অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা - ১০

লিখেছেন লিখেছেন বুড়া মিয়া ০৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:৫৩:৪১ রাত

অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার আগের পোষ্টগুলোতে অর্থ-সংক্রান্ত কিছু বিষয় আলোচনা করেছিলাম, অনেক কিছু বলার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও – কেউ কিছু না জিজ্ঞেস করায় অনেক ব্যাপারই আড়ালেও রয়েছে, যেমন মেসার্স ছলিম-কলিম লিমিটেড এর ২০০ কোটি লোনের প্রিন্সিপাল-এ্যামাউন্ট কি হবে? যাই হোকঃ

অর্থ আমাকে ও অন্যান্য প্রায় সবাইকেই মোহিত করে, তাই অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার আলোচনা আমার দৃষ্টিতে কিছুটা করা হলো, এবং অনেকেই অর্থ নিয়ে হৈ-হাঙ্গামা করে বেড়ায় সমৃদ্ধির ধুয়া তুলে কিন্তু, অর্থ অনেক দেশের ক্ষেত্রেই, বিশেষ করে সমৃদ্ধ যারা, প্রতিযোগিতার কোন বিষয় না; এটা যুদ্ধের এক রকম কৌশল – যাকে অনেকেই কারেন্সী-ওয়ার বলে অভিহিত করে থাকে। ইতিহাসে যুদ্ধের ব্যাপারগুলোর ফলাফল আদিকাল থেকে আজ পর্যন্তও পরিবর্তন হয়-নিঃ যারা বিজেতা তারা দাস হিসেবে ব্যবহার করে পরাজিত-কে। আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ রয়েছে অনেকটা এমন – ‘চিনি দিয়ে দাত ভাঙ্গা গেলে, লাঠি মারে কেউ?’ সমর-যুদ্ধে পরাজিত করে দাসের মতো একটা দেশকে ব্যবহার করা হয় – এটা সাধারণ বিষয়, আর অর্থ বা চিনি দিয়ে যদি কাউকে দাস হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তবে সমর-যুদ্ধের কোন প্রয়োজন নেই, চিনি দিয়েই তাদের দাত ভেঙ্গে দেয়া হয়!

যেমনঃ আমাদের দেশের মতো গরীব দেশগুলোতে যুদ্ধ করে দাস হিসেবে ব্যবহারের প্রয়োজন নেই কারও, এখানে সামান্য কিছু সুবিধাবাদী নেতা-নেত্রী তৈরী করে দেয়া গেলে এবং তাদের কিছু দাঙ্গাবাজ সুবিধাবাদী নেতাকর্মী লালন-পালন করতে পারলে এবং অল্প কিছু লুটেরা শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের চালাতে পারলেইঃ পুরো দেশ দাসত্বের আওতায় এসে যায়! উদাহরনস্বরূপ (কাল্পনিক হিসেবে) - আমাদের ৮০ লাখ শ্রমিক দিয়ে পরিচালিত দর্জীবাড়ীগুলো, তাদের টাকা-পয়সা লেনদেনের জন্য ১০ লাখ কর্মীদের পরিচালিত ব্যাংক-ইন্স্যুরেন্স, এদের সবার বাড়ী গাড়ীর জন্য অন্য কিছু প্রতিষ্ঠানে আরও ১৫ লাখ লোক, এদের সবার খাওয়া-পড়া-চলার জন্য আরও ১.৫ কোটি রিক্সাওয়ালা/ড্রাইভার/খুচরা-ব্যবসায়ী, এ সমগ্র ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য ৫০ লাখ লোকের দ্বারা পরিচালিত সরকার, আর সব কিছুর সুবিধা ভোগের জন্য ১০ লাখ নেতা-কর্মী/ব্যবসায়ী, এরকম গোলাম তৈরীর জন্য ৩/৪ কোটি ছাত্র/ছাত্রীদের লেখা পড়ার স্কুল – এভাবেই পুরো একটা দাস-শ্রেণীর দেশ পরিচালিত হয়।

এ সিষ্টেমে কখনোই দাস-শ্রেণীর দেশের উন্নতি হবে না উন্নতদের উন্নতীর তুলনায় করা আনুপাতিক হিসেবে; উন্নতি যদি কেউ করতে চায় – তাকে অবশ্যই যুদ্ধে সক্ষম হতে হবে; এবং যখনই একটা দেশ যুদ্ধে সক্ষম হয় – উন্নতি তার কাছে ধরা দেয় চিরায়ত পদ্ধতিতেই, যেমন দেখা যায় – চীন, রাশিয়ার ক্ষেত্রে! তবে অন্যান্য কিছু লোটা-ধরা দেশও কিছু সুবিধা ভোগ করতে পারে, যেমন ইউ.এস.এর লোটা ধরে ইউরোপীয়ান এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ সামান্য সুবিধা পাচ্ছে – তবে সেটাও চিনি-মারা বা অর্থনৈতিক, মূলত কোন উন্নতি নাই তাদের! এই চিনি বা অর্থ-কে আবার অধিক মিষ্টিযুক্ত এবং কম মিষ্টিযুক্ত হিসেবে প্রচার-প্রসার ও ব্যবহার চিনি দ্বারা দাত-ভাঙ্গার যুদ্ধে ব্যাপক কার্যকরী হয়। এই চিনি নিয়ে নানা অর্থনীতিবিদদের নানা মতবাদ রয়েছে, যেমন ক্লাসিক্যাল, ক্যামব্রীজ-ক্যাশ-ব্যালান্স, কেইন্সিয়ান, ইত্যাদী; এগুলোকে এক কথায় Quantity Theory of Money বলে সবাই, তবে এদের কারও মত অনুযায়ী পৃথিবীতে কখনও মানি-সাপ্লাই হয়েছে কি-না, তা কেউ আবিস্কার করতে পারে নাই, নানাবিধ তথ্য-সংক্রান্ত জটিলতা ও গোপনীয়তা এবং রাজনৈতিক কারণে। তবে চিনির ইম্প্যাক্ট বোঝার জন্য সেই আইডেন্টিটি-ই যথেষ্ট, যেটা বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ফিশারের The Purchasing Power of Money তে বিধৃত হয়েছে এবং Equation of Exchange হিসেবেও পরিচিত, তা হলোঃ

MV=PQ, যেখানে (কিছু কাটছাট করে) –

M = amount of money

V = velocity of circulation of money

P = price level

Q = quantity traded

এটা আমার জানা মতে ব্যাখ্যার আগে মানি এবং কারেন্সীর পার্থক্য পরিস্কার হওয়া উচিৎ, উদাহরনস্বরূপ – আজ থেকে ২০ বছর আগে ১০ টাকা দিয়ে ১ কেজি চাল পাওয়া গেলেও টাকা বা কারেন্সী ভ্যালুলেস হয়ে যাওয়ার কারণে এখন সেই ১০ টাকায় ১ পোয়া চাল পাওয়া যায়, তাই টাকা-কে মানি বলা হবে না, এটা কারেন্সী এবং ভ্যালুলেস হয়। অপরপক্ষে ১ কেজি চাল ২০ বছর আগে একজনকে যে স্যাটিসফেকশন দিতো আজকেও একই কুয়ান্টিটির স্যাটিসফেকশন দেয়, তাই চাল ভ্যালুলেস হয় নি, এখানে মানি চাল, আর এই চাল-মানির ট্রেড হয় টাকা-কারেন্সী দিয়ে। মূল পার্থক্য হলো মানি তার ভ্যালু ধরে রাখতে পারে কিন্তু কারেন্সী পারে না প্রিন্টিং প্রেস এর সাপ্লাই এর কারণে!

উপরের ইক্যুয়েশন সহজে বোঝার জন্য ধরে নেবো সারা পৃথিবী বর্ডারলেস একটা দেশ, কোন ক্রেডিট-মানি নাই এবং একটাই কারেন্সী-ইউনিট; এছাড়াও ধরে নেবো কারেন্সী অনেকের মতের মতো ক্যাপিটাল না, এটা শুধুই বিনিময় মাধ্যম - তাই কেউ সঞ্চয় করে না।

M = পৃথিবীতে কতো কারেন্সী ছাড়া হলো, V = কারেন্সীগুলো কতোবার হাতবদল হলো, P = যে মাল/সেবা বেচাকেনা হলো তার প্রাইস-লেভেল এবং Q = প্রাইস বা P-তে কি পরিমান মাল/সেবা বেচা-কেনা হলো। এই তত্ত্বে বলা হয় M বা মানি-সাপ্লাইতে যে পরিমাণ চেইঞ্জ আনা হবে P বা প্রাইস লেভেলে একই পরিমাণ চেইঞ্জ হবে; কেনো এটা বলেছে, তারও সুন্দর ব্যাখ্যা রয়েছেঃ যেমন, সারা পৃথিবীতে কেনা-বেচার বয়সের মানুষের সংখ্যা বাড়তে সময় নেয় – তাই শর্ট-টার্মে V বা হাতবদল খুব একটা বাড়ে না বা ডিমান্ড একই লেভেলের, তাই V শূণ্যের কাছাকাছি; একইভাবে নিত্যনতুন আবিস্কার সময়-সাপেক্ষ, ফলে মানুষের চাহিদা একটা গন্ডীতেই সীমাবদ্ধ থাকায় Q বা পণ্য/সেবার চাহিদাও বাড়ে না, তাই Q এর পরিবর্তনও শূণ্যের কাছাকাছি; এই দুই ভ্যারিয়েবলের এরকম প্রায়-অনড় অবস্থার কারণে M এ পরিবর্তন আনলে বা বাড়ালে P বা প্রাইস-লেভেল সেই পরিমাণের কাছাকাছি পরিবর্তনই হবে বা বাড়বে। এর আগের এক প্রতিযোগিতার পোষ্টে ফিশারের আরেকটা লেকচারের আলোকে প্রাইস কিভাবে হয়, তা আলোচনা করেছিলাম এবং জেনেছিলাম আউটপুট/প্রোডাকশন এবং মানি-সাপ্লাই কিভাবে প্রাইস নির্ধারণ করে।

এই তত্ত্বের সাথে এবার সুদ বা ইন্টারেষ্ট, ক্রেডিট-মানি (জনগণের সঞ্চয় অন্যদের ব্যবহার করতে দেয়ার রাইট) যোগ করে, মানুষের সেইভিং-টেন্ডেন্সী এবং বাজার অনেক দিকে বিস্তার করে দিলে এই তত্ত্বেরও সত্যতা মিলবে বলে আশা করা যায়। যেমনঃ মানি সাপ্লাই বাড়িয়ে দিলাম, কিন্তু এ্যাডিশনাল পুরা সাপ্লাই যদি সবাই বাড়ীতে সিন্দুকে রেখে দেয়, তবে প্রাইসে আপাতত চেইঞ্জ আসবে না; আবার এ্যাডিশনাল সাপ্লাই এর পুরোটাই যদি ক্যাপিটাল-মার্কেটের শেয়ারে দৌড়-ঝাপ করে তবে ঐখানেই প্রাইসে পরিবর্তন করবে, অন্য কোন বাজারে না; এরকম নানা কারণে, বাস্তবে এর হিসাব কখনো সমান সমান হয় না, তবে যেকোন বাউন্ডারী দিয়ে পাবলিককে রিএ্যাক্ট করতে দিলে একদম সমান সমান-ই হয়ে যাবে বলে মনে হয়।

এবার এই যে সারা বিশ্ব এক দেশ তত্ত্ব দেখলাম এটা বিভিন্ন অনুপাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশের উপর বাউন্ডারী দেয়ার কারণে এবং এক দেশ মার খায় আর অন্য দেশ লাভ করে একেক দেশের প্রাইস-লেভেল এবং ভিন্ন ভিন্ন কারেন্সীর কারণে। এই বিনিময় মাধ্যম বা কারেন্সীকে এখন মোটামুটি সবাই ক্যাপিটালের মর্যাদা দিয়েছে বলে এটার জন্য আরেক বিরাট বাজার সৃষ্টি হয়েছে – এটা এখন বেচা কেনা হয় ব্যাপক সমারোহে, কখনো ক্যাপিটাল হিসেবে, কখনো বিনিময়ের জন্য। তবে এই মার্কেটে সব ধরনের মানুষের কন্ট্রিবিউশন তেমন নাই এবং সব দেশের চান্স নাই, এখানেও যুদ্ধে সক্ষম শক্তিশালী দেশগুলোরই আধিপত্য এবং মার্কেটের প্রায় পুরোটাই ব্যাংকিং-ইনষ্টিটিউশন দ্বারা পরিচালিত এবং সেসব দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংক দ্বারা প্রযোযিত।

সমস্ত দেশগুলোর কারেন্সীকে বড় রকমের দুই ভাবে ভাগ করা যায়ঃ এক, লিক্যুইড কারেন্সী এবং দুই, ইল্যিক্যুইড বা এক্সোটিক কারেন্সী। লিক্যুইড কারেন্সীর মধ্যে আবার সুপার-লিক্যুইডদের শ্রেণী রয়েছে, যাদের কারেন্সীকে IMF এর মতে বলা হয়ঃ ইউজেবল-কারেন্সী (ইউ.এস.ডলার, জাপানীজ-ইয়েন, ইউরোল্যান্ডের ইউরো আর বৃটিশ ষ্টার্লিং)। লিক্যুইড-ইউজেবল কারেন্সীগুলো ইন্টারন্যাশনালী এবং লোকাল মার্কেটেও কেনা বেচা হয়, কিন্তু এক্সোটিক-কারেন্সীগুলো শুধু লোকাল মার্কেটে চলে। এ মার্কেটের ব্যাপারে Bank for International Settlement (BIS) প্রতি তিন বছর পর পর রিপোর্ট পেশ করে ইনফ্লুয়েন্সীয়াল ইকোনোমি-গুলোর সেন্ট্রাল-ব্যাংকের ওভার-দ্যা-কাউন্টার রিপোর্ট আমলে নিয়ে (ভলিউমের প্রায় পুরোটাই এখানে), এর একটা চিত্র আমরা দেখতে চাইলে এমন দেখা যায়ঃ



এখানে টোটাল পার্সেন্ট ২০০ হওয়ার কারণ, প্রত্যেকটা লেনদেনে দুইটা কারেন্সী জড়িত বা পেয়ার ছাড়া কোন ট্র্যানজেকশন নাই, যেমন USD/EUR; আর নেট-নেট-ব্যাসিস হচ্ছে লোকাল এবং ক্রস-বর্ডার ইন্টার-ডিলার ডাবল-কাউন্টিং এ্যাডজাষ্টমেন্ট করে বের করার পদ্ধতি। এই সমস্ত তথ্য আরো ডিটেইল এবং অন্যান্য আলোচনাসহ পাওয়া যাবে ঐ সংস্থার ওয়েব-সাইটে।

এই লিক্যুইড ইউজেবলদের আরও অনেক সুবিধা রয়েছে, যেমনঃ যদি ইউ.এস আমাদের বাংলাদেশ থেকে কিছু কিনতে চায় তবে সে পেমেন্ট দেবে ডলারে – কারণ তার কারেন্সী ফ্রীলি-ইউজেবল-কারেন্সীর মর্যাদাসম্পন্ন, সেক্ষেত্রে ইচ্ছা করলে সে সোজা ডলার প্রেসে প্রিন্ট করে আমাদের সেটা ধরিয়ে দিয়ে এখান থেকে মাল/সার্ভিস নিয়ে যেতে পারে (এ পদ্ধতি-কে অনেকেই ইনফ্লেশন-এক্সপোর্ট বলে), আবার আমরা যদি ইউ.এস থেকে কিছু কিনতে যাই, তবে বংলাদেশ টাকা প্রিন্ট করে দিলে সে নেবে না, এক্ষেত্রে বারগেইন হয়ে এ্যাপ্রিসিয়েশন-ডেপ্রিসিয়েশন হবে টাকার, তারপর ওদের সাপ্লাই করা ডলার দিয়েই ওদেরকে পেমেন্ট দিতে হবে। এই এ্যাপ্রিসিয়েশন-ডেপ্রিসিয়েশন এর ব্যাসিসে আবার IMF এর কাছ থেকে আয় বা তার কাছে দায় হতে পারে এবং সেটা তারা মেইন্টেইন করে Currency Valuation Account (CVA) তে। এরকমভাবে কারেন্সী মার্কেট ডমিনেট করে সামান্য কিছু দেশঃ চিনি দিয়ে দাত-ভাঙ্গার হাতিয়ার হিসেবে, কারণ সারা বিশ্বে একই কারেন্সী এবং একই লেভেলের প্রাইস হলে কোনভাবেই দাত-ভাঙ্গা সম্ভব নয় সমর-যুদ্ধ ছাড়া!

এই ইউজেবল-ওয়ালারা আবার প্রেসে প্রিন্ট করে সেটা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে দিয়ে সেসব দেশের উপকারার্থে এগিয়ে এসে উপকারের বিনিময়ে দায় সৃষ্টি করে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনি এমনি-ই দিয়েও দেয় প্রায়ই, অনুগত করে রাখার জন্য! বেশিরভাগ এবং বলতে গেলে পুরো দায় বা অনুগত রাখার লক্ষ্যে ডোনেশন/গ্র্যান্ট ধরিয়ে দেয় লিষ্ট-ডেভেলপড বা ডেভেলপিং দেশগুলোতে, যেসবের নেতা-নেত্রীরা তাদের আজ্ঞাবহ হিসেবে থেকে, সর্বোপরী তাদের দেশে আশ্রয় পেয়ে, দেশের মানুষকে ইন্ডাইরেক্টলী সেসব দেশের দাস হিসেবে ব্যবহার হতে দেয়। এরকমই এক দেশ আমাদেরটা হওয়ার কারণে এই দেশের কিছু দায় দেখে নিতে পারি নীচের চিত্রেঃ



PPG এর ক্ষেত্রে দেখে যাচ্ছে বাংলাদেশের দায়, ১৯৭২ সালের ০.১ বিলিয়ন ইউ.এস ডলার থেকে ২০১২ সালে ২৩.৩ বিলিয়ন ইউ.এস ডলার এ এসে ঠেকেছে। এবং তার উপরের অংশে দেখা যাচ্ছে কোন কোন কারেন্সী দিয়ে এই দায় সৃষ্টি হয়েছে; ২০১২ সালের এ দায়ের ৫১.৭% ছিলো ইউ.এস. ডলার এবং ৯.৪% ছিলো ইয়েন দিয়ে তৈরী।

এই কারেন্সীগুলো বিভিন্ন সংস্থা এবং বিভিন্ন সরকার কি ব্যবসা করে বানিয়ে দিয়েছে? নাহ! কারণ প্রিন্ট না করলে তো সেগুলো বাড়তেই পারে না, আর লাভ করে জমা করে দিতে হলে, সেসব তাদের লোকদের পকেট থেকে বের করে এনে আমাদের বা অন্যদের দিতে হবে, এভাবে দিলে ওদের ওখানে কি হবে? আবার আমাদের যখন পেমেন্ট দিতে হবে – তখন টাকা প্রিন্ট করে ধরিয়ে দিলে নেবে? তাও-না, ঐ ইউজেবল-কারেন্সীতেই দিতে হবে, সেগুলো এসব মিস্কিন-ক্লাস দেশরা পাবে কোত্থেকে? ওই যে, মাল/সার্ভিস এর দাসত্বে থেকে কামাই করে আনতে হবে এবং সেই সাথে ভিক্ষার কিছু ডোনেশন বা গ্র্যান্ট থেকে মিটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে করতে দায়-দেনা আরও বাড়িয়ে ফেলতে হবে, কেননা এসব মিস্কিন-ক্লাস দেশগুলোর তো ট্রেড-ডেফিসিট, নেট-পেমেন্টই তো তাদের দিতে হয় দ্বারে দ্বারে ঘুরে সেগুলো কিনে!

এরকম চিনি দিয়ে দাত-ভাঙ্গার যুদ্ধে এখন অবশ্য রাশিয়া-চায়না লীড নিতে এগিয়ে এসেছে এবং অনেকটা এগিয়েও গেছে; রাশিয়াকে দেখা গিয়েছে, কিভাবে একটা ভঙ্গুর অর্থনীতি শুধুমাত্র যুদ্ধ করতে সক্ষম থাকার কারণে এ মার্কেটে সদর্পে লীড নিতে আসলেও কেউ কিছু বলতে পারছে না, একইভাবে কাদায় লুটোপুটি খাওয়া চীনও শুধুমাত্র সমর-শক্তি অর্জনের কারণে এ মার্কেটে লীড নিয়ে নিয়েছে প্রায়, সেই সাথে ইন্ডিয়া ঝোপ বুঝে দুই দিকেই লোটা ধরে কিছু সুবিধা অর্জন করে যাচ্ছে, এক দিকে তাদের উলঙ্গ করে চেকাপ করলেও দুই হাত কচলে কাচুমাচু আবার ওইদিকে ধুতি মাথায় দিয়ে ব্রিক্স!

আমাদের মুসলিম দেশগুলো মনে হয় এদের-কে লীড এ রাখার জন্য তৈল, মাল আর সেবা সাপ্লাই দিয়ে বিনিময়ে তাসের ঘর (কাগুজে-কারেন্সীর স্তুপ) বানিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতি করার চেষ্টা করে যাবে! এরকম অবস্থা কি সৃষ্টিকর্তার তৈরী কোন উপায়, যাতে করে একদলকে শিক্ষা দিতে পারেন অন্যদের দিয়ে? না-কি মুসলিমদের ব্যর্থতার দায় এটা? – আদৌ বোধগম্য হলো না!

আর সমর যুদ্ধও এখন আর কেউ গর্বিত হওয়ার জন্য করে না বা এথেনিয়ানদের মতো স্পার্টার সাথে করে ধরা খেতে যায় না, এটাও এখন ইনভেষ্টমেন্ট প্রজেক্ট – হাই রিস্ক, হাই গেইন; ষ্টেইকহোল্ডার কিছু দেশ, যারা সামরিক-যন্ত্রপাতির অর্থনৈতিক মূল্যের ভিত্তিতে শেয়ার-হোল্ডার, প্রজেক্ট অপারেশনের মাপ-জোক করা সময়-সীমা এবং ক্ষেত্র, আর এ সময়ের অপারেশনে লুট-পাট, অস্ত্র বেচা-কেনা এর মাধ্যমে সমৃদ্ধ হওয়ার এক সুন্দর ব্যবসা এটা, তবে এ ব্যবসা শুধু তাদেরইঃ যারা ঝুকি নিতে ইচ্ছুক এবং সক্ষম!

মুসলিমদের মনে হয় লাভজনক এ ব্যবসা করে যাওয়ার বিধানই ছিলো ধর্মগ্রন্থে, তবে আমরা শান্তিপ্রিয়ঃ রুটি-রুজী হালাল এর জন্য গতর খাটিয়ে ঘাম-ঝড়িয়ে চিনি দিয়ে সরবত বানিয়ে পান করেই আমরা আলহামদুলিল্লাহ বলতে চাই! আর ইহুদী-খ্রীষ্টান-বৌদ্ধ-রা মুসলিমদের প্রতি আরোপ করা বিধান পালন করে যাচ্ছেঃ ওরা-ই কি মুসলিম কিনা মাঝে মাঝে চিন্তা করি!

বিষয়: বিবিধ

১৪১৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

271272
০৪ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৪:২০
কাহাফ লিখেছেন :
বিষয়গুলো কম বুঝি তা আগেই জানিয়েছি।
আজ আপনাকে সহ সবাই কে প্রবাস থেকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি.....

০৪ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৫:৩০
215415
বুড়া মিয়া লিখেছেন : আনন্দময় ঈদ-উদযাপন করুন, এই কামনা রইলো; আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা – ঈদ মুবারক ..
271275
০৪ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৫:৩৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : Chalam. Very beautiful n valuable discussion. Jajakallahu khair.
০৪ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:০২
215424
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম;
ধন্যবাদ বৌমাকে ...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File