সুফিয়ায় কেরামগণের বানী চিরন্তনী - (ইসলামী বিপ্লবকারীদের রুহের খোরাক) পর্ব - ০০২
লিখেছেন লিখেছেন সঠিক ইসলাম ০৭ নভেম্বর, ২০১৩, ০৫:৩৭:২০ বিকাল
পর্ব - ০০১
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) :
১. যে ব্যাক্তি একবার আল্লাহর মহব্বতের স্বাদ পেয়েছে, দুনিয়ার কোন বস্তুর প্রতিই তার অনুরাগ থাকতে পারে না।
২. দুনিয়াতে আমার তিনটি কাজ খুবই প্রিয়। যথা : প্রথমত : রাসূলুল্লাহ (স.) এর চেহারা মুবারক দর্শন করা, দ্বিতীয়ত : আমার অর্থ-সম্পদ তার কাজে ব্যয় করা, তৃতীয়ত : আমার কন্যা আয়েশা সিদ্দীকাকে তার খেদমতে দেখতে পাওয়া।
৩. গুনাহের কাজে লিপ্ত হব, এই ভয়ে আমি সত্তর রকমের বৈধ কাজ ত্যাগ করেছি।
৪. প্রকৃত মর্যদা লাভ হয় খোদাভীরুতায়, সম্পদ লাভ হয় আল্লাহর উপর ভরসায় এবং প্রভুত্ব লাভ হয় বিনয়ে।
৫. প্রকৃত মহত্ব আল্লাহভীতি, প্রকৃত দৌলত তাওয়াক্কুল এবং শ্রেষ্ঠত্ব হলো বিনয়।
৬. শতকরা আড়াই দেরহাম বখীল দুনিয়াদারের যাকাত। কিন্তু সিদ্দীক গণের যাকাত তার যথাসর্বস্ব আল্লাহর পথে বিলিয়ে দেয়া।
৭. কিছু দান করতে হলে অত্যন্ত বিনয়ের সংগে তা পেশ কর। কেননা, ভক্তিভরে কিছু দেওয়া ছদকা কবুল হওয়ার আলামত।
৮. যার কোন বন্ধু নেই কিংবা কথায় কথায় বন্ধুত্ব ছিন্ন করে, তার মত হতভাগা ইহ সংসারে নেই।
৯. সম্মান এবং পদমর্যাদার মোহ যে মন থেকে বের করে দিতে পারে, এ দুটি তার পায়ের ভৃত্যে পরিণত হয়ে যায়। মৃত্যু ভয়কে যে ব্যাক্তি উপেক্ষ্যা করতে পারে, তার পক্ষ্যেই চিরদিন মানুষের মাঝে বেচে থাকার মত কোন কিছু করে যাওয়া সম্ভব ।
হযরত ওমর (রা.) :
১. আমি হারামে পতিত হবার ভয়ে সত্তর প্রকার হালাল জিনিস বর্জন করেছি।
২. সেই ব্যাক্তি আল্লাহ ভীতু যে কখনও ক্রোধ প্রকাশ করে না।
৩. কিয়ামতের দিন যদি আল্লাহ তায়ালা ঘোষনা করেন যে, সারা দুনিয়ার মানুষের মধ্যে একজন লোক বেহেশতে যেতে পারবে না, আমি মনে করবো যে, বেহেশতে না যাওয়ার সেই একটি মাত্র অযোগ্য লোক আমি ব্যাতিত অন্য কেউ নয়। পক্ষান্তরে যদি ঘোষনা করা হয় যে, যাবতীয় মানুষের মধ্যে মাত্র একটি লোক বেহেশতী হবে, বাকী সকলেই দোজখে যাবে, তথাপি আমি আশা রাখি যে, সেই বেহেশতী লোকটি হয়তো আমিই।
৪. আল্লাহর নূরের দ্বারা আমার অন্তকরন আল্লাহর দর্শণ লাভ করেছে।
৫. একটি চর্মরোগবিশিষ্ট ছাগলের যত্ন নিতে যদি আমি ত্রুটি করি, তাহলে আল্লাহর দরবারে কিয়ামতের দিন এর জন্য আমাকে জওয়াবদিহী করতে হবে।
৬. আমি হারামে প্রবৃত্ত হবো এই ভয়ে দশটি হালালের মধ্যে, সন্দেহের স্থলে নয়টি হালাল ত্যাগ করেছি।
৭. কিভাবে ও কি প্রকারে আমার প্রভাত হবে তা আমি চিন্তা ও ভয় করি না, অসুখের সাথে কি সুখের সাথে হবে সেই ভাবনাও নেই। কারন, আমি জানিনা, কিসের মধ্যে আমার মংগল।
৮. শরিয়তের বিধান যাকে আদব শিখাতে পারে না, আল্লাহও তাকে সুসভ্য করেন না।
৯. যে ব্যাক্তি তার নিজের গোপন কথার হেফাজত করতে পারলো সে নিজের কল্যাণ নিশ্চিত করলো।
১০. এই জগতে তিনটি জিনিস আমার অতি প্রিয়। সৎ কাজের আদেশ দান করা, মন্দ কাজ হতে বিরত রাখা ও পুরনো কাপড় পরা।
১১. যে কারনে তোমার রাগ আসতে পারে সে কারণসমূহ থেকে নিজেকে দূরে রাখ।
১২. সবচেয়ে বুদ্ধিমান সে, যে সবচেয়ে বেশি ক্ষমাপ্রার্থি হয়।
১৩. হে আল্লাহ ! তুমি আমাকে খুব বেশি অর্থ দান করো না। কেননা, তাতে আমি দাম্ভিক হয়ে যেতে পারি, আর একবারে অল্পও দিওনা, কেননা তাতে তোমাকে ভুলে যেতে পারি। যে প্রাচুর্য পথভ্রষ্ট করে তা অপেক্ষা অল্প অনেক ভাল।
১৪. ঘর থেকে আহার না করে বের হলে সারাদিন অনুতাপ করতে হয়,সময়মত কৃষিকাজ না করলে সারা বছর অনুতাপ করতে হয়, স্ত্রীর সঙ্গে হৃদ্যতা না হলে সারা জীবন অনুতাপ করতে হয়, আর আল্লাহ অসন্তুষ্ট থাকলে অনন্তকাল অনুতাপ করতে হয়।
১৫. তওবার তিক্ততা সহ্য করার চেয়ে পাপ না করা অনেক ভাল।
১৬. যে আমার একটি ভুল আমাকে উপহার দেয় আল্লাহর করুনা তার উপর।
১৭. সাধক হবার আগে বিদ্যা শিক্ষা কর।
১৮. ইমানের পর চরিত্রবান স্ত্রি লাভ একটি বিরাট নেয়ামত।
১৯. তিনটি কাজে বন্ধুত্ব প্রগাড় হয় :
ক. প্রিয় সম্ভাষণের সাথে বন্ধুকে ডাকা।
খ. সাক্ষাৎ হওয়া মাত্রই প্রথমে বন্ধুকে সালাম করা।
গ. বন্ধুকে প্রথমে বসিয়ে তারপর নিজে বসা।
২০. আশেকের পরিচয় ছয়টি :
১. সর্বদা দীর্ঘ নি:শ্বাস ছাড়বে, অর্থাৎ কেন জন্ম হয়েছিল আর জীবনটা কি করে কাটালাম- এই চিন্তায় আফসোস করবে, ২. চেহারা সবসময় মলিন ও বিমর্ষ থাকবে, ৩. চোখ অশ্রুভরা থাকবে, ৪. কথা কম বলবে, ৫. স্বল্প পরিমানে আহার করবে, ৬. নিদ্রাকে নিজের জন্য হারাম করে নিবে।
২১. হাজরে আসওয়াদকে লক্ষ্য করে তিনি বলেছিলেন- আমি জানি, তুই একটি প্রস্তরখন্ড মাত্র, মানুষের কোন উপকার কিংবা অপকার করার ক্ষমতা তোর নেই। আমি স্বচক্ষ্যে দেখেছি হযরত রাসূলুল্লাহ (স.) তোকে চুম্বন করেছেন, সেই জন্য আমিও চুম্বন করলাম। যদি তিনি এইরুপ না করতেন, তা হলে আমি কখনো তোকে চুম্বন করতাম না।
২২. ন্যায় বিচার মজলুমের জন্য জান্নাত এবং জালিমের জন্য জাহান্নাম।
২৩. মনে যখন যা চায় তাই খাওয়া, অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।
২৪. জালিমকে ক্ষমা করে দেয়া মজলুমের প্রতি অত্যাচার করারই নামান্তর মাত্র।
২৫. হযরত ওমর (রা.) পথিমধ্যে এক মাতালকে পড়ে থাকতে দেখে দোররা বাহির করলেন। মাতাল অনন্যোপায় হয়ে অশ্রাব্য ভাষায় তাকে গালি দিতে শুরু করল। হযরত ওমর (রা.) তখন তাকে ছেড়ে চলে গেলেন। এক সঙ্গী জিজ্ঞাসা করলেন, তাকে ছেড়ে দিলেন কেন ? ওমর (রা.) বললেন- গালি দিয়ে সে আমাকে রাগান্বিত করে ফেলেছিল। আর রাগের মাথায় কখনও সুবিচার করা যায় না।
২৬. অতিরিক্ত আহার করো না। এতে হৃৎপিন্ড বরবাদ হয়, শরীর অসুস্থ হয় এবং ইবাদত হতে দূরে সরিয়ে দেয়।
২৭. ঈমানের সঠিক অর্থ এই যে, অন্তর দিয়ে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও একত্বের উপলব্ধি করবে এবং তার প্রতিটি নির্দেশকে যথাযথ ভাবে পালন করবে।
২৮. কেউ তোমার উপকার করলে প্রতিদানে তার উপকার করা তোমার কর্তব্য, কিন্তু কেউ তোমার ক্ষতি করলে প্রতিদানে তার উপকার করা তোমার পক্ষ্যে অপরিহার্য।
২৯. অল্প কথা বলা জ্ঞানীর লক্ষণ, অল্প আহার করা স্বাস্থের সহায়ক, অল্প ঘুম ইবাদত স্বরুপ এবং লোকের সঙ্গে অল্প মেলামেশা নিরাপদে থাকা।
৩০. পবিত্র কুরআন বুঝতে চেষ্টা কর, কেননা, কুরআন পরম জ্ঞানের উৎস এবং মানসিক উৎকর্ষতার সর্বাপেক্ষা বড় মাধ্যম।
বিষয়: বিবিধ
১৮৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন