অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা - ১৩
লিখেছেন লিখেছেন বুড়া মিয়া ১৫ অক্টোবর, ২০১৪, ০৭:০৬:২৩ সন্ধ্যা
পূজিবাদীদের চরিত্র নিয়ে এর ঠিক আগের এই পোষ্টে কার্ল মার্ক্সের একটা অংকের আলোকে হিসাব করেছিলামঃ কিভাবে লাভ করা হয় মানে, কিভাবে কিছুই (লাভ) নাই এর মধ্যে থেকে কিছু (লাভ) বের করা হয়! এটা বোঝার জন্য আধুনিক ফিন্যান্স, ইকোনোমিক্স এর কিছু প্রাথমিক তত্ত্ব জরুরী শুরুতেই ব্যাখ্যা করা (যদিও এটা সবাই অন্যভাবে বুঝে থাকে, এইসব নাম ছাড়াই)।
অপর্চুনিটি কষ্ট অফ ইনভেষ্টমেন্টঃ এটা হচ্ছে এমন একটা এ্যামাউন্ট অথবা রেইট যা দুইটা অল্টারনেটিভ এর মধ্যে কোনটা বেশী প্রফিটেবল, তা বোঝার জন্য ব্যবহার করা হয়, যেমনঃ আমার কাছে ১০০ টাকা আছে, ব্যাংকে রাখলে সুদ পাবো ১০ টাকা আর পাওয়ার-প্ল্যান্ট বানালে ইনকাম করতে পারবো ১৫ টাকা। এখানে একটার জন্য অন্যটার রেইট হচ্ছে অপর্চুনিটি কষ্ট।
ইকোনোমিক প্রফিটঃ নরমাল ফিনান্সিয়াল-ষ্টেইটমেন্ট এ প্রফিট এ্যান্ড লস এ্যাকাউন্ট বা ইনকাম-ষ্টেইটমেন্টের বটম লাইন হিসেবে যে নেট প্রফিট দেখা যায় তাকে বলে এ্যাকাউন্টিং প্রফিট। এই এ্যাকাউন্টিং প্রফিট থেকে অপর্চুনিটি কষ্ট অফ ইনভেষ্টমেন্ট বাদ দিলে যেটা বের হয়, তাকে ইকোনোমিক ভ্যালু এ্যাডেড বা ইকোনোমিক প্রফিট বলে। যেমন উপরে বর্ণিত পাওয়ার প্ল্যান্টে ইনভেষ্ট করলে ইকোনোমিক প্রফিট বা ভ্যালু এ্যাড হবে ১৫-১০=৫ টাকা। আর পাওয়ার প্ল্যান্ট বাদ দিয়ে সুদে ইনভেষ্ট করলে ইকোনোমিক লস হবে ৫ টাকা।
কষ্ট অফ ক্যাপিটালঃ যদিও কারেন্সী কোন ক্যাপিটাল না, তথাপি মানুষ একে ক্যাপিটাল হিসেবে জেনেই এর পেছনে ছোটে, তাই কারেন্সীকে মানি-ক্যাপিটাল ধরে ক্যাপিটালিষ্টরা বের করে কষ্ট অফ ইক্যুইটি (লোন আসবে না এখানে, নিজের ক্যাপিটাল শুধু), এটা অবশ্যই সুদের চাইতে বেশী হতেই হবে ক্যাপিটালিষ্টদের মতে, এর হিসাবের জন্য বেশ কিছু মডেল আছে তবে বোঝার জন্য সবচাইতে সহজ সাধারণ সুদ, কারণ ক্যাপিটালিষ্টদের বেঞ্চমার্ক হিসেবে সর্বনিম্ন পয়েন্ট মার্কেটের সুদ; এর চাইতে নীচে হলেই ফাইন্যান্স বা ট্রেজারী ডিপার্টমেন্ট রিপোর্ট করবে ক্যাপিটালিষ্টকে যে, আপাতত দীর্ঘমেয়াদে সুদই উত্তম, ক্যাপিটালিষ্টও অনুমতি দিবে তাহলে টোটাল-ফান্ড সুদ ইনকামের জন্যই ইনভেষ্ট করা হোক। আর যদি দেখা যায় শর্ট টার্মে সুদ লাভজনক হলেও লং টার্মে ব্যবসাতেই রিটার্ণ বেশি আসাটা প্রায় নিশ্চিত, তবে ব্যবসা চলবে।
আউটসোর্সঃ একটা লোক কোন জিনিস কারও কাছ থেকে কিনবে না-কি নিজে বানিয়ে নেবে, তার জন্য হিসাব-নিকাশ করে এভাবেঃ আমি যদি কাপড় বানাই তাতে আমার মাল লাগে ৪২০ টাকার আর আমি যে পরিশ্রম করবো তার দাম মানুষ আমাকে দেয় ১৩০ টাকা উপরের লিঙ্কের পোষ্টে দেখানো হিসাবে। আমি যদি এখন কাপড় বাইরে থেকে কিনতে চাই তবে ৫৫০ টাকায় পেলে সেটা কিনবো, কিন্তু এর চাইতে বেশি হলে কিনবো না, কেননা আমি নিজেই এর চাইতে কমে বানিয়ে নিতে পারি। এই রকমের ডিসিশনকে বলা হয় আউটসোর্সিং-ডিসিশন বা মেইক অর বাই ডিসিশন।
এই যে উপরের ৪ টা কন্সেপ্ট, এগুলো বর্তমান ব্যবসায়িক জগতে চরমভাবে ব্যবহৃত কিছু কন্সেপ্ট। এটা যে শুধু সংঘবদ্ধ-ব্যবসায়ীদের জগতে তাও না, ব্যক্তিগত ক্ষেত্রেও সাধারণ মানুষের একই আচরণ! এই মুহুর্তে যদি সবাই শুনে অমুক জায়গায় ২০% পাওয়া যায়, তবে চোখ বন্ধ করে সবাই সেখানে দৌড়াবে যদি ব্যাংকে সুদ ১৫% দেয়! এমনভাবে সাধারণদেরও দৌড়ানোর বিভিন্ন ইতিহাস আমরা জেনেছি এ দেশের – জিজিএন, বিজনাজ, ইউনিপে, ডেস্টিনি, ইত্যাদীর সুবাদে। কেউ যদি শুনে ২০ টাকার মাল ১৫ টাকায় ডিসকাউন্টে ছাড়তেছে সব একইভাবে দৌড়ায়!
এর আগের এই পোষ্টে জেনেছি টাকা কি। এটার পেছনো মানুষের ছোটা যাদুগ্রস্তের আচরণের মতোই! মানুষ এভাবে যাদুগ্রস্ত বিধায় এ সিষ্টেমটা ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে চালিয়ে নিচ্ছে ক্যাপিটালিষ্টরাই এবং চালানো হবেও যতোদিন পারা যায়, কারণ এতে ক্যাপিটালিষ্টদের অনেক আরামের জীবন যাপন হয় বাকীদের খুব সহজে এতে মোহিত রেখে বা বাধ্য করে চুষে খেয়ে!
১ আউন্স গোল্ড ১০ বছর গেলেও ২ আউন্স হবে না (ব্যাংকের ভল্টেও না) এবং ১ আউন্সের বিনিময়ে ২ আউন্স কেউ দিবেও না এমনকি আশাও করে না কেউ এটা, নতুন করে গোল্ড প্রোডাকশন হলেও যার কাছে ১ আউন্স আছে তাকে কেউ ঐ ১ আউন্স ধরে/ব্যাংকে রাখার কারণে আরেক আউন্স দিবে না! কিন্তু ১ টাকা ১০ বছর পরে ১০% এ্যানুয়াল-কম্পাউন্ডিং এ ২.৫৯ হয়ে যায় (ব্যাংকের ভল্ট থেকে বেরিয়ে গিয়ে এবং মার্কেটে টাকা প্রিন্ট করা না থাকলেও), এটাই রিটার্ণ অন ক্যাপিটাল অথবা বলতে পারি মিনিমাম কষ্ট অফ ক্যাপিটাল! পূজী বিনিয়োগ করবো রিটার্ণ আসবে না কেনো, আমার পূজীর কি কোন দাম নাই? এই চিন্তার চুড়ান্ত ফল এই সুদ ব্যবস্থা! আর ট্রেডের মাধ্যমে ফাইনান্সিয়াল লাভ, সেটা যে প্রকাশ্য ঠকবাজী তা এই পোষ্টে হিসেব করেই বুঝেছিলাম।
দাউদ (আ.) রাজা বর্ম বানিয়ে বেচতো, আর রাজার পরিশ্রম বর্মের গায়ে লেগেছে বলে সেটার দাম বেশি হয় নাই বাজারে; আবু বকর (রা.) কাপড় অথবা এরকম কি যেন বেচতো, আর খলিফার শ্রম সে কাপড়ে লেগেছে বিধায় কাপড়ের দাম বাড়ে নাই! মুসলিমদের সম্মিলিত পরিশ্রমের ফল কি, তা যুদ্ধকে ইনভেষ্টমেন্ট প্রজেক্ট হিসেবে ধরে এই পোষ্টে দেখেছিলাম ইনকাম বা গণিমত কেমনে ভাগ হতো আর সেখানে ডিভিশন অফ ফাইটার বা লেবারও ছিলো! আর যদি কারও মনে হয় আমার যোগ্যতার কি কোন দাম নাই? আমি কি তার চাইতে বেশী যোগ্য নই? তবে তার আরও মনে করতে হবে কারূনের ইতিহাস, যোগ্যতার মাধ্যমে কারূন এর অর্জনের কাহিনীও আমরা জেনে নিতে পারি ইতিহাস গ্রন্থ থেকে।
রাসূল (সা.) এর ব্যবসার কোন ইতিহাস জানতে পারি নাই নবুয়্যতের পরে, তবে জেনেছি নবুয়্যতের আগে উনি করছেন, আর সুরা দুহা-তে বলা আছে ....পথভ্রষ্ট ছিলে, পথের সন্ধান দিয়েছিলাম ...., উনার ঐ আগের ব্যবসার লাভের প্রতিযোগিতা কি এই পথভ্রষ্টতার মধ্যে পড়বে? কারণ, উনি তো নবুয়্যতের পরে ব্যবসা করেন নাই বলে জানি, সবাই ভাগ-যোগ করে পরিশ্রম করেই খেয়েছেন, নয়তো যুদ্ধ প্রজেক্ট থেকে গণিমত সমতার ভিত্তিতে বন্টন করে খেয়েছেন! মদীনায় হিজরতের পর আনসার যাদের ছিলো জায়গা জমি তারা দিয়ে দিয়েছে মুহাজির যাদের নাই তাদেরকে, এরপর সম্মিলিতভাবে পরিশ্রম করে খেয়েছেন এবং কোথাও কম পড়লে দানও করে গেছেন! সুন্নত কোনটা নবুয়্যতের আগের গুলাও, না-কি শুধু পরের গুলা? এ বিষয়টা আমার কাছে এখনও পরিস্কার হয় নি!
ইসলামী অনেক বিষয়ের অবতারণা করে ফেললাম, যেহেতু আবু সাইফ ভাই এবং সবুজ ভাইয়ের রেসপন্স পেয়েছি এর আগের প্রতিযোগিতার পোষ্টে; ব্যাপারগুলো আরও পরিস্কারভাবে বোঝার জন্য, তাই এসব জিজ্ঞাসা।
যাই হোক আবার আসি ক্যাপিটালিষ্ট ছলিমদের আলোচনায়ঃ ক্যাপিটালিষ্ট ছলিমদের কাছে আছে শুধু টাকা যা ওরাই সিষ্টেমে হাতিয়ে নিয়েছে কোন পরিশ্রম ছাড়াই! আর যেহেতু তারা জানে অনেক মানুষই এ টাকার দ্বারা যাদুগ্রস্ত এবং এর জন্য দাসত্ব বরণ করতেও দ্বিধাবোধ করে না, তাই তাদেরকে তারা অনেক সময়ই ব্যবহার করেঃ তবে এ অনেক সময়টা হচ্ছেঃ তাদের লাভ অবশ্যই অপর্চুনিটি কষ্ট অফ ইনভেষ্টমেন্টের চাইতে বেশি হতে হবে বা সোজা কথায় সুদের চাইতে বেশি হতে হবে। ফিনান্স-ইকোনোমিক্সের ষ্টুডেন্ট যারা আছে, তারা প্রজেক্ট-আপ্রেইজাল এর ম্যাথ করে, সেখানে প্রেজেন্ট ভ্যালু, টার্মিনাল ভ্যালু, ইত্যাদী বের করে এই অপর্চুনিটি কষ্ট অফ ইনভেষ্টমেন্ট এর রেইট ব্যবহার করে ইকোনোমিক প্রফিট বের করার জন্য; প্রজেক্ট ভায়াবল হয় তখনই, যখন প্রজেক্টের বেনিফিট সুদকে এক্সিড করে, অন্যথায় প্রজেক্ট বাদ – মানুষ বাচুক নয় মরুক, প্রয়োজনে কোম্পানী বন্ধ করে দেয়া হবে!
এই ছলিমদের ব্যবসা ঐ চা-পান দোকানদার কিংবা চাউলের খুচরা আড়তদারের মতো হয় না; তাদের ব্যবসা মানেই কর্পোরেট কালচার সমৃদ্ধ এক হৈ-হুল্লোড় ব্যাপার স্যাপার! সেখানে তারা একেকজনকে কম যোগ্য বেশী যোগ্য ক্লাস করে (ডিভিশন অফ লেবার) বেতন দিয়ে থাকে। এর কারণ হচ্ছেঃ যে বেশি বেতন পাবে (ধরলাম সি.ই.ও) সে যেন তার ঠিক নীচের গুলোকে দৌড়ের উপর রাখে ক্যাপিটালিষ্টদের প্রদত্ত বেনিফিট এর লোভে এবং ক্যাপিটালিষ্টদের ঝাড়ি খেয়ে, একইভাবে তার নিম্নেরগুলা তার নিম্নদের ঝাড়বে সবসময়, তার নিম্নেরগুলা তার নীচেরগুলাকেঃ ঝাড়ির টপ-ডাউন এ্যাপ্রোচ আর কি! এটাই চেইন-ম্যানেজমেন্ট ক্যাপিটালিষ্টদের, আবু বকর (রা.) দাউদ (আ.) রাজাদেরও ব্যবসার জন্য চেইন ম্যানেজমেন্ট লাগে-নি, লেগেছে সেটা শুধু যুদ্ধ প্রজেক্টে; নিজেরা না খেটে পরের খাটুনীতে খাওয়া কি, তারাও বুঝতো হয়তো।
সর্বনিম্নে যে সাধারণ লেবাররা রয়েছে ওরা বহন করবে এই সমস্ত ঝাড়ির পূর্ণ ভার – দুই বেলা সামান্য খাবার খাওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে! এই যে টপ-ডাউন এ্যাপ্রোচ ঝাড়ির, এটাকে কার্ল-মার্ক্স খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছে যে একেকজন যেন চীফ অফ আর্মি, কেউ ব্রিগেডিয়ার, কেউ কর্ণেল, কেউ লেফটেন্যান্ট আর সাধারণ লেবার সব সোলজার; জিতায়ও সোলজাররাই মরলেও সোলজারদের জন্যই মরে সবাই! এছাড়া আরেক শ্রেণীর লোক রয়েছে ক্যাপিটালিষ্টদের, ওরা ক্যাপিটালিষ্টদের ঘরের লোক, ওরা খালি হিসাব-নিকাশ করতে থাকবেঃ যেমনে সামগ্রিক ক্ষতি হয় আর ক্যাপিটালিষ্টদের লাভ হয়! আর এ জন্য ক্যাপিটালিষ্টদের বুদ্ধি দিতে থাকবে এইখানে এমনে মারেন ওইখানে ওমনে, এগুলো তামিলের জন্য ক্যাপিটালিষ্ট ছলিম আবার চীফ অফ আর্মি বা সি.ই.ও কে ঝাড়বে!
এই যে ম্যানেজমেন্ট শ্রেণী এদের একমাত্র উদ্দেশ্য প্রোডাকশন বাড়ানো লেবারদের দাবাড় এর উপর রেখে এবং নিজেদের প্রফিট বাড়ানো, আর কোন কাজ নাই এই ম্যানেজমেন্ট শ্রেণীর! লেবাররা কোথায় থাকে কি খায়, এ নিয়ে তাদের কারোই ভ্রুক্ষেপ নেই! এই প্রফিট যদি সবার মধ্যে সুন্দরভাবে ডিষ্ট্রিবিউশন হতো তাহলে কার্ল মার্ক্সরা বয়ান করতো না! কার্ল মার্ক্সরা বয়ান দিয়েছে শুধুই এই জন্য যে – এখানে ক্যাপিটালিষ্ট ছলিমরা লুটপাট করতেছে লেবারদের শ্রমের ফল! আর কেনোই বা চিল্লাবে না বলেন?
আমাদের এখানেও কি দেশের ৫০ লাখ লোককে কাপড় সেলাইয়ের কাজে লাগিয়েছে ওদের নিজেদেরকে পরাবার জন্য? না-কি দেশের মানুষের পরার জন্য? সব বিদেশীদের জন্য বানায়, আর এই কাপড়ের বিনিময়ে বিদেশীরা আউটসোর্সিং-ডিসিশনের মাধ্যমে যে প্রাইস দিচ্ছে ঐটা তো ওদের নিজেদের লেবার কষ্ট এখানে ট্রান্সফার করতেছে। এই লেবারদের কষ্টই এই পুরা সারপ্লাস, কিন্তু এখান থেকে লেবারদের বলতে গেলে কিছুই না দিয়ে, সামান্য কিছু ম্যানেজমেন্টের অন্যদের দিয়ে, আর বাকী গুলা নিয়ে ক্যাপিটালিষ্ট ছলিমরা ছুটছে বিদেশ পানে! কেমনে কি হলো এখানে? দেশের কি লাভ হলো? বরঞ্চ ট্রান্সফার করা লেবার কষ্ট নিয়ে ক্যাপিটালিষ্ট ছলিম ভেগে যাচ্ছে!
ক্ষেতে কামলা দিয়ে খেয়ে ঘুমালেও তো সব লেবারদের (ম্যানেজমেন্ট সহ) স্বাস্থ্য ভালো থাকতো! আর ছলিমের ঐখানে ১২ ঘন্টা দাসের জীবন যাপন করে ডেইলী ৫ কেজী গরুর গোশত আর ৫ কেজি মুরগী কিনতে পারার টাকা মানেজমেন্টের ওরাও পায় না! এছাড়াও কারও কারও চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে পশ্চাতদেশ ফ্ল্যাট হয়ে দুই সাইডে ফুলে যাচ্ছে আর সামনে পেট একদম নয় মাসের পোয়াতীর মতো হয়ে যাচ্ছে! ক্যাপিটালিষ্ট ছলিমতো এক অসাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরী করে সবাইকে খাটাচ্ছে এবং কিম্ভুতকিমাকার বানিয়ে ফেলতেছে মানুষগুলাকে দিন দিন! লেবারগুলো গরমের চোটে যাতে মরে না যায় – সেই জন্য ওরস্যালাইন খাওয়াচ্ছে একেকজনকে ৩ টা করে দৈনিক! এই হচ্ছে টোটাল প্রসেস এবং ডিভিশন অফ লেবার সমস্ত ছলিমদের! পরিবেশ ভালো করে না কেন? টাকা খরচ হইলেই লাভ কমে যাবে তাই লস করা যাবে না! ৩ ঘন্টা কাজ করাইয়া ছুটি দেয় না কেন? ওই একই কারণ লস হইয়া যায়! আর ছলিম কিন্তু ঐদিকে মাসে ১৫ দিন বৈদেশ গিয়া টার্কিশ বাথ নইলে ম্যাসেজ নিতেছে!
এইগুলা নিয়ে যে খালি মার্ক্সদের যুগেই চিল্লাইছে ব্যাপার তা না! আমাদের ড. ইউনুস সাহেব এই যুগেও বলেছেন – ম্যাক্সিমাইজ সোশ্যাল বেনিফিট! এইটার বয়ান আরম্ভ করলে ঐ ঘুরে ফিরে মার্ক্সদের বয়ান-ই চলে আসে!
এছাড়াও মার্ক্সের ঐ বইয়ে, লেবারদের ক্লাসিফিকেশনকে খারাপ বলে নাই, বরঞ্চ এরকম ডিভিশনে যে প্রোডাকশন ইফিশিয়েন্টলী হয়, সিনার্জিক বেনিফিট বেড়ে যায়, তাও বলেছ; ঐ বইয়ে ওর মূল বক্তব্য এরকম সোশ্যাল ইনজাষ্টিস তুলে ধরা যে, সব প্রোডাকশন করা হলো সম্মিলিতভাবে আর নিয়ে গেলো ছলিম এবং ম্যানেজমেন্টের অল্প কিছু লোক এবং একইসাথে ক্যাপিটালিষ্টদের তুলোধুনা করেছে সেখানে, এরকম ভাষায়ওঃ
Accumulate, accumulate! That is Moses and the prophets! "Industry furnishes the material which saving accumulates." Therefore, save, save, ie, reconvert the greatest possible portion of surplus-value, or surplus-product into capital! Accumulation for accumulation's sake, production for production's sake: by this formula classical economy expressed the historical mission of the bourgeoisie, and did not for a single instant deceive itself over the birth-throes of wealth. But what avails lamentation in the face of historical necessity? If to classical economy, the proletarian is but a machine for the production of surplus-value; on the other hand, the capitalist is in its eyes only a machine for the conversion of this surplus-value into additional capital.
ডিভিশন অফ লেবার দিয়ে টোটাল প্রোডাকশনের বেনিফিট সমাজের সবাই পেলে কেউ এসব নিয়ে কখনোই কিছু বলবে না এবং বলার যুক্তিও নেই আসলে; কিন্তু এগুলো নিয়ে বলাই হয় কারণঃ ছলিমরা অনেক যুক্তি দেখায় কিন্তু শেষে দেখা যায় সব শুধুই এ্যাকুমুলেশন আর পাচার, যাদের পরিশ্রমের মূল্যের বিনিময়ে লাভ আসলো তাদেরকে না খাইয়ে!
এই দেশে রিক্সা চালনায় কোন সমস্যা হয় না, রাস্তার মোড়ে মোড়ে ২/৩ টা ট্রাফিক-পুলিশ আর সার্জেন্ট দিয়েই কোটি লোকের রিক্সা চালনার প্রসেস চলছে, কোন সমস্যা ছাড়াই; এবং রিক্সা সার্ভিসের ম্যাক্সিমাম রিক্সাচালকরাই পাচ্ছে (যদিও সেটা কম) এখানে ছলিমরা আসে-না কারণ চোষা যায় কম! একইভাবে পুরো গার্মেন্টস-টেক্সটাইল ন্যাশনালাইজ করে লেবারদেরকে ওভাবেই খাটানো যাবে অল্প কিছু লোক দিয়ে কড়া নজরদারী করিয়ে এবং বেনিফিটও বাড়ানো যাবে ওভারঅল ফিক্সড সুপারভিশন কষ্ট কমিয়ে এবং এতে করে লেবারদের প্রতি অনেক বেশী সুবিচার করা যাবে!
ক্যাপিটালিষ্ট ছলিমদের দেশ ছাড়া করে আমরা বেশ কিছু রেমিট্যান্সও পেতে পারি, আর সেটা না পেলেও দেশেরগুলা পাচার এর হাত থেকে বাচাতে পারি অন্তত! চুরি করুক ভালো কথা, দেশে রিইনভেষ্ট কর, তা করবে না! এক জীবনেই সব বিদেশ নিয়ে যেতেই হবে যেন গুষ্ঠীসহ!
বিষয়: বিবিধ
২০০৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দাদু ভাইয়া ধন্যবাদ ।
আমি শুধু সবার সাথে দুষ্টামী করি দাদু ভাইয়া আমার জন্য দুয়া করবেন আমি যেন ভাল মেয়ে হয়ে যাই ।
ভালো করে পড়ে পরে মন্তব্য করবো ইনশাআল্লাহ
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মনে হলো ইকোনমিক্স ক্লাসে মনোযোগের সাথে প্রফের লেকচার শুনছি
সবই বুঝলাম, ছলিমদের ছাড়া আমরা অচল আবার লেবার ক্লাসিফিকেশন আর সোশ্যাল ইনজাষ্টিস এর সমন্বয় আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে আদৌ এই শতকে সম্ভব বলে আশা করা দুরহ!
রানা প্লাজা ধ্বংসের পর ইটালিয়ান কিছু সাংবাদিক ছদ্মবেশে আমাদের দেশের কিছু গার্মেন্টস ভিজিট করেছিলো, সেটার প্রতিবেদন আমি এখানে দেখেছিলাম! লজ্জায়, দুঃখে,ক্ষোভে এবং কষ্টে আমি মরে যাচ্ছিলাম! কি পরিমান খাটাচ্ছে এরা কর্মচারীদের, এত সংকীর্ন অস্বাস্হকর পরিবেশ, এমনকি কেউ কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলতে পারবে না! আর প্রতিদিন ১৬ -১৮ ঘন্টা কাজ করে শুনে বিদেশী তো চিৎকার করেই উঠলো!
এই অবস্হার অবসান হওয়া আসলেই দরকার!
শুকরিয়া ভাইয়া ! আপনার লিখাগুলো পড়ে অনেককিছু জানতে পারছি!
এখনও ইউরোপ-আমেরিকা একই, তবে দাসত্বটা ওদের থেকে আমাদের, ইন্ডিয়ানদের, চাইনীজদের, ভিয়েতনামীজ ইত্যাদীর কাছে ট্রান্সফার করতে পারায় মনে হয় ওরা আমাদের চাইতে ভালো। ওরা এখন আমাদের এবং অন্যান্য অনেক দেশকে এরকম শৃঙ্গখলে রাখতে পেরেছে বিধায় ওদের ওইখানে লোকজন আপাতত শান্তিতে আছে মনে হচ্ছে।
চায়না-রাশিয়া এবং এদের সাথে অন্যান্য দেশরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, যুদ্ধের মাধ্যমে এটা যদি ওরা না ফেরাতে পারে, তবে কনফার্ম থাকেন ওদের ঐ দেড়-দুইশ বছর আগের চরিত্র আবারও দেখতে পাবেন।
এসবের শুরুই করেছে ওরা, এখন নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে আছে! সমাধান করা যায় ভালোভাবেই এসবের, কিন্তু অল্প কিছু লোভী মানুষের জন্য অনেক কিছুই টিকিয়ে রাখা যায় না, আর আল্লাহও হয়তো ওদেরকে এই সুবিধা এখানে করতে দিচ্ছেন ভবিষ্যতে কিছুই না দেয়ার জন্য!
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন