হিজাব কেন জরুরি- ফাতেমা মাহফুজ
লিখেছেন লিখেছেন গেঁও বাংলাদেশী ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৭:৫৩:০৮ সন্ধ্যা
কোনো মুসলিম মেয়ে যদি কুরআন হাদিস অর্থসহ পড়ে, তাহলে সে বুঝতে পারবে তার মূল্যবান জীবনের উদ্দেশ্য কী, আর সেই সাথে পর্দার গুরুত্ব কত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা যেন নিজেদের চোখকে বাঁচিয়ে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানগুলোর হিফাজত করে ও নিজেদের সাজসজ্জা না দেখায় : কেবল সেই সব জিনিস ছাড়া, যা আপনা হতে প্রকাশিত হয়ে পড়ে (মুখ, হাতের কব্জি, পায়ের পাতা) এবং নিজেদের বদেশের ওপর ওড়নার আঁচল ফেলিয়ে রাখে।’ (সূরা নূর : ৩১) অথচ ইদানীং মডার্ন হিজাবের নামে আয়াতের শেষ অংশ তথা বদেশে ওড়না থাকে না। পর্দা কি শুধু চুলের জন্য? তুর্কি বা ইরানি মেয়েরা কিভাবে পরে সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয় বরং আমাদের কাছে কুরআনের থিওরি আছে, তাহলে প্রাক্টিক্যালে কারচুপি করছি কেনো? এমনো দেখেছি, টপস আর প্যান্ট পরে মাথায় শর্ট স্কার্ফ দিয়ে হাঁটছে। প্রশ্ন হলোÑ পর্দার মূল নিয়ম কি মানা হলো? আঁটসাঁট পোশাক পরে বডি স্ট্রাকচার ফুটিয়ে তুললে ছেলেরা তো তাকাবেই! শর্ট বোরকা পরুন কিংবা ফুল হাতার কামিজ পরুন কিন্তু টাইস বা ল্যাগিংস পরলে (ইলাস্টিসিটির কারণে যেন পায়ের চামড়ার সাথে লেগে থাকে) সেটা পর্দার মধ্যে পড়ে না। এ েেত্র একটা জিনিস বলে রাখা উচিত মনে করি, অনেকেই হয়তো বলবেন, ‘পায়ের দিকে কে দেখে? ওসব গোঁড়ামি নিয়ে থাকলে আনস্মার্ট হয়ে থাকতে হবে। নতুন ফ্যাশন আসছে পরছি। সব সময় পরব নাকি?’ তাদের েেত্র বলতে হয়, দীর্ঘ সময় কী আর স্বল্পসময় কী, মানুষ এই পৃথিবীতে কত সময় ধরে থাকবে তারই তো ঠিক নেই। পায়ের দিকে যদি মানুষের দৃষ্টি না যেত তাহলে সর্বজ্ঞ আল্লাহ তায়ালা মেয়েদের হাঁটু পর্যন্ত কাপড় পরার জন্যই বলতেন। আর ফ্যাশনের কথা বললে, লং ফ্রকের সাথে ঢোলা প্যান্ট টাইপ সালোয়ারের ঝোঁক এসেছিল, এর সাথে চুড়িদার বা টাইস বা লেগিংসও চলত। তো, কে বলেছে আপনাকে টাইস বা ল্যাগিংস কিনতে? আপনি ঢোলা সালোয়ারও বানাতে পারতেন। সেটা আনস্মার্ট লাগত না। তা ছাড়া স্মার্টনেসের সংজ্ঞা আমার কাছে মনে হয় না, যে যেটা মার্কেটে এসেছেÑ সেটাই পরে ফেলা, বরং আমার ব্যক্তিত্বের সাথে যেটা মানাবে, সেই পোশাক স্মার্টলি পরলেই সুন্দর লাগে। তা ছাড়া যেকোনো ফ্যাশনই আসুক না কেনো, আগে নিজের ধর্মীয় নৈতিকতার কথা বিবেচনা করা উচিত। এ দিকে আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা মাথায় কাপড়, লম্বা হাতা ড্রেস পরলেও, নিজেদের সাজসজ্জা দেখিয়ে জমকালো ড্রেস পরে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে সমস্যার কিছু দেখেন না। তাদের প্রশ্ন আমি তো হিজাব করেই আছিÑ ছেলেরা তাকাবে কেনো? তাহলে বলতে হয়Ñ এক অর্থে এসব প্রশ্নের প্রথমাংশ ভুল, শেষাংশ ঠিক আছে। তারা বলছেÑ আমি তো হিজাব করেই বের হয়েছি’Ñ এই কথার মধ্যে ভুল হলোÑ আপনি যতই ঢেকেটেকে বের হনÑ আপনার ড্রেস যদি জমকালো, চোখধাঁধানো থাকে, রাস্তায় সবার দৃষ্টি আপনার ওপর পড়বেই। কেউ গান গাবে, কেউ টিজ করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আর রইল ছেলেদের দৃষ্টি সংযত রাখার ব্যাপার। হ্যাঁ, অবশ্যই ছেলেরা আল্লাহর বিধান না মানলে তাদের জবাবদিহি করতে হবে। যেহেতু তাদের নজর সংযত রাখতে বলা হয়েছে। তবে একটা জিনিস আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে, এক হাতে তালি বাজে না। তেমনি সমাজ ঠিক করতে হলে ছেলেমেয়ে উভয়কেই ঠিক করতে হবে। আমরা বিশৃঙ্খলভাবে চলেÑ শুধু ছেলেদের দোষারোপ করব তা হয় না, বরং সে েেত্র প্রশ্ন উঠবেÑ ছেলেটাকে উসকানি দিলো কে? তাই উসকানির জন্য আমাদের যাতে জবাবদিহিতা করতে না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
যেহেতু হিজাব নিয়ে কথা উঠেছে, তাই সেটার রেশ ধরে আরেকটা বিষয় উল্লেখ করলে মন্দ হয় না। খুব খারাপ লাগে যখন দেখিÑ মেয়েটা বেশ পর্দা করে চলে, অথচ নামাজ সম্পর্কে উদাসীন। যদিও কাফির আর মুসলমানদের মধ্যে নামাজই হচ্ছে পার্থক্যকারী ইবাদত। তা ছাড়া ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামাজ একটি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা: হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের ওপর স্থাপিত’ ১. এই স্যা দেয়া যে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সা: আল্লাহর রাসূল; ২. নামাজ কায়েম করা; ৩. জাকাত দেয়া; ৪. রমজানের রোজা রাখা ও ৫. হজ করা (বুখারি, মুসলিম)। প্রত্য অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, আমার এক ফ্রেন্ডকে (সে পর্দা করে চলে) প্রায় এক বছর ধরে নামাজের কথা বলছি, অথচ সে পড়ে না। কলেজে নামাজের সময় হয়ে গেলেও বলে বাড়িতে গিয়ে পড়বো, কিন্তু তা আর হয় না। কারণ তার বাড়ি এত দূর যে, যেতে যেতেই নামাজের টাইম শেষ। আমরা জানি. নামাজ-পর্দা দুটোই ফরজ ইবাদত। তাহলে নামাজের বেলায় আলসেমি, গড়িমসি কেন? পর্দাটা যেহেতু লোকে দেখে, সেই কারণে? আর নামাজটা গোপনে থাকে সেই কারণে? তাহলে কি লোকদেখানো ইবাদতের দিকেই আমরা ঝুঁকে পড়ছি? যাতে লোকেরা আমাদের ভালো বলে। অথচ আমাদের অন্তর ঠিক নেই! যে ফরজটা সহজে সবার সামনে প্রকাশ পায় সেটাকে মেনে নিয়েছি, আর যে ফরজ আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, খারাপ চিন্তা-কাজকর্ম থেকে বিরত রাখে তাকেই ছেড়ে দিচ্ছি? তা হলে আমাদের অন্তর কী করে ঠিক হবে? ‘নিঃসন্দেহে নামাজ অশ্লীল ও খারাপ কাজ হতে বিরত রাখে’। (সূরা আনকাবুত : ৪৫)
যদি আল্লাহর আদেশে পর্দা করে থাকি, তাহলে সেই আল্লাহর আদেশে নামাজ পড়তে টালবাহানা কেন? এখন তো প্রায় সব মার্কেটেই নামাজের আলাদা জায়গা রয়েছে। আর যদি জায়গা নাও থাকে, তাতে কী? বাংলাদেশে কি মসজিদের কমতি আছে? নামাজ কঠিন ইবাদত তাদের জন্য যারা আল্লাহর প্রতি অনুগত নয়। ‘এবং তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। অবশ্যই তা কঠিন কিন্তু বিনীতগণের জন্য নয়? যারা ধারণা করে যে নিশ্চয়? তারা তাদের প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে এবং তারা তারই দিকে প্রতিগমন করবে।’ (সূরা বাকারাহ : ৪৫, ৪৬)
সুতরাং যেটা সহজে প্রকাশ পায়, শুধু সেই ইবাদত করলে হবে না। বরং বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ দু’দিক দিয়ে আমাদের ভালো হতে হবে। আর বাহ্যিক ইবাদত তথা হিজাব করার সময় অবশ্যই আমাদের থিওরি ঠিক রেখে প্রাক্টিক্যাল করতে হবে।
লেখক : প্রবন্ধকার
বিষয়: বিবিধ
১৪৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন