অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা - ৮
লিখেছেন লিখেছেন বুড়া মিয়া ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১১:১৯:৫৮ রাত
এর আগের ২/৩ টা প্রতিযোগিতার পোষ্টে আলোচনার বিষয় ছিলো দেশের এক শ্রেণীর মানুষের বিদেশপ্রীতির সাথে সাথে দেশের মানিটারী-এ্যাসেটগুলোর বিদেশ চলে যাওয়া। তো এবার আমরা দেখবো ১৯৬০-২০১২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে কি পরিমাণ লোক চলে গেছে তার একটা চিত্র। এটা দেখার জন্য আমরা বেছে নেবো IBRD বা World Bank এর ডাটাবেইজ, এদের এখানে যে তথ্যগুলো দেয়া রয়েছে, তার মধ্যে ১৯৬০-৬৩ ছাড়া, তা মোটামুটি প্রতি পাচ বছর পর পর করা একরকমের রিজোনেবল-ষ্ট্যাটিষ্টিক্যাল-এষ্টিমেইট।
এরা যেভাবে হিসেব করে, তা হচ্ছে Net migration; মানে একটা দেশে মোট কতোগুলো লোক ঢুকলো (Immigrants) তার সংখ্যা থেকে বিয়োগ করে সে দেশ থেকে কতোগুলো লোক বের হয়ে গেলো (Emigrants) এর সংখ্যা; এতে করে যেটা বের হয় – তাকে তারা উপস্থাপন করে Net migration হিসেবে।
এবার যদি আমরা ১৯৬০ সাল থেকে শুরু করে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে এমন ভেগে যাওয়া লোকদের সংখ্যা যোগ করি এবং এ সময়কালে ভেগে যাওয়া মোট লোকসংখ্যার আলোকে সেরা দশটি দেশ খুজি, তবে দেখা যায় নীচের এ চিত্রঃ
এখানে Total বা মোট কলামের দিখে খেয়াল করে দেখা যাচ্ছে, গত পঞ্চাশ এর কিছু বেশি বছরের হিসেবে দেশ ছেড়ে ভেগে যাওয়ায় আমাদেরকে কেউ পিছনে ফেলতে পারেনি, এমন কি বিশ্বসেরা জনসংখ্যার দেশ চায়না ও ইন্ডিয়াও আমাদের কাছে হার মেনেছে এ ক্ষেত্রে! এদের সবাই যে চুরি করে ভেগেছে ব্যাপারটা তাও নাঃ এদের অনেকেই পড়তে গিয়ে, অনেকে দেশে হতাশ হয়ে, অনেকে আরও ভালো জীবন-যাপনের আশায় এবং এরকম অনেক কারণে দেশ ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় নাগরিক হয়ে গেছে; তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায় – যারা ভেগেছে তাদের সবাই আমাদের দেশের অন্যান্য মানুষের তুলনায় স্কিলড।
এই সময়কালে দেশ প্রায় দেড় কোটি স্কিলড-লেবার-ফোর্স হারিয়েছে যারা অন্য দেশে গিয়ে অনেক বেশী ভ্যালু-এ্যাড করছে সে দেশের ইকোনোমীতে এবং সেই সাথে যদি ধরি এদের প্রত্যেকে গড়ে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে চলে গেছে এবং সে টাকার ইউ.এস.ডলারে কনভার্সনের গড় রেইট ৬০ টাকা, তবে তারা দেশ থেকে নিয়ে গেছে ১.২৩ ট্রিলিয়ন ইউ.এস.ডলার!
রাজনীতিবিদেরা যদি দেশকে স্থিতিশীল করে রাখতে পারতো এবং তারা নিজেরা যদি বিদেশের প্রেমে না জড়াতো, তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায় – দেশের অন্য সাধারণদেরও দেশপ্রেম উগড়ে উঠতো এবং তারা নিজেদের তথা দেশের কল্যাণেই একনিষ্ঠ হতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় ব্যবসায়ী/চাকরীদাতা-রা অর্থনৈতিকভাবে আমাদেরকে দলে-পিষে রাখায়, ক্ষমতা আকড়ে থাকার জন্য সাধারণের উপর রাজনীতিবিদদের নির্যাতনের ঠেলায়, এবং সেসব ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের বিদেশপ্রীতি-ই আমাদের দেশের খরচে গড়ে তোলা স্কিলড মানুষগুলোকে এভাবে তাড়িয়ে দিতে বাধ্য করছে।
এর সমাধানের উপায় কি রাজনীতিবিদ বা ব্যবসায়ীদের জানা নেই? অবশ্যই জানা আছে – কিন্তু তাদের কাগুজে অর্থের মোহ এবং বিদেশী চাকচিক্য এমনভাবে মাতাল করেছে যে তারা উন্মাদের মতো আচরণ করছেঃ কেউ গান গাচ্ছে, কেউ নাচছে, কেউ তালি দিচ্ছে; এদের অবস্থা দেখে একটা পুরোনো গান মনে পড়লোঃ
সুখ পাখি আইলো উড়িয়া ...
বহুকাল বহু দ্যাশ ঘুরিয়া ...
আমি বাইন্ধ্যা রাখমু তোরে এবার ....
মনের খাচায় করিয়া ...
মনে হয় রাজনীতিবিদদের গায়ে সুখ লাগছে বেশী, তাই তারা সে সুখ-কে পার্মানেন্টলী বাইন্ধ্যা রাখার জন্য দেশের সবাইকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতেও বিন্দুমাত্র শঙ্কিত হচ্ছে না! আর যারাই দেশ ছেড়ে না যেতে পারছে এবং সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ করছে – তাদেরকে বাইন্ধ্যা রাখতেছে!
এভাবে আর কতো দিন-রে মদন?
বিষয়: বিবিধ
১১৬২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সামগ্রিক উন্নয়নের চিন্তা কোথাও নাই, তবে মাঝে মাঝে মাইকে শোনা যায় উন্নয়নের কথা। ইউনিভার্সিটি/ইনষ্টিটিউটগুলো এখন সরাসরি ইংল্যান্ড, এ্যামেরিকার বই আমদানী শুরু করেছে যাতে করে সামগ্রিক-জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ বানানোর চাইতে শ্রেণীবদ্ধ গোলাম পয়দা করানো যায়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন