অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা - ৭
লিখেছেন লিখেছেন বুড়া মিয়া ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৭:২৭:৩৬ সন্ধ্যা
এর আগের প্রতিযোগিতার পোষ্টে আলোচনা করেছিলাম ‘মেসার্স ছলিম-কলিম কোঃ লিমিটেড’ এর ব্যাপার নিয়ে, সেখানে জেনেছিলাম – কিভাবে আলাদিনের চেরাগ ঘষে তারা টাকা বানায়। এবার কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর ফিনান্সিয়াল ষ্টেইটমেন্ট থেকে কিছু ছলিম কলিমের খোজ করে দেখবো যে, তারা কি পরিমাণ ঋন নিয়েছে?
এবারের উপাত্ত গুলো ২০১৩ সালের এবং এগুলো দেশের ১০ টি পাবলিকলি-ট্রেডেড কমার্শিয়াল ব্যাংক এর। আইনগতভাবে এদের রিপোর্টে উল্লেখ করতে হয় এমন লোনের পরিমাণ যা তাদের ক্যাপিটাল এর ১০% অতিক্রম করে এবং মোট কতোজন/কোম্পানীকে এ লোন দেয়া হয়েছে, তার সংখ্যা। এখানেও ইসলামীক-ব্যাংকিং নিয়ে যে সমস্ত ব্যাংকগুলো অপারেশন চালাচ্ছে তাদের কোন উপাত্ত নেয়া হয় নি।
এখানে দেখা যাচ্ছে মোট ২৪৪ জন/কোম্পানী এর লোন রয়েছে ৩৭,৫৫৩.৫৬ কোটি টাকা, এতে করে গড়ে একেক জন/কোম্পানী নিয়েছে ১৫৩.৯১ কোটি। এখানে ফান্ডেড এবং ননফান্ডেড লোনের ব্যাপার রয়েছে, তবে আমরা সে ঝামেলায় যাবো না।
এই যে লোনগুলো দেয়া হয় এটার জন্য টাকা মোটামুটি দুইভাবে আসে; প্রথমত সাধারণ মানুষের ডিপোজিট, দ্বিতীয়ত সেন্ট্রাল-ব্যাংকের ইনষ্ট্রাকশনে প্রিন্টিং প্রেস থেকে। মানে দেশের সব মানুষের ব্যাংক-সঞ্চয় যদি এদের লোনের চাহিদা পূরণ না করতে পারে, তবে টাকা প্রিন্ট করে বানিয়ে এনে এদেরকে দেয়া হয়, আর এটা সেন্ট্রাল ব্যাংক করে ওপেন-মার্কেট-অপারেশনের মাধ্যমে।
একটা দেশে মানি-সাপ্লাই বাড়ানো কমানোর কিছু যুক্তিও রয়েছে এবং এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ক্যাপাসিটি এবং প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানো। আমরা যদি আমাদের দেশের বিভিন্ন সেক্টরের দিকে খেয়াল করি, তবে দেখা যায় আমাদের কোন ক্যাপাসিটি ডেভেলপ হয় নিঃ যেমন গার্মেন্টস-টেক্সটাইলের ১০০% মেশিনারী এবং র-ম্যাটেরিয়াল আমরা ইম্পোর্ট করি, পাওয়ার জেনারেশানের জন্য সবকিছু এমনকি টেকনিক্যাল সাপোর্টের জন্য বিদেশি আমদানী করি, লোহা-লক্কর বানানোর জন্য র-ম্যাটেরিয়াল এবং মেশিনারি ১০০% ইম্পোর্ট করি, ফার্মাসিটিউক্যালের মেশিন থেকে শুরু করে ফর্মূলা পর্যন্ত ইম্পোর্ট করি, এমনভাবে সব সেক্টরেই আমাদের একই দশা!
এরকম ইনক্যাপাবল জাতির জন্য এসবের প্রোডাক্টিভিটি এর চাইতে জরুরী ক্যাপাসিটি-ডেভেলপমেন্ট; কিন্তু এটায় আমাদের কোন প্রকার বিনিয়োগ নেই এবং নেতা-নেত্রী ও ব্যবসায়ী কারও ইচ্ছাও মনে হয় নেই; কেননা এটা করতে গেলে বেকার খাটতে হবে আমাদের! আর তাতে করে টাকা কামাই করে বিদেশ নেয়া যাবে না স্বল্প মেয়াদে, যদিও নিশ্চিত যে এরকম ক্যাপাসিটি-ডেভলপমেন্টের দীর্ঘমেয়াদে সুফল রয়েছে - সবারই! এ চরিত্রের কারণে যেটা হয় আমাদের মতো জাতির, তা হচ্ছে স্লেইভারী-রেইট মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়তে থাকে এবং গর্ব করার মতো কোন রাস্তা থাকে না! যেমনঃ
ইউ.এস.এ/ইউরোপীয়ানরা সব ধরনের জামা-কাপড়/ঔষধ ইত্যাদীর-ম্যাটেরিয়াল থেকে শুরু করে এর মেশিনারীজ বানাতে সক্ষম, কিন্তু তারা তার সবকিছু বানায় না – তারা বানায় এবং করে এমন জিনিস ও কাজ – যা দিয়ে তাদের লাভ/আয়ের পরিমানও বাড়ে আবার সম্মানজনক অবস্থানও বজায় থাকে (যেমন অবসোলিট ফর্মূলা বেচে আমাদের কাছে, অচল টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয় আমাদের, ইত্যাদি)। আর আমাদের চামার-শ্রেণীর রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলে ওরাও ওদের মতো এরকম চেষ্টাই করতো; যেহেতু তাদের এ দেশের প্রতি বিন্দুমাত্র মমত্ববোধ নাই, তাই তারা তাদের দেশের জনগণনকে ওদের দাস-দাসী হিসেবে নিয়োগ করে দেশে বসে চামারী ব্যবসার মাধ্যমে সামান্য লাভ করে (যদিও এ সামান্য পরিমাণই তাদেরকে আত্নহারা করে ফেলে) বিদেশ নিয়ে যায়। এতে করে দুইটা ক্ষতি একদম প্রত্যক্ষ – এক, এ সময়ে লেবারদের ক্যাপাসিটি ডেভলপ করা যেতো কিন্তু তা করা হলো না; দুই, আমরা দাস হিসেবে বহিঃবিশ্বে পরিচিত হলাম! এছাড়াও যেসব চামারগুলো এগুলো করে আমাদের পিছিয়ে দিলো, ওদেরও কিন্তু পরিচয় রয়েছে বহিঃবিশ্বে – চোর হিসেবে, তবে এতে ওরা কিছু মনে করে না! অনেক দেশে মনে হয় আমাদের দেশের পলিটিশিয়ান এবং ব্যবসায়ীদের সরাসরি চোর হিসেবে সাব্যস্ত করে রিপোর্টও করা হয়েছে, তাতেও কিন্তু ঠোট দিয়ে তারা দাত ঢেকে দেশমূখী হওয়ার বদলে ৩২ টাই বের করে হাস্যোজ্জ্বল!
আরেকটা ব্যাপার এই যে আমাদের দেশ ইন্ডিয়াকে ফ্রী-ট্র্যানজিট দিলো, এটা কখনোই ফ্রী হতে পারে নাঃ অবশ্যই এর জন্য পার্সোনাল ট্র্যানজেকশন হয়েছে এবং সেগুলোও নিশ্চিত বিদেশে চলে গেছে; এখন আবার ওদেরকে ই.পি.জেড দেয়ার জন্য পাগল হয়েছে একইভাবে! প্রাইসিং রুল অনুযায়ী এরকম ট্র্যানজিট এর জন্য ইন্ডিয়া সর্বনিম্ন তার নিজের যে কষ্ট লাগতো আগে – তা স্বাভাবিকভাবেই দিতে রাজি থাকবে এবং তার সাথে আরও কিছু যোগ করে দিবে, কেননা এতে করে তার সময় বেচে যাচ্ছে অনেক!
এসব হীন-রুচীর লোকগুলোকে ঘাড় ধরে পলিটিক্স থেকে বের করে এবং নির্লজ্জ-শ্রেণির ব্যবসায়ীগুলোকে দেশ থেকে চিরতরে বিদায় করে দিলে; কাগজের প্রতিযোগিতার ফলে পিছিয়ে পড়া আমাদের মতো জাতিদের গর্ব করার মতো অনেক বিষয় এসে যেতো এবং আমাদের জীবন-যাত্রার মানেরও সামগ্রিকভাবে উন্নতি হতো।
বিষয়: বিবিধ
১২৩০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ যদি হিজরত কইরা এমন দেশে যাওনের তৌফিক দিতো যেখানে অন্তত এইসব চামারদের দেখা না পাইতাম আর শান্তিমতো চাইরডা খাইয়া মরতে পারতাম; এমন কাপুরুষ হইলাম যে আত্নহত্যা করতে চাইলেও সাহস পাই না!
বড় কঠিন সময় পার করতাছি!
শুধু রাজনিতিবিদদের দোষ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ব্যবসায়ি শ্রেনিও এর সাথে যুক্ত। আর সরকারি কর্মকর্তাদের কথা তো বলার অপেক্ষা রাখেনা! এরা যদি একটু অ্যাকটিভ হতেন তা হলে বাতির টেকনলজি কিনে সেটা ডেভেলপ করেই আমরা নতুন টেকনলজির মালিক হতাম। চিন কিংবা ইরান কিন্তু এই পদ্ধতিতেই এগিয়ে গেছে শিল্প ক্ষেত্রে। কিন্তু প্রয়োজনিয় যোগ্য লোক থাকা সত্বেও আমাদের ব্যবসায়িরা উৎসাহি নন। তারা উচ্চমুল্যে অনেক নিন্ম যোগ্যতার বিদেশি টেকনিশিয়ানদের পছ্নদ করেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অধ্যাপকরা নিেজেদের সাফল্য মনে বলে দাবি করেন তাদের কতজন ছাত্র মাইক্রোসফট বা আইবিএম এ কর্মরত সেটা। এই কথাও বলেন যে এত মেধাবি মানুষকে এই দেশে রাখার ক্ষমতা এই দেশের নাই!! কেন আমরা জনগনের ট্যাক্স দিয়ে এত মেধাবি উৎপাদন করছি যারা দেশের কোন কাজেই আসেনা।
আর শিক্ষকগুলার অবস্থাতো আরও খারাপ, এদের অনেককে আমি দেখেছি পেটের দায়ে ঘন্টাপ্রতি ১,৫০০-৫,০০০ টাকা চুক্তিতে বিভিন্ন জায়গায় লেকচার দেয়ার জন্য জুতা ক্ষয় করতে। তাছাড়া শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানও তো এখন রাজনিতিবিদদের ব্যবসাক্ষেত্র – অনেক জায়গায় তো লেখা-পড়া ছাড়াই সার্টিফিকেট দিয়ে দেয় ওরা টাকার বিনিময়ে।
এতে আমি হিসেব করে দেখেছি সবচাইতে বেশী দোষ রাজনীতিবিদদের, ওরা ব্যবসায়ীদের কাছে পুরাপুরি বিক্রি হয়ে গেছে, মানে রাজনীতি এখন পুরাই ব্যবসাক্ষেত্রঃ এখনে দেশ এবং দশের কোন বিষয়-ই নাই, শুধুই ব্যবসা আর আনন্দ!
আর ছাত্রসকল আগে যাও একটু প্রতিবাদী ছিলো, এখন দেশ ছাড়ার সুযোগ আছে বিধায় – ওরাও কোন ঝামেলায় না গিয়ে দেশ ছেড়ে চলে গিয়ে মোটামুটি আনন্দেই আছে! দুঃখ, কষ্ট, মনোঃযন্ত্রণা শুধু আমাদের মতো দুর্ভাগাদেরই!
বাস্তবমুখী লিখাটির জন্য অনেক শুকরিয়া! জাঝাকাল্লাহু খাইর!
মন্তব্য করতে লগইন করুন