জামায়াতের বাজার মূল্য
লিখেছেন লিখেছেন দুরবিন ১৭ মার্চ, ২০১৩, ০১:০২:৩৮ দুপুর
শাহবাগের তরুণ প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধী সীল লাগিয়ে জামায়াতকে নিলামে তুলে ছিল। প্রথম দিকে সীল যুক্ত জামায়াতকে কেউ কিনতে চায়নি। জামায়াত পণ্যটি ব্যবহার অযোগ্য হয়েছে বলে অনেকে আশার আলো দেখছিলেন। মাহমুদুর রহমান উদ্যোক্তা ব্লগারদের কয়েকজনের পরিচিতি প্রকাশ করলেন আমার দেশ পত্রিকায়। এর পর ঘটনা মোড় নিল ভিন্ন পথে ।
সমমনা ইসলামী দল গুলো বিক্ষোভের ডাক দিল। মিডিয়া সেই বিক্ষোভকে জামায়াতি তাণ্ডব নামে প্রচার করল। পর দিন হরতাল হল। তাও জামায়াতি হরতাল বলে মিডিয়া অতি উৎসাহের সাথে প্রচার করল। মানিক গঞ্জের এক গ্রামে পুলিশের গুলিতে এক গৃহবধু সহ মারা গেল ৪ জন। মিডিয়া প্রচার করল ‘ ইসলাম শেষ হয়ে যাচ্ছে’ এমন কথা বলে গ্রাম বাসীকে উস্কে দিয়ে জামায়াত এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যে গ্রামে জামায়াতের উল্লেখ যোগ্য সংখ্যক লোক বল নেই একটি ঘটনার পর সারা গ্রাম জামায়াতি বানিয়ে দিল । এ রকম উদাহারণ আরো অনেক আছে। শুরু হয়ে গেল জামায়াতের উচ্চ বাজার মূল্য ।
পশ্চিমা এবং আমাদের অতি বুদ্ধিজীবীরা যেমন সৌদী আরব আর ইসলামকে এক করে ফেলে। ঠিক তেমনি বাংলাদেশেও ইসলাম আর জামায়াতে ইসলামকে সাধারণ মানুষের কাছে এক করে ফেলা হল । এই কাজটা সুন্দর ভাবেই করেছে মিডিয়া।
সাঈদীর মামলার রায়ের পর সারা দেশে শুরু হয়ে গেল সাঈদী ভক্তদের জাগরণ। এই জাগরণ দেখে বিশ্ববাসী অবাক। সাঈদী ভক্তগণ এমন কাণ্ড ঘটবে ভুলেও কল্পনা করিনি কেউ । এখানেও জামায়াতীরা নিজেদের সাথে সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়েই রক্ত ঝরিয়েছে। বিশ্ব মিডিয়া পর্যন্ত খবরে হেড লাইন করেছে। ৫ জন পুলিশ আর ৬০ জন মারা গেছে । আমাদের দেশের জন্য এই সংখ্যা তেমন কিছু না। শত শত মানুষ মারা গেলেও আমরা গায়ে লাগাই না।
মহাজোট আর জামায়াতে খেলা শুরু হয়ে গেল রাজনীতির মাঠে। মহাজোটিদর মদদ করতে মাঠে আছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন। জামায়াতিদের অঘোষিত ভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ছোট ছোট ইসলামী দল গুলো। ইসলামী দল গুলোর সমর্থন দেখে গ্রাম পর্যায়ের ধর্মপ্রাণ মানুষ ইসলাম রক্ষায় জামায়াতের সাথে মাঠে নেমেছে।
বেগম খালেদার জিয়ার অনুপস্থিতে বিএনপি খেলা থেকে বাদ পড়ে গিয়ে ছিল। ফিরে খালেদা জিয়া সরকারের গণ হত্যা দেখে মর্মাহত হলেন। বিমান বন্দরে ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করলেন না। জামায়াতের ডাকা হরতালের পর বাড়তি একদিন হরতাল দিয়ে উচ্চ মূল্যে জামায়াতি জাগরণকে কিনে নিলেন।
আওয়ামী লীগ পড়ল নতুন বিপদে । জামায়াতকে কিনতে হলে হাসিনাকে আরো চড়া মূল্য দিতে হবে । বিদেশী কিছু মিডিয়ার রিপোর্টে এসেছে নতুন প্রজন্ম জাগিয়েছে শহরের তরুণ প্রজন্ম। জামায়াতিরা জাগিয়েছে গ্রামের সরল ধর্মপ্রাণ মানুষ। যা আগের কোন প্রকার আন্দোলনে দেখা যায়নি । গৃহযুদ্ধ লেগে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে কিছু বিদেশী মিডিয়া। কেউ কেউ আবার বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে মত দিয়েছে। বিচার-আচার রাজনীতির মাঠে এখন গৌণ । ভোটের হিসাবটাই মূখ্য মূখ্য । সব চেয়ে বড় কথা সরকার দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থাকায় তাদের মুখের ভাল কথাও জনগণ বিশ্বাস করতে পারছে না।
জামায়াতের আন্তর্জাতিক ও অর্থনৈতিক বাজার মূল্যও কম নয় ।
জামায়াতের সাথে ইসলামী ব্যাংকে অভিযুক্ত করায় মূল্যটা বেড়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবি’র পর মুসলিম বিশ্বের দেশ গুলোর আর এক উন্নয়ন সহযোগী হচ্ছে আইডিবি। আইডিবির ৩৫% শেয়ার আছে ইসলামী ব্যাংকে। মধ্য প্রাচ্যের দেশ গুলোর অনেক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংকের সাথে জড়িত। ইসলামী ব্যাংক ৩১% বৈদেশিক মুদ্রা কালেকশন করে। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক গুলো এখন অঘোষিত দেউলিয়া। আইডিবি ও মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাংক গুলোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেই ইসলামী ব্যাংকে হাত দিতে হবে। পরিণতি বিবেচনা করে কোন সরকারের পক্ষে আদৌ সম্ভব হবে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন। শাহবাগের ডামা-ঢোলের মধ্যে এ সব প্রতিষ্ঠান কি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে জানা যায়নি।
দাদা বলতেন “কাঁচা মরিচে ভিটামিন ‘সি’ আছে। যত ইচ্ছে খাও । যদি পরের দিন সকালে সহ্য করতে পার”
জামায়াত সরকারে না থেকেও ওআইসি কে প্রভাবিত করার যোগ্যতা রাখে। তুরস্ক-মিশর ইতিমধ্যেই স্বেচ্ছায় নাক গলিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর সাথে রাজপরিবারের ভাল সম্পর্ক ছিল। সাম্প্রতিক কালে এ সম্পর্ক কোন পর্যায়ে আছে জানা যায় না। সৌদি আরবের প্রবাসীরা এখন এক প্রকার অভিভাবক হীন । নানান সমস্যায় ভোগছে এখানকার ২৪ লাখ প্রবাসী। নাই কোন সমাধানের উদ্যোগ। আজ যে মসজিদে জুমার নামাজ পড়লাম সেখানে জামায়াতিরা বাঙ্গালিদের মাঝে লিফলেট বিলি করেছে। তারা ম্যান টু ম্যান কন্টাক্ট করছে। সরকার চলে ডালে ডালে । জামায়াত চলে পাতায় পাতায়। জিতবে কারা সেটা সময়ই বলে দেবে। কারণ সময়ের উপরই আমাদের নির্ভর করতে হয়েছে। জামায়াতের আন্তর্জাতিক মূল্য কত একমাত্র সরকারই বলতে পারবে।
বিষয়: রাজনীতি
১১০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন