আসুন তাওহীদ শিখি

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহশাহেদ ১৪ জুলাই, ২০১৩, ০১:৪৩:১১ রাত

আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করার ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছঃ

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন,

قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ

“আপনি বলুন, “আমার সালাত, আমার কোরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ, সবই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। তার কোন শরিক নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল।” (আনআমঃ ১৬২-১৬৩)

....................................................


ব্যাখ্যাঃ আল্লামা ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আদেশ দিচ্ছেন যে, সমস্ত মুশরিক আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের এবাদত করে এবং আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের নামে পশু যবাই করে, তিনি যেন তাদেরকে জানিয়ে দেন যে, তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেবল আল্লাহর জন্যই ইখলাসের (নিষ্ঠার) সাথে স্বীয় নামায আদায় ও কুরবানী করেন। অপর পক্ষে মুশরিকরা মূর্তি পূজা করে, মূর্তির জন্য যবাই করে। সুতরাং আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নবীকে মুশরিকদের বিপরীত করার আদেশ দিয়েছেন এবং মুশরিকেদর শির্ক ও বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকার আদেশ দিয়েছেন। সেই সাথে আরও আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি যেন খাঁটি নিয়তে এবং সুদৃঢ় ইখলাসের সাথে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করেন।

তাওহীদ ও রেসালাতের সাক্ষ্য দেয়ার পর পাঁচ ওয়াক্ত নামায হচ্ছে ইসলামের সর্ববৃহৎ ফরজ এবাদত।

এখানে সালাত (নামায) দ্বারা ফরজ, নফল উভয় প্রকার নামাযই উদ্দেশ্য। সকল নামাযই এবাদতের মধ্যে গণ্য। নামাযের মধ্যে উভয় প্রকার দুআরই সমাহার ঘটেছে। দুআউল মাসআলা এবং দুআউল ইবাদাহ। যেই দুআল মধ্যে চাওয়া ও প্রার্থনা থাকে উহাকে দুআউল মাসআলা বলা হয়। আর যেই দুআর মধ্যে আল্লাহর প্রশংসা, গুণকীর্তন, তাসবীহ, রুকু, সিজদাহ এবং অন্যান্য আরকান ও ওয়াজিবাত থাকে, তাকে দুআউল ইবাদাহ বলা হয়। এ জন্যই সালাতকে সালাত হিসাবে নাম করণ করা হয়েছে। কেননা এতে উভয় প্রকার দুআই রয়েছে। দুআকে আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থে সালাত বলা হয়। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া ও তাঁর ছাত্র ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রঃ) সালাত ও দুআর অর্থ এটিই উল্লেখ করেছেন।

ইমাম ছাওরী সুদ্দীর সনদে সাঈদ বিন যুবাইর (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, নুসুকী অর্থ হচ্ছে আমার কুরবানী। ইমাম যাহ্হাক তাই বলেছেন।

আমার বেঁচে থাকা ও আমার মৃত্যু বরণ করা আল্লাহর জন্যই। অর্থাৎ জীবিত থাকা কালে আমি যেই সৎ আমল করি এবং যেই ঈমান ও আমল নিয়ে আমি মৃত্যু বরণ করি, তার সবই আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের জন্য। খালেসভাবে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই সম্পাদন করি। তাতে তাঁর কোন শরীক নেই। আমাকে এই আদেশই করা হয়েছে। আর আমিই হচ্ছি সর্বপ্রথম মুসলিম। অর্থাৎ এই উম্মাতের সর্বপ্রথম মুসলিম হচ্ছি আমি। এটিই হচ্ছে মুফাসসিরীনে কেরামদের কথা।

মোটকথা, উপরের আয়াতটি প্রমাণ করে যে, বান্দার প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য সকল কথা ও কাজের কোন অংশই আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা বৈধ নয়। সে যেই হোক না কেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এবাদতের কোন অংশ আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের জন্য নির্ধারণ করল, সে আল্লাহ্ তাআলা কর্তৃক নিষিদ্ধ শির্কেই লিপ্ত হল। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

وَأَنْ أَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ

“তুমি একনিষ্ঠ (হানীফ) হয়ে নিজেকে ঠিকভাবে এ দ্বীনের (এবাদতের) উপর প্রতিষ্ঠিত রাখো এবং কখনও মুশরেকদের অন্তর্ভুক্ত হয়োনা। (সূরা ইউনূসঃ ১০৫) সম্পূর্ণ কুরআনেই এবাদতের ক্ষেত্রে এই তাওহীদকে সাব্যস্ত করা হয়েছেও তার বর্ণনা পেশ করা হয়েছে এবং শির্ককে অস্বীকার করা হয়েছে এবং শির্কের সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন,

فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ

“আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়–ন এবং কোরবানী করুন। (সূরা কাউছারঃ ২)

.........................................................


ব্যাখ্যাঃ ইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নবীকে দুই প্রকার এবাদত করার হুকুম করেছেন। এবাদত দু’টির একটি হচ্ছে নামায আর অন্যটি হচ্ছে কুরবানী। এই দু’টি এমন এবাদত, যা বান্দাকে আল্লাহর নিকটে পৌঁছিয়ে দেয়, বান্দাকে বিনয়ী করে, আল্লাহর দিকে মুখাপেক্ষী করে, আল্লাহ্ সম্পর্কে ভাল ধারণা করার প্রতি উৎসাহিত করে, বান্দার ইয়াকীনকে পোক্তা করে এবং আল্লাহর ওয়াদা বাস্তবায়নের আশ্বাসে বান্দার অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। অহংকারী এবং আল্লাহর দ্বীন প্রত্যাখ্যানকারী এবং তা থেকে বিমুখরা এর বিপরীত। এরা মনে করে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের জন্য নামায আদায়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনা এবং দারিদ্রের ভয়ে তারা আল্লাহর জন্য কুরবানী করেনা। এই জন্যই আল্লাহ্ তাআলা এই উভয় প্রকার এবাদতকে উপরোক্ত আয়াতে এক সাথে উল্লেখ করেছেন। সূরা মায়েদার ৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَنْ تَسْتَقْسِمُوا بِالْأَزْلَامِ

“তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শূকরের মাংস, যে সব জন্তু আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কণ্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যায়, যা শিং-এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ্ করেছ, তা হালাল। আর যে জন্তু বেদীমূলে যবেহ্ করা হয়েছে (তাও তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে) এ ছাড়া শর নিক্ষেপের মাধ্যমে ভাগ্য নির্ণয় করাও তোমাদের জন্য জায়েয নয়।

আলী (রাঃ) থেকে বর্নিত আছে, তিনি বলেছেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারটি বিষয়ে আমাকে অবহিত করেছেন

لَعَنَ اللَّهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللَّهِ وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَيْهِ وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ غَيَّرَ الْمَنَارَ

“যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে (পশু) যবেহ করে তার উপর আল্লাহর লা’নত। যে ব্যক্তি নিজ পিতা- মাতাকে অভিশাপ দেয় তার উপর আল্লাহর লা’নত। যে ব্যক্তি কোন বিদআতীকে আশ্রয় দেয় তার উপর আল্লাহর লা’নত। যে ব্যক্তি জমির সীমানা চিহ্ন (নিশানা) পরিবর্তন করে তার উপর আল্লাহর লা’নত”।

......................................................

ব্যাখ্যাঃ
আলী (রাঃ) ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর চাচাতো ভাই। হিচ্ছেন ইমাম আলী বিন আবু তালেব আবুল হাসান আলহাশেমী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কন্যা ফাতেমাকে বিবাহ দিয়েছেন। তিনি ছিলেন সর্বাগ্রে ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম। তিনি বদরের যুদ্ধ ও বাইআতুর রিযওয়ানে শরীক ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন, তিনি তাদের অন্যতম। খোলাফায়ে রাশেদার মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। তাঁর রয়েছে সুপ্রসিদ্ধ অসংখ্য ফজীলত, যা সহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। ৪০ হিজরীর রামাযান মাসে খারেজী আব্দুর রাহমান বিন মুলযিম তাঁকে হত্যা করে।

আবুস সা’দাত (রঃ) বলেনঃ লানত শব্দের অর্থ হচ্ছে আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত করা এবং দূরে সড়িয়ে দেয়া।

যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের জন্য পশু যবেহ করল। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেনঃ আল্লাহর বাণীঃ যে সব জন্তু আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, এর বাহ্যিক অর্থ হচ্ছে, যে সব জন্তু আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের জন্য যবেহ করা হয়েছে। যেমন যবেহকারী বললঃ এই যাবীহা তথা কুরবানী উমুক ব্যক্তি বা বস্তুর জন্য। উদ্দেশ্য যদি তাই হয় অর্থাৎ আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের সন্তুষ্টি বা নৈকট্য লাভের জন্য যদি পশুটি যবেহ করা হয় তাতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হোক বা না হোক কিছু আসে যায়না। এই যবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি ঐ পশুর গোশত খাওয়ার চেয়ে অধিক ভয়াবহ, যা শুধু খাওয়ার জন্য যবেহ করা হয়েছে এবং যবেহ করার সময় বলা হয়েছে, باسم المسيح ঈসার নামে যবেহ করছি অথবা অনুরূপ অন্য কোন বাক্য উচ্চারণ করা হয়েছে। আমরা যেই পশুকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাবের জন্য যবেহ করি, তা ঐ পশুর চেয়ে অধিক উত্তম ও পবিত্র, যাকে শুধু গোশত খাওয়ার জন্য আমরা যবেহ করা করেছি এবং যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ্ বলেছি। ঈসা (আঃ)এর নামে কিংবা জুহরার বা অন্য কোন নামে (যেমন বড় পীরের নামে) যবেহ করা হলে যদি তা হারাম হয়, তাহলে যেটি ঈসা (আঃ)এর জন্য বা জুহরার জন্য যবেহ করা হল কিংবা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারও সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের নিয়তে যবেহ করা হলে তা হারাম হওয়ার অধিক হকদার। কেননা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের এবাদত করার কুফরী আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের সাহায্য গ্রহণ করার কুফরীর চেয়ে অধিক ভয়াবহ। এ জন্যই যখন কেউ আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারও নৈকট্য লাভের জন্য পশু যবেহ করবে, তখন সেই পশুর গোশত খাওয়া হারাম হবে। যদিও তা বিসমিল্লাহ বলে যবেহ করা হয়। এই উম্মাতের কিছু কিছু মুনাফেক লোক তারকার উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করে, সুগন্ধযুক্ত কাঠ জ্বালায় এবং অনুরূপ কান্ড করে থাকে। এ সমস্ত লোক মুরতাদ এবং ইসলামের বাইরে। কোন অবস্থাতেই এদের যবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়া হালাল নয়। এমনি জিনদের জন্য যবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়াও হালাল নয়।

যে ব্যক্তি স্বীয় পিতা-মাতাকে গালি দেয়, তার উপরও আল্লাহর লা’নত। পিতার পিতা-মাতা ও মাতার পিতা-মাতার ক্ষেত্রেও একই কথা। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

إِنَّ مِنْ أَكْبَرِ الْكَبَائِرِ: أَنْ يَلْعَنَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِগ্ধ. قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ يَلْعَنُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ؟ قَالَ: ্রيَسُبُّ الرَّجُلُ أَبَا الرَّجُلِ، فَيَسُبُّ أَبَاهُ وَيَسُبُّ أُمَّهُগ্ধ

কবীরা গুনাহ্ সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ্ হল কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করা। জিজ্ঞেস করা হলঃ হে আল্লাহর রাসুল! কিভাবে একজন লোক তার পিতা-মাতাকে লা’নত করতে পারে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির পিতাকে গালি দেয়। সেও প্রথমোক্ত ব্যক্তির পিতাকে গালি দেয়। এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির মাকে গালি, ফলে অপর ব্যক্তিও তার মাকে গালি দেয়।

যে ব্যক্তি কোন বিদআতীকে আশ্রয় দেয় তার উপর আল্লাহর লা’নত। محدثا মুহ্দাসান শব্দের দালের উপর যবর দিয়ে পড়া হয়েছে। এর অর্থ হবে বিদআত। অর্থাৎ যে বক্তি কোন বিদআত ও বিদআতীকে আশ্রয় দিল এবং বিদআতকে নিজের কাছে স্থান দিল, তার উপর আল্লাহর লা’নত।

আবুস্ সাদাত (রঃ) বলেনঃ مُحْدَثاً শব্দটির দালের উপর যবর বা যের দিয়ে পড়া জায়েয। যের দিয়ে পড়া হলে অর্থ হবে অপরাধী। সে হিসাবে অর্থ হবে যে ব্যক্তি অপরাধীকে আশ্রয় দিল, তাকে তার শত্র“ থেকে আড়াল করে রাখল এবং অপরাধী থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াল। যবর দিয়ে পড়া হলে অর্থ হবে বিদআতী কাজ-কর্ম। বিদআতকে আশ্রয়-প্রশয় দেয়ার অর্থ হচ্ছে, বিদআতের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং বিদআতকে সাহায্য করা। যখন কোন মুসলিম বিদআতকে সমর্থন করবে, বিদআতের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে, বিদআতীকে যত্ম করবে এবং তার কোন প্রতিবাদ করবেনা, তখন সে বিদআত ও বিদআতীকে আশ্রয় দিয়েছে বলে গণ্য হবে।

ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রঃ) বলেনঃ এই কবীরা গুনাহ্টি অর্থাৎ বিদআতের প্রবর্তন ও প্রচলন করার অপরাধটির অনেক স্তর রয়েছে। বিদআতটি যত বড় হবে, তার গুনাহ্ও তত বড় ও ভয়াবহ হবে।

وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ غَيَّرَ الْمَنَارَ

“যে ব্যক্তি জমির সীমানা চিহ্ন (নিশানা) পরিবর্তন করে তার উপর আল্লাহর লা’নত”। منار শব্দটির মীম বর্ণের উপর যবর দিয়ে পড়তে হবে। যমীনের সীমানা নির্ধারণ করার জন্য যেই আলামতকে স্থাপন করা হয়, তার নাম মানার। কোন যমীনের মধ্যে অংশীদারদের অংশ নির্ধারণ করার পর একজনের অংশ অন্যজনের অংশ থেকে আলাদা করার জন্য নিশানা (খুটি) স্থাপন করা হয়, কিতাবুন নিহায়াতে মানারের অর্থ এটিই উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্যাখ্যাকার বলেনঃ আমি বলছি, যমীনের নিশানা পরিবর্তন করা বা মিটিয়ে ফেলার ধরণ হচ্ছে, কোন শরীকের অংশ অন্য শরীকের অংশ থেকে পার্থক্য করার জন্য যেই আলামত স্থাপন করা হয়েছে, তা সরিয়ে ফেলা। এর মাধ্যমে সে তার শরীকের হক থেকে কিছু অংশ নিয়ে নেয়। এটি একটি বিরাট জুলুম। হাদীছে রয়েছে,

مَنْ ظَلَمَ قِيدَ شِبْرٍ مِنَ الْأَرْضِ طُوِّقَهُ مِنْ سَبْعِ أَرَضِينَ

“যে ব্যক্তি কারো অর্ধহাত জমিন জবরদখল করবে কিয়ামত দিবসে তার গলায় সাতটি যমিন ঝুলিয়ে দেয়া হবে। দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষ বড়ই মূর্খ। তাদের মূর্খতা ও জুলুমের কারণেই তারা এমন কাজে লিপ্ত হয়েছে, যা তাদের দ্বীন ও দুনিয়ার জন্য ক্ষতিকর। আর আখেরাত, আমলের হিসাব-নিকাশ, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি ঈমান দুর্বল হওয়ার কারণেই তারা পরস্পর জুলুম করে থাকে। আমরা দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহর নিরাপত্তা কামনা করছি।

তারিক বিন শিহাব কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেনঃ

دخل الجنة رجل فى ذباب ودخل النار رجل فى ذباب قالوا وكيف ذلك يا رسول الله قال: مر رجلان على قوم لهم صنم لا يجوزه أحد حتى يقرب له شيئا فقالوا لاحدهما: قرب قال: ليس عندي شئ أقرب، قالوا له: قرب ولو ذباب فقرب ذباب فخلوا سبيله فدخل النار وقالوا للآخر: قرب، قال ما كنت أقرب شيئا دون الله عز وجل فضربوا عنقه فدخل الجنة

“এক ব্যক্তি একটি মাছির কারণে জান্নাতে প্রবেশ করেছে। আর এক ব্যক্তি একটি মাছির কারণে জাহান্নামে গিয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, এমনটি কিভাবে হলো? তিনি বললেনঃ দু’জন লোক এমন একটি কওমের (গোত্রের) নিকট দিয়ে যাচ্ছিল, যার জন্য একটি মূর্তি নির্ধারিত ছিল। উক্ত মূর্তির জন্য কোন কিছু উৎসর্গ না করে কেউ সে স্থান অতিক্রম করতোনা। উক্ত কওমের লোকেরা দু’জনের একজনকে বললো, ‘মূর্তির জন্য তুমি কিছু নযরানা পেশ করো’। সে বললো, ‘নযরানা দেয়ার মত আমার কাছে কিছুই নেই। তারা বলল, ‘অন্ততঃ একটি মাছি হলেও নযরানা স্বরূপ দিয়ে যাও’। অতঃপর সে একটা মাছি মূর্তিকে উপহার দিল। তারাও লোকটির পথ ছেড়ে দিল। এর ফলে (মৃত্যুর পর) সে জাহান্নামে গেল। অপর ব্যক্তিকে তারা বললো, “মূর্তিকে তুমিও কিছু নযরানা দিয়ে যাও। সে বললঃ ‘একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নৈকট্য লাভের জন্য আমি কাউকে কোন নযরানা দেইনা। এর ফলে তারা তার গর্দান উড়িয়ে দিল। এতে (শির্ক থেকে বিরত থাকার কারণে মৃত্যুর পর) সে জান্নাতে প্রবেশ করল”।

......................................................

ব্যাখ্যাঃ
হাদীছের রাবীর (বর্ণনাকারীর) পরিচয় হচ্ছে, তিনি হলেন আবু আব্দুল্লাহ্ তারিক বিন শিহাব আল-বাজালী আল-আহমাসী। ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বলেনঃ তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছেন, তবে তাঁর কাছ থেকে কোন হাদীছ শুনেন নি।

হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) বলেনঃ তিনি যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সাথে সাক্ষাৎ করে থাকেন অর্থাৎ যদি সাক্ষাৎ করা প্রমাণিত হয়, তাহলে তিনি সাহাবী। এটিও যদি প্রমাণিত হয় যে, সাক্ষাৎ করার পরও তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর কাছ থেকে কোন কিছুই বর্ণনা করেন নি। সুতরাং তিনি যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদীছ বর্ণনা করেন, তাহলে তা সাহাবীর মুরসাল হিসাবে গণ্য হবে। প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত অনুযায়ী সাহাবীর মুরসাল গ্রহণযোগ্য। ইবনে হিব্বানের বর্ণনা মতে তিনি ৮৩ হিজরী সালে ইন্তেকাল করেন।

ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রঃ) বলেনঃ ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) স্বীয় সনদে তারিক বিন শিহাব থেকে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন যে, এক লোক শুধু মাছির কারণে জান্নাতে প্রবেশ করেছে।

সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! এমনটি কিভাবে সম্ভব হল? সম্ভবতঃ তারা এই আমল তথা মূর্তিকে মাছি না দেয়ার কারণে জান্নাতে যাওয়া এবং মূর্তির জন্য মাছি কুরবানী করার কারণে জাহান্নামী হওয়াে খুব মামুলী বিষয় মনে করেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করলেন, যে ব্যক্তি এই কাজ করবে অথবা এর চেয়ে বড় কোন শির্কী কাজ করবে, তার জন্য জাহান্নামের আগুন অবধারিত হবে।

মূর্তির জন্য মাছি পেশকারী জাহান্নামে প্রবেশ করার কারণ হচ্ছে, সে অন্তর দিয়ে গাইরুল্লাহ্এর সন্তুষ্ট অর্জনের নিয়ত করেছিল এবং কাজের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করেছিল।

মাছির ঘটনায় মুসলিম শরীফের সেই হাদীছের ব্যাখ্যা রয়েছে, যা জাবের (রাঃ) হতে মারফু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আর সেই হাদীছটি ইতিপূর্বে “শির্ক হতে ভয়-ভীতি সম্পর্কে” নামক শিরোনামে অতিক্রম করেছে”। হাদীছটি হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

مَنْ لَقِىَ اللَّهَ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَقِيَهُ يُشْرِكُ بِهِ دَخَلَ النَّارِ

“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক না করে মৃত্যু বরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তাঁর সাথে কাউকে শরিক করে মৃত্যু বরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে”।

যে ব্যক্তি মূর্তির জন্য একটি মাছি কুরবানী করেছিল, তার পরিণতি যদি এমন হয়ে থাকে, তাহলে যে ব্যক্তি উট, গরু এবং ছাগল মোটা তাজা বানায় এবং সেগুলোকে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যান্য বস্তুর যেমন মৃত অথবা অনুপস্থিত অলী-আওলীয়া, কিংবা তাগুতের (শয়তানের), মাজারের, গাছের, পাথরের অথবা অনুরূপ বস্তুর এবাদত করে এবং তার জন্য পশু যবেহ করে, তার পরিণতি কেমন হবে? (অবশ্যই আরও অধিক ভয়াবহ হবে)।

উম্মাতে মুহাম্মাদীর আখেরী যামানায় মুসলিম পরিচয় ধারণকারী অনেক মুশরিক রয়েছে, যারা তাদের বাতিল মাবুদদের জন্য যবেহ করাকে ঈদুল আযহার দিন কুরবানীর চেয়ে অধিক উত্তম মনে করে। তাদের কেউ কেউ ঈদুল আযহায় কুরবানী যবেহ করার পরিবর্তে মাজার ও দর্গায় কল্পিত অলী-আওলীয়ার মাজার ও আস্তানায় পশু যবেহ করাকে যথেষ্ঠ মনে করে। তারা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যান্য যে সব বস্তুর এবাদত করে ঐ সকল বস্তুর প্রতি তাদের প্রবল আগ্রহ থাকার কারণে, সেগুলোকে অত্যাধিক তাযীম (সম্মান) করার কারণে এবং তাদের কাছ থেকে কল্যাণ কামনার কারণেই তারা এরূপ করে থাকে। শুধু তাই নয়, এর চেয়ে অধিক ভয়াবহ শির্কও বর্তমানে ছড়িয়ে পড়েছে।

অপর ব্যক্তিকে তারা বললো, “মূর্তিকে তুমিও কিছু নযরানা দিয়ে যাও। সে বললঃ ‘একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নৈকট্য লাভের জন্য আমি কাউকে কোন নযরানা দেইনা। এর ফলে তারা তার গর্দান উড়িয়ে দিল। এতে (শির্ক থেকে বিরত থাকার কারণে মৃত্যুর পর) সে জান্নাতে প্রবেশ করল”। হাদীছের এই অংশ থেকে জানা যাচ্ছে যে, ঈমানদারদের অন্তরে শির্কের ভয়াবহতা অত্যন্ত বড় ও বিপদ জনক বলে অনুভুত হয় এবং তারা শির্ককে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে। ইখলাসের উপর তারা হয়ে থাকেন অত্যন্ত মজবুত। আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীছে এবং অন্যান্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

্রثَلاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاوَةَ الإِيمَانِ: أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لا يُحِبُّهُ إِلا لِلَّهِ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِগ্ধ.

তিনটি গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান থাকবে সে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ অনুভব করতে সক্ষম হবে। (১) যার মধ্যে আল্লাহ এবং রাসূলের ভালবাসা অন্যান্য সকল বস্তু হতে অধিক পরিমাণে বিদ্যমান থাকবে। (২) যে ব্যক্তি কোন মানুষকে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ভালবাসে। (৩) যে ব্যক্তি ঈমান গ্রহণের পর কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে তেমনই অপছন্দ করে, যেমন অপছন্দ করে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে।

মাছির ঘটনার হাদীছ থেকে আরও জানা গেল যে ঈমানের মধ্যে লোকদের বিভিন্ন স্তর বিশিষ্ট হয়ে থাকে। কেননা যেই ব্যক্তিটি মূর্তির জন্য মাছি উৎসর্গ করেছিল, মূর্তিকে মাছি দেয়ার পূর্বে তার এমন কোন আমল ছিলনা, যাতে সে জাহান্নাতে প্রবেশ করার হতে পারে। অর্থাৎ মূর্তিকে মাছি দেয়ার কারণেই সে জাহান্নামী হয়েছিল। অন্য কোন আমলের কারণে নয়। হাদীছের বাহ্যিক অর্থ এটিই প্রমাণ করে। আল্লাহই ভাল জানেন। এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয় গুলো জানা যায়ঃ

১) قل إن صلاتي ونسكي এর তাফসীর জানা গেল।

২) فصل لربك وانحر এর তাফসীরও জানা গেল।

৩) অত্র অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীছের শরুতেই গাইরুল্লাহ্ তথা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের উদ্দেশ্যে পশু যবেহকারীর উপর লা’নত বর্ষণ করা হয়েছে।

৪) যে ব্যক্তি নিজ পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেয়, তার উপর আল্লাহর লা’নত। এর মধ্যে এ কথাও নিহিত আছে যে তুমি কোন ব্যক্তির পিতা- মাতাকে অভিশাপ দিলে সেও তোমার পিতা-মাতাকে অভিশাপ দিবে।

৫) যে ব্যক্তি,কোন বিদআতীকে অথবা অপরাধীকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহর লা’নত। বিদআতী (অপরাধী) হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে দ্বীনের মধ্যে এমন কোন নতুন বিষয় আবিস্কার কিংবা এমন কোন অপরাধ করে, যাতে আল্লাহর কোন নির্ধারিত হক (কিসাস বা হদ্দ) ওয়াজিব হয়ে যায়। এর ফলে সে এমন ব্যক্তির আশ্রয় চায়, যে তাকে উক্ত অপরাধের শাস্তি হতে রেহাই করতে পারে।

৬) যে ব্যক্তি জমির সীমানা নির্ধারিণের চিহ্ন (খুটি বা অন্য কোন আলামত) পরিবর্তন করে, তার উপর আল্লাহর লা’নত। এটা এমন আলামত বা নিশানা, যা তোমার এবং তোমার প্রতিবেশীর জমির অধিকারের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে। এটা পরিবর্তনের অর্থ হচ্ছে, তার নির্ধারিত স্থান থেকে সীমানা এগিয়ে আনা অথবা পিছনে নিয়ে যাওয়া।

৭) নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর লা’নত এবং সাধারণভাবে পাপীদের উপর লা’নতের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

৮) এ অধ্যায়ে বর্ণিত বিরাট ঘটনাটি মাছির ঘটনা হিসেবে পরিচিত।

৯) মূর্তির (মাজারের বা দর্গার) উদ্দেশ্যে মাছি, যা নযরানা হিসেবে পেশ করার কারণে লোকটি জাহান্নামে প্রবেশ করল। অথচ মূর্তির সন্তুষ্টি কিংবা নৈকট্য অর্জনের ইচ্ছা ছিলনা। মূর্তির বা মাজারের খাদেমদের অনিষ্টতা হতে বাঁচার উদ্দেশ্যেই সে মাছিটি নযরানা হিসেবে মূর্তিকে দিয়ে শিরকী কাজটি করেছিল।

১০) এই অধ্যায়ে বর্ণিত মাছির ঘটনা থেকে জানা গেল যে, মুমিনের অন্তরে শির্ক ও শির্কের ভয়াবহ পরিণামের কথা সদা জাগ্রত থাকে। এখান থেকে আরও জানা গেল যে, নিহত (জান্নাতী) ব্যক্তি তাদের দাবীর কাছে নতি স্বীকার না করে নিহত হয়ে চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। অথচ তারা তার কাছে কেলমাত্র বাহ্যিক আমল ছাড়া আর কিছুই দাবী করেনি।

১১) যে ব্যক্তি জাহান্নামে গিয়েছে সে একজন মুসলমান। কারণ সে যদি কাফের হত তাহলে এ কথা বলা হতনা دخل النار فى ذباب একটি মাছির ব্যাপারে সে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। অর্থাৎ মাছি সংক্রান্ত শির্কী ঘটনার পূর্বে সে জান্নাতে যাওয়ার যোগ্য ছিল।

১২) এতে সেই সহীহ হাদিসের পক্ষে সাক্ষ্য পাওয়া যায়, যাতে বলা হয়েছে, الجنة اقرب إلى أجدكم من شراك نعله والنار مثل ذلك “জান্নাত তোমাদের কোন ব্যক্তির কাছে তার জুতার ফিতার চেয়েও নিকটবর্তী। জাহান্নামও তদ্রুপ নিকটবর্তী।”

১৩) এটা জেনে নেয়া প্রয়োজন যে, অন্তরের আমলই হচ্ছে মূল উদ্দেশ্য। এমনকি মূর্তি পূজারীদের কাছেও এ কথা স্বীকৃত।

বিষয়: বিবিধ

১৩৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File