ইসলামিক ক্রয়-বিক্রয় ও আমার দৃষ্টিভঙ্গী – ৩

লিখেছেন লিখেছেন বুড়া মিয়া ২৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:৫০:০০ দুপুর

এসব ব্যবসার নামে ব্যবসায়ীরা যে দালালীটা করে, তা তো দালালী হিসেবে ইসলামী দৃষ্টিতে পরিত্যাজ্যই; এমনকি হিসাবেও এটা অসাড় সবার কাছেই অনেকটা এরকমভাবেঃ

১ কেজি খেজুর = ১ কেজি খেজুর

১ দিনার = ১ দিনার

এখানে ক্রেতা বিক্রেতা দুইজনেরই পরিশ্রম লাগবে খেজুর বা দিনার উৎপাদন করতে, তাই হিসাব সবদিক থেকেই সমান হওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত। যে কেউ সমগোত্রীয় জিনিস বিনিময় করতে যাবে, সমপরিমাণই পাবে বা আশা করবে। কিন্তু মানুষের প্রয়োজনের সুবিধার্থে এই দুইটা জিনিসকে একত্র করে হিসাব-নিকাশ সহজ করতে গেলেই সমস্যা বেধে যায়, এভাবেঃ

১ কেজি খেজুর = ১ দিনার = ১ কেজি খেজুর

১ দিনার = ১ কেজি খেজুর = ২ দিনার

উপরের প্রথম হিসাব বা ‘১ কেজি খেজুর = ১ দিনার = ১ কেজি খেজুর’ মেনে নিতে কারও সমস্যা হওয়ার কথা না, কারণ ১ দিনার হচ্ছে এখানে মাপকাঠি বা দাড়িপাল্লা, কম বেশি না হওয়ার জন্য; এখানে দুই পাশের খেজুর সমগোত্রীয় আর মাপকাঠি মাঝের ১ দিনার। দুইজন পরিশ্রমী লোক খেজুর উৎপাদন করে, আর নিজেরা তার প্রক্রিয়া সম্বন্ধে ভালোভাবেই অবগত তাই ১ দিনারে ঐ পরিমাণ মেনে নিতে তাদের কোন সমস্যা হবে না। এখানে কি কেউ মানবে যে ১ কেজি খেজুর = ১ দিনার = ৫০০ গ্রাম খেজুর? কেউ মানার কথা না, প্রয়োজনে বাজারে মারামারি লেগে যাওয়ার কথা কেউ এরকম করলে!

ব্যবসায়ী যে, সে কিন্তু পরিশ্রম করবে না খেজুর উৎপাদনেও, তার কাছে আছে ১ দিনার এবং এই ১ দিনার বিনিয়োগ করে সে সমগোত্রীয় ১ দিনারই পেতে পারে, মাঝে মাপকাঠি হিসেবে খেজুর বা অন্য যা কিছুই ধরুক; কিন্তু সে এটা মানবে না! সে বলবে ১ দিনার খেজুরে বিনিয়োগ করলে ২ দিনার হতে হবে, নইলে আমি ব্যবসা করবো কেনো? কেনো এখানে দিনার সমগোত্রীয় না? আর এই ১ দিনার বিনিময়ের জন্যই কি মাঝখানে খেজুরকে মাধ্যম হিসাবে আনা হয় নাই? তাহলে ১ দিনার = ১ কেজি খেজুর = ১ দিনার না হয়ে, ১ দিনার = ১ কেজি খেজুর = ২ দিনার কিভাবে হবে?

যাক এটা গেলো তাদের মানসিক সমস্যার ব্যাপার কেননা, তারা এরকম সহজ হিসাব বুঝেও বুঝতে চায় না, উল্টো আরও দুধ কলা খাইয়ে পোলাপান লাগিয়ে দেয় ক্রিমিনালী করে বের করার জন্য যে ১ দিনার = ১ কেজি খেজুর = ১ দিনার-কে কিভাবে ১ দিনার = ১ কেজি খেজুর = ২ দিনার হিসাবে সবাইকে মানানো এবং বোঝানো যায়; এগুলোই ক্যাপিটালিষ্টদের ইকোনোমিক্স, এ্যকাউন্টিং, ফিনান্স; আর সব আসলে মূলত ম্যাথ, বিভিন্ন নামে গ্যাঞ্জাম পাকিয়ে রেখেছে যাতে দুর্বোধ্য হয় সবার কাছে এবং ফাপড়বাজী করা যায় এসবের নামে!

এছাড়াও, এর আগের একটা পোষ্টে কুর’আনের একটা আয়াতের কিছু উল্লেখ করেছিলাম বাংলায় আমার মতো করে, যেখানে মুসলিমদেরকে দুর্গম গিরি পথে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে বলে বলেছিলাম, আর দুর্গম গিরিপথে চলার একটা বিষয় ছিলো দাস-মুক্তির ব্যবস্থা করা। আমাদের বিনাশ্রমে লাভ করার ব্যবসায়ীরা যা করে ম্যানেজমেন্ট এবং লেবার নিয়ে, তা-তো সোজা কথায় বলতে গেলেঃ দাসত্বের শৃংখলে আবদ্ধ করে মানুষদের, এখানে মনে হয় কেউ-ই দ্বিমত করতে পারবে না যে, চাকরী একটা চরম দাসত্বের শৃংখল, এবং শব্দটাও উদ্ভুত চাকর বা দাস থেকেই!

আপনার যতোই প্রয়োজন থাকুক ছুটির বা অন্যদের থেকে বেশী রেষ্টের, আপনার কোন উপায় নেই, শৃংখলিত আপনাকে হতেই হবে চাকরীতে, শৃংখলিত না হলে চাকরী ছেড়ে দিতে হবে অথবা চাকরী থেকে বরখাস্ত করা হবে, এটা তো দেখা যাচ্ছে দাসত্বের চাইতেও ভয়াবহ কিছু, তাই না? আগের যুগের দাস-তো থাকার খাওয়ার সুযোগ পেতো অন্য মালিকের কাছে বিক্রি হওয়ার আগ পর্যন্ত; এখানে চাকরীতে ওই চান্সও নাইঃ রাস্তায় গিয়ে ঘুরে বেড়াও গিয়ে চাকরী না পেলে, নইলে ফুটপাতে গিয়ে ঘুমাও; থাকন খাওনেরও রিস্ক নিবে না কোন ব্যবসায়ীরা-ই লাভ করার সন্ধান না পেলে! অফিস-ফ্যাক্টোরীতে পরিশ্রমের সময় নিয়ে তো মনে হয় কিছু বলতে হবে না, জাগ্রত জীবনের বলতে গেলে পুরাটাই এখানে ব্যয় করতে হয় চাকরীজিবী নামক এসব আধুনিক দাসদের! ৮ ঘন্টা ঘুম, ৮-১২ ঘন্টা অফিস ফ্যাক্টোরীতে কাজ, বাকী থাকে আর কি?

দাস-মুক্তি মানে কি? আমার ইচ্ছামতো কাজ করে খাওয়ার মতো ব্যবস্থার অবস্থানঃ এটা-ই না? আর এটা করতে গেলে অবশ্যই মুক্ত দাসকে এমন ব্যবস্থা করে দিতে হবে, যাতে করে সে কারও অধীন না হয়েই উপার্জন করে জীবনধারণ করতে পারে অন্যের শৃংখল ছাড়াই, না-কি অন্য কিছু? আমাদের ব্যবসায়ীরা কি করে? দাসত্বের চুক্তি করে নেয় তারা দাসদের সাথে এ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটারের মাধ্যমে, যার থেকে সামান্যও বিচ্যুত হওয়া যাবে না! এটা কেনো করে, তা অন্যান্য এবং এর ঠিক আগের পোষ্টেও আলোচনা করেছিলামঃ শুধুই বিনাশ্রম লাভের চিন্তায়!

আগের পোষ্টে বলেছিলাম আমার যুক্তিমতো যে, তারা যা করে তা সুদের চাইতেও ভয়াবহ কিছু এবং এরকম লাভের ব্যবসা হালাল কি-না সে প্রশ্নও রেখেছিলাম; আর এখানে উপরের আলোচনায় দেখলাম তারা দুর্গম গিরিপথে তো প্রবেশ করলোই না, উল্টো আরও দাসত্বের চাইতেও ভয়াবহ শৃংখলে আবদ্ধ করলো স্বাধীন মানুষকে, নানা উপায়ে বাধ্য করে! কেনো? সে-তো একা একা তার সাধ্যমতো পরিশ্রম করে যতোটুক সম্ভব লাভ করতে পারতো ইচ্ছা করলে, তা না করে সে কেনো এরকম দাস নিযুক্ত করছে? এটা কি শুধুই দাসের রক্তচোষা লাভ করার জন্য না? যেই লাভে তার বিন্দুমাত্র অধিকার নাই – পরিশ্রমের হিসেবে!

এরকম ব্যবসা আর দাসত্বের শৃঙ্খলে স্বাধীন মানুষদের সুকৌশলে বাধ্য করে নিজেরদের রুজীকে হালাল বলে বোঝানোর চেষ্টা করে পার পাওয়া যাবে? সেটা অবশ্য বলতে পারা যাবে না এখনঃ তবে এভাবে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে, যারা করে তাদেরকে, এবং যৌক্তিক উত্তর খোজা যেতে পারে অন্যান্য জ্ঞানীদের থেকে!

বিষয়: বিবিধ

১৮৫৭ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

278184
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৫:২৫
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : আপনি ভাল অর্থনীতিবিদ। ইসলামের সাথে সব দিক ব্যালেন্স করে লেখার চেষ্টা করেন। ধন্যবাদ আপনাকে Good Luck
২৬ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৭:১৭
221980
বুড়া মিয়া লিখেছেন : হায় হায়! বলেন কি আপু, আমার মতো সবাই এভাবে অর্থনীতি ব্যাখ্যা করলে তো বর্তমানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার নামে চলা - অর্থনৈতিক-দাসত্বের শৃংখল ধ্বংস হয়ে যাবে।

যেভাবে মনে চায় লিখে ফেলি, সময়ও কেটে যায় ভালোই ...

ধন্যবাদ আপনাকেও
294106
১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৫:৫১
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : আপনার অর্থনীতির চাকা হঠাত থেমে গেল কেন? Happy
২০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:২০
239475
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আমিও তো তাই ভাবছিলাম! ভাইয়া কেনো লিখা বন্ধ করলেন?Happy
296041
২০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৩২
২০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪০
239479
মনটা আমার বাঁধনহারা লিখেছেন : কি মন্তব্য করেছিলেন?! Rolling Eyes Rolling Eyes
২১ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩২
239753
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : মন্তব্য না !একটা ইসলামিক অর্থনীতির উপর বইয়ের লিংক দিয়েছিলাম! কিন্তু হয়নিCrying
296044
২০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪১
মনটা আমার বাঁধনহারা লিখেছেন : তিনটি পর্বই একসাথে পড়লাম! পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। Happy
361502
০৫ মার্চ ২০১৬ রাত ০৮:৫১
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : ব্লগে আসার অনুরোধ থাকল

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File