শাহবাহ থেকে সাতক্ষীরা – বিভাজিত জনপদ
লিখেছেন লিখেছেন গেঁও বাংলাদেশী ২৪ মার্চ, ২০১৩, ১০:৪৩:০০ রাত
শাহবাগের আন্দোলনের কয়েকটি দুর্বল দিক আছে আর যার কারনে এই আন্দোলন কখনোই ব্যাপক গনজোয়ার সৃষ্টি করতে সমর্থ হবে না বলে আমার মনে হয়েছিল। ইতিপূর্বে বাংলাদেশ সৃষ্টির আগে এবং পরে উল্লেখযোগ্য যে কয়েকটি গণজাগরণ সার্থক হয়েছিল তার সাথে এই আন্দোলনের পার্থক্য পরিষ্কার। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তুর, নব্বই আর একাত্তুরের জাগরণে লক্ষ্য ছিল পরিষ্কার। সেখানে যদিও আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল শহর কিন্তু সেই আন্দোলন ক্রমাগত প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পরেছিল। শাহবাগের আন্দোলন শহর থেকে শুরু হলেও তা সেখানেই বন্দী হয়ে গেছে। এখন তা সেই বন্দী অবস্থা থেকে বেরুতে পারবে কিনা সে ব্যপারে সন্দেহ করা অবান্তর নয়। গণহত্যা, নির্যাতন সহ অন্যান্য ঘৃণ্য অপরাধের বিচারের দাবী নিঃসন্দেহে প্রগতির পক্ষের দাবী। কিন্তু সেই দাবীর পাশাপাশি ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার দাবীটিও প্রগতির পক্ষেরই দাবী। শাহবাগ, এই দুইটি ধারাকে এক সাথে ধারণ করতে পারেনি। তারা ফাঁসির দাবিতে অনড়, কিন্তু ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার কথা পরিষ্কার করেনি। সত্যকে দ্বিখণ্ডিত করে কেবল একটিকে ধারণ করাও প্রগতিশীলতার পথের অন্তরায়। দ্বিতীয়ত, শাহবাগ একটি দাবী থেকে পরবর্তীতে আরও কয়েকটি দাবীকে ধারণ করেছে। যেগুলো একদিকে যেমন অবাস্তব, তেমনি গণতন্ত্রের ধ্যান-ধারণার বিপরীতে। মূল দাবীর বাইরে অগণতান্ত্রিক দাবী তাদের উৎস এবং উদ্দেশ্যকে প্রশ্নের মুখে দাড় করিয়েছে। আর তাই সাহাবাগের সংগঠকদের এখন গণসংযোগে মনযোগী হতে হচ্ছে। এমনকি ঢাকার বাইরে সেই গণসংযোগ করতেও তাদের প্রতিরধেরও সন্মুখিন হতে হচ্ছে। শাহবাগ আন্দোলনের একটি সত্যকে মানুষ সহজেই গ্রহণ করেছিলো তা হোল বিচারের দাবী। কিন্তু কোন আদর্শকে তারা গ্রহণ করবে আর কোনটিকে বর্জন করবে, কোন দল রাজনীতিতে থাকবে অথবা নির্বাসিত হবে, দেশের কোন প্রতিষ্ঠানকে তারা আস্থায় আনবে কি আনবেনা, ধর্ম বিশ্বাসের পরিমাপ কি হবে, সেই সব সিদ্ধান্ত গ্রহনের দায়িত্ব যে প্রতিটি মানুষের ব্যাক্তিগত গণতান্ত্রিক ভাবনা এবং চর্চার ভেতরে পরে এই সচেতনতা বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই তাদের ভেতরে লালন করে। প্রগতিশীলতা কিংবা প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞাও স্থান-কাল-পাত্রে অভিন্ন নয়। বাস্তবতা হোল এই যে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই মনে করে ইসলাম প্রগতির পক্ষের সর্ব উৎকৃষ্ট পথ। তারা তাদের ধর্মীও অনুভূতির এই জায়গাটিকে রাজনীতির কলুষতা থেকে দূরে রাখতে চায়। যার প্রমান হলো বাংলাদেশে বড় দুইটি দলের সীমাহীন ব্যর্থতা আর দুর্নীতির পরও জনসমর্থনের দিক দিয়ে জামায়েতের দুর্বল রাজনৈতিক অবস্থান।ব্যাপক সংখ্যক মানুষ কখনই এই দল দুইটির বিকল্প হিসেবে জামায়াতকে ভাবেনি। তাই বলে তারা হিংসার পথকে বেছে নিয়ে জামায়াতকে নির্মূল করার পথকে সমর্থন করে না। অন্যদিকে যে সমস্ত বামপন্থি দল নিজেদের প্রগতির পক্ষের বলে প্রকাশ করে পুলকিত হয় সেই সমস্ত দলের কর্মকাণ্ডও কখনই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সহানুভূতি পায় নাই। বামপন্থী দলগুলো এবং জামায়াত কেউই যে তাদের সেই ব্যাক্তিগত ধর্মীয় অনুভূতির জায়গাটিকে সুরক্ষা করবে সেই বিশ্বাস হয়ত তারা আনতে পারেনি। সাহাবাগকেও তারা সেই আস্থায় আনতে পারে নাই। একথা সত্য যে জনসমর্থনের দিক দিয়ে বড় দুটি দলের চেয়ে জামাত পিছিয়ে থাকলেও সাংগঠনিক দিক দিয়ে জামাত অনেক শক্তিশালী। কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী এবং সরকারী দলীয় তথাকথিত তাত্ত্বিক নেতারা সুর তুলেছে যে জামাতের কোন শক্ত আবস্থান নেই। তাদেরকে নির্মূল করার এ্টাই সময়। সেই ধারনা ভুল। স্বাধীনতার পরে গত চল্লিশ বছরে জামায়াত যেখানে সাংগঠনিক কাজে ব্যাপক ভাবে যুক্ত ছিল সেখানে তথাকথিত গণতান্ত্রিক বড় দলগুলো দুর্নীতি, বিরোধী দলের দমন এবং ক্ষমতা দখলে মোহ গ্রস্থ থাকায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে কমই সময় দিয়েছে। এমনকি তারা তাদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল গুলোও সময় মত করতে পারেনি। তাছাড়া প্রতিটি পর্যায়ে দলের ভেতরেও বিভক্তিও এই দলগুলোতে জামাতের চেয়ে অনেক বেশী। দুর্বল, অনিয়ন্ত্রিত, অসংগঠিত, অদীক্ষিত আর ক্ষমতা কেন্দ্রীক মানসিকতা সম্পন্ন কর্মী বাহিনী নিয়ে জামাত নির্মূলের অভিযানের ডাক দেয়া মূর্খতা। জামাতকে মোকাবেলা করতে হলে তা করতে হবে গণতান্ত্রিক উপায়ে। আগে নিজেদের ঘরকে সংগঠিত করে। মাঠ পর্যায়ের মানুষের ধ্যান-ধারণার সাথে সম্পৃক্ত হীন বুদ্ধিজীবী আর শহরকেন্দ্রিক যুব সমাজের বাইরের যে বাংলাদেশ তাকে জানতে এবং বুঝতে হবে। অতীতের সবগুলো সার্থক গণ আন্দোলনে তারুণ্যের আবেগের সাথে গণ-মানুষের চাওয়া-পাওয়ার, চিন্তা-ভাবনার শুদ্ধটা আর নেতৃত্বের অভিজ্ঞতার সমন্বয় ছিল।
বিষয়: বিবিধ
১১২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন