফনামায় তার হাতে নগদ দেখানো হয়েছে এক লাখ ৫৫৪৭ টাকা। আর ব্যাংকে জমা রয়েছে ৪০ লাখ ১২ হাজার ৩৬৬ টাকা। ২০০৮ সালে তার কাছে নগদ ১৩৬৯ টাকা ছাড়া ব্যাংকে কোন টাকা নেই বলে হলফনামায় বলা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ নেতা নূর-ই আলম চৌধুরীও কম যাননি। তার সম্পদ দ্বিগুণ হতে সময় লেগেছে মাত্র ২৭ দিন। আর গত পাঁচ বছরে সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৬৭ গুণ। ২০০৮ সালে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬২ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। ২০১৩ সালে তার সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সম্পদ দ্বিগুণ হতে সময় লেগেছে ৪৫ দিন। গত পাঁচ বছরে তার সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪০ গুণ। ২০০৮ সালে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩৮ লাখ ১৭ হাজার টাকা। ২০১৩ সালে তার সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম বাবু’র সম্পদ দ্বিগুণ হতে সময় লেগেছে মাত্র ৫২ দিন। আর গত পাঁচ বছরে সম্পদ বেড়েছে ৩৫ গুণ। ২০০৮ সালে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। ২০১৩ সালে তার সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আওয়ামী লীগ নেতা মো. আবদুল হাইয়ের সম্পদ দ্বিগুণ হতে সময় লেগেছে মাত্র ৬০ দিন। তিনি ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত পাঁচ বছরে বাৎসরিক আয় বেড়েছে প্রায় ৩০ গুণ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে হলফনামায় বার্ষিক আয় ছিল ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। বর্তমানে তার বাৎসরিক আয় ৩০ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ লাখ ৯৯ হাজার ২৮৪ টাকায়।
ঢাকা-১৫ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ছিলেন আসলামুল হক আসলাম। তার সম্পদ দ্বিগুণ হতে সময় লেগেছে মাত্র ৬০ দিন। আর পাঁচ বছরে তার সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৩০ গুণ। ২০০৮ সালে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে তার সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৪৫ কোটি ৬ লাখ টাকা। শেয়ারবাজারকে ‘দুষ্টু ক্যাসিনো’ আখ্যাদানকারী অর্থমন্ত্রী প্রায় ৪২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন শেয়ারবাজারে। এদিকে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে অস্বাভাবিক সম্পদ বাড়ার চিত্র তুলে ধরে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, হলফনামায় জমা দেয়া ৪৮ জন প্রার্থীর সম্পদ গড়ে ৩৬৩ ভাগ বেড়েছে। এই হার মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে ২৪৭ ভাগ, প্রতিমন্ত্রীদের ক্ষেত্রে ৪৫৯ ভাগ এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা, চিফ হুইপ, হুইপদের ক্ষেত্রে ১৬৮৯ ভাগ। প্রধানমন্ত্রীর সম্পদ ৪৬ ভাগ এবং ডেপুটি স্পিকারের সম্পদ ২৩৮ ভাগ বেড়েছে। শতকরা হারে বৃদ্ধির হিসাব তুলে ধরে তিনি বলেন, আব্দুল মান্নান খানের সম্পদ বেড়েছে ১০৯৯৭ ভাগ, নূর-ই-আলম চৌধুরীর ৬৪২৪ ভাগ, ড. হাছান মাহমুদের ৩৮৯২ ভাগ, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর ১৯৬৯ ভাগ, মির্জা আজমের ১৪১৪ ভাগ, মো. মাহবুবুর রহমানের ১২৬৩ ভাগ এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ১১৩৫ ভাগ বেড়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন