"শান্তির ধর্ম" ইসলামে জিহাদ
লিখেছেন লিখেছেন সঠিক ইসলাম ২৬ নভেম্বর, ২০১৩, ০৩:১২:০৬ দুপুর
প্রথমেই বুঝে নিতে হবে “ইসলাম শান্তির ধর্ম” এটা কুর’আন বা হাদীস কোথাও বলা হয় নাই। কোন সাহাবা বা তাবেয়ীনদের কেউ বলেছে আজ পর্যন্ত আমি শুনি নাই। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে শান্তি আসে এটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু ইসলাম মানে শুধু শান্তি এটা কে বলল? ইসলাম মানে “সমর্পণ”, এক আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ, নিজের ইচ্ছাকে বাদ দিয়ে পরিত্যাগ করে মহান আল্লাহর ইচ্ছার কাছে নিজেকে সঁপে দেয়া হল ইসলাম।আপনি যখন সকালে বিশেষ করে শীতকালে ফজরের সময় কম্বলের নিচ থেকে বের হয়ে অজু করে নামাজ পড়েন তখন খুব ভাল লাগে? কিংবা রোজার সময় গরম হোক কিংবা শীতকাল, না খেয়ে থাকেন তখন খুব ভাল লাগে???খুব শান্তি লাগে??!তারপর ও আপনি সেটা করেন।কেন? কারন আপনি আল্লাহর কাছে নিজেকে সপে দিতে চান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য!নিজের ইচ্ছাকে তার কাছে সঁপে দেন। এর নাম ইসলাম!শুধু নিজের ইচ্ছা নয়, সমাজের প্রচলিত জাহেলি যুগের বাপ দাদার সংস্কৃতি, মানুষের বানানো আইন, ফেরাউনের স্বেচ্ছাচারিতা, প্লেবয়-গ্যাংস্টার, মুন্নি শিলাদের অন্ধ অনুকরণ -এই সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে এক আল্লাহকে এই দুনিয়ার সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হিসেবে মেনে নেয়া হল ইসলাম। কুর’আনে আল্লাহর আনুগত্যের কথাই বারবার বলা হয়েছে। পশ্চিমা গণতন্ত্র চালু করে ‘শান্তি’ অর্জনের কথা কুর’আনে বলা হয় নাই।
অনেকে মনে করেন سلم এই তিনটি অক্ষর থেকে যেহেতু ইসলাম ও সালাম উভয় শব্দের উৎপত্তি, তাই উভয় এর অর্থ একই হবে। অথচ বাস্তবে একই মূল ধাতু থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন শব্দের অর্থ ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমনঃ سلم থেকে উৎপন্ন শব্দ সমূহ হলোঃ
ইসলাম – اسلام – আত্মসমর্পণ ,সালাম- سلام – ভালো থাকা / শান্তি,সালামা- سلما – চামড়ার প্রস্তুতি (ট্যানারী), সালিমা-سليما – বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া (স্ত্রী বাচক),সালিম -سليم – বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া (পুং বাচক),আসলাম- اسلم -সপে দেয়া (submit)
ইসতিসলাম- استسلاما -আত্মসমর্পণ করা,মুসাল -مسل -যাতে কোন মতদ্বন্দ হয়নি (Undisputed)।। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ইসলাম মানে শুধু "শান্তি" না!
তো এখন কথা হল, “ইসলাম শান্তির ধর্ম” এই কথাটা কেন আসল ? এর কারণ ইসলামে জিহাদ বলে একটা ব্যাপার আছে, সেটা ইসলামের একটা শক্তিশালী এবং অবিচ্ছেদ্য অস্ত্র। এই অস্ত্রকে নির্বিষ করে মুসলিম জাতিকে যেন ইচ্ছেমত নিয়ন্ত্রণ করা যায় এই জন্য “ইসলাম শান্তির ধর্ম” টাইপের কথাগুলো আমদানি করা হয়েছে। এই কথাগুলো এমনভাবে হজম করানো হয়েছে যে এখন কোন মুসলিমের পক্ষে জিহাদের কথা বলাই সমস্যা হয়ে গেছে, বললেই জঙ্গি হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ফাউলের দল আমেরিকান আর্মি কিংবা ছাত্রলীগকে কিংবা ছাত্রদলকে জঙ্গি মনে করে না, এরা যতই খুনাখুনি ধর্ষণ করুক না কেন। এদিকে আবার একদল apoplectic ভীতু টাইপ মুসলিমের জন্ম হয়েছে এরা জিহাদের অর্থ বিকৃত করে ফেলছে। তারা বলে জিহাদ মানে শুধুই নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ, অথবা জিহাদ শুধুই রক্ষণাত্মক।ব্যপারটা এমন যে, মুসলিমরা ঘরে বসে শুধু নামাজ কালাম পড়বে, জিকির করবে কিন্তু তারা যদি মুসলিমদের কচু কাটাও করে মুসলিমরা যেন মনে করে, আরে!! ইসলাম মানে তো শান্তি!সুতরাং আমাদের কেটে কেটে কাবাব বানাও, আমাদের মা বোনদের ধর্ষণ কর, আমাদের সম্পদ লুট করে নিয়ে যাও, যা ইচ্ছা তাই কর আমাদের নিয়ে, আমরা কিচ্ছু বলবনা! যদি আপনার ঘরে বিষধর সাপ ঢুকে তারপরও যেন আপনি বলেন-না না না! ইসলাম তো শান্তির ধর্ম! নিরিহ সাপকে মারা যাবেনা! কিছুতেই না!এটা বলে সেই সাপকে দুধ খেতে দিলেন!!
মারামারি, কাটাকাটি, যুদ্ধ যাই বলেন না কেন, এগুলো হচ্ছে মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য বাস্তবতা। এইসব ঘটনা সবসময় হয়ে আসছে, avoid করা যায় না। কেউ অর্থের জন্য, কেউ ক্ষমতার জন্য, কেউ নারীর জন্য যুদ্ধ করে। আবার কেউ “গণতান্ত্রিক শান্তি” প্রতিষ্ঠার নামে পুজিবাদী কোম্পানির deconstruction -reconstruction ব্যবসার জন্য যুদ্ধ করে। এই যুদ্ধ ব্যাপারটা সব সভ্যতাতেই হয়ে আসছে, হোক সেটা ড্রোন বিমানের আধুনিক যুগ কিংবা ঢাল-তলোয়ারের প্রস্তর যুগ। এমন কোন সভ্যতা নেই যে যুদ্ধ না করে টিকে ছিল।
যুদ্ধের বাস্তবতা কোনভাবেই অস্বীকার করার কোন উপায় নাই। তাই ইসলাম কখন, কিভাবে, কেন যুদ্ধ করতে হবে এই ব্যাপারে কিছু rules and regulations সেট করে দিয়েছে। এই নিয়মটা মহাজ্ঞানী আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন, এগুলো নিয়ে apologetic হওয়ার কিছু নেই। আপনার পাশের বাড়ির হিন্দু ছেলেটা কিংবা কোন মুক্তমনা নাস্তিক ছাগুর এই নিয়ম ভাল না লাগলেও কিছু করার নেই। এরা আল্লাহর দ্বীনকে পছন্দ না করলে আল্লাহর দ্বীনকে আমরা পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করার কোন ক্ষমতা রাখি না, এই কাজ ইহূদী,খ্রিস্টানরা করত।
তো যাই হোক, ইসলামে জিহাদ হচ্ছে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করা। আবু হানিফা, ইমাম শাফীঈদের বই খুলে দেখেন এই কথাই লেখা হচ্ছে। জিহাদ এর শাব্দিক অর্থ চেষ্টা করা-এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু জিহাদের শরীয়াগত অর্থ হচ্ছে আল্লাহর আইনকে সর্বোচ্চ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা, যেটার সর্বোচ্চ form হচ্ছে ক্বিতাল-এটা নিয়েও কোন সন্দেহ নেই। এইখানে আবার অনেকে আছে শাব্দিক আর শরীয়াগত অর্থে মধ্যে প্যাচ লাগানোর চেষ্টা করে ওবামাকে খুশি করতে চায়,এটা খুবই বাজে অভ্যাস। সালাতের শাব্দিক অর্থ দু’আ করা, কিন্তু আল্লাহ সালাহ বলতে একটা স্পেসিফিক ritual বুঝিয়েছেন যেটা আমরা দিনে ৫ বার নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করি। যাকাত এর শাব্দিক অর্থ পবিত্রতা কিন্তু শরীয়া অর্থ হচ্ছে নিসাব পরিমাণ সম্পদের অতিরিক্ত সম্পদের ২.৫% নির্দিষ্ট খাতে বছরান্তে ব্যয় করা।ঠিক তেমনি "জিহাদ" এর শাব্দিক অর্থ না বরং শরীয়তগত অর্থের দিকে তাকাতে হবে।
আল্লাহ বলছেন,
“আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়” [সূরা বাকারাঃ১৯১]
তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে। [সূরা তওবাঃ২৯]
অর্থাৎ, অমুসলিমদেরকে প্রথমে ইসলামের দিকে আহবান করতে হবে, তাতে সাড়া না দিলে জিযিয়ার বিনিময়ে তাদের ধর্ম ব্যাক্তিগত পর্যায়ে পালন করতে দেয়া হবে এবং তাদেরকে নিরাপত্তা দেয়া হবে ইসলামিক রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। সেটাতেও রাজি না হলে তাদের সাথে জিহাদ করতে হবে। অতীতে ইসলামিক খিলাফত রাষ্ট্রের বিস্তৃতি এভাবেই হয়েছে, তবে কোন অঞ্চলে অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণে জোরজবরদস্তি করা হয় নি, বরং তারা নিজেরা ইসলামের সত্যে convinced হয়ে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছে।
তো আমাদের আবার এই জিনিষটা হজম হইতে চায় না। মানবতাবাদীরা প্যাটপ্যাট করে, “যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই”। আরে বেকুবের দল, ফেরাউন, বুশ, বাশার আল আসাদ, হাসিনা এদের মত বদমাইশদের সাথে মিষ্টি করে মেয়েলী ভাষায় রিকোয়েস্ট করলে এরা শুনবে ? এদের সাথে যুদ্ধ না করলে শান্তি কি উড়ে উড়ে আসবে ?
ফেরাউন, নমরুদ এরা বেকুব টাইপ ছিল, তাই এরা সরাসরি মানুষকে oppress করত। কিন্তু সে তুলনায় স্ট্যালিন, বুশ, ওবামা অনেক চালাক। এরা সিস্টেমেটিক্যালি লোকজনকে oppress করে। আগে গণতন্ত্র আর freedom এর মদ খাইয়ে মাতাল করে, তারপর oppress করে। একুশ শতকের লোকজন খুবই বোকা টাইপ।
বাস্তবে আল্লাহর দ্বীন ছাড়া অন্য যেকোন মানবরিচত জীবনব্যবস্থা মানুষের innate nature এর প্রতি oppressive। কারণ আপনি যদি আল্লাহকে বাদ দেন, তাহলে এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকার একমাত্র উদ্দেশ্য তখন হবে জাগতিক ভোগ। আর এই জাগতিক ভোগের জন্য যদি আপনি বেঁচে থাকেন তাহলে কখনই শান্তি আসবে না।কারণ মানুষজন যখন জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে দেখে আরাম করে বেঁচে থাকা, তখন এত ভাল সেজে লাভ কি ? শুরু হয় ব্যাক্তিগত প্রতিযোগিতা, শেষ হয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস war on terrorism এ গিয়ে।
মুসলিমরা জাগতিক স্বার্থের জন্য বেঁচে থাকে না, তারা বেঁচে থাকে আল্লাহর জন্য। অমুসলিম জাতি যখন জিহাদ করে সম্পদের লোভে, তখন মুসলিমরা জিহাদ করে আল্লাহর দেয়া ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। মুসলিমরা শুধু নিজেদের রক্ষা করার জন্য জিহাদ করে না। তারা কেন জিহাদ করে সেটা সবচেয়ে সুন্দর করে বলেছিলেন রবিয়া ইবনে আমর (রাঃ)। পারস্যের সাথে যুদ্ধের সময় পারস্যের সেনাপতি টাইপ কেউ জিজ্ঞেস করেছিল, “তোমরা কেন যুদ্ধ করতে আসছ ? তোমাদের ধন দৌলত লাগলে নিয়ে যাও, আমরা দিব”। রবিয়া ইবনে আমর (রাঃ) উত্তর দিলেন,
“আমরা তো নিজ থেকে এখানে আসি নি। এই পৃথিবী যার তিনি আমাদেরকে পাঠিয়েছেন। আমরা এসেছি মানবতাকে আল্লাহর ইচ্ছায় মানুষের দাসত্ব থেকে আল্লাহর দাসত্বে ফিরিয়ে আনতে। আমরা এসেছি এই দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে মানুষকে এই দুনিয়ার এবং আখিরাতের বিশালতার দিকে ফিরিয়ে আনতে”।
"মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। " [সূরা সফঃ১০,১১]
আপনারা ডু ডু পাখির নাম শুনেছেন???? এই পাখিগুলো দেখা যেত ভারতীয় মহাসাগরে অবস্থিত মরিশাস দ্বীপটিতে । এই পাখিগুলো উড়ার ক্ষমতা অর্জন করতে পারে নাই কারন দ্বীপটিতে খাবার ছিল যথেষ্ট, ছিলনা কোন শিকারি প্রানি। তারা যখন কোন মানুষকে দেখত তখন নির্দ্বি
ধায় তারা মানুষের কাছে চলে আসতো। তাই এদের ধরা ছিল অতি সহজ। এরা এতোটাই বোকা ছিল যে চোখের সামনে নিজেদের স্বজাতিদের ধরে নিয়ে যেতে দেখে এরা কখনই বিচলিত হত না। দলবদ্ধভাবে কখনই আত্তরক্ষার জন্যে আক্রমন করত না। এমনকি দৌড়ে পালানোরও কোন চেষ্টা করত না। অত্যন্ত নিরিহ এই পাখিটির কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নি। মানুষ এদের ধরে ধরে খেতে থাকল, এদের সংখ্যা কমতে কমতে আস্তে আস্তে এরা বিলুপ্ত হয়ে গেল। আজ কেবল এদের ছবি আর কিছু হাড়গোড় আমরা যাদুঘরে দেখেত পাই।
প্রায় ২০ কেজি ওজন , সাড়ে ৩ ফুট উচ্চতা আর শক্ত ঠোঁট থাকার পরেও এরা কখনই আত্মরক্ষার কোন চেষ্টা করত না বিধায় আজ এদের অস্তিত্য নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। নিরিহ এই প্রাণীটি কারও কোন ক্ষতি না করে নিজেদের মত করে দ্বীপটিতে বিচরন করে বেরাত। আর সেটাই তাদের বিপুপ্তির কারন হয়ে দেখা দিল।
ডু ডু পাখির ভুলগুলো ছিল নিম্নরূপ
১) এরা ডাচ নাবিকদের বন্ধু ভাবত
২) আত্মরক্ষার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করত না
৩) এরা স্বজাতিকে মানুষের পেটে সাবার হতে দেখে বিচলিত হত না
৪) এরা নিজেদের শিকারির হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে প্রস্তুত ছিল না
আজ এই কারনেই "ডু ডু" শব্দটি আজ " স্টুপিড" বা " আহাম্মক" শব্দের সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ( যা ইংরেজি ভাষায় ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যপকভাবে)
কেউ যদি বলে " ডু ডু পাখির রাস্তা ধর" তাত মানে সে বলছে "তুমি অস্তিত্যহিন হও/বিদায় হয় উচ্ছন্নে যাও"
বস্তুত Do Do শব্দটি এসেছে পর্তুগীজ শব্দ (duodo) থেকে যার অর্থ দাঁড়ায় 'বোকা" বা "আহাম্মক"
ইবার আসি ইসলামের কথায়। কুরানে জিহাদের আয়াত নিয়ে নাস্তিকদের অনেক এলারজি দেখা যাচ্ছে। তারা দাবি করে ইসলাম যদি শান্তির ধর্মই হয়ে থাকে তাহলে এতে জিহাদের আয়াত আসলো কিভাবে???
কেন জিহাদের মাধ্যমে হত্যা করার অনুমোদন দেয়া আছে?
কেন অস্ত্র মজুদ রাখার কথা বলা আছে?
কেন অহিংস আন্দলনের কথা বলা হয় নি?
উত্তরঃ ইসলাম এমন একটি জীবন বিধান যা ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, সকল ক্ষেত্রেই দিক নির্দেশনা দেয়। ইসলাম স্বীকার করে মানুষকে এই পৃথিবীতে অন্যায়ের বিপক্ষে যুদ্ধ করতে হবে। সেটা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও।
এইবার আসুন দেখি ইসলামে জিহাদের বিধান না থাকলে কি হতে পারত??
এখানে ২ টি হাইপথিসিস আমি দেখাতে চাই
১ নং হাইপথিসিসঃ
ইসলামে জিহাদের বিধান নেই। মুসলিমরা যুদ্ধ করাকে ধর্ম বিরোধী কাজ বলে মনে করত। তাই মুসলিম দেশগুলো কখনই নিজেদের রক্ষার জন্যে সামরিক শক্তি সঞ্চয় করত না, বা কোন সুসংঘঠিত সৈন্যদল তৈরি করত না । মোটকথা ডু ডু পাখির মত মুসলিমরা কখনই শত্রুর সাথে লড়তে যেত না (এমনকি যদিও তাদের সামনে তাদের সঙ্গীদের হত্যা করা হয় তবুও না)
ফলাফলঃ ইসলাম বিদ্বেষী, ক্ষমতা আর সম্পদলভী দেশি বিদেশী শত্রুর হাতে মুসলিমদের গননিধন, অতঃপর মুসলিমদের ডু ডু পাখির ভাগ্য বরন।
২ নং হাইপথিসিসঃ
ইসলামে জিহাদের আয়াত নেই। কিন্তু মানুষ তার বিচার বুদ্ধি দিয়ে বুঝতে পারল দুষ্টের দমনের জন্যে অনিচ্ছা সত্যেও যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরতে হবে এবং মানুষ তাই করল।
অতঃপর মানুষ দেখল যে তাহারা ধর্মের পথে থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে না, শুধু তাই না ভবিষ্যতে মুসলিমরা যদি নিজেদের আত্মরক্ষার জন্যে অস্ত্র মজুদ ও সামরিক প্রস্তুতি গ্রহন করতে থাকে তাহলে তা ধর্মের বিপক্ষে যাবেই। অতএব যেহেতু আত্মরক্ষা না করলে অস্তিত্যই যেখানে হুমকির মুখে পড়ে সেখানে ধর্মকে বাচিয়ে রেখে কি লাভ???
অতএব মুসলিমরা দলে দলে ইসলাম ত্যগ , ও বাকি মুসলিমদের ডু ডু পাখির ভাগ্য বরন।
লক্ষ্য করুন এখানে আমি যে ২ ট হাইপথিসিস দেখালাম তার যেকোনো একটি সঙ্ঘটিত হলেই ইসলাম ১৪০০ বছর কেন রাসুলের বিদায়ের ১৪ বছরেই মুসলিমদের চিরশত্রুরা তাদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলত
উভই ক্ষেত্রেই মুসলিমদের ডু ডু পাখির ভাগ্য বরন করতে হত
তখন মুসলমান শব্দটা হত "আহাম্মক" এর সমার্থক শব্দ
"মুসলিমদের" রাস্তা ধর বলতে বুঝাতো "উচ্ছন্নে যাও'/ "অস্তিত্যহিন হও" ইত্যাদি ইত্যাদি
সুরা আনফাল আয়াত ৬০ এ আল্লাহ বলেন "তাদের সাথে যুদ্ধের জন্যে তোমরা যথাসাধ্য সাজ সরঞ্জাম, শক্তি ও ঘোড়া প্রস্তুত রাখবে, এবং তোমরা আল্লাহর দুশমন ও তোমাদের দুশমনকে ভিত সন্ত্রস্ত করে দিবে।"
আবার ৬১ নম্বর আয়াতে বলা আছে " হে মুহাম্মাদ তারা যদি সন্ধির প্রতি আগ্রহ দেখায় তাহলে তোমরাও সন্ধির প্রতি ঝুকে যাবে, এবং সর্বদা আল্লাহর উপর ভরসা করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শুনেন সবকিছু দেখেন"
এখানে লক্ষ্য করুন মুসলিমদের পর্যাপ্ত পরিমান সমরাস্ত্র মজুদ রাখার কথা কুরানে বলা আছে।
আজকের বিশ্বে আমরা লক্ষ্য করলেই দেখব প্রতিতি রাষ্ট্রই বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সামরিক খাতে ব্যয় করে (যদিও সেই দেশ আপাতত কারও সাথে যুদ্ধাবস্থায় নেই), তার মানে কি এই দাঁড়ায় এই যুগের সকল রাষ্ট্রই সন্ত্রাসি মতাদর্শে বিশ্বাসী?????
তাহলে আমাদের সেনা সদস্যের আমরা অস্ত্র দিয়ে প্রস্তুত রেখেছি কেন??
আমরা কি তবে মানবতার শত্রু?? যুদ্ধে যাদের আমরা হত্যা করব তারাও তো মানুষ, তাহলে কি মানবতার মুখে লাথি মেরে আমরা আমাদের সেনাবাহিনি ট্যংক/কামান দিয়ে সাজিয়েছি??
সেনাবাহিনির প্রতিটি সদস্য কি তাহলে সন্ত্রাসী আদর্শে দীক্ষিত??????????
পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রই তাদের সামরিক শক্তির আধুনিকায়নে সচেতন, প্রতিটি সংবিধানই সেনাবাহিনির প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে । তাহলে কুরানের আয়াত কি করে সন্ত্রাসী আয়াত হতে পারে???
৭২ নম্বর আয়াতে বলা আছে ঃ "যারা ইমান এনেছে কিন্তু হিজরত করে নি, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা হিজরত না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের অভিভাবকত্তের দায়িত্ব তোমার নেই,যদি তারা একান্ত দ্বীনের খাতিরে তোমাদের সাহায্য চায় তাহলে তাদের সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য, তবে তা যেন এমন কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে না হয় যাদের সাথে তোমাদের কোন চুক্তি হয়েছে, বস্তুত তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা সবকিছুই দেখেন"
এখানে আল্লাহ আমাদের মুসলিমদের পক্ষ হয়ে শান্তিচুক্তিতে আবদ্ধ বিধর্মীদের সাথে যাতে আমরা শত্রুতা না করি সে নির্দেশ দিয়েছেন। কোন মুসলিম অপর মুসলিমের পক্ষ নিয়ে বন্ধু রাষ্ট্রের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে এটা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
সুরা তাওবা আয়াত ৬ এ আল্লাহ রাসুল কে বলেন ঃ "আর যদি মুশরেকদের মাঝ থেকে কেউ যদি তোমাদের কাছে আশ্রয় চায় তাহলে অবশ্যই তাকে আশ্রয় দিবে, যাতে তারা আল্লাহর বাণী শুনতে পায়, অতঃপর তাকে তোমরা কোন নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিবে, এটা এজন্যই যে এরা আসলে এমন এক সম্প্রদায়ের লোক যারা কিচ্ছু জানে না"
এখানে আল্লাহ শত্রুদের নিরাপত্তা চাইলে তাদের বিমুখ না করার নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু তাই নয় তাদের নিরাপদ আশ্রয় পৌঁছে দেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।
আল্লাহর রাসুল বহুবার আমাদের বলেছেন (যা কুরানেও এসেছে) "যে অবিশ্বাসীরা তোমাদের শত্রু"
আজকের পৃথিবীতে এর পক্ষে প্রমান আমদের চোখের সামনে।
এক কালিন হিন্দু , বৌদ্ধ, খ্রিস্তিয়ান, যারা আজ নাস্তিকতার মুখোশ পড়ে আছে তারা আজ ফেসবুকে ইসলামের নবি, রাসুল, আর ধর্মপ্রচারকদের ইচ্ছামত গালিগালাজ করছে।
অথচ যারা সত্যের পুজারি তারা নিজেরা সত্যের পথ না দেখিয়ে কিভাবে আরেকটি আদর্শকে গালিগালাজ করতে পারে?????????
নাস্তিকরা আমাদের প্রচন্ড ঘৃণা করে, আমাদের অপরাধ আমরা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করি।
আর নাস্তিকরা মুসলিমদের বিশ্বাসকে তাদের ঘৃণা করার কারন হিসেবে জাস্টিফাই করে, আমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করি এই কারনে তারা মনে করে আমাদের ও আমাদের রাসুল কে জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ করা, রাসুলের বিরুদ্ধে কু রুচিকর কাল্পনিক কথাবার্তা বলা, আর অশ্লীল কার্টুন একে মুসলিমদের ধরমানুভুতিতে আঘাত দিয়ে তারা আসলে ভাল কাজ করছে
যদি ওরা কেবল ইসলামের শত্রু না হত তাহলে ওরা যে ধর্ম থেকে সরে এসে নাস্তিক হয়েছে সে ধর্মের সীমাবদ্ধতাগুলো তুলে ধরে তাদের অবস্থানের কারণকে যুক্তি দ্বারা ব্যখ্যা করত। অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি খড়গহস্ত হত না। ফেসবুক, আর ব্লগ এ ঘৃণা ছড়াত না।
নাস্তিকরা দাবি করে তারা যুক্তিবাদী, মানবতাবাদি, মুক্তমনা।
একবার নাস্তিকধর্মে দীক্ষিত হয়ার পর হায়েনার আক্রোশ নিয়ে মুসলিমদের উপর ঝাপিয়ে পরার নাম কি নাস্তিকতা????????????
ইসলামের নবি ও ধর্ম প্রচারকদের অশ্লীল কার্টুন,। আর কাল্পনিক গালগল্প বানিয়ে বলার নাম কি যৌক্তিকতা????????????????
মুসলিমদের কেবল তাদের ধর্ম বিশ্বাসের কারনে ঘৃণা করার নাম কি মানবতা??????????
ওরা বলে ওরা মুক্তমনা
সত্য কখনও একাধিক রুপে আসতে পারে না, সত্য একটাই। আজ যারা নিজেদের মুক্তমনা দাবি করে তারা কি বলতে চায় তাদের আগে পৃথিবীতে কোন সৎ লোক আসে নাই, তাদের আগে কেউ সত্য পথ কি তা জানত না????? যারা একটি বিশেষ ধর্মের রাসুল আর অনুসারীদের সারাদিন জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ করে, মিথ্যাচার করে, অশ্লীল নারীর ছবি দিয়ে নারী অধিকারের পোস্ট দেয়, অথচ নিজেদের কোন বিকল্প রাস্তা দেখায় না, যাদের কোন আদর্শ নাই, কোন নির্দিষ্ট নীতি নাই, যাদের শুরু হচ্ছে অধর্ম ব্যবসা, তারাই কি শুধু মুক্তমনা????????? হস্তমৈথুন, গেলমান, সেক্স, ছাগু, আবাল, যাদের সর্বাধিক ব্যবহৃত শব্দ তারা কি মুক্তমনা?????? যারা আর দশ জনের মতের বিরুদ্ধে যায় তারাই কি মুক্তমনা????????? তাহলে কি হিটলার, আর টানবাজারের পতিতাও মুক্তমনা????????? যদি তাই হয় তাহলে বলব ঘৃণা করি মুক্তমনাদের কারন তাদের ব্যবহার দিয়ে তারা আমাকে জয় করতে পারে নাই, রাসুল পেরেছেন। কে আছে রাসুলের চেয়ে বৃহত্তর আর সফলতর মুক্তমনা???????????????????????? কে আছে এমন একা একা এক আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করেছেন ১৪০০ বছর পরেও সে আদর্শ মাটিতে মিশিয়ে তথাকথিত সর্বজ্ঞানী নাস্তিকরা শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ??????????????? কার আদর্শ আজো ১৫০ কোটি মানুষকে প্রভাবিত করে???????? কার আদর্শ আজো পৃথিবীর সবচেয়ে প্রসারণশীল?????????????????? রাসুল ছিলেন মুক্তমনা আমরা সেই মুক্তমনার অনুসারী। বাকি সব আবর্জনা
আমি নাস্তিক হতে পারলে খুশি হতাম, যদি আল্লাহ না থেকে থাকেন তাহলে কে আমাকে জাহান্নামে পোড়াবে????????? আমি বেচে যাব হাজারও অপরাধ করে।
কিন্তু নাস্তিকতার ব্যবচ্ছেদ করতে গিয়ে দেখি সেখানে কেবল ধার্মিকদের প্রতি ঘৃণা!! আর ঘৃণা!!!!! প্রচণ্ড ঘৃণা!!!!!
-আল ফাত্তাহ
## এছাড়াও পড়তে পারেনঃ http://tanvirzim.blogspot.com/2011/03/clarifying-some-misunderstood-and.html
বিষয়: বিবিধ
৩৪৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন