অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা - ৩

লিখেছেন লিখেছেন বুড়া মিয়া ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৮:৪৭:৩২ রাত

এর আগের পোষ্টগুলোয় এ ব্যাপারে দেশের গার্মেন্টস-টেক্সটাইল ও ইলিশ সেক্টরের পাশাপাশি মালয়েশিয়ার কিছু উপাত্তের সাথে আমাদের দেশের উপাত্তের তুলনা করেছিলাম; এবার দেশের অভ্যন্তরে আরেকটা বড় সেক্টরে নিজেদের সাথে নিজেদের প্রতিযোগিতা দেখবো। যেহেতু ব্যবসা এবং চাকরী দুই ক্ষেত্রেই ব্যাংক অনেকেরই চরম পছন্দের জায়গা এবং অন্যান্য সেক্টরের তুলনায় গোলাম শ্রেণীকে এখানে অনেক বেশি আর্থিক সুবিধা দেয়া হয়, তাই এটাই ভালো লাগলো বেছে নেয়ার জন্য।

কিছু আনুমানিক জনসংখ্যা ধরে নেবো কমার্শিয়াল ব্যাংকিং সেক্টরে এবং এখানকার যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বা ইনকাম-কে কিভাবে ভাগ করে খাচ্ছে, তা সেই আনুমানিক সংখ্যার ভিত্তিতে দেখবো। এখানে যে ব্যাংকগুলো নিয়ে হিসেব করা হয়েছে – তার মোট সংখ্যা ২০ এবং এদের সবাই পাবলিকলি-ট্রেডেড কোম্পানী, মানে ঢাকা ও চিটাগাং ষ্টক-এক্সচেইঞ্জে সাধারণ মানুষ এদের শেয়ার কেনা-বেচাও করে। যে বছরের হিসেব দেখবো এদের, সেটা ২০১০ সাল। এদের এ সমস্ত উপাত্ত অনেক আগে দেখেছিলাম আমি, তাই এগুলো নরমাল ফিনান্সিয়াল ষ্টেটমেন্ট না-কি কন্সোলিডেটেড তা আমার মনে নেই; তবে সব তথ্যই তাদের এবং তাদের প্রকাশিত বাৎসরিক রিপোর্ট থেকেই নেয়া। এ ২০ টা ব্যাংকের মধ্যে ইসলামিক ব্যাংক নামে যে কয়টা ব্যাংক ষ্টক-এক্সচেইঞ্জে আছে তাদের একটাকেও ধরা হয় নি, যদিও ইনকামের দিকে মনে হয় বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক-ই সবার চাইতে এগিয়ে।

প্রথমেই ধরে নেবো প্রত্যেকটা ব্যাংকেই সি.ই.ও/ম্যানেজিং-ডাইরেক্টর ছাড়া কর্মরত রয়েছে গড়ে ১,০০০ কর্মকর্তা/কর্মচারী, এতে করে এ শ্রেণীতে মোট জনসংখ্যা ২০,০০০। প্রত্যেক ব্যাংকে ১ জন করে সি.ই.ও/ম্যানেজিং-ডাইরেক্টর ধরে এ শ্রেণীর জনসংখ্যার পরিমাণ ২০। এছাড়াও ব্যাংকের পরিচালক শ্রেণীতে প্রত্যেক ব্যাংকে ৫০ জন করে ধরে নেবো এতে করে সেখানে জনসংখ্যা ১,০০০ এবং এসব ব্যাংক অডিট করতে গিয়ে প্রত্যেকটায় ৯ জন করে কর্মী নিযুক্ত ধরে নিয়ে এখানে জনসংখ্যা ১৮০।

এ হিসেবে ইনকাম-জেনারেশন এবং সেই ইনকাম রিডিষ্ট্রিবিউশন বা ভাগাভাগির এ যুদ্ধে যুদ্ধরত মোট জনসংখ্যা ২১,২০০ এবং এর মাঝে আছে সরকার, কেননা তাকেও বখরা দিতে হয় নিয়মিত নয়তো সব অচল হয়ে যাবে। যে উপাত্তগুলো দেখবো, তা যথাক্রমে –

১) গোলাম শ্রেণীর মজুরী বা Salary and allowances;

২) সি.ই.ও/ম্যানেজিং-ডাইরেক্টর এর সম্মানী বা Managing Director/CEO's salary and allowances

৩) চুরি-চামারী ধরার জন্য নিয়োজিত অডিটর শ্রেণীর ফী বা Audit fees

৪) পরিচালক বা ডাইরেক্টর শ্রেণীর বোর্ড-মিটিং এ বসে চা-বিস্কুট এবং কিছু ফী বা Directors' fees and expenses

৫) কর-পরবর্তী মুনাফা বা Net profit after taxation

৬) কর-পূর্ব মোট মুনাফা বা Profit before taxation

(১) হতে (৪) পর্যন্ত খাতের টাকার অংক সরাসরি সেই শ্রেণিভুক্তদের পেটে চলে যায়, তাই এখানে চিন্তার তেমন কিছু নেই। (৫) এবং (৬) এর অংকের পার্থক্য সরকারকে বখরা বা কর হিসেবে দিতে হয়, তাই এটা সরকার পেয়ে যায়; আর (৫) নং নিয়ে অনেক কিছু বলা যায়, তবে এটা যেকোন সিষ্টেমেই হোক বেশিরভাগই পরিচালক শ্রেণিদের কাছেই যাবে, কেননা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ষ্টক-এক্সচেইঞ্জে বসে থাকা শেয়ারহোল্ডারদের কাগজ বা বোনাস/স্ক্রিপ ডিভিডেন্ড ধরিয়ে দেয় এ লাভের ক্যাশ দেয়ার বদলে এবং তা নিয়ে সেখানকার শেয়ারহোল্ডাররা নিজেরা নিজেরা আরেক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, সময় সুযোগ বুঝে সেখান থেকেও পরিচালক বা অন্যান্য জুয়ারী-শ্রেণীরা শেয়ার-হোল্ডারদের মেরে লুট করে নেয়; তাই ধরে নেবো (৫) এর পুরোটাই পরিচালক বা ডাইরেক্টর শ্রেণির-ই। এবার এক নজরে ২০ টা ব্যাংকের এসব খাতে অংকের পরিমান কতো, আমাদের আনুমানিক মতে মোট জনসংখ্যা কতো এবং এতে করে মাথাপিছু কে কতো পেলো তা দেখবো –



এখানে (১) নং খাতে গোলাম শ্রেণীকে দেখা যাচ্ছে প্রদান করা হয়েছে ২,৩১৯ কোটি টাকার চাইতে কিছু বেশি এবং এতে করে একেকজন গোলাম গড়ে সাড়ে ১১ লাখ টাকার বেশি ভাগে পেয়েছে। (২) নং খাতে প্রদান করা হয়েছে সাড়ে ১১ কোটি টাকার চাইতে কিছু বেশি, এতে করে গড়ে একেকজন সি.ই.ও/ম্যানেজিং-ডাইরেক্টর ভাগে পেয়েছে সাড়ে ৫৭ লাখ টাকার কিছু বেশী। (৩) নং খাতে প্রদান করা হয়েছে ৬০ লাখ টাকার কিছু বেশি, এতে করে সেখানে একেকজন গড়ে ভাগে পেয়েছে ৩৩ হাজার টাকার চাইতে কিছু বেশী। (৪) নং খাতে প্রায় পৌনে ৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, এতে করে এ শ্রেণিতে একেকজন খেয়েছে এবং পেয়ছে গড়ে ৪৭ হাজার টাকার চাইতে কিছু বেশি। এছাড়াও (৫) নং খাত পুরোটাই (৪) নং এর চা খাওয়ার পার্টির ধরায় সেখানে গড়ে একেকজন পেয়েছে ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকার কিছু বেশি। (৫) এবং (৬) নং খাতের পার্থক্য মোট প্রায় ২৬ শত কোটি টাকা, এটা পুরোটাই সরকারের বখরা।

এখানে যুদ্ধে টোটাল ইনকাম জেনারেট হয়েছে (১) থেকে (৪) এবং (৬) নং এর সংখ্যার যোগফল বা ৯,১৭৭ কোটি টাকার কিছু বেশী; তার মধ্যে ২০ হাজার জনসংখ্যার গোলাম শ্রেণীকে ভাগ করে দেয়া হয়েছে ২৫.২৭% বা ২,৩১৯ কোটি টাকার কিছু বেশী, ২০ জন সি.ই.ও/ম্যানেজিং-ডাইরেক্টরকে ভাগ করে দেয়া হয়েছে ০.১২৫% বা সাড়ে এগার কোটি টাকার কিছু বেশী, অডিটর শ্রেণীর ১৮০ জনের শ্রেণীকে দেয়া হয়েছে ০.০০৭% বা ৬০ লক্ষ টাকার কিছু বেশী, পরিচালক বা ডাইরেক্টর শ্রেণীর ১,০০০ জনগণ ভাগে পেয়েছে ৪৬.৩৭% বা ৪,২৫৫ কোটি টাকার কিছু বেশী এবং সরকার ভাগে পেয়েছে ২৮.২২% বা ২,৫৯০ কোটি টাকার কিছু বেশী।

এটা অনেক ভালোভাবে ইনকাম রিডিষ্ট্রিবিউশন এর সবচাইতে উত্তম জায়গা, এখানে এ অবস্থা! অন্যান্য সেক্টরে আরও ভয়াবহ অবস্থা। পূজিবাদী ব্যবস্থায় এরকম ভাগাভাগির ব্যাপার না থাকলে না-কি কেউ আসলে কোন কাজ করার আগ্রহই পায় না! তাই এরকম অসম প্রতিযোগিতার জীবন-ব্যবস্থা আর কি!

বিষয়: বিবিধ

১১৩৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

266126
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৩৫
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১১:১২
209910
বুড়া মিয়া লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
266220
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:২৪
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : চার্টে বিরাট বৈষম্য দেখছি! দেশে একটা সুবিধা হল সুবিধাভুগীরা বেশি খেয়ে হজম করতে পারে। আমাদের আবার সরকারকে না দিয়ে হজম করার উপায় নেই। যার আয় বেশি বছরান্তে তার ট্যাক্সও বেশি দিতে হয় Sadধন্যবাদ আপনাকে Good Luck
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:০১
209933
বুড়া মিয়া লিখেছেন : এটা সব দেশেই কম বেশি আছে, তবে মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে আসলেই সমস্যা ...
266377
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৩
সাদাচোখে লিখেছেন : আমার মনে হয় - মানুষ চোখে মুখে অন্ধকার দেখতো (যদি তারা সৎ হয়) অথবা হার্টফেল করতো - যদি আপনি জানাতেন পরিচালকদের ইনভেস্টমেন্ট বা ক্যাপিটাল কত ছিল এবং তার বিনিয়মে বাৎসরিক নীট মুনাফার রেশিও টা।

ব্যাংকিং সেক্টরের সব চেয়ে বড় জালিয়াতি, সব চেয়ে বড় প্রতারনার সূচনা হল - যেদিন ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম ফ্রাকশানাল রিজার্ভ ব্যাংকিং ধারনার আবির্ভাব ঘটায় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমূহ তা কমার্শিয়াল ব্যাংক গুলোকে তা করতে পারমিশান দেয়।

এই উপায়ে পৃথিবীর অন্য যে কোন বিজনেস কে শত শত মাইল পেছনে ফেলে ব্যাংক মানুষের সাথে ডাইরেক্টলী প্রতারনা করে শত টাইমস বেশী লভ্যাংশ নিশ্চিত করে। লিটারেলী ব্যাংক কইয়ের তেল এ কই ভাঁজে আর মানুষের অর্থ ও সম্পদকে চুইয়ে চুইয়ে নিজের করে তোলে।

আমি জানিনা আপনি এটা জানেন কিনা, কিংবা এ নিয়ে ভেবেছেন কিনা? ইনস্টিটিশনালী ব্যাংকের মত লিগালাইজড স্ক্যামিং পৃথিবীতে আর কোন প্রতিষ্ঠান করেনা, ডেসটিনির ট্রি প্লানটেশান কিংবা খাই খাই প্রজেক্ট ব্যাংকের প্রতারনার কাছে লিটারেলী ইদুরছানা।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৫৪
210114
বুড়া মিয়া লিখেছেন : হ্যা, তবে ব্যাপারটা অনেকেই জানে না একদমই, সেন্ট্রাল-ব্যাংক ওপেন-মার্কেট অপারেশনের মাধ্যমে ইচ্ছা করলে কমার্শিয়াল ব্যাংককে কাজে লাগিয়ে একদম কিছুই নাই একটা মানুষকেও টাকা দিয়ে পয়সাওয়ালা বানিয়ে দিতে পারে – সমস্যা হলে তো রিশিডিউলিং এবং ইন্টারেষ্ট-ওয়েভার আছেই। এভাবে এগুলো কাজ করায় আসলে প্রকৃত ধনী মানুষগুলোকে গরীব করে, অযোগ্য-অথর্ব-চোরদের পয়সাওয়ালা বানিয়ে দিচ্ছে ব্যাংকগুলো – যা কখোনোই সম্ভব হতো না ফ্র্যাকশনাল-রিজার্ভ-সিষ্টেম এবং ইন্টারেষ্ট না থাকলে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File