যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় তৎপর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক!

লিখেছেন লিখেছেন দুলাভাই ২২ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:৪৩:৪৮ রাত

যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় কাজ করছে ব্রিটেন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সন্দেহ করছে, বিচার বানচাল করতে মানবতাবিরোধী অপরাধে ‘অভিযুক্ত’ মীর কাশেম আলী যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্ট ফার্মকে ২৫ মিলিয়ন ডলার (২০০ কোটি টাকা) এই ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করেছেন। অর্থপাচার আইনে এটা গুরুতর অপরাধ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, “স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করতে তথ্য চাওয়া হয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে। কয়েক দফা এ নিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে তাদের। চিঠিতে তাদের প্রত্যেক গ্রাহকের তথ্য (কেওয়াইসি) জানাতে বলা হয়েছে। কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বিষয়টিকে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। এর ফলে আমরা ধরে নিতে পারি, এই ব্যাংকের মাধ্যমে মীর কাশেম আলী লবিস্টের টাকা লেনদেন করেছেন। এটি প্রমাণিত হলে চার লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক।”

সূত্রগুলো নিশ্চিত করছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে কাজ করতে ২০১০ সালে অক্টোবর মাসে ওয়াশিংটনের ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে জামায়াতের নেতা মীর কাশেম আলী চুক্তি করেন। এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা হচ্ছেন সাবেক মার্কিন কংগ্রেসম্যান মার্টিন রুশো। তিনি ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের প্রধান নির্বাহী। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিতে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন মীর কাশেম আলী আর ক্যাসিডির পক্ষে স্বাক্ষর করেন এন্ড্রু জে ক্যামিরস।

বিষয়টি জানতে পেরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মানিলন্ডারিংয়ের বিষয়টি আমলে নিয়ে মীর কাশেমের লবিস্ট ফার্মকে ২০০ কোটি টাকা দেওয়ার বিষয়টি অনুসন্ধান করতে শুরু করে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া হয়। কোন ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়েছে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় চিঠি পাঠানো হয়।

সূত্র জানায়, দীর্ঘ নয় মাস দুদকের অনুসন্ধানে বিষয়টি বেরিয়ে আসে। এ বিষয়ে দুদক তদন্ত কর্মকর্তা যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামি মীর কাশেম আলীকে জেলগেটে ঘণ্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক দুদকের প্রথম চিঠির জবাবে জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা পর্যবেক্ষণ করে কোন ব্যাংকের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্ট ফার্মকে অর্থ পাঠানো হয়েছে তা চিহ্নিত করতে পারেনি। তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভীরভাবে অনুসন্ধান কাজ অব্যাহত রাখবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাথমিকভাবে মনে করছে, ২৫ মিলিয়ন (আড়াই কোটি) মার্কিন ডলার মধ্যপ্রাচ্যে মীর কাশেম আলীর ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো হয়েছে। দেশ থেকে টাকা পাঠালে সহজে ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে মীর কাশেম মধ্যপ্রাচ্য থেকে টাকা পাঠানোর কৌশল অবলম্বন করতে পারেন।

সূত্র বলছে, এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক দফা মীর কাশেম আলীর ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডকে চিঠি দিয়ে মীর কাশেম আলীসহ এর সব গ্রাহকের বিস্তারিত তথ্য জানতে চায়। কিন্তু কৌশলে ব্যাংক অদ্যাবধি সে ব্যাপারে কোন তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে জানায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকও বিষয়টি নানা কারণে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে পারছে না।

তবে আরেকটি সূত্র বলছে, সিটি ব্যাংক-এনএ-এর মাধ্যমে মীর কাশেম আলী লবিস্টের টাকা পরিশোধ করতে পারেন।

সূত্র বলছে, মানি লন্ডারিং নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কোনো অর্থ বিদেশে পাঠানো হলে তা মুদ্রাপাচার হিসেবে বিবেচিত হবে। সেই হিসেবে মীর কাশেম আলী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করেছেন।

এ ব্যাপারে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান বিটপী দাশ চৌধুরী বলেন, “এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয়। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা যথাযথভাবে পরিপালন করে থাকি। তবে এ ব্যাপারে আমি এখনই কোনো মন্তব্য চাচ্ছি না।”

বিষয়: বিবিধ

১৪৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File