আরব বিশ্বের ঘটনাপ্রবাহ ও একজন আরব বুদ্ধিজীবীর পর্যবেক্ষণ
লিখেছেন লিখেছেন গেঁও বাংলাদেশী ২৭ এপ্রিল, ২০১৫, ০৯:৩৫:৪৩ রাত
আধুনিক মুসলিম বিশ্বের এক জন প্রখ্যাত ইসলামী স্কলার ড: তারেক সুয়েইদান। ফেইস বুক ও টুইটার মিলিয়ে ৯ মিলিয়নের ঊর্ধ্বে তাঁর অনুসারী। গত বছর অক্টোবর ১৮ , ২০১৪ তারিখে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে এক সেমিনারে মুসলিম বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির উপর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বক্তৃতার করেন। বক্তৃতার বিষয়ের শিরোনাম ছিল ইসলাম, গণতন্ত্র এবং আইসিস (Islam, Democracy & ISIS) । তার সুদীর্ঘ আলোচনায় যে সব বিষয়ের আলোকপাত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ছিল আরব বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি এবং আরব বসন্তের সেই গণজাগরণের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তির পর্যালোচনা, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, ইসলামী সভ্যতার ইতিহাস ও পুনর্জাগরণের সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক।
ইসলাম ও মুসলিম বিশ্ব নিয়ে যারা আগ্রহী ও গম্ভীরভাবে চিন্তাভাবনা করেন তাঁদের জন্য পুরা ভাষণটি অবশ্যই শুনা খুবই দরকার। আর যারা দৌড়ের উপর আছেন তাদের জন্য কিছু পয়েন্ট তুলে ধরলাম। তবে বিস্তারিত জানতে হলে পুরা বক্তব্য শুনতে হবে সময়ের অভাবে সব পয়েন্ট আমার পক্ষে উল্লেখ করা সম্ভব হয় নাই ।
১) একটি জন গুষ্টি যখন কোন এক অত্যাচারী সমাজ ব্যবস্থার দাসত্বে বা ঔপনিবেশিক শাসনে দীর্ঘদিন নিপীড়িত থাকে তখন স্বভাবতই তাদের মাঝেও শাসক শ্রেণীর প্রতিষ্ঠিত সংস্কৃতি ও জীবন দর্শন গড়ে উঠে। ফলে কলুষিত সমাজের সকল কুপ্রথা ও আচার আচরণে তারাও অভ্যস্ত হয়ে অনেকটা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বিষয়টি ইতিহাসের সাথে সংযোগ করলে দেখা যায় মুসা (আ যখন ফেরআউনের দাসত্ব থেকে মুক্তি করতে বনী ইসরাইলদেরকে নিয়ে প্যলেষ্টাইন অভিমুখে রওয়ানা হন তখন পথিমধ্যে মহান আল্লাহর প্রদত্ত একাধিক অলৌকিক ঘটনা চোখের সামনে পর্যবেক্ষণ করা স্বত্বেও বনী ইসরাইলরা নবী মুসা (আ এর প্রদত্ত আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে তথা আল্লাহকে ভুলে তাদের পুরানা অভ্যাস মূর্তি পূজায়, পৌত্তলিকতায় বার বার ফিরে যেত যার বর্ণনা আল্লাহ পাক কোরআনে দিয়েছেন। তাই যে কোন জন গুষ্টিতে কোন আদর্শের বিপ্লব সফল করতে হলে সে সমাজে মাঝে পরিস্রাবণ দরকার হয় তথা ফিল্টারিং প্রয়োজন এবং তা তখনই সম্ভব হয় যখন কোন আন্দোলনে বাধা বিপত্তি বা সাময়িক বিপর্যয় আসে। তখন মুনাফিকদেরকে চিনতে সহজ হয়। কেননা সুখের সময় সবাইকে পাওয়া যায় কিন্তু দু:খের সময় কেবল মাত্র নিবেদিত প্রাণ ও সাহসী লোকেরাই অবিচল থাকতে পারে। আর তারাই পারে সফলতার বিজয় ছিনিয়ে আনতে। ইতিহাস তার প্রমাণ। তবে এ জন্য সময়ের প্রয়োজন।
২) মুসলিম বিশ্বের নতুন প্রজন্ম যারা ঔপনিবেশিক প্রভাব বা সে মানসিকতার বাহিরে বড় হয়েছে তাদের পক্ষেই সম্ভব হয়েছে আরব বসন্তের গণজাগরণ শুরু করা। এ বিপ্লব যুব সমাজের সম্পূর্ণ আভ্যন্তরীণ প্রচেষ্টায় শুরু হয়েছে। এ আন্দোলনের শুরুতে বিদেশী কোন মহলের হাত ছিল বলা ভুল হবে। এ গণজাগরণ অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল। তবে ডিসেম্বর ২০১০ থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় যে গণ বিদ্রোহ ও বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। আসলে আরব বসন্তের গণ বিপ্লবের জন্য আরব বিশ্বের স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার মধ্যে সরকারি দুর্নীতি, স্বৈরতন্ত্র, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বেকারত্ব এবং চরম দারিদ্র্যের অভিযোগের পাশাপাশি বিশাল যুব সমাজের অংশগ্রহণও অনুঘটক রূপে কাজ করেছে । যার সহায়ক ছিল ফেইস বুক এবং টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়া । মাত্র ১৭ দিনে পতন হয় মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের ৩০ বছরের প্রতাপশালী শাসন। আরব বসন্তের গণজাগরণ মুসলিম দেশগুলার স্বৈরাচারী শাসকদের সিংহাসনে কম্পন দেখা দেয়।
ড: তারেকের মতে আরব বসন্তের বিপ্লবকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, এক) পরিপূর্ণ বিপ্লব ( Full revolution), দুই) অর্ধেক বিপ্লব (Half revolution), তিন) এক চতুর্থাংশ বা সিকি বিপ্লব (Quarter revolution)
তিনি বলেন, "লিবিয়ার বিপ্লবকে বলা যায় পরিপূর্ণ বিপ্লব কেননা সেখানে বিপ্লবের পরে এমন কোন প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রাখা হয়নি যা গাদ্দাফির অনুসারীদের দখলে বা তার গড়া লোকদের কবলে। ফলে লিবিয়ার সকল পাবলিক প্রতিষ্ঠান চলে আসে বিপ্লবীদের অধীনে। অবশ্য সে জন্য এক লাখের বেশী মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং এখনও সংগ্রাম চলছে প্রতিবিপ্লবীদের সঙ্গে । তবে প্রতিবিপ্লবীদের জনসমর্থন নাই এবং তারা সেখানে শক্তিশালী নয়। যদিও বিদেশী কিছু মহল বিশেষ করে তেল সমৃদ্ধ গালফ রাষ্ট্রের (Gulf States) অর্থায়নে চেষ্টা করা হচ্ছে বিমান হামলা চালিয়ে বিপ্লবকে ব্যর্থ করতে।
লিবিয়ার তুলনায় মিশরের বিপ্লব ছিল অর্ধেক বিপ্লব (Half revolution) কেননা সেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে প্রতিবিপ্লবী শক্তির অস্তিত্ব ছিল অটুট। সেনাবাহিনীর পুরা প্রতিষ্ঠান সহ প্রশাসন যন্ত্র হচ্ছে মোবারক আমলের কায়েমি স্বার্থ-বাদীদের আস্তানা। তাই গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসীকে সরিয়ে শীঘ্রই সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হয়েছে। বৃহত্তর জনতা প্রেসিডেন্ট মুরসির পক্ষে থাকলেও শক্তি দিয়ে প্রতিবিপ্লবীরা আপাতত ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। তবে মিশরের বর্তমান ক্ষমতাসীনরা খুব শান্তিতে নাই। পুরা মিশর এখনও অস্থিরতা ও অশান্তিতে ডুবে আছে। প্রতি নিয়ত বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ, মিছিল আন্দোলন লেগেই আছে যদিও মিডিয়াতে তা প্রকাশ করতে দেয়া হচ্ছে না। মিশরের অর্থনৈতিক অবস্থাও অত্যন্ত খারাপের দিকে দাবিত হচ্ছে।
মিশরের ব্রাদারহুডের ভুল
ড: তারেকের মতে অর্ধেক বিপ্লবের সুযোগ নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া মিশরের ব্রাদারহুডের ভুল হয়েছে। তিনি বলেন প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পতনের পর যদিও তিনি মিশরের ব্রাদারহুড নেতৃবৃন্দকে পরামর্শ দিয়েছিলেন সরাসরি ক্ষমতায় না যাওয়ার কৌশল অবলম্বন করতে কিন্তু তাঁরা তা না শুনে ক্ষমতায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তী ইতিহাস অনেকেরই জানা। এদিকে মিশরের সামরিক শক্তির ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ করায় ড: তারেকের এখন সৌদি আরবে প্রবেশ নিষেধ! এমনকি একজন মুসলিম হিসাবে হজ, ওমরা করতে যেতেও ভিসা দেয়া নিষেধ।
ইয়েমেনের বিপ্লব
ড: তারেকের ইয়েমেনের বিপ্লবকে এক চতুর্থাংশ বা সিকি বিপ্লব বলেন কেননা সেখানে প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ সালেহকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলেও তার বিশাল অর্থ ভাণ্ডার নিয়ে মুক্ত ছেড়ে দেয়া হয়। জানা যায় প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ সালেহের টাকার পরিমাণ কয়েক বিলিয়ন ডলার। এত টাকার মালিক হয়ে তার পক্ষে ইয়েমেনের রাজনীতিতে আবার ফিরে আসার চেষ্টা বা ষড়যন্ত্র করাই স্বাভাবিক। যার কৌশল হিসাবে হুতিকে দিয়ে বিদ্রোহ করার হঠকারী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত করা হয়। হুতি বিদ্রোহিরা শিয়া এবং ইরানও তাদেরকে মদদ দিচ্ছে। হুতিরা ইরানের পক্ষের শক্তি হওয়ায় সৌদি আরবের জন্য দেখা দেয় নিরাপত্তার হুমকি। সে জন্য ইদানীং সৌদি আরব ইয়েমেনের উপর বিমান হামলা চালিয়ে হুতির সামরিক আস্তানা ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।
সিরিয়ার অবস্থা
ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট বাশার সরকারের বিরোদ্ধে রাজনৈতিক সংস্কারের দাবী নিয়ে সিরিয়ার গণআন্দোলন মিশরের মত শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও প্রেসিডেন্ট বাশারের নির্মম অত্যাচারে সে আন্দোন সশস্ত্র বিদ্রোহে রূপ নিতি বাধ্য হয়। এবং মাত্র দুই বছরের মধ্যে বিদ্রোহীদের দখলে পুরা সিরিয়ার আসার পর দামেস্কের দিকে যখন বিদ্রোহিরা অগ্রসর হতে শুরু করে এবং প্রেসিডেন্ট বাশারের সরকারে পতন যখন প্রায় অত্যাসন্ন ঠিক সে সময় হঠাৎ ইরান প্রায় ৪০ হাজারের ঊর্ধ্বে সৈন্য পাঠিয়ে প্রেসিডেন্ট বাশারের স্বার্থ রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের সাথে তখন যোগ দেয় লেবাননের হিজবুল্লাহ মিলিশিয়ারাও ফলে অসংখ্য সুন্নি বিদ্রোহিরা প্রাণ হারায় এবং প্রেসিডেন্ট বাশারের সরকার টিকে থাকতে সক্ষম হয়। আজ পাঁচ বছর ধরে যুদ্ধে প্রায় লাখো লাখো মানুষ প্রাণ হারায়। মিলিয়নের ঊর্ধ্বে মানুষ গৃহহীন হয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র সমূহে মানবত্বর জীবন যাপন করছে। প্রেসিডেন্ট বাশার নিজে আলাওয়ী ধর্মে বিশ্বাসী। যদিও আলাওয়ীরা শিয়াদের থেকে বিচ্যুত তথাকথিত এক ধর্মীয় কাল্ট যাদেরকে ধর্মীয়ভাবে পথ ভ্রষ্ট বলে সুন্নি ও শিয়া উলেমাদের উভয়ই শুরু থেকে তাদেরকে অমুসলিম বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু তা স্বত্বেও আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতার রাজনীতি ও সিরিয়ার বিদ্রোহিরা সুন্নি হওয়ায় কারণে ইরান বাশারের মত একজন চরম স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষ নেয়! এদিকে ইরাকেও ইরানিরা শিয়া সমর্থিত সরকারের পক্ষে থেকে ইরাকের সুন্নিদের প্রতি বৈষম্য ও অত্যাচার চালিয়ে যেতে সাহায্য করে। যার ফলে ইরান সিরিয়ায় শিয়া সুন্নি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু করে বাসার বিরোধী সংগ্রামকে সাপম্রদায়িক গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত করে। তখন এ যুদ্ধে যোগ দিতে প্রতিবেশী দেশ থেকে সুন্নি যুবকেরাও যোগ দিতে শুরু করে এবং বিভিন্ন গ্রুপ ও দলের নামে শিয়াদের ও আলাওয়ীদের বিরুদ্ধে এ দাঙ্গা চলতে থাকে। তবে এক পর্যায়ে এ যুদ্ধের নেতৃত্ব চলে যায় চরমপন্থিদের কর্তৃত্বে এবং এরাই হচ্ছে আল কায়েদার মতাদর্শের তথাকথিত জেহাদি দল আইসিস। ডা: তারেক এদেরকে বর্তমান যুগের "খাওয়ারিজ" বলে আখ্যায়িত করেছেন। আইসিসের বাড়াবাড়ি, জঙ্গি কার্যকলাপ ও উগ্র মানসিকতা ইত্যাদির বিস্তারিত তথ্য জানতে তার বক্তব্য শুনতে হবে। সংক্ষেপে বলা যায় তিনি আইসিসের চরমপন্থি মতাদর্শ ও নির্মম আচরণকে ইসলামের ইতিহাসের বিপথগামী খাওয়ারিজদের সাথে তুলনা করেছেন। যারা ইসলামের ৪র্থ খলিফা হজরত আলিকে (রা হত্যা করেছিল। তাই তাদেরকে সমর্থন করা যায় না। ইসলামের খলিফা হজরত আলি (রা যেভাবে এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন ঠিক সেভাবে আজও এধরণের ধরনের উগ্র মানসিকতার সন্ত্রাসীদেরকে যে কোন মূল্যে রুখতে হবে।
পরিশেষে, ইসলামী ইতিহাস, আধুনিক বিশ্বে ইসলামের ভবিষ্যৎ এবং মুসলিম লিডারশীপের কি বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার ও কিভাবে তাদের যোগ্যতা বৃদ্ধি করা যায় সে ব্যাপারে চমৎকার কিছু প্রস্তাব রেখেছেন যা অনুসরণ করা উচিত ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মীকে। এছাড়াও নারী নেতৃত্বের উপরও তিনি হাদিসের আলোকে কিছু কথা রেখেছেন যা আমাদের দেশের অনেক আলেমরা বিবেচনা করেননা বলেই মনে হয়। আগামী কয়েক দশকের মাঝে মুসলিম দেশগুলা থেকে স্বৈরাচারী সরকারের পতন কীভাবে ঘটবে সে বিশ্লেষণ করে বক্তব্য শেষ করেন।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে আপনার লিখা হতে - জিও পলিটিক্যাল বিষয়ে বিশেষ করে - লিবিয়া, মিশর, ইয়েমেন ও সিরিয়া নিয়ে উনি যা বলেছেন - তা আমার কাছে হোয়াইট হাউজ, আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, রিপাবলিকান পার্টির কংগ্রেসম্যানরা - নিজেদের মিডিয়া (সিএনএন, আল জাজিরা, বিবিসি ইত্যাদি) র ব্যবহার করে বিশ্ববাসীকে যা বোঝাতে ও বিশ্বাস করাতে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে - যে অর্থ ও মেধা ব্যায় করছেন - তার অতি সাধারন প্রতিধ্বনী বলে মনে হয়েছে। ওনার আলোচনার এই সারাংশে - আমি নূন্যতম কোন কিছু পাই নি - যা কোরান ও হাদীস দ্বারা সমর্থিত। যদি কোরান ও হাদীস না আনি - তারপর আমি স্যেকুলার কোন বিষয় যেমন লজিক, পলিটিক্যাল সায়েন্স, ইকোনোমিক্স, সোসিওলজি, ডিফেন্স ইত্যাদি কোন কিছুর দ্বারাও ওনার বক্তব্যকে আমলে নিবার মত কিছু পাইনি।
বরং মনে হয়েছে - উনি সিম্পলী আমাদের সাধারন বিশ্বাসী ভাইদের কে চিন্তা করার শক্তিকে আচ্ছন্ন করেছেন - সো আমাদের ভাইরা চিন্তা করবেন নাঃ
১। কে, কারা, কার টাকায় ও অস্ত্রে, কোন আইনে লিবিয়াকে আজ ন্যাটো শাসিত একটি দেশে পরিনত করেছে। কারা ঐ দেশের সম্পদ লুন্ঠন করছে এবং কারা ঐ দেশের নিরাপত্তা দিচ্ছে এবং সরকার নিয়ন্ত্রন করছে এবং কারা ঐ দেশের মানুষকে আজ চুড়ান্ত রকমের স্লেইভ, মহিলাদেরকে পতিতায় পরিনত করেছে? কারা ঐ দেশের সংবাদ সেন্সর করছে?
২। মিশরে কারা অপ্রতিরোধ্য ইসলামিক শক্তিকে দূর্বল করেছে, কারা ঐ শক্তিকে ধ্বংশ করতে টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে দিয়ে আর্টিফিশিয়াল আন্দোলন করিয়েছে ও মিডিয়া কভারেজ দিয়েছে এবং কারা সিসিকে ক্ষমতায়ন করেছে।
৩। ইয়েমেন এ কারা তারা যারা গত ১০ বছরের বেশী সময় ধরে সিসটেমেটিক্যালী ড্রোন দিয়ে হাজার হাজার সিভিলিয়ান ও লিডারশিপ হত্যা করেছে যে ইয়েমেনীরা মোহাম্মদ সঃ দ্বারা সার্টিফাইড ঈমানদার, সার্টিফাইড প্রজ্ঞা সম্পন্ন, যে ইয়েমেনী রক্তের লোকেরা ওনাকে মক্কার কোরাইশ ও পুরো আরবের বিরুদ্ধে আগলে ধরেছিল? কারা সামরিক ও প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে মিশন বন্ধ করে অসংখ্য অস্ত্র সিভিলিয়ানদের জন্য রেখে যায় এবং প্রক্সি হিসাবে সৌদিকে সামনে রেখে ইয়েমেনকে ধ্বংশ করার চেষ্টা করছে?
৪। ট্রুলী কারা সিরিয়ান অপোজিশানকে লিবিয়া স্টাইলে অস্ত্র দিয়েছে, কারা ট্রেনিং দিয়েছে এবং কারা আইএস বানিয়েছে। নিজের বিবেককে কি একটু প্রশ্ন করলে মুসলিমরা এটা বুঝবে না যে - বিচ্ছিন্ন একটা গ্রুপ (যাদের সংখ্যা ৮০০০ বলেছিল সিএনএন) তারা সিরিয়া হতে ইরাক পয্যন্ত ব্যারেন ল্যান্ড দখল করে দিনের পর দিন ইউটিউবে ইসলামের নামে পশুত্বের প্রচার চালাচ্ছে আর তাদের বিরুদ্ধে ন্যাটো, আরব লীগ, লোকাল সুন্নি শিয়া সকল রকমের ও সকল ধরনের গভার্নমেন্ট ও সাধারন মুসলিম - তারপর তারা সেই ৮০০০ হতে আজ বলে কিনা ২ মিলিয়ন হয়েছে। বিবেক খাটালে কি বলা যায় না এটা কমপ্লিটলী পশ্চিমা ও যিয়োনিস্ট স্পেশাল ফোর্স - যারা শিয়া সুন্নীর মধ্যে ফাইট লাগাতে কাজ করছে, যারা মুসলিমদেরকে পশু হিসাবে ওয়েস্টার্ন মানুষের কাছে চিহ্নিত করছে - সো আগামীতে যেন মুসলিমকে পাগলা কুকুরের ন্যায় পশ্চিমা গনমানুষ হত্যা করতে পারে আর আরবদের কে রাসুলের হাদীস অনুযায়ী কচুকাটা করতে পারে (জীবানু, ক্যামিকেল কিংবা আনবিক বোমা দিয়ে)। কিভাবে বাহিরের দেশের মানুষ ঐ ভূখন্ডে যায় টার্কি দিয়ে, জর্ডান দিয়ে ইরাক দিয়ে - যেখানে ঐ দেশের সরকার সমূহ পুরোপুরিই আমেরিকার চাকরের ও অধম?
৫। ইরাকে মিথ্যা অজুহাতে(আমেরিকার নিজস্ব মোস্ট কনজারবেটিভ হিসাবানুযায়ী) ১৪ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে, ৭/৮ লাখ মহিলাকে ধর্ষন করেছে এবং ৯১ - ৯৮ পয্যন্ট গড়ে প্রতি মাসে ৫০০০ এর উপর শিশুকে মেরেছে সেংশান দিয়ে - আর এখন দেশটাকে ন্যাটো দখল করে যাচ্ছে তাই করছে। আর এই ভদ্রলোক এ্যানালাইসিস দিচ্ছে। আর আপনি কষ্ট করে তা গনমুসলিম এর সাথে শেয়ার করছেন ওনার ক্রেডিবিলিটি নিশ্চিত করে যে ওনার ফলোয়ার এক্স নাম্বার।
মূলতঃ আপনার ও আমার উচিত যে কারো বক্তব্য না গ্রহন করে রিফ্লেক্ট করা, ক্রিটিক্যালী থিংকিং করা - কারন আপনার ও আমার রাসুল আমাকে তাই বলেছেন। কোন কিছু ভ্যারিফাই না করে প্রচার ও প্রসার না করতে - বিশেষতঃ এই ফেতনার যুগে।
আর সব শেষে বলতে চাই - দয়া করে শাম ও ইয়েমেন এর হাদীস সমূহ পড়ুন এবং আখেরী জামানার সাইন সমূহ পড়ুন এবং দুনিয়াবী সাবজেক্ট সমূহকে জানুন ও গত ১০০ বছরের ইসলামের ইতিহাসের ম্যাক্রো পার্টগুলো পড়ুন এবং চিন্তা করুন - দেখবেন আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল আমাদের জন্য ক্লিয়ারলী এ বিষয়সমূহ জানিয়েছেন।
কিন্তু আমরা দুনিয়ার পেছনে দৌড়াতে গিয়ে এখন পরনির্ভর এ্যানালাইসিস এ গোল খাচ্ছি।
সরি আবারো - কোন শব্দ চয়নে আপনাকে কষ্ট দিয়ে থাকলে। আপনার লিখার সমালোচনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। শুধু এটা বলতে চেয়েছি লিটারেলী এক নিঃশ্বাসে যে -
আমাদের দূর্ভাগ্য এই যে এই সব বিবেক বান! রা - 'জেনে' কিংবা 'না জেনে' - উম্মাহকে সত্য পেতে, সত্য বুঝতে এক বড় বাঁধা হিসাবে কাজ করছে।
আমার কথায় আহত হবেন না দয়া করে।
আমরা আসলে জানিনা কে সঠিক আর কে বেঠিক।
আপনার মন্তব্যে চিন্তা বরার মত অনেক কিছু আছে। ধন্যবাদ আপনার পাপ্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন