ব্রিটিশ জমানার একটি গল্পটিঃ

লিখেছেন লিখেছেন মাজহারুল ইসলাম টিটু ০৯ জুন, ২০১৬, ০২:১৪:২২ দুপুর

কিশোরগঞ্জের ছেলে নগেন্দ্র নাথ বহুকষ্টে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন শাস্ত্রে ভর্তি হয়ে প্রথম প্রথম কয়েকটি ক্লাস করল। শিক্ষক মহোদয় বললেন প্রকৃতির প্রতিটি আচরণের মধ্যে যুক্তি এবং যথাযথ কারণ রয়েছে। সেই হতে পারবে উত্তম দার্শনিক, যে কিনা আশপাশের মানুষ, জন্তু, জানোয়ার, গাছপালা এমনকি যানবাহনের ছুটে চলার গতির মধ্যে যুক্তি এবং কারণ খুঁজে বের করতে পারবে। নগেন্দ্র নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষে হেঁটে হেঁটে পার্ক স্ট্রিট হয়ে তার মেসের দিকে ফিরছিল আর অত্যন্ত সতর্ক দৃষ্টি মেলে আশপাশের সবকিছু দেখছিল দার্শনিকের দৃষ্টি নিয়ে। হঠাৎ লক্ষ করল রাস্তার পাশের ফুটপাতের এক কোণে মধ্য বয়সী এক ভবঘুরে অঘোরে ঘুমাচ্ছে। লোকটির দুপাশে দুটো নেড়ি কুকুর এমনভাবে ঘুমাচ্ছে, যেন তারা সবাই হরিহর আত্মা। লোকটি ডান দিকে কাত হয়ে একটি কুকুরকে অনেকটা কোল বালিশের মতো জড়িয়ে ধরে আছে। অন্যদিকের কুকুরটি লোকটির পিঠঘেঁষে এমনভাবে আরামে ঘুমাচ্ছে, যা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা অসম্ভব।

নগেন্দ্র নাথ হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল। রাস্তা দিয়ে তুমুল বেগে নানা ধরনের গাড়ি ছুটে চলছিল পাবলিক বাস, ট্রাক, ট্রাম এবং ব্যক্তিগত গাড়ি। কোনো গাড়িই ভেঁপু বাজাচ্ছিল না কেবল ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া। কলকাতার রাস্তায় তখন ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা। যারা এসব গাড়ির মালিক ছিলেন, তারা নিজেদের অতীত সফল ও সৌভাগ্যবান ভাবতেন। আর তাই রাস্তায় চলতে গিয়ে ঘন ঘন ভেঁপু বাঁজিয়ে নিজেদের সফলতা ও সৌভাগ্যের জানান দিতেন। নগেন্দ্র নাথ লক্ষ করল যে, নানা ধরনের গাড়ির অনবরত আওয়াজ এবং ভেঁপুর শব্দের মধ্যেও ভবঘুরে লোকটি এবং কুকুর দুটি অঘোরে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ রাস্তা দিয়ে একটি পুলিশের গাড়ি বলতে গেলে নিঃশব্দে চলে গেল আর ঠিক সেই সময়টায় একটি কুকুর ঘুমন্ত চোখে চোখ বন্ধ অবস্থায় দু-তিনবার হালকা শব্দে ঘেউ ঘেউ শব্দে করে উঠল এবং তারপর আগের মতো ঘুমাতে লাগল। কুকুরটির কা- দেখে নগেন্দ্র নাথ ভারি আশ্চর্য হয়ে গেল। তার দর্শনের চিন্তা তাকে ভীষণভাবে কৌতূহলী করে তুলল। সে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করল, আচ্ছা ভবঘুরে লোকটি এবং কুকুর দুটির মধ্যে কী সম্পর্ক গাড়ির শব্দে তারা কীভাবে নির্বিকারভাবে ঘুমাচ্ছে ঘুমন্ত কুকুরটি কী করে পুলিশের গাড়ির ছুটে যাওয়ার দৃশ্য দেখল আর সেটি কেনই বা ঘেউ ঘেউ করে উঠল? অন্য কুকুরটি কেন ওমনভাবে ঘেউ ঘেউ করল না।

নগেন্দ্র নাথ মেসে ফিরে তার অভিজ্ঞতার কথা সবাইকে বলল এবং প্রশ্নগুলোর জবাব জানার চেষ্টা করল। তার কথা শুনে সবাই হাসল এবং রীতিমতো ঠাট্টা-মশকারা শুরু করল। তার এক সহপাঠী বেশ গম্ভীর কণ্ঠে তাকে পরামর্শ দিল নিকটস্থ থানায় গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করার জন্য। পূর্ববঙ্গের কিশোরগঞ্জের পোলা নগেন্দ্র নাথ বাড়–জ্যে তার বন্ধুর পরামর্শ শুনে কালবিলম্ব না করে নিকটস্থ থানায় চলে গেল। থানায় বড়বাবু বাইরে ছিলেন। একজন হাবিলদার ডিউটি অফিসার হিসেবে আগত লোকজনের কথাবার্তা শুনছিলেন। তিনি নগেন্দ্রর পরিচয় এবং প্রশ্ন শুনে ভারি আশ্চর্য হলেন এবং ভাবলেন লোকটি নিশ্চয়ই বড় কিছু হবে। হাবিলদার বললেন নগেন্দ্র বাবু! আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর জানি না। তবে বড়বাবু নিশ্চয়ই জানেন, উনি এক্ষুণি এসে যাবেন! একটু অপেক্ষা করুন। বড়বাবু থানায় ঢোকামাত্র হাবিলদার পরম উৎসাহে নগেন্দ্রকে নিয়ে তার কামরায় ঢুকলেন এবং নিজেই নগেন্দ্রের হয়ে বড়বাবুকে সবকিছু খুলে বললেন, বড়বাবু মুচকি হাসলেন এবং বললেন শালাকে লকআপে ঢুকিয়ে ২৪ ঘণ্টা আটকে রাখো। তারপর সকালে ও নিজেই বুঝবে পুলিশের গাড়ি কুত্তায় কেন এবং কীভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় চিনে ছিল!

বিষয়: বিবিধ

১১৪৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

371536
০৯ জুন ২০১৬ দুপুর ০৩:০৬
হতভাগা লিখেছেন : বিএনপি-জামায়াত এখন ভালই চিনে পুলিশের গাড়ি
371546
০৯ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:০৪
শেখের পোলা লিখেছেন : পুলিশ বোধ হয় চিরকালই এমন।
371696
১১ জুন ২০১৬ দুপুর ০১:৪৮
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : বাংলাদেশের পুলিশগুলো মানুষের কাতারেই পড়ে না, তারা জন্তু জানোয়ারের মত কোনো এক প্রাণী।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File