অর্থনৈতিক প্রতিযোগীতা - ৪

লিখেছেন লিখেছেন বুড়া মিয়া ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১২:৫৫:০৩ রাত

দেশের আভ্যন্তরীন প্রতিযোগিতা যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন সমষ্টিকভাবে বহিঃবিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ে; এতে করে আভ্যন্তরীন প্রতিযোগিতায় মাত্রা ছাড়ানো জয়লাভকারীরা নিশ্চিন্তে নির্বিঘ্নে থাকার জন্য আন্তঃদেশীয় খাল কাটে, আর তাতে ভাসিয়ে দেয় দেশের অর্থ-সম্পদ অন্যান্য দেশের দিকে এবং প্রাণপণ চেষ্টা চালাতে থাকে দেশ থেকে আরও বেশী পরিমাণ সম্পদ সেই খালের স্রোতে অন্য দেশে ভাসিয়ে দিতে যতোক্ষণ পারা যায়, কেননা এমন পরিস্থিতিতে একটা দেশ রিস্কি হয়ে যায় অনেক বেশী।

এমনটা আমাদের দেশে অন্তত দুই যুগ বা তার চাইতে বেশী সময় ধরে লক্ষ্য করা যায় এবং ধীরে ধীরে এটা বেড়েই চলছে ... এ পরিস্থিতিতে দেশের সামগ্রিক আয় বা উৎপাদনশীলতা বেড়েও কোন লাভ হয় না, কেননা লাভ এর বড় অংশটা চলে যায় খালের স্রোতে দেশের বাইরে এবং বিনিয়োগ হয় সে দেশের মূলধন ও সম্পদ হিসেবে! দেশের টোটাল মানি-ক্যাপিটালের পরিমাণ যদি ১০০ ধরা হয়, এর ৮০ ভাগ যদি খালওয়ালা শ্রেণীর ১০% মানুষের কাছে আছে বলে ধরা হয় এবং দেশের গড় রিটার্ণ অন মানি-ক্যাপিটাল ২০% হলে সে ২০ টাকা আয়ের ৮০ ভাগ দেশের তো থাকেই না বরঞ্চ আরও ক্ষতি করে, কেননা এ ধরনের খাল-ওয়ালাদের বিনিয়োগে দেশের রিসোর্স ব্যবহার করে আয় করা হয় অন্য দেশের লাভের বা পাঠানোর জন্য এবং অবস্থা প্রতিকূল হলে মানি-ক্যাপিটাল এর ৮০ ভাগও এর মালিকরা তাদের সেকেন্ড বা পারমানেন্ট হোমে নিয়ে যাবে দেশ খালি করে দিয়ে এবং আইনগত ভাবে তা তারা পারবেই।

এ ধরনের মানুষ অনেক দেশে ব্যাপক পরিমানে থাকায় চালাক-চতুর দেশগুলো সেকেন্ড-হোম প্রোজেক্ট এর মূলা ঝুলায়, যাতে করে অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে খাল-ওয়ালাদেরকে সেসব দেশের নাগরিকত্ব দেয়া হয় এবং সাথে অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও। বিগত কয়েক বছরের পত্র-পত্রিকার রিপোর্টে আমরা অনেক সংবাদ দেখেছি আমাদের দেশের ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদদের এ ধরনের সুবিধা নিতেঃ দেশে তারা উন্নয়নের কথা বলে, নানা জনের নানা আদর্শের কথা বলে চেচামেচি করে, সাধারণ মানুষকে দিন-রাত কলুর-বলদের মতো খাটিয়ে প্রচুর আয় করে, দেখা যায় দেশজ উৎপাদনও বাড়ছে কিছু; কিন্তু দিন শেষে দেশের মানুষকে খাওয়া আর পড়ার খরচ ছাড়া বাকী সব আয় অন্য দেশের ক্যাপিটাল হয়ে যাচ্ছে ক্যাপিটাল-ট্রান্সফারের মাধ্যমে, সেগুলো আবার আমাদের দেশেই সেসব দেশ বিনিয়োগ করছে কম অথবা বেশি সুদে, যা আমাদের দায় বা লায়াবিলিটি হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে ঘড়ের উপর!

ছোট্ট একটা হাইপোথেটিক্যাল উদাহরণ দেয়া যেতে পারে – ধরে নিলাম মালয়েশিয়া এর উদাহরণঃ আমাদের দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ আয় ডলার হয়ে খাল-ওয়ালাদের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় চলে গেছে তাদের সেকেন্ড হোম প্রজেক্টে, এতে করে আমাদের আয়গুলো আমাদের ক্যাপিটাল না হয়ে ডলার হয়ে চলে গেলো মালয়েশিয়ার ক্যাপিটাল হিসেবে এবং আমরা খেলাম ক্যাপিটাল-লস, সেসব ডলার মালয়েশিয়ায় ইনভেষ্ট হলো বাড়িঘর ও ব্যবসা কনষ্ট্রাকশনে, সেটা তাদের জিডিপি বাড়িয়ে দিলো এবং সে ডলারগুলো ওসবে খরচ হয়ে অথবা সেভিংস হিসেবে মালয়েশিয়ার ব্যাংকিং সিষ্টেমে ঢুকে গেলো, মালয়েশিয়ার কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে সরকার সে ডলারগুলো নিয়ে আবার আমাদের দেশেই পদ্মা-ব্রীজ প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়ে বিনিয়োগ করলো এবং সুদ আয় হিসেবে তাদের ন্যাশনাল ইনকামে যোগ করলো, আর সেই ডলারগুলোই আমাদের দায় বা লায়াবিলিটি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেলো ... ব্যাপারগুলো এমনই হয় অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও স্বাভাবিকভাবে।

“শ্রমিকের এবং আমাদের ঘাম ঝড়ানো - আমাদের দেশের আয়, আমাদের ক্যাপিটাল না হয়ে, আমাদেরই দায়”


এমন মাত্রা-ছাড়া অসম প্রতিযোগিতার ফল হিসেবে আমরা দেখি শুক্রবারে ১০ টাকা ভিক্ষা পাওয়ার জন্য দেশের ভিক্ষুকরা মসজিদের সামনে ওরা নিজেরা নিজেরা মারামারি করে, ঈদের আগে যাকাত এর কাপড় এর জন্য দাপাদাপি করে পদদলিত হয়ে নিহত হয় ওরাই! গোলাম শ্রেণী যারা স্কুল-কলেজে বন্ধু হিসেবে ছিলো তারাই চাকরীর ইন্টারভিউয়ে গিয়ে একজন আরেকজনের শত্রু এবং কর্মক্ষেত্রে কে কাকে নীচে ফেলে আগে যাবে, কতো বেশি আয় করবে - তার নির্মম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত! ক্ষুদে-মাঝারি ব্যবসায়ীগুলো এসব শ্রেণীকে চুষে খেয়ে আয় করার আরেক প্রতিযোগিতা করে এবং এসব শ্রেণীর প্রতিযোগীদের সবাই মিলে তাদের সন্তানদেরকেও স্কুল-কলেজে ভর্তি করে - পড়ালেখায়, খেলাধুলায়, সংস্কৃতিতে ফার্ষ্ট হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত করে গড়ে তুলে এভাবেই, যাতে সহজেই তারা মানিয়ে নিতে পারে এসব।

অল্প কিছু বড় বড় ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক দল ব্যবহার করে ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতা করে বড়-রকমের লুটপাটের জন্য – ছেলেপেলে-পরিবার থাকে তাদের সেকেন্ড বা পার্মানেন্ট হোমে, আইনশৃংখলা বাহিনী বা এতে নিযুক্তরাও তাদের নিজেদের অভাব মোচনের প্রতিযোগিতায় থাকায়, এ লুটেরা শ্রেণীদের সহায়তা করে যায় আপ্রান – একটা ভালো পোষ্টিং, একটু সুবিধা এবং সুনজরে থেকে চাকরী না হারানোর জন্য!

বেলা শেষে এরকম নির্মম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সবাই সঞ্চয় হিসেবে ২/৪ টাকা ছাড়া আর কিছুই চোখে দেখে না, ভাগ্যগুনে দুই একজন চলে যায় লুটেরা শ্রেণীতে এবং হয়ে যায় খাল-ওয়ালা, এভাবেই চলছে!

বিষয়: বিবিধ

১০৭৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

266205
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০২:২৮
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:৫৯
209931
বুড়া মিয়া লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ, ভালো লাগায়
266213
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৫৭
আফরা লিখেছেন : এভাবেই চলছে ,এভাবেই চলবে ।উত্তরনের পথ নাই ।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:৫৯
209932
বুড়া মিয়া লিখেছেন : চরম এক ভবিষ্যদ্বাণী করে জ্যোতিষ হিসেবে আভির্ভূত হওয়ায় আফরামণিকে অনেক অনেক অভিনন্দন।
266379
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:০৫
সাদাচোখে লিখেছেন : চমৎকার চিত্র উপস্থাপন করেছেন। খাই খাই অর্থনীতি - অফিশিয়াল নাম প্রতিযোগীতামূলক অর্থনীতি, চুরি ডাকাতির অর্থনীতি - অফিশিয়াল নাম ওপেন মার্কেট ইকোনমি, সহায় সম্পদ বৃদ্ধির অর্থনীতি - অফিশিয়াল নাম ইনটারেস্ট বেইজড ইকোনমি কে আলিংগন করলে - এর বাহিরে আপনার বিমূর্ত চিত্র ছাড়া আর কি হতে পারে?

আপনার চিত্রে যা মিসিং তা হল আপনি বলেন নি - এর পরিনতি হিসাবে আগামীতে কি আসছে?

আমারতো মনে হয় ওয়াইজ মানুষ জন হয় - ১। এ গতিকে রিভার্সে নেবার জন্য জোর চেষ্টা করবে, অথবা
২। সিভিল ওয়ারের জন্য প্রস্তুত হবে তথা নিজের ঘর ও বেচে থাকার উপকরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে - যদিও তাতে শেষ রক্ষা হবে না। আর দূর্বল চরিত্রের ভাল মানুষ হলে
৩। সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে নিজেকে আইসোলেট করবে শহর ছেড়ে দুর কোন গাঁয়ে কিংবা লোকালয় কম এমন জায়গায় বসতি গড়বে - আর মরার আগে যতটা সম্ভব আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে নেবে।

১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৫৯
210117
বুড়া মিয়া লিখেছেন : সিভিল এবং ন্যাশনাল ওয়ার নিয়ে এ সিরিজের একটা পোষ্টে রাশিয়া দিয়ে টাচ দিয়েছিলাম; আর এভাবেই যে আসল মুক্তির পথ আমাদের সৃষ্টিকর্তা বা আল্লাহও করে রেখেছেন – সেটা চিন্তা করেছি এ সিরিজের শেষ পোষ্টে লিখবো আমার মত অনুযায়ী।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File