ইসলামিক ক্রয়-বিক্রয় ও আমার দৃষ্টিভঙ্গী – ১

লিখেছেন লিখেছেন বুড়া মিয়া ২৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:১১:৫৭ সকাল

রাসূল (সা.) এর হয়তো অনেক বর্ণনা রয়েছে ক্রয় বিক্রয় (ব্যবসা) নিয়ে, তার খুব সামান্যই আমি পড়েছি; এ সামান্যের মধ্যে একটা ক্রয়-বিক্রয়ের উদাহরণ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করবো, লাভ বলতে কিছু ছিলো কি-না সেসব ট্রেডে।

আমার কাছে ১ কেজি খেজুর আছে আমি তা বাজারে নিয়ে বিক্রি করলে ১ কেজি খেজুরই বিনিময় হিসেবে পাবো আমি, হাদীসে মনে হয় এভাবেই বলা আছে। তৎকালীন অনেক ক্রয় বিক্রয় খেজুর দিয়েই হতো অর্থাৎ, খেজুরই অনেক ক্ষেত্রে ছিলো বিনিময় মুদ্রা। এখানে আমি যে খেজুর মাথায় করে পরিশ্রম করে বাজারে নিয়ে গেলামঃ

আমার লাভ কই? আমার ১ কেজি খেজুর এর মূল্য ১ কেজি খেজুরই কেনো? আমার পারিশ্রমের মূল্য কই? আমিতো ৩ মাইল মাথায় করে হেটে বাজারে নিয়ে আসলাম খেজুর, আরেকজন ঘর থেকে দুই কদম হেটে বাজারে খেজুর নিয়ে এসেছে, দুইজনের পরিশ্রমওতো সমান হয় নাই, তা-ও কি ১ কেজির বিনিময় ১ কেজি-ই? সম্ভবত তাই-ই!

এবার এটাকেই মুদ্রায় কনভার্ট করলে যা হবেঃ আমার ১ কেজি খেজুরের দাম ১ দিনার, আমি প্রথমে বেচবো ১ দিনারে, তারপর আবার আরেকজনের কাছ থেকে ক্রয় করবো ১ দিনার দিয়েই; এখানেও কোন লাভ হবে না; তাহলে মানুষ ব্যবসা করতে যাবে কি দুঃখে? খুব সম্ভবত মুসলিমরা তাদের প্রয়োজন হলেই ক্রয়-বিক্রয় করবে, ব্যবসার নামে ফাও লাভ করতে ক্রয়-বিক্রয় করবে না! আমার বোঝায় কি কোন ভুল হয়েছে, ব্যবসা বা ক্রয়-বিক্রয় সম্বন্ধে? খেজুর ছাড়া অন্যান্যগুলোও একই এবং সেখানেও এরকমভাবে হিসাব করলে কোন লাভ বের করা যাবে না খুব সম্ভবত।

যদি খেয়াল করি আমরা কি করি তবে দেখা যায়, খাজুরিয়া থেকে ১০ টাকা কেজিতে খেজুর এনে ১২ টাকায় বেচি, ২ টাকা লাভ পকেটে ভরে আবার ১০ টাকা খাজুরিয়াতে পাঠিয়ে খেজুর আনি এবং বেচতে থাকি ১২ টাকায়, এভাবে চলতে থাকে এবং এটা সর্বদা চালানোর জন্য আমাদের বাসস্থান-ই বানিয়ে ফেলি বাজার-কে, ঘুম ছাড়া ঘরে আর ফিরি না – বাজারই যেন আমাদের ঐকান্তিক ঠিকানা!

আমি খেজুর আনলাম ১০ টাকার, উপরের দিনারের বা খেজুরের দেখানো হিসাবে আরেকজনের কাছ থেকে আমার ১০ টাকাই নেয়ার কথা, ১২ টাকা কোন হিসাবে নিচ্ছি? কারণ আমাদের চিন্তাই লাভের চিন্তা, আর এরকম চিন্তাধারার কারণে আমাদের ঠিকানাই হয়ে গেছে নিকৃষ্টতম স্থান – বাজার, তবে সেখানেও কনষ্ট্যান্ট লাভের নিশ্চয়তা নেই আমাদের! আর বাজারে আমি কি করছি, মধ্যস্ততাকারী হিসেবে লাভ করা ছাড়া? এটাকে অন্যভাবে বললেঃ আমি দালাল, আর এরকম দালালীও তো মনে হয় ইসলাম ধর্মে নিষেধ আছে।

এরকম বাজার শুধু কারওয়ান বাজার বা মীনা বাজার-ই না, আমাদের সব অফিস এবং ফ্যাক্টোরীই এখন এরকম বাজার; ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘুম ছাড়া ৪ টা ঘন্টাও আমাদের কারও নেই চিন্তা করার বা অবকাশ নেয়ার! অফিস-ফ্যাক্টোরীগুলা সব লেবারদের বাজার, আর লেবারদের (ম্যানেজমেন্টও) শ্রমের ফল বেচার (পণ্য বা সেবা) মধ্যস্ততাকারী দালাল হচ্ছে সেসবের মালিকগণ!

আমরা নিজেরাই মনে হয় বাসস্থান হিসেবে বেছে নিয়েছি (অথবা অন্যদের বাধ্য করেছি) নিকৃষ্টতম স্থানঃ বাজার, তাই কি-না? মনে হয় তাই – শুধুই লাভের জন্য আর কি! আমাদের রব লাভ দিচ্ছেন, না-কি আমরা আমাদের জীবনের অধিকাংশ সময় ও শ্রম বিসর্জন দিয়ে অর্জন করছি?

এরকমভাবে লাভের জন্য ব্যবসা করা হালাল? না-কি একান্ত প্রয়োজন হলে সমান সমান হিসেবে ক্রয়-বিক্রয় হালাল? আমার মনে হয় এখানে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হয় পরিশ্রমের মাধ্যমে উৎপাদনের জন্য, যাতে করে সবাই সেসবের মর্ম বুঝে যথাযথ মূল্য প্রদান করতে পারে।

বিষয়: বিবিধ

১৭৬৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

277779
২৪ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১:২৭
কাহাফ লিখেছেন :
উদ্দিষ্ঠ বিষয়ে আমার জানা কম,তবে...
হাদীসের আলোচনা ব্যবসা সংক্রান্তই।এখানে সমগোত্রীয় জিনিসের বেচা-কেনার ক্ষেত্রে হুকুম বর্ণিত হয়েছে, অর্থাৎ এক ই ধরণের বস্তু বেচা-কেনায় কম-বেশী সুদ হিসেবে গণ্য হবে,অন্যথায় নয়। যেমন-১কেজি খেজুরের বিনিময়ে ১কেজি খেজুর ই বেচা-কেনা যাবে,কম-বেশী করা যাবে না।কিন্তু মুদ্রায় বেচা-কেনার ক্ষেত্রে মুল্যমান নির্ধারিত নেই,যত ইচ্ছা কম-বেশী করা যাবে।
২৪ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:০৩
221703
বুড়া মিয়া লিখেছেন : মুদ্রায় কমবেশী করা গেলে নিশ্চিতভাবে ওজনে কম-বেশিও জায়েয! এইখানে আরেকটু আলোচনা করেছি।
277820
২৪ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৪
মামুন লিখেছেন : লেখাটি খুব ভালো লেগেছে। অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইলো। জাজাকাল্লাহু খাইর। Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up Rose Rose Rose
২৫ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:১৪
221810
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ধন্যবাদ মামুন ভাইকেও
283274
১১ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:১৮
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : সুন্দর পোষ্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File