ভারত যেভাবে আমাদের হিন্দু সংস্কৃতি শেখাচ্ছে!!!
লিখেছেন লিখেছেন সঠিক ইসলাম ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৭:২৪:৪৩ সন্ধ্যা
ভারতের টিভি-চ্যানেলগুলো বাংলাদেশের ঘরে ঘরে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশের টিভি-চ্যানেল কি ভারতে দেখানো হয়? না, হয় না। ভারত সরকার বলে- ভারতীয় কেবল-ব্যবসায়ীরা নাকি বাংলাদেশী চ্যানেল সম্প্রচারে রাজী নয়। অথচ ভারত রাষ্ট্রীয়ভাবে এটা বন্ধ করে রেখেছে। বাংলাদেশের কোনো বই ভারতের বাজারে ঢুকতে পারে না, বাংলাদেশের কোনো সংবাদপত্র ভারতের বাজারে বিক্রি হতে পারে না। অথচ ভারতীয় সংবাদপত্র বাংলাদেশে বিক্রি হয়। এমনকি, ‘সাপ্তাহিক দেশ’ একবার যখন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, বাংলাদেশের বাজার বন্ধ হয়ে যাবার ফলে সেই ‘সাপ্তাহিক দেশ’ ‘পাক্ষিক দেশ’-এ রূপান্তরিত হলো। কারণ-দুই-তৃতীয়াংশ সার্কুলেশনই ছিল বাংলাদেশে।
১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধের পর কোলকাতার বাংলা চলচ্চিত্র তৎকালীন (পূর্ব-পশ্চিম) পাকিস্তানে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এবং সেই নিষিদ্ধের ফলে কোলকাতার টালিগঞ্জের চলচ্চিত্রের স্টুডিওপাড়া একদম বসে গিয়েছিল। এর কারণ- ভারতের চলচ্চিত্রের বড় বাজার হলো বাংলাদেশ। তাই সেই নিষিদ্ধের ফলে তাদের সেই শিল্পটি বিপন্নপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। অথচ বাংলাদেশের সিনেমা, নাটক প্রচারিত হয় না এবং বই-পত্রিকা বিক্রি হয় না। এই হলো আমাদের স্বদেশ-প্রেম এবং ভারত প্রেমের নমুনা।
বাংলাদেশে ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ, খুন হলে প্রায়শ মিডিয়ায় এভাবে শিরোনাম হতে দেখি- ‘হিন্দি সিনেমার স্টাইলে কিংবা ফিল্মি-স্টাইলে অমুক অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে’।হিন্দি সিনেমার প্রাদুর্ভাবে এসকল অপরাধীরা যেমন নিত্য-নতুন কলা-কৌশল উদ্ভাবন করছে, তেমনিভাবে সংবাদ মাধ্যমগুলোতেও ‘হিন্দি সিনেমার স্টাইল’ শব্দত্রয় ব্যবহৃত হচ্ছে, ‘হলিউডি সিনেমার স্টাইল’ শব্দত্রয় এখনও পর্যন্ত ব্যবহৃত হতে দেখা যাচ্ছে না। কেন, কারণ হলো হিন্দি সিনেমার বিরাট বাজার হলো আমাদের এই বাংলাদেশ। আর এভাবেই আমাদের সংস্কৃতির উপর আগ্রাসী ভূমিকা রেখে চলেছে ভারত।
বাংলাদেশের ভেতর বহুজাতিক কোম্পানী, বিশেষ করে মোবাইল কোম্পানীগুলো কিভাবে আমাদের সংস্কৃতির উপর প্রভাব ফেলছে, এবার সেটা বলি। মোবাইল কোম্পানীগুলো বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে বিপ্লবী ভূমিকা রেখে চলেছে। তারা যেসকল বিজ্ঞাপন দেয়, সে বিজ্ঞাপনগুলো দেখলে সহজেই বোঝা যায়, এই বিজ্ঞাপন নির্মাতা কিংবা বিজ্ঞাপনটির কনসেপ্ট আমাদের সাংস্কৃতির অভ্যাসকে পরিবর্তন করতে চাচ্ছে। যেমন- গ্রামীণফোনের একটা বিজ্ঞাপন ছিল- ‘আলো আসছে’। এই বিজ্ঞাপন যারা দেখেছেন, তারা হয়ত খেয়াল করেছেন, একটা ঘরের মধ্যে কয়েকটা বালক কুর’আন তেলাওয়াত করছে অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘর কিন্তু বাইরে একটা ‘আলোকছটা’ দেখে তারা কুর’আন পাঠ বাদ দিয়ে তারা বাইরে চলে গেল। প্রশ্ন- এই দৃশ্য দেখানোর মানে কি? এর মানে হলো, কুর’আনের থেকেও এমন এক আলো এসেছে, যার দিকে মানুষকে গ্রামীণ ডাকছে। (নাউযুবিল্লাহ্)। কুর’আনের চাইতে আর বড় আলো কি হতে পারে? এই সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে এটা কিসের আগ্রাসন? কেন এই বিজ্ঞাপনটি প্রচার করা হলো? কিছু মানুষের প্রতিবাদের মুখে এখন সেই বিজ্ঞাপনটি দেখানো বন্ধ হয়েছে।
বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে আরেকটি উদাহরণ দেই। বাংলালিংকের একটি বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে বাসে উঠে একজন হকার বলে-‘সহিহ মোবাইলনামা’। এটা হলো-‘সহিহ আমলনামা’, ‘সহিহ হাদীস’ প্রভৃতিকে কটাক্ষ্য করে বানানো। ‘মুখে কলি করে কোন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবেন’, এরকম কথা সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে। এর মানে কি? মুখে কুলি করার সাথে নেটওয়ার্কের সম্পর্ক কি? ‘দেশ প্রেমিক’ নামক একটি বিজ্ঞাপন প্রচারিত হত। বিরোধীদলের লোকদের দমন-পীড়ন, জেল-জুলুম র্নিযাতনের সময় পুলিশ পাড়ায় মহল্লায় লিফলেট বিতরণ করেছে। বিরোধীদলের লোকদের ধরতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করে। ‘দেশ প্রেমিক’ নামক একটি বিজ্ঞাপনটির দিকে খেয়াল করলে লক্ষ্য করবেন, এখানে পুলিশকে গোপনে ফোন করে সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ‘আমি দেশপ্রেমিক বলছি, অমুক জায়গায় অপরাধী আছে, তাকে ধরুন’।এধরণের বিজ্ঞাপনগুলো রাজনৈতিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়।
এই মোবাইল কোম্পানীগুলোর বিভাগীয় হেড হচ্ছে ভারতীয় তরুণেরা এবং একটি রাজনৈতিক দলের আদর্শে বিশ্বাসী মানুষেরা। গত নির্বাচনের আগে আওয়ামীলীগ ‘দিনবদলের সনদ’ তৈরি করল। একইভাবে অন্যদিকে বাংলালিংকের বিজ্ঞাপনে দেখা গেল ‘দিনবদলের গান’, দৈনিক প্রথম আলোর স্লোগান হলো- ‘বদলে যাও, বদলে দাও’।এগুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে ভাববার কোনো কারণ নেই। তারা মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রন করে এরকম প্রচার-প্রচাড়নার মধ্য দিয়ে।
শাহবাগের চত্তরে তরুণদের যে জাগরণের কথা বলা হচ্ছে, এটা আসলে তরুণদের জাগরণ নয়, বরং আওয়ামীলীগ-বামপন্থী রাজনৈতিক দলের প্রোপাগ্রান্ডা এবং সেই প্রোপাগ্যান্ডা বাস্তবায়নে সেই রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী মিডিয়ার জাগরণ। তারা প্রথমদিকে মানুষকে একত্রিত করতে যেভাবে কাছা বেধে প্রচার-প্রচারনায় নেমেছিল, তা নিশ্চয়ই কেউ ভুলে যাবে না। ফাঁসির দাবী, ছেলে মেয়ের একত্রে রাত্রি যাপন, পাশাপাশি শুয়ে-বসে ছেলে-মেয়েরা আন্দোলন করছে, জাতি তা প্রথমবারের মতো অবাক দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করেছে। মধ্যবিত্ত সামাজিক মূল্যবোধ এবং ধমীয় মূল্যবোধের প্রতি সত্যি তা এক সাংঘাতিক আঘাত। কিন্তু মিডিয়াতে এসকল জিনিস এমনভাবে প্রচার করা হয়েছিল, যেন এটা আমাদের সমাজে স্বাভাবিক কিংবা সহনীয় বিষয়। জনগন এখানে সরাসরি কোনো প্রতিবাদ করেনি। তবে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছিল। একটা সময় জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল সেই আন্দোলন। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সেই সময়কার বলিষ্ঠ কন্ঠ যেন মধ্যবিত্তের সেই মূল্যবোধের পক্ষে এক দারুন প্রতিবাদী কষ্ঠস্বর। তবে তা কারাগারে পুড়ে রাখা হয়েছে। দুটি চ্যানেল জামায়াতে ইসলামীর বলে বন্ধ করা হয়েছে। তবে বন্ধ করা হলো এমন একটি সময়, যখন হেফাজতে ইসলামের বিপক্ষে সরকার-বামপন্থী আর ভারতপন্থী লোকেরা রাতের আধারে পশুর মত নির্মমভাবে গণহত্যা চলানো হয়েছিল, আর সেই দটো চ্যানেল তা প্রচার করছিল। আর শাহবাগের এই আন্দোলনের ক্ষেত্রেও ছিল ভারতের ইন্ধন।
আমাদের সংস্কৃতিতে ‘প্রদীপ প্রজ্বলন’ নামক একটি হিন্দুয়ানী রীতিকে প্রতিষ্ঠা করার পাঁয়তারা চলছে। অনেক অনুষ্ঠানেই এখন ‘প্রদীপ প্রজ্বলন’ নামক একটি ইভেন্ট চাল হয়েছে। অর্থাৎ কোনো অনুষ্ঠানের সূচনাকালে মোমবাতি কিংবা তেল-সলতেতে আগুণ দেওয়া। এটাকে হিন্দুরা ‘মঙ্গল প্রদীপ’ বলে থাকে। এটা আমাদের সংস্কৃতিতে ছিল না। কোনো একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা যখন কারো স্পন্সর করে, তখন তারা এমন একটি পর্ব রাখার জন্য বলে। আর স্পন্সরশীপ পাবার জন্য তারা এটা করে থাকে। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকলকেই এমন একটি রীতি শেখানো অবশ্যই ইসলামী মূল্যবোধের এবং ধর্ম বিশ্বাসের উপর চরম আঘাত। কেননা, এটি অগ্নিপূজার শামিল। হিন্দুদের বিশ্বাস ‘অগ্নি’ দ্বারা পবিত্র করে। তাইতো মরে গেলে আগুনে পুড়িয়ে পবিত্র করে হিন্দুরা। রবীন্দ্রনাথের যে গানের মাধ্যমে ‘পহেলা বৈশাখ’ উদযাপিত হয় রমনার বটমূলে, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো!’- এই গানটির মধ্যে একটি এমন লাইন আছে যেখানে বলা হচ্ছে- ‘অগ্নিস্নানে সূচী হোক ধরা’ অর্থাৎ ‘অগ্নিতে ধরা পবিত্র হোক’।প্রশ্ন হলো- অগ্নিতে অবগাহনে ধরা পবিত্র হয়, এটা কি হিন্দু বিশ্বাস নাকি মুসলমানদের বিশ্বাস? সংস্কৃতির নামে আমাদের কি শেখানো হচ্ছে? এগুলো কবে থেকে শুরু হলো? কবে থেকে এগুলো আমাদের সংস্কৃতি?
বিষয়: বিবিধ
১৩২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন