অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা - ৬
লিখেছেন লিখেছেন বুড়া মিয়া ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৮:৪৫:১৩ রাত
আমাদের দেশের আভ্যন্তরীন প্রতিযোগিতার অঙ্কিত কিছু কাল্পনিক চিত্রের মাধ্যমে এবার বোঝার চেষ্টা করবো, কেনো আমাদের দেশের এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী দেশ থেকে ইনকাম করে তা বিদেশে পাচার করে এবং কেনোই বা তারা এবং তাদের পরিবার দেশ ছেড়ে বিদেশকে-ই পছন্দ করে।
দেশের সবচাইতে বড় ব্যবসায়িক সেক্টর হচ্ছে পলিটিক্স, ব্যাপারটা আন্তরিকভাবে অনুধাবনের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে দু’জন লোক ভেবে দেখলো - এখানে ঢুকলেই মোটামুটি আলাদিনের চেরাগ হস্তগত হবে – যা ঘষে সহায় সম্পদ এবং বিত্ত অর্জন করা যাবে; বন্দুকের গুলি মিস হতে পারে, কিন্তু সফলতায় কোন মিস নাই – নিশ্চিত হয়ে সমস্ত সহায় সম্বল বিনিয়োগ করে নমিনেশন কেনার মাধ্যমে ছলিমুদ্দি এবং কলিমুদ্দি ঢুকে গেলো পলিটিক্সে এবং হয়ে গেলো রাজনীতিবিদ। তো সব সম্পদ বিনিয়োগ করার ফলে এদের হাতে আর তেমন কিছু নেই খাওয়ার এবং পড়ার; কিন্তু রয়েছে দূরদৃষ্টি, বিচক্ষণতা, অগাধ-জ্ঞান, রাজনৈতিক-সহায়তা এবং অধ্যবসায়।
তারা বেছে নিলো দেশের একটা ব্যবসায়িক সেক্টর যেখানে রাজনীতিবিদ ছাড়া সর্বসাধারনের প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং প্রবেশ মুহুর্তে ছলিম এবং কলিম এর নেই কোন মূলধন! কিন্তু তাদের জ্ঞাতি ভাইদের ব্যাংক রয়েছে সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ে ঠাসা এবং ঋনের চাহিদা মেটাতে সাধারণের এসব সঞ্চয় অক্ষম হলেও রয়েছে লেন্ডার অফ লাষ্ট রিসোর্ট – সেন্ট্রাল ব্যাংক এবং প্রিন্টিং প্রেস!
শুরুতেই তাদের ব্যক্তিগত-ক্যাপিটাল বানানোর জন্য দরকার ১০০ কোটি টাকা, কিন্তু এটা ব্যবসায়ের নামে নেয়া হলে ব্যাবসায়ে ক্যাপিটাল হিসেবে না দেখিয়ে লায়াবিলিটি হিসেবে দেখাতে হবে, ব্যবসায় ক্ষেত্রে অত্যন্ত দৃষ্টিকটু বিষয় এটাঃ তাই নামে-বেনামে হাবিজাবি খাতে ব্যক্তিগতভাবে ঋন নিয়ে, সে টাকা ঢুকানো হলো নব্য-গঠিত “মেসার্স ছলিম-কলিম-কোঃ লিমিটেড” নামক কোম্পানীতেঃ ব্যক্তিগত ক্যাপিটাল হিসেবে। প্রাথমিক ঋনের এই ১০০ কোটি টাকার উপরে ১৫% হিসেবে ইন্টারেষ্ট দিতে হবে বছরে ১৫ কোটি টাকা, কিন্তু যে নিরাপদ ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হলোঃ তার রিটার্ণ ৩৫% (অনেক কম), মানে ১০০ কোটি টাকায় ৩৫ কোটি টাকা লাভ। তো লাভের পরিমান তো ডিফারেন্সিয়াল ২০% এবং এটা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করা হয়, তাই এমন লাভ আরও বাড়িয়ে নেয়ার জন্য, আরও ক্যাপিটাল দরকার; তবে এবার আর নামে বেনামে নয়ঃ সরাসরি মেসার্স ছলিম-কলিম-কোঃ লিমিটেড এর নামে আরও ১০০ কোটি টাকা ঋন।
মেসার্স ছলিম-কলিম-কোঃ লিমিটেড এর হিসাব-পত্রে ছলিম-কলিমের ব্যক্তিগত ক্যাপিটাল ১০০ কোটি এবং ব্যবসায়িক ঋন ১০০ কোটি; মোট ক্যাপিটাল-এমপ্লয়েড ২০০ কোটি এবং রিটার্ণ অন ক্যাপিটাল ইনভেষ্টেড বিফোর ইন্টারেষ্ট এ্যান্ড আফটার ট্যাক্স ৩৫% বা বছরে ৭০ কোটি, আর এর বিপরীতে নামে-বেনামের ঋনের ১০০ কোটির উপরে ১৫ কোটি এবং ব্যবসার নামের ঋনের বিপরীতে আরও ১৫ কোটি মিলে, বছরে মোট ইন্টারেষ্ট ৩০ কোটি; নেট লাভ ৪০ কোটি। ছলিম-কলিম ভিক্ষুক-শ্রেণীর রাজনীতিবিদঃ তাই ঘষে ঘষে ৫ বছরে তাদের ইনকাম এবং ক্যাপিটাল হয় ২০০ কোটি, তবে আগে থেকেই যারা ফকির থেকে ট্রান্সফার হয়ে উচ্চ শ্রেণীর রাজনীতিবিদের মর্যাদায় পৌছেছে - এতো কমে তাদের পোষায় না!
এ ব্যাপারগুলো তারা করে এবং তারা এও জানে যে, তাদের এ ব্যাপারগুলো দেশের অনেকেই জানে; তারা এও মনে করে বিরূপ পরিস্থিতে ধরা খেলে তারা চরম হেনেস্তার স্বীকার হবে – তাই দিন থাকতেই পথ চলেঃ মানে বিদেশে সম্বল গড়তে থাকে; যাতে বিরূপ পরিস্থিতে বসে বসে উহা খাইতে পারে!
সাধারণ মানুষ আবার এভাবে হিসেব করবে - তাদের সঞ্চয় তো আগেও ছিলো, যা নিয়ে ছলিম-কলিমরা এ ব্যবসা করলো, এবং তারা আবার এই ছলিম-কলিমের কোম্পানিতেই চাকরী করে সেখান থেকেও কিছু বেতন পেয়ে সঞ্চয় আরও বাড়িয়ে নিলো – তাদের মোট সঞ্চয়-তো টাকার অংকে বাড়লোই!
তাই রাজনীতিবিদ হতে হলে প্রথমেই দেশ-প্রেমের বুলি আওড়ানো শিখতে হবে, এবং দেশের মানুষের সাথে মিশতে গিয়ে সত্যিকারের প্রেমে জড়ালেও, ভবিষ্যতে ছলনাময়ী প্রেমের মাধ্যমে অর্জিত লাভ নিয়ে ধরা খাওয়ার ভয়ে, প্রকৃত প্রেম বিসর্জন দিয়ে – সহায় সম্পদ বিদেশে পাচার করে রাখতে হবে!
রাজনীতিবিদ হিসেবে, আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে –
দিন থাকতেই হাইটা (বিদেশে) যাইয়ো, সম্বল থাকতে (বিদেশে জমা) রাইখা খাইয়ো
আসুন সবাই দলে দলে যোগ দিই – রাজনীতিতে, কিছু না হলেও অন্তত ১,০০০% - ২,০০০% এর রিটার্ণ অন ক্যাপিটালে প্রতিযোগিতা হয়ে নরমাল হয়ে যাবে অনেকটা, এতে করে রাজনীতিবিদেরা রাজনীতির ময়দান ছেড়ে পশুপালনের ময়দানের রাখাল হওয়ার অনুপ্রেরণা পাবে!
এখনো অবশ্য রাজনীতিবিদেরা রাখাল আর আমরা তৃতীয়-বিশ্বের ভেড়ার পাল!
বিষয়: বিবিধ
১২০৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর সাধারণরা, অন্য কিছু দূরে থাক, তাদের আসল ধর্মের ব্যাপারেও বিভক্তঃ তাই সব কিছুই কঠিন – তাদের কাছে!
আশ্রয়দাতা দেশগুলো নিজেদের লাভের জন্যই এদের আশ্রয় দিয়ে গোলাম হিসেবে খাটায় যার যার দেশের মাতবর হিসেবে, নির্দেশ মোতাবেক খাটতে না পারলেই তাদের সর্বনাশ সব-দিক থেকেই ...
সাদ্দামকে যারা আশ্রয় দিয়েছিলো – তারাই তাকে হত্যা করেছে;
লাদেনকে যারা সাহায্য করেছিলো – তারাই তাকে হত্যা করেছে;
হোসনী মোবারককে যারা সাহায্য করেছিলো – তারাই তাকে অপদস্থ করেছে;
মীরজাফরকে যারা লোভ দেখিয়েছিলো – তারাই তাকে হত্যা করেছে;
এতো কিছু জেনেও, আমাদের দেশে যারা এগুলো করেঃ তাদের কাছেই গিয়ে আশ্রয় খোজে।
অথচ এ চুরি করা টাকা দেশেই পুনঃবিনিয়োগ করে যদি দেশের মানুষকে বলতো – আমরা যা চুরি করেছি, তোদের জন্যই ব্যবসা বানিয়েঃ তোদের নিয়েই খাচ্ছি এবং দেশে একটা নতুন ক্ষেত্র তৈরী করেছি, তোদের জন্যই; তবে দেশের মানুষ এদেরকে অবশ্যই আশ্রয় দিতো সেসব দেশের চাইতেও সম্মানীয় আপ্যায়নে; কিন্তু তারা কেনোই যেন ভয় পেয়ে, আগে থেকেই পালানোর রাস্তা করে ...
মন্তব্য করতে লগইন করুন