সুফিয়ায় কেরামগণের বানী চিরন্তনী - (ইসলামী বিপ্লবকারীদের রুহের খোরাক) পর্ব - ০০১

লিখেছেন লিখেছেন সঠিক ইসলাম ০১ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:৫৭:৩০ দুপুর

হযরত আদম (আ.) :

একটিবার আল্লাহর আদেশকে অবহেলা করে হযরত আদম (আ.) কয়েক বছর অনুশোচনায় কেদেছিলেন আর বলেছিলেন, "হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার উপরে জুলুম করে ফেলেছি, আপনি যদি আমাকে মাফ না করেন, দয়া না করেন তাহলে আমি ধ্বংস হয়ে যাব।

হযরত মুসা (আ.) :

১. হে আমার পরওয়ারদিগার! কোন বিশেষ বিষয়ে আমাকে উপদেশ দিন। ইরশাদ হল, "বিশেষ উপদেশ হলো আমাকে লাভ কর।" হযরত মুসা (আ.) চারবার একই প্রার্থণা করলেন আর আল্লাহ তায়ালা বারবার একই উত্তর দিলেন।

২. যার মধ্যে নিম্নোক্ত গুণাবলীসমূহ আছে, তার উপর আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট আছেন। যেমন, অন্তরে তওবা করা, জিহ্বার দ্বারা ক্ষমা প্রার্থণা করা, চোখের দ্বারা পানি ফেলা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা ইবাদত করা।

হযরত ইয়াকুব (আ.) :

১. সে-ই ধৈর্যহীন যে মানুষের কাছে স্রষ্টার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে।

২. প্রেমিকই তার প্রেমাস্পদের অনুভূতি লাভ করে।

হযরত দাউদ (আ.) :

হে আল্লাহ ! তোমার জিকিরকারীদের মজলিস ছেড়ে যদি আমি গাফেলদের মজলিসে যাই, তবে তুমি আমার পা ভেঙ্গে দিও ।



হযরত ঈসা (আ.) :


১. আমার পরে সুসংবাদ প্রদানকারী একজন রাসূল তোমাদের মাঝে আগমণ করবেন এবং তার নাম হবে আহমদ।

২. যখন কোন ব্যাক্তি তোমার সম্পর্কে সত্য কথা বলে তখন শুকরিয়া আদায় করবে, আর যখন মিথ্যা কথা বলবে তখন আরও অধিক বেশি শুকরিয়া আদায় করবে। কেননা, এতে নেক আমলে আরও বেশি নেকী সংযোজন করা হয় কিন্তু তোমার কিছুই করতে হয় না।

৩. হযরত ঈসা (আHappy এর কাছে ওহী এসেছিল, " হে ঈসা ! ভয় করতে থাক। দেখ আমি যেন তোমার হাতছাড়া হয়ে না যাই।"

৪. একবার তিনি শয়তানকে জিজ্ঞেস করলেন, দুনিয়ায় তোমার নিকট প্রিয়তম ব্যাক্তি কে ? শয়তান বলল কৃপন মুসলমান। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, ঘৃনিত ব্যাক্তি কে ? শয়তান বলল, পাপী দাতা।

৫. জেরুজালেমের এক গলি দিয়ে যাওয়ার সময় এক ব্যাক্তি ঈসা (আ.) কে অশ্লীল ভাষায় গালি দিতে শুরু করল। তিনি তখন সেখানে দাড়িয়েই লোকটির কল্যাণের জন্য দোয়া করলেন। একজন ভক্ত জিজ্ঞাসা করল, হুযুর, লোকটি আপনাকে গালি দিল আর আপনি তার জন্য দোয়া করলেন ? জবাবে ঈসা (আ.) বললেন, দেখ যার তহবিলে যা আছে সে তো তাই অপরকে দান করবে।

৬. মৃত্যুই যাদের অবধারিত বিধিলিপি সেই মানুষের পক্ষ্যে যবের রুটি, সুপেয় পানি এবং হাত পা লম্বা করে একটু শোয়ার জায়গা পাওয়াই তো পরম পাওয়া ।

৭. চোখ শরীরের প্রদীপ বিশেষ। চোখের দৃষ্টিকে পবিত্র করতে পারলে সমগ্র শরীরের পবিত্রতা অর্জন করা সহজ।

৮. সফর দুই ধরনের- পার্থিব ও পারত্রিক। উভয়ের জন্যই পাথেয় দরকার। পার্থিব সফরে পাথেয় সংগে রাখতে হয় পারিত্রিক সফরে তা যাত্রার পূর্বেই পাঠাতে হয়।

৯. জমিনের উপর সম্পদ জমা করো না। কেননা এখানে নানা উপদ্রব আছে, বিনষ্ট হবার ভয় আছে, পরিণামে সবকিছুই বিলীন হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। সম্পদ সঞ্চয় করার সর্বত্তোম স্থান হল উর্দ্ধজগত। যেখানে যত পাঠাবে তা বহুগুণে বর্ধিত হতে থাকবে।

১০. যে ব্যাক্তি ইলম (জ্ঞান) শিখল অথচ ইলম অনুপাতে আমল করল না, সে এমন স্ত্রীলোকের নয় যে গোপনে জেনা করল ও গর্ভবতী হয়ে গেল এবং পরে তার গর্ভের কথা লোকসমাজে প্রকাশ হয়ে পড়ল, তখন সে যেরুপ অপমানিত হবে, তদ্রুপ যে ব্যাক্তি নিজের ইলম অনুপাতে আমল করে না তাকে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন অপমানিত করবেন।

১১. দুনিয়া অন্বেষণকারী ব্যাক্তির অবস্থা সমুদ্রের পানি পান কারীর মত, সে যতই পান করবে তার তৃষ্ণা ততই বাড়তে থাকবে। এমনকি পানি পান করতে করতে সে মৃত্যুবরণ করবে কিন্তু সে পরিতৃপ্তি হবে না।

১২. নামাযে অধিক সময় দন্ডায়মান থাকা পুলসিরাতের দু:খ-কষ্ট লাঘবকারী আর সেজদায় বেশী পরিমাণ সময় দেয়া কবরের আজাব হতে পরিত্রান পাওয়ার পথ।

১৩. বৃক্ষ অনেক কিন্তু সবগুলো ফল দেয় না। ফল অনেক কিন্তু সবগুলো সমিষ্ট নয়। বিদ্যা অনেক কিন্তু সবগুলো উপকারী নয়।

১৪. অসত জ্ঞানীরা এমন যেমন নালার মুখে কোন পাথর রেখে দেয়া হয় । সে নিজেও পানি পান করে না এবং ফসলের ক্ষেতে প্রবাহিত হতেও দেয় না।

১৫. তোমার দানকে গোপন রাখ, মানুষকে দেখানোর জন্য দান করো না, তাহলে আল্লাহর কাছ থেকে কোন পুরস্কার পাবে না।

১৬. তোমরা ঐ ধরনের লোকের সাথে উঠা বসা কর যাদের চেহারা আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যাদের কথায় তোমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে এবং যাদের কাজ বেহেশত লাভের জন্য উৎসাহ জন্মায়।

১৭. তোমরা তোমাদের সবটুকু হৃদয় দিয়ে, সবটুকু প্রাণ দিয়ে ও সবটুকু মন দিয়ে আল্লাহকে ভালবাস, এটাই মুক্তির একমাত্র পথ।

হযরত ইব্রাহীম (আ.)

১. আমি যাবতীয় কাজ বিশ্ব-প্রতিপালকের উপর ন্যাস্ত করেছি।

২. জগতের সবাই আমার শত্রু, শুধু বিশ্ব প্রতিপালকই আমার বন্ধু।

৩. হযরত ইসমাইল (আ.) তার পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.) কে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর দোস্ত! আল্লাহ কিসে আপনাকে নবুওয়াত দান করেছেন ? হযরত ইব্রাহীম (আ.) জবাব দিলেন, তিনটি কাজের জন্য। প্রথম, আমি কখনো রুজী-রোজগারের চিন্তা করিনি যে, কাল কি খাব, দ্বিতীয়, মেহমান ছাড়া আমি কখনো খানা খাইনি। তৃতীয় হলো, যখন আমার ইহকাল ও পরকালের কোন কাজ এসে যায়, তখন আমি আগে পরকালের কাজ করে পরে ইহকালের কাজ করতাম।

৪. পবিত্র কাবা ঘরটির মেরামতের কাজ সমাধা করে যখন আল্লাহ তায়ালার নিকট শুকরিয়া আদায় করলেন, তখন আল্লাহ পাক জিব্রাইল (আ.) এর মাধ্যমে জানালেন, "হে ইব্রাহীম! আপনি বড় কষ্ট করে এ ঘরটি বানিয়েছেন। কিন্তু আমার নিকটে এটি একটি অনাবদি জাগয়াকে আবাদ করার চেয়ে বেশি কিছু নয়।" ইব্রাহীম (আ.) বললেন, " প্রভু, সেটা কেমন? " তখন ইরশাদ হল, ভূখা পিয়াসীজনকে খানাপিনা দান ও বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দান আমার কাছে এ ঘর নির্মানের সমান মর্যাদা রাখে যদিও তুমি এ ঘর তৈরী করতে প্রতি দফায় হাজার রাকাত নামায আদায় করেছ ।"



হযরত সোলায়মান (আ.) :


১. অহংকার মানুষের পতন ঘটায়; কিন্তু বিনয় মানুষের মাথায় সম্মানের মুকুট পরায়।

২. সৎলোক সাতবার বিপদে পড়লে আবার উঠে, কিন্তু দুষ্ট লোক বিপদে পড়লে একেবারেই নিপাত হয়।

৩. যে ব্যাক্তি সমস্ত জীবনে একবারও এখলাছের সাথে একমাত্র আল্লাহকে চেয়েছেন, তিনিই সৌভাগবান।

৪. তুমি যদি দরিদ্রের ফরিয়াদ না শোন, তবে তোমার ফরিয়াদ কারও কানে প্রবেশ করবে না।

৫. আল্লাহ তায়ালা ছয়টি জিনিসকে অত্যন্ত ঘৃনা কনের : ১. উদ্ধত দৃষ্টি ২. মিথ্যাবাদী জিহ্বা ৩. আত্যাচারের হাত ৪. যে অন্তর ষড়যন্ত্র পাকায় ৫. যে পা অন্যায় কাজে ছুটে যায় ৬. যে পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি করার কাজে ব্যস্ত থাকে।

৬. আল্লাহর তরফ থেকে যে শাসন হয় তা তুচ্ছ বলে বিবেচনা করো না। কেননা, আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন, তাকেই মাঝে মধ্যে সাবধান করে থাকেন।

৭. কথা বেশি বললে তার মধ্যে কিছু গুণাহ হওয়া আবশ্যম্ভাবী। তাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হল, যবানকে যথাসম্ভব সংযত করে রাখা।

৮. যারা সব সময় সমালোচনামুখর থাকে, বিপদ তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে। অন্তর যার কুচিন্তায় লিপ্ত, তার পক্ষে কল্যাণ লাভ সম্ভব নয়।

৯. জ্ঞানীগণ সাধারণত স্বল্পভাষী , স্নিগ্ধ সভাব এবং তীক্ষ্ণ ধীসম্পন্ন হয়ে থাকেন। বক্যালাপ না করা পর্যন্ত আহাম্মককেও জ্ঞানী বলে মনে হয়।

১০. সন্তানকে শাসন করার ব্যাপারে শৈথিল্য করো না। তোমার ছড়ির আঘাতে তার মৃত্যু হবে না । তবে সেই আঘাত তাকে জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন থেকে নিরাপদ করে দিবে।

১১. স্থান-কাল বিবেচনা করে যারা কথা বলতে জানে, তাদের প্রতিটি কথা রূপার থালায় সোনার আপেলের মত সুসজ্জিত থাকে।

১২. কুটিল স্বভাবের লোকেরা পথের কাটা বিশেষ । শান্তিপ্রিয় লোকদের পক্ষে তাদের সান্নিধ্য হতে দূরে থাকা বাঞ্চনীয়।

১৩. নির্বোধকে উপদেশ দিতে যেও না। তারা সেই উপদেশ গ্রহণ না করে তোমাকে বরং উপহাস করবে।

১৪. অন্যায়কারী তার দুষ্কর্মের রশিতে বাধা পড়বে এবং একদিন না একদিন তাকে কৃতকর্মের ফল ভোগ করতেই হবে।

১৫. প্রতিবেশীরা সাধারণত তোমার কাছ থেকে ভাল ব্যবহার আশা করে। এ অবস্থায় তুমি যদি তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আটঁতে থাক, তবে তার চেয়ে জঘন্য অপরাধ আর কিছুই হবে না ।

১৬. সততা ও ন্যায় বিচার আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করার চেয়েও বেশী মূল্যবান।

১৬. প্রজ্ঞার সর্বোচ্চ স্তর হলো অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হওয়া ।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাওফীক দিলে এটি একটি শতাধিক পর্বের সিরিজ হবে , যাতে ইসলামের নক্ষত্র শতাধিক সুফিয়ায় কেরামগণের সহস্রাধিক বানী চিরন্তনী থাকবে, যে বানীগুলোই প্রমাণ করবে সুফীবাদ ইসলাম বহির্ভূত নাকি সুফিবাদ ই হলো ইসলামের সার নির্যাস, ইনশাআল্লাহ।

বিষয়: বিবিধ

১৪৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File