অসোন্তষ বাড়ছে পুলিশ বাহিনীতে ! মৃতু্যভীতিতে পুলিশ কর্মকতারা ! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চাপে সমগ্র পুলিশ প্রশাসন

লিখেছেন লিখেছেন ফারদিন ইসলাম ০৩ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:১৪:৩৫ রাত

দিন দিন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর মাঝে এক ধরনের মৃতু্যভীতি কাজ করছে । পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ প্রশাসন খুবই উদিগ্ন । তারা এখন আর সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না । রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন বলে তারা মনে করেন ।

রাজনৈতিক সহিংসতার জের ধরে পুলিশের ওপর গোপন নজরদারি, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ায় অসন্তোষ বাড়ছে পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে। পুলিশ সদর দপ্তরকে পাশ কাটিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মৌখিক আদেশে ঢাকার বাইরে ২৪ পুলিশ কর্মকর্তার বদলি আদেশের ঘটনায় এ অসন্তোষ আরও স্পষ্ট হয়েছে। টানাপড়েন শুরু হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের মধ্যে। এছাড়া সামপ্রতিক সময়ে বিভিন্ন মামলার আসামি গ্রেপ্তার নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যে এ টানাপড়েন আরও ঘনীভূত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, পুরান ঢাকার বিশ্বজিৎ দাস হত্যা ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১১ জন আসামি গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে ভিন্নমত পোষণ করা হয়। এতে ডিএমপির কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নাখোশ হন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। এর জের ধরে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের নজিরবিহীন তল্লাশি অভিযান ও লঙ্কাকাণ্ড নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে। গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশে বিএনপির কার্যালয়ে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জোনের একজন পুলিশ কর্মকর্তা। পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত ছাড়াই তিনি ১৫৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেন। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাধ সাধেন। তিনি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়ে তাদের আটকে রাখেন। এছাড়া চেইন অব কমান্ড অনুসরণ না করে খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তাকে সরাসরি ফোন করেন। দেন কাজের নির্দেশনা। এতে পুলিশ সদর দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট জোনের দায়িত্ব পালনে সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়েছে। সূত্র জানায়, একজন ডিআইজি, চারজন এসপিসহ পুলিশের ২৪ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার ১৭ ওসিসহ ১৮ কর্মকর্তার ওপর নজরদারির আদেশ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরকে পাশ কাটিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মৌখিক নির্দেশে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে গতকাল পর্যন্ত ওই আদেশ বাস্তবায়ন করা হয়নি। পরে দ্বিতীয় দফার মৌখিক আদেশে ওই কর্মকর্তাদের স্ব স্ব স্থানে ফের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়।

সমপ্রতি সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের পর পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ কর্মকর্তাদের একটি তালিকা করা হয়। একই সঙ্গে যেসব এলাকায় কোন সহিংসতা ঘটেনি সেখানকার কর্মকর্তাদের প্রতিও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এডিশনাল আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের কাছে বলেন, এ তালিকা করেছে মন্ত্রণালয়। আমরা কিছুই জানি না। তবে পুলিশ প্রধান অনুযায়ী, কোন ব্যবস্থা নিতে হলে আইজিপির মাধ্যমে নিতে হয়। মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, ২৪শে মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দু’টি চিঠিতে ২৪ কর্মকর্তার প্রত্যাহারের আদেশ দেয়া হয়। এর মধ্যে ১৮ কর্মকর্তার কার্যকলাপ নজরদারিতে রাখতে বলা হয়। ২৪ কর্মকর্তার মধ্যে আছেন একজন ডিআইজি, চারজন পুলিশ সুপার ও একজন সহকারী পুলিশ সুপার, ১৭ ওসি ও একজন এসআই। মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, কর্মকর্তাদের মধ্যে খুলনা অঞ্চলের ডিআইজি মেজবাহউদ্দিনকে পুলিশ সদর দপ্তরে, দিনাজপুরের পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্যকে রংপুর রেঞ্জে, খুলনা মহানগরের উপকমিশনার শওকত হোসেনকে ঢাকা রেঞ্জে, গাইবান্ধার পুলিশ সুপার নাহিদুল ইসলামকে রাজশাহী রেঞ্জে, সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারকে বরিশাল রেঞ্জে ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সহকারী পুলিশ সুপার রুহুল আমিনকে রাজশাহী রেঞ্জে সংযুক্ত করতে হবে। যে ১৮ জনকে নজরদারিতে রাখতে বলা হয়েছে তাঁরা হলেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী থানার ওসি আবদুস সাত্তার, সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মঞ্জুর রহমান, চাঁপাই নবাবগঞ্জ সদর থানার ওসি গোলাম মর্তুজা, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার ওসি সৈয়দ আহসানুল ইসলাম, চট্টগ্রামের বাঁশখালী খানার ওসি আবদুস সবুর, ওই থানার এসআই কামাল হোসেন, সাতকানিয়া থানার ওসি ইসমাইল, সাতক্ষীরা সদরের ওসি গাজী ইব্রাহিম, কলারোয়া থানার ওসি সিকদার আক্কাস আলী, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম, নওগাঁর মহাদেবপুর থানার ওসি আবদুর রশিদ, বাগেরহাট সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান, খুলনা সদর থানার ওসি শাহাবুদ্দিন, দাকোপ থানার ওসি আহম্মেদ কবির, বটিয়াঘাটা থানার ওসি ফজলুর রহমান, কক্সবাজারের রামু থানার ওসি গাজী সাখাওয়াত হোসেন, টেকনাফ থানার ওসি মো. ফরহাদ ও কুতুবদিয়া থানার ওসি শাহজাহান। ওদিকে সারদেশে নিরবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক সহিংসতায় ৮ পুলিশ নিহত ও দুই শতাধিক আহতের ঘটনায় পুলিশের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক স্বার্থে পুলিশ মোতায়েনের আগে আরও যতœশীল ভূমিকা নেয়ার কথাবার্তা শুরু হয়েছে পুলিশের কর্মকর্তাদের বৈঠকে। এছাড়া প্রতিদিনই দেশের কোন না কোন এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা হচ্ছে। আহত হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও হচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশের নির্বিচারে ছোড়া গুলিতে রাজনৈতিক দলের কর্মী সহ দেশের সাধারণ নাগরিকের প্রাণহানি ঘটছে। এতে আত্মরক্ষায় পুলিশের ব্যর্থতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা আছে খোদ পুলিশের ভেতরেই। পুলিশের প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে, পুলিশের মার খাওয়া নিয়ে পুলিশের মধ্যে ক্ষোভও বিরাজ করছে। পুলিশের মাঠ পর্যায়ে সমন্বয়ের অভাব, এলোমেলো দিকনির্দেশনা, কোন কোন পুলিশ সদস্যের নিজেদেরকে বাঁচানোর মানসিকতা, এক যোগে পুলিশের সকল শক্তি ব্যবহার করা, দিনের পর দিন টানা ডিউটি, ছুটি না দেয়া, কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার অতিমাত্রায় দুর্ব্যবহার, টানা দিনরাত ডিউটিতে দিনের খাবার বরাদ্দ মাত্র ১শ’ টাকা, ঝুঁকি ভাতা মাত্র ৪শ’ টাকা, পদোন্নতি না হওয়া এবং পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত বিশেষ এলাকার লোকদের সুবিধা দেয়ার ঘটনায় ধীরে ধীরে ক্ষোভ বাড়ছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, পুলিশের মার খাওয়ার একটি কারণ হচ্ছে মাঠে দায়িত্ব পালন কালে সমন্বয়ের অভাব এবং এলোমেলো দিকনির্দেশনা দেয়া। পুলিশ সদস্যদের একটি টিম কোন মোড়ে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করার কালে দেখা যায় ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছেন তো একটু পরে আরেক কর্মকর্তা এসে বলে যাচ্ছেন এখানে নয়, প্রধান সড়কে এসে দাঁড়াও। এভাবে দিকনির্দেশনা বদলের ফলে এলোমেলো হয়ে পড়ছে পুলিশ সদস্যরা। এমনকি কোন অ্যাকশনে যাওয়ার সময়ও একই ঘটনায় দু’তিন ধরনের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে তাদেরকে। সূত্র জানায়, নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে নির্দেশমতো গুলি না করায় পুলিশের দুই এসআইকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করার পর তাৎক্ষণিকভাবে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে তাদেরকে।

এভাবে চলতে থাকলে তরুন প্রজন্ম বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে । একদিকে সরকারী দল তাদের সাথে তুচ্ছতাছিল্ল্য আচরন ও সরকারী মন্ত্রীদের অশালীন ব্যবহার যেন ক্রমেই মাত্রা ছাড়িয়ে যাচেছ ।

বিষয়: বিবিধ

১৫৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File