আল্লাহ পাক কোথায় আছেন (আহলে হাদীস/সালাফী ভাইদের ভ্রান্তি নিরসন)

লিখেছেন লিখেছেন সঠিক ইসলাম ২০ আগস্ট, ২০১৩, ১২:৩২:৪৪ রাত

প্রথমেই বলে নিচ্ছি এখানে এমন একটি বিষয় নিয়ে কথা বলছি যে বিষয়টার ক্ষেত্রে দলিল খোদ কুরান ।আর বিষয়টার মীমাংসা খাইরুল কুরুণেই হয়ে গিয়েছে ।তাঁরা যে ব্যাখ্যা দিয়ে গিয়েছেন সে ব্যাখ্যাকে এড়িয়ে এখন শুধু কুরাণের আয়াত ঝাড়ার মানে হলো প্রকারান্তে এরকমটিই বলা যে ,ইমামদের আকীদা এক্ষেত্রে গলদ ছিল বা তাঁরা কুরান হাদীস বুজতেন না (নাউযুবিল্লাহ)।আর এব্যাখ্যার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাত যে দুটি কিতাবের উপর নির্ভর করেছেন তাহলো ইমাম আবু হানীফা রঃ কর্তৃক রচিত 'আল ফিকহুল আকবার' ও সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম সংকলনের পরের এক সতন্ত্র মুহাদ্দিস ইমাম তহাবী রঃ কর্তৃক রচিত 'আল আকাঈদ আত তাহাবীয়াহ' (তাই তিনি এবিষয়ে সহীহ হাদীস জানতেন না এরকমটি বলা মূর্খতা বৈ কিছুই নয়) ।তাই এখন একে অপরকে কুরানের আয়াত না দেখিয়ে আমাদের পূর্ববর্তীদের ব্যাখ্যার আলোকে এবিষয়ে আকীদা রাখলেই ইনশাআল্লাহ সঠিক পথ পেয়ে যাব ।তাই দেখি তাঁরা কি বলেছেন এবিষয়েঃ

"আহলুস সুন্নাত আল্লাহর সিফাতকে দুভাগে ভাগ করেছেনঃ

১।আল্লাহর যাতী বা সত্তাগত সিফাত (তাঁর বিদ্যমানতা,ক্ষমতা,ইল­ম,কালাম তথা কথা,শোনা,দেখা,ইচ্ছা)

২।তাঁর কর্মমূলক সিফাত (সৃষ্টি করা,রিযিক দান করা,সমাসীন হওয়া,অবতরণ করা ইত্যাদি)

কুরানে আল্লাহর যত সিফাতের কথা আছে সবএই দুভাগকে কেন্দ্র করেই ।আহলুস সুন্নাত তাঁর সব সিফাতকে দৃঢ়ভাবে স্বীকার করেন এবং দৃঢ়ভাবে একথাও বলেন তাঁর এসকল সিফাত মাখলুকের মতো কোনো ভাবেই নয় [সূরা শুরাঃ ১১]। যেমনঃ তিনি দেখেন তবে তাঁর দেখা আমাদের মতো নয় ।তাঁর হস্ত,চোখ,পা,চেহারা আছে তা তাঁর বিশেষণ তথা সিফাত হিসেবেই স্বীকার করেন আহলুস সুন্নাত এর স্বরূপ নির্ণয় ব্যতিরেকেই (তাঁর সত্তার প্রয়োজনগত কিছু হিসেবে চিন্তা করে নয়) [সাদঃ৭৫,মায়িদাঃ৬৪,কা­মারঃ১৪,ইখলাসঃ২]।তাঁর­ হাত দারা তার ক্ষমতাকে ব্যাখ্যা করা হবে না বরং তাঁর হাত তাঁর বিশেষণ কোনো স্বরূপ নির্ণয় ব্যতিরেকে ।এসব সিফাত কে অস্বীকার করে বাতিল করা মুতাযিলা ও কাদরিয়াদের রীতি।"-[দ্রঃ আল ফিকহুল আকবার,পৃঃ ২১-৩৭]

তেমনি আহলুস সুন্নাত বিশ্বাস ও স্বীকার করেন আল্লাহ সমাসীন আরশের উপর [ত্বহাঃ ৫] ।অর্থাত্ আহলুস সুন্নাত এটিকে তাঁর একটি বিশেষণ তথা সিফাত হিসেবেই স্বীকার করেন (তাঁর সত্তার প্রয়োজনগত কিছু হিসেবে নয়) ।আবার তাঁরা স্বীকার করেন তিনি সর্বত্রবিরাজমান (হাজির নাজির) ।এটিও তাঁর আরো একটি সিফাত মাত্র (সত্তাগত হিসেবে নয়) ।কারণ কুরানে বারংবার তাঁর এই সিফাত বা গুনের কথা বলা হয়েছে যে তিনি বান্দার সাথে আছেন যেখানেই থাক [বাকারাঃ ১৮৬]। এইসবগুলোকে তাঁর সিফাত বা গুণাবলী হিসাবেই ওহীর অনুসরণ করে বিশ্বাস করাটা জরুরী এবং ঈমানের অংশ [নিসাঃ ১২২]।

তাইতো ইমাম আবু হানীফা রহঃ তাঁর 'আল ওসীয়াত' কিতাবে বলেছেনঃ

"আমরা স্বীকার ও বিশ্বাস করি আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন ,কোনো প্রয়োজন ব্যতিরেকেই এবং কোনো স্হিরতার প্রয়োজন ব্যতিরেকেই।তিনিই আরশ ও অন্যসবকিছুর সংরক্ষক ।তিনি যদি আরশের মুখাপেক্ষী হতেন তবে তিনি এ বিশ্বকে পরিচালনা করতে পারতেন না ,তাঁর মাখলুকের মুখাপেক্ষী হয়ে যেতেন ।আর যদি আরশে স্হির হওয়ার প্রয়োজনীয়তাই তাঁর থেকে থাকে তবে আরশ সৃষ্টির পূর্বে তিনি কোথায় ছিলেন ?তাই তিনি এসকল বিষয় থেকে পবিত্র এবং অনেক উর্দ্ধে ।"

ইমাম মালিক রহঃ কে আল্লাহর আরশে সমাসীন হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ

"সমাসীন হওয়ার বিষয়টি পরিজ্ঞাত,এর স্বরূপ অজ্ঞাত,এবিষয়ে প্রশ্ন করা বিদআত এবং এবিষয়ে বিশ্বাস করা জরুরী ।"-[মোল্লা আলী কারী,শরহে ফিকহুল আকবর ,পৃঃ ৭০]

তাই সিফাত হিসেবেই আল্লাহর আরশে সমাসীন হওয়া,শেষ আকাশে অবতরন,সর্বত্রবিরাজমান,তাঁর হস্ত,পা,চোখ ইত্যাদির উপর বিশ্বাস করা এবং তা অবশ্যই মাখলুকের সদৃশ্য থেকে পুরো পবিত্র জ্ঞান করা ।এরূপ বিশ্বাস করা জরুরী কিন্তু এর স্বরূপ বিষয়ে প্রশ্ন করা বিদাত ।এটাই হলো ঈমান এবং এই মাসালায় সহীহ আকীদার একটি অংশ মাত্র ।

আহলে সুন্নাতের ইমামদের এব্যাখ্যাকে বুনিয়াদ রেখেই ইমাম তাহাবী রহঃ তাঁর রচিত বিখ্যাত আকীদার কিতাবটিতে ,যা একযুগে মক্কা মদীনা ও সমগ্র আরব বিশ্বসহ দারুল উলুম দেওবন্দেও সর্বপ্রথম দরস দেওয়া হয়,বলেনঃ

"আল্লাহ সীমা-পরিধি ,অঙ্গ-প্রতঙ্গ ও উপাদান-উপকরণের বহু উর্দ্ধে । যাবতীয় ঊদ্ভাবিত সৃষ্ট বস্তুর ন্যায় তাঁকে ষষ্ঠ দিক পরিবেষ্টন করতে পারে না ।আল্লাহর আরশ ও কুরসি সত্য ।প্রতিটি বস্তু তাঁর পরিবেষ্টনে রয়েছে এবং তিনি সবকিছুর উর্ধ্বে ।সৃষ্টিজগত তাঁকে আয়ত্ত করতেপারে না ।"-[ইমাম তহাবী,আল আকাঈদ আত তাহাবীয়াহ পৃঃ ১০-১৩]

আর এটাই হলো তাওহীদ ।এটা সেই মাসালার শেষ আংশ ।এটাই ছিল আহলুস সুন্নাতের মূলনীতি পূর্ণ আকীদার ক্ষেত্রে যেখানে সংমিশ্রন ঘটেছে ঈমানের সাথে পূর্ণ তাওহীদের। কারণ আরশ আল্লাহর সৃষ্ট মাখলুক এব্যপারে কারো দ্বিমত নেই ।তিনিই আরশের সংরক্ষক এতেও কারো দ্বিমত নেই ।কিন্তু এখনকার জাহেল সালাফীরা এই বিভ্রান্তি পড়ে আছে যে,আল্লাহ তাঁর বিদ্যমানতার জন্য তিনি আরশের মুখাপেক্ষী বা সীমাবদ্ধ [নাউযুবিল্লাহ ;সূরাঃ ইখলাসঃ ২] ।যা সুস্পষ্টই তাওহীদ পরিপন্হী আকীদা ।এরা (সিফাত হিসেবে নয় বরং) আল্লাহকে তাঁর অবস্হানের ও স্হিরতার প্রয়োজনেই তাঁকে আরশে সীমাবদ্ধ মনে করে তাঁকে স্হান কালের সীমাবদ্ধ করে ফেলে ! তাঁর জন্য দিক বা পক্ষ নির্দিষ্ট করে ফেলে !তাঁর জন্য দেহ সাবস্ত্য করে ফেলে যা সলফদের ব্যাখ্যার ও আকীদার সম্পূর্ণ বিপরীত এবং ভ্রান্ত মুজাসসিমা ফিরকার আকীদার সদৃশ !তাছাড়া এরা কুরানের মুহাকাম আয়াত [ইখলাসঃ ২,শুরাঃ ১১] রেখে মুতাশাবিহ আয়াতের অনুসরণ করে [আলে ইমরানঃ ৭,মিশকাত,পৃঃ ২৮] এসব বিষয়ে সলফও ইমামদের ব্যাখ্যা ও আকীদাকে পদদলিত করে কুরানের কিছু অংশে ঈমান আনা সত্তেও তাওহীদ অংশে মতবিরোধ করে স্পষ্টভাবেই শির্কে নিপতিত হয় [ইউসুফঃ ১০৬]।

তাই যাঁরা এই দু অংশকেই হুবহু সলফদের মতো অন্তরে ধারণ করবে তাঁদের আকীদাই আহলুস সুন্নাতের আকীদা ।আর যারা ঈমানের অংশ মানবে আর কুরানের তাওহীদের অংশ মানবে না তারা বিভ্রান্ত আকীদার।

রাবিতাতুল আলামিল ইসলামীর (সৌদি আরব,মক্কা মুকাররমা) সদস্য;নোবেল পুরষ্কার তুল্য মূল্যবান 'বাদশা ফয়সাল' পুরষ্কারে পুরষ্কৃত;ইউরোপের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ 'অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি' তে ইসলাম সম্পর্কিত সর্বপ্রথম বিভাগ 'অক্সফোর্ড সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজ' বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা; আরব বিশ্বে সাড়াজাগানো বই Islam & the World এর স্বনামধন্য লেখক এবং সারা বিশ্বের কাছে সমাদৃত

আলেম ও দাঈ সাইয়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী রহঃ তাঁর 'দস্তুর ই হায়াত' কিতাবে আহলুস সুন্নাতের আকীদা বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহর সিফাত বিষয়ক আকীদার বিষয়ে বলেনঃ "আল্লাহর সিফাত ও কার্যাবলী সম্পর্কে কোনরূপ রূপক ব্যাখ্যা পরিবর্তন-পরিবর্ধন ব্যতিরেকেই তাঁরা (আহলুস সুন্নাত) ঠিক তেমনিভাবে স্বীকার করেন যেমন সয়ং আল্লাহ সেগুলো সম্পর্কে বলেছেন।...শাহ ওয়ালীউল্লাহ মোহাদ্দেসে দেহলবী রঃ ও তাঁর সমদর্শী ও সমমর্যাদাসম্পন্ন আলিমগনই কুরান ও হাদীসের শাব্দিক ও রূপক ব্যাখ্যার মাঝামাঝি ন্যায়

পন্হা অবলম্বনকারী।ইসলামী আকীদা শাস্ত্র বিষয়ে তাঁর রচিত 'আল আকীদাতুল হাসানা' গ্রন্হটি মর্ম ও বক্তব্যের গভীরতা ,ভাষার ব্যঞ্জনা ও প্রাঞ্জলতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।...তাই আমরা এই পরিচ্ছেদে উক্ত কিতাবটিকেই বুনিয়াদ হিসেবে নিয়েছি।সমুহান পূর্বসূরীদের অপরাপর নির্ভরযোগ্য গ্রন্হ যেমন 'আকীদাতুত তহাবী' ও অন্যান্য নির্ভরযোগ্য আকীদা গ্রন্হেরও সাহায্য নেওয়া হয়েছে।ইসলামের বুনিয়াদী আকীদাসমূহঃ

...আল্লাহ তাআলা অন্য কোন সত্তায় প্রবিষ্ঠ ও একীভূত হওয়া থেকে পবিত্র।তিনি তাঁর সত্তা ও গুনাবলী সব কিছুতেই অনিত্যতা ও আদিত্ব থেকে মুক্ত। তিনি এমন সত্তা যা স্বঅস্তিত্বে বিদ্যমান বটে কিন্তু কোনো বিশেষ মহল বা স্হানের সাথে যুক্ত নন।তেমনিভাবে তাঁর স্বীয় অস্তিত্বের জন্য অপর একটি বস্তুর মুখাপেক্ষীও নন।দেহবিশিষ্টও নন তিনি,কোন দিক বা স্হানের গন্ডিতে তিনি আবদ্ধও নন।তিনি আছেন আরশের ওপর।কিয়ামতের পর তাঁর দীদার হবে মুমিনদের।তিনি যা চান তাই হয়,যা চান না তা হয় না।তিনি অনপেক্ষ,কোন কিছুর মুখাপেক্ষী নন।"-[শাহ সাহেব রঃ এর 'আল আকীদাতুল হাসানা' থেকে 'দস্তুর ই হায়াত',পৃঃ ৭৩-৭৪]

শাহ ওয়ালীউল্লাহ রহঃ এর তাঁর বিখ্যাত 'হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা'

কিতাবে তাওহীদ বিষয়ে লেখেনঃ "তাওহীদ বা আল্লাহকে এক

বলে বিশ্বাস করার দরজা হলো চারটিঃ

ক)কেবল আল্লাহকে ওয়াজিবুল ওয়াজুদ বা অবশ্যম্ভাবী অস্তিত্বশীল সত্তা হিসেবে বিশ্বাস করা । তিনি ব্যতিত ওয়াজিবুল ওয়াজুদ বলতে আর কেউ (এবং কোন কিছু- Poster) হতে পারে না ।

খ)আল্লাহকে আরশ,আসমান-যমীন ,স্ব অস্তিত্বে বিদ্যমান সকল বস্তুর (দিক,পক্ষ,স্হান,কাল-Poster) একমাত্র সৃষ্টিকর্তা হিসাবে বিশ্বাস করা ।

গ)আসমান যমীন ও যা কিছু এর মাঝে আছে সব কিছুর শৃঙ্খলা বিধান,এগুলোর পৃথকীকরণ ও সকল ব্যবস্হাপনা একমাত্র আল্লাহর হাতে বলে বিশ্বাস করা ।

ঘ)আল্লাহ ছাড়া আর কিছুকে ইবাদাতের যোগ্য বলে মনে না করা ।"- [হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা,১/৫৯-৬০]

'হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা' থেকে শাহ সাহেব রঃ এর 'তাওহীদে রাবুবিয়াত' এর অংশটুকু কোট করার উদ্দেশ্য হলো 'খ' অংশটিকে তুলে ধরা।

আহলে সুন্নাতে সকলেই আল্লাহ সম্পর্কে সবাই এক কথায় লেখেনঃ আল্লাহ সমাসীন আরশের উপর ।এর পর যদি কেউ সমাসীনের সরূপ নিয়ে প্রশ্ন করে বসে।তাঁরা উত্তরে বলেনঃ লা আদরি বা আমি জানি না।তবে এরূপ প্রশ্ন করা বিদআত।

শাহ সাহেবসহ আহলুস সুন্নাতের ইমাম,মুহাদ্দিসীনে কিরাম সহ

সকল সলফে সলেহীন আল্লাহর আরশে সমাসীন হওয়ার সিফাতকে বিশ্বাস করেন তাতে তাঁর অবস্হান ও স্হিরতার প্রয়োজন ব্যতিরেকেই।সেই সাথে আহলুস সুন্নাতের সকলেই আল্লাহকে স্হান কাল ,দিক পক্ষ, সীমা পরিধি,উপাদান উপকরণ এবং তাঁর জন্য দেহ সাবস্ত্য না করে এগুলো থেকে তাঁকে পবিত্র জ্ঞান করেন।তাঁরা কুরানে মুতাশাবিহ/ দ্ব্যর্থবোধক আয়াতে বর্ণিত আল্লাহর সকল সিফাত (সমাসীন

হওয়া,বান্দার অধিক নিকটবর্তী থাকা,অবতরন করা,হাত,পা,চোখ,চেহারা,হাসি) দৃঢ়ভাবে স্বীকার করে নিয়েই

সে বিষয়ে সীমিত জ্ঞানে যুক্তি দিয়ে রহস্য উদঘাটন করতে না যেয়ে মুহাকামাত/­ দ্ব্যর্থহীন আয়াতকে ধারণ করে চুড়ান্ত পর্যায়ের তাওহীদের দিকে ধাবিত হয়েছেন এবং সেই পথ দেখিয়েও গিয়েছেন।উপরে বর্ণিত শাহ সাহেবের বক্তব্য এর জলন্ত প্রমাণ,যাতে আছে সত্য অন্বষণকারীদের জন্য দিক নির্দেশনা।

কিন্তু শাহ সাহেব সহ আহলে সুন্নাতের সকল ইমাম ও সলফে সলেহীনদের সুস্পষ্ট বিশ্বাসের বিপরীতে বর্তমানের নব প্রডিউজড সো কলড সহীহ আকীদা ও তাওহীদ তাওহীদ বলে চিল্লাপাল্লা করা কথিত আহলে হাদীসগোষ্ঠীগুলো তাওহীদ বাদ

দিয়ে শয়তানি যুক্তি দিয়ে 'অবস্হান বা স্হিরতার প্রয়োজনেই' আল্লাহর সমাসীন হওয়ার আকীদা রেখে তাঁকে তাঁর সৃষ্ট আরশের (দ্রঃ 'খ') মুখাপেক্ষী সাবস্ত্য করে,আল্লাহর জন্য দিক, পক্ষ,স্হান কাল সাবস্ত্য করে তাঁকে এসবের মুখাপেক্ষী মনে করে এবং তাঁর জন্য দেহ সাবস্হ্য করার আকীদা রেখে সুস্পষ্টভাবেই চুড়ান্ত পর্যায়ের শির্কে নিপতিত হয় ।[ইখলাসঃ ২,শুরাঃ ১১]

"তারা অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে,কিন্তু তাঁহার সাথে শির্ক করে"-[ইউসুফঃ১০৬]

"তিনিই তোমাদের প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যার কতক আয়াত সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন,এগুলি কিতাবের মূল

অংশ;আর অন্যগুলি দ্ব্যর্থবোধক একাধিক অর্থের সম্ভাবনাময়।

যাদের অন্তরে সত্য লঙ্গন প্রবণতা আছে শুধু তারাই ফিতনা এবং ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে দ্ব্যর্থবোধক বিষয়গুলির অনুসরণ করে"-[আলে ইমরানঃ ৭]

আয়েশা রাঃ বলেনঃ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই

আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন (আলে ইমরানঃ৭) এবং ইরশাদ

করলেনঃ যখন তোমরা ঐসব লোকদের দেখবে যারা কুরানের মুহকামাত আয়াত ছেড়ে মুতাশাবিহ আয়াতের অনুসন্ধান করে তখন তোমরা এদের থেকে দূরে থাকবে"-[মিশকাত,পৃঃ ২৮]

কতিপয় তাওহীদ :

১।আল্লাহর সত্তা আছে তবে তা অন্য সৃষ্ট বস্তুর মতো নয় ।তিনি দেহহীন ।তার কোনো সীমা নেই ,তিনি অসীম ।তিনি সীমাহীন ।-ফিকহুল আকবর ,পৃঃ ৩৪। ২।আরশে আজীম আল্লাহর সৃষ্ট মাখলুক এবং আল্লাহই আরশে আজীমের সংরক্ষক । [শরহে ফিকহুল আকবর,পৃঃ ৭০; হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ১/৫৯-৬০] ৩।আল্লাহ তাআলা আকলে কুলোয় না এমন সবকিছুরও সৃষ্টিকর্তা দিক, পক্ষ ,স্হান ,কাল ,সময় ইত্যাদি সবকিছু সবকিছু ।বুজে আসুক বা না আসুক ।এটাই তাওহীদে রবুবিয়্যাত । [হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ১/৫৯-৬০] ৪।আল্লাহ তাআলা তাঁর অবস্হান বা স্হিরতার জন্য তাঁর সৃষ্ট কোনো কিছুর মুখাপেক্ষী নন ।কেউ যদি তা মনে করে তবে তা সুস্পষ্ট কুফুরী ও শির্ক ।[সূরাঃ ইখলাসঃ ২] ৫।আরশকে আল্লাহর সত্তার অংশ মনে করা সুস্পষ্ট কুফুরী । বরং আল্লাহ আরশ আসমান জমিনের সৃষ্টিকর্তা এবং এসব তাঁর মাখলুক এবং তাঁর সত্তা ও তাঁর মাখলুক সম্পুর্ণ পৃথক । ৬।কেবলমাত্র আল্লাহর সত্তাই অবিনশ্বর আর সবকিছুই নশ্বর । সূরা রহমানঃ ২৬-২৭ ।একমাত্র আল্লাহর সত্তা ব্যতিত অন্যকিছুকে অবিনশ্বর মনে করা সুস্পষ্ট কুফুরী ও শির্ক । ৭।আল্লাহর গুনাবলীও অনন্ত । এগুলোর কোনোরূপ পরিবর্তন নেই এবং হয় না হবেও না ।পরিবর্তন হয় মনে করা শির্ক ও কুফুরী । ৮।আল্লাহর সত্তা তাঁর সৃষ্ট অন্য কোনো কিছুর ভিতরে প্রবিষ্ট হয় না এবং তাঁর সত্তার মাঝেও অন্য কিছু প্রবিষ্ট হয় না ।অর্থাত্ তাঁর সত্তা তাঁর সৃষ্ট অন্য যেকোনো বস্তু বা সত্তার মধ্যে একীভুত হওয়া থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র । কোনো কিছু তাঁকে আয়ত্ব করতে পারে না বরং সবকিছুই তাঁর আয়ত্তাধীন এবং কোনো কিছুই তাঁকে পরিবেষ্টন করতে পারে না । তিনি সকল সীমাবদ্ধতা ,অপর বস্তুর আয়ত্তাধীনতা ও পরিবেষ্টন থেকে মুক্ত ও পবিত্র । ["আল্লাহ সীমা-পরিধি ,অঙ্গ-প্রতঙ্গ ও উপাদান-উপকরণের বহু উর্দ্ধে । যাবতীয় ঊদ্ভাবিত সৃষ্ট বস্তুর ন্যায় তাঁকে ষষ্ঠ দিক পরিবেষ্টন করতে পারে না ।আল্লাহর আরশ ও কুরসি সত্য ।প্রতিটি বস্তু তাঁর পরিবেষ্টনে রয়েছে এবং তিনি সবক উর্ধ্বে ।সৃষ্টিজগত তাঁকে আয়ত্ত করতেপারে না ।"-[ইমাম তহাবী,আল আকাঈদ আত তাহাবীয়াহ পৃঃ ১০-১৩] উপরের তাওহীদের আলোকে স্বরূপ ও ব্যাখ্যা ব্যতিত আরশে সমাসীন,বান্দার নিকটবর্তী থাকা বা সর্বত্রবিরাজমান হওয়ার সিফাতের বিষয়ে ঈমান রাখতে হবে । কিন্তু ঈমান রাখার পর উভয় সিফাতের ক্ষেত্রে চিন্তাকে তাওহীদপরিপন্হী করাই শির্কে নিপতিত হওয়ার কারণ হবে ।অর্থাত্ এগুলোর স্বরূপ ও ব্যাখ্যা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে ঈমান রাখা হবে । বলা হবে এই বিষয়ের স্বরূপ আল্লাহ ই ভাল জানেন তবে আমরা ঈমান রাখি ।এর পর চিন্তাকে আর বাড়িয়ে দেওয়া হবে না ।

বিষয়: বিবিধ

৩৬৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File