অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা - ১
লিখেছেন লিখেছেন বুড়া মিয়া ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৬:৪৭:১৮ সন্ধ্যা
ইসলাম ধর্ম ক্রয়-বিক্রয় বা ব্যবসাকে হালাল করেছে আর সুদ-কে নিষিদ্ধ করেছে, এ বিষয়টা আমরা সবাই জানি এবং এও জানি এ ধর্ম আরও বলেছে ওজনে কম-বেশী না করতে। ব্যবসা বা ক্রয়-বিক্রয় জিনিসটা আমরা সবাই বুঝি তবে ওজন এর ব্যাপারটা নিয়ে আমার একটু সন্দেহ রয়েছে, আর এ সন্দেহের উদ্রেক করেছে মুদ্রা এবং এর দ্বারা বিনিময়-জনিত কিছু ইতিহাস। কাগুজে মুদ্রার সর্বপ্রথম ভিত্তিগুলো ছিলো এর পেছনে মূল্যবান ধাতবের রিজার্ভ। মানে একটা নির্দিষ্ট ওজনের মূল্যবান ধাতব সমান সমান একটা কাগজ এবং সরকার বা এর প্রবর্তক ঐ পরিমান ওজনের ধাতব – ‘চাহিবা মাত্র দিতে বাধ্য থাকিবে’ এটা সব দেশেরই স্বীকৃত ব্যাপার ছিলো সে সময়।
এছাড়াও রাসূল (সাঃ) এর কিছু হাদীস থেকে জানা যায় পণ্যের দ্বারা পণ্য বিনিময়ও জায়েজ, কিন্তু সেগুলো করতে গিয়ে বেশ কিছু সাবধানতার কথাও বলা হয়েছে, কেননা এরকম অনেক বিনিময় সুদের কাছাকাছিই চলে যায় - যেমন সাধারণ এক কেজি ভালো খেজুরের বিনিময়ে এক কেজি ভালো খেজুর লেনদেনে কোন বাধা নাই, কিন্তু দুই কেজি নিম্নমানের খেজুর এর বিনিময়ে এক কেজি ভালো খেজুর হলেই, সেটা অন্যভাবে দেখতে হবে; এমন ক্ষেত্রে একটা অনুপাত হিসাব করতে হবে আগে অনেকটা এরকমভাবে, ২ কেজি নিম্নমানের খেজুর এর বাজার দর যা হবে সেটা দিয়ে কতোটুকু ভালো খেজুর পাওয়া যায় এর অনুপাত, সে হিসেবে বিনিময় করতে পারে অথবা নিম্নমানের খেজুর বেচে দিয়ে সে মূল্য দিয়ে ভালো খেজুর কিনে নিতে পারে। এতে করে দেখা যাচ্ছে ওজন কি সেটা আমাদের বোঝা উচিৎ।
কুর’আন এবং হাদীসের আলোকে যে ওজনের কথা জানা গেলো এটা কিন্তু প্রত্যেকটা মুসলিমের জন্যও এবং মুসলিম রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করবে তাদেরও এর পক্ষে কাজ করার দায়িত্ব রয়েছে এ কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সাধারণ লাভ-ক্ষতির ব্যাপারে আমার আগের পোষ্টে কিছু আলোচনা করেছিলাম, এখানেও আবার একটু আলোচনা লাগবে পরিস্কারের জন্যঃ মুদ্রার মূল ভিত্তি ছিলো ওজন এবং এ মুদ্রার দ্বারা নিরূপিত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করি আমরা আরেকটা ওজনের ভিত্তিতে যেমন ১ কেজি চালের দাম ৪০ টাকা, যদিও এ চাল উৎপাদনে আমাদের কিছুই করতে হয়নি এমনি এমনিই মানে আল্লাহর রহমতে গাছে ধরেছে আমরা একটু হাক-ডাক এর জন্য হয়তো কিছু আগাছা পরিস্কার করেছি। যাই হোক এখনকার সময়ে এ চাল উৎপাদনে টাকা লাগে, তাই এর খরচ আছে, বিক্রয় মূল্য কতো করলে ওজনে কম বেশি হবে না – এটা তো আমাদের বের করতে হবে, কেননা দুইটা ওজনের মাঝখানে কাগুজে-মুদ্রা অবস্থান নিয়েছে।
এখানে যার যা খুশী লাভ করতে দিলে নির্দ্বিধায় বলা যায় ওজনে কম বেশী হবে –বললে হবে না যে এক কেজি চালে তো আমি কম বেশী করি নাই; কেননা ঐ কাগুজে মুদ্রাই এখন আপনাকে আমাকে বিভিন্ন রকম ওজনের জিনিস কেনা বেচায় ব্যবহার করতে হয়, তাই এখানে দামে কম-বেশী করে লাভের পার্থক্য মানে আরেকজনের একটা নির্দিষ্ট ওজনের জিনিস কিনতে বাধাগ্রস্ত করলেন, মানে তাকে ওজনে কমিয়ে দিলেন। এরকম কারনেই অনেকে বলেছে অর্থনৈতিক বিশ্বে লাভের কোন অস্তিত্বই নাই – একজনের ১০ টাকা লাভ মানে আরেকজনের ১০ টাকা ক্ষতি, আরেক ভাষায় বলতে গেলে – প্রত্যেক লাভেরই সমান ক্ষতি বিদ্যমান এবং এভাবেই ভারসাম্য হয়ে থাকে। এ নিয়ে আমি আর না বললাম – আপনাদের মতামত জানলে ভালো লাগবে।
এবার এভাবে যেমন খুশী তেমন মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে লাভের প্রতিযোগীতায় কি হয়, তা নিয়ে আমার মতামতের আগে বিখ্যাত এক এ্যামেরিকান অর্থনীতিবিদ এর কিছু দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরছি, যা আমি একটা বইয়ে পেয়েছি।
এ্যামেরিকান অর্থনীতিবিদ Irving Fisher এর ১৯২৭ সালে জেনেভার এক লেকচারের উপর ভিত্তি করে যে বই রচনা করা হয়েছে সেটা The Money Illusion, সেখানে অনেক সুন্দর উদাহরন এবং কথাও লেখা আছে, সেগুলোর মধ্যে কিছু কথা আছে এমন –
It is true that the greater part of the price change of any individual commodity, like wheat, is due to the supply and demand relating to that individual commodity. For instance, only a small part of the fall in the price of cotton in 1926, following the unprecedented bumper crop of that year, can be ascribed to an increase in the value of money itself, as reflected in the general level of prices. Wheat has often gone up and down over 50 per cent, while the change of the general level of prices was only one or two percent.
In exactly the same way the general sea level may not change an inch during a violent storm, though thousands of individual waves, moving up and down several feet many times, travel a total up and down distance of many miles. Throughout the most violent storms the level of the sea is chiefly affected by the flow of the tides.
In the vast economic sea, with prices bobbing up and down (like waves), there is usually only a small net average change. We must learn therefore to distinguish between the individual movements of prices (caused by the demand and supply of individual commodities), movements which correspond to the waves, and the general movements of prices (caused by the demand and supply of money), movements which correspond to the tides.
এখানে উনার কথার তরজমায় যাবো না, তবে আমি যা বুঝেছি – তা হচ্ছেঃ দুইভাবে পণ্যের দাম নির্ধারন এবং হাতবদল হয়; একটা হচ্ছে কার কাছে মুদ্রা/টাকার রিজার্ভ আছে এবং কার সে টাকার জন্য ডিমান্ড আছে এর উপর; যেমন যার মুদ্রার ডিমান্ড আছে তার কাছে কি পণ্য আছে এবং যার কাছে মুদ্রার রিজার্ভ আছে তার কাছে সে পণ্যের চাহিদা কি রকম – এই দুইয়ের ভিত্তিতে পণ্যের মূল্য নির্ধারিত বা আর্টিফিশিয়ালি সেট করা হয়। আরেকটা হচ্ছে , বাজারে পণ্যের চাহিদা মোতাবেক এর উৎপাদন কি রকম হয়েছে তার উপরেও মূল্য নির্ধারিত হয়, যেমনঃ বাজারে চাহিদা আছে ১ টন আর উৎপাদন হয়েছে আধা টন, এতে করে স্বাভাবিক মূল্য দ্বিগুন হয়ে যাবে কোন হস্তক্ষেপ না করলে। এর উপর ভিত্তি করেই উনার Absolute Inflation এবং Relative Inflation এর কন্সেপ্টও দাঁড়িয়ে আছে। এটার বিশদ ব্যাখ্যা বাদ রেখেই তার বক্তব্যের সত্যতা যে রয়েছে, তা দেখার জন্য এবং মাত্রাতিরিক্ত লাভের এবং উপার্জনের ইচ্ছার ফলাফল দেখার জন্য কিছু উদাহরন আলোচনা করবো।
প্রাকৃতিকভাবে বা আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশে ৭ কোটি মানুষও খেয়ে পড়ে বাচতো এক সময়, এখন ১৬ কোটি মানুষ খেয়ে পড়ে বেচে আছে (অন্যের গোলামীর জন্য অনেক খাদ্য ইম্পোর্ট করতে হয়), খুব একটা খারাপ নেই কেউ খাওয়া/পড়ার দ্রব্যে; এবং এ চিত্র বিশ্বব্যাপী। তৎকালীন উৎপাদনের তুলনায় বর্তমান উৎপাদনও সারা বিশ্বে দ্বিগুন কিংবা তার চাইতে বেশি হয়েছে, এতে করে দেখা যাচ্ছে আমাদের সৃষ্টিকর্তা বা আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি বাড়াচ্ছেন, তাদের জ্ঞান দিচ্ছেন এবং উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়ে এগুলোর প্রতিপালনের ব্যবস্থাও করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু আমাদের কিছু চরিত্রের কারণে আমরা মাঝে মাঝে অনেক কিছুই খেতে পাই না এবং করতেও পারি না, যেমনঃ
কিছুদিন আগে পত্রিকায় ইলিশ মাছ নিয়ে কিছু কাহিনী পড়লাম, সেখানে জানতে পারলাম আমাদের দেশের ইলিশের ব্যবসায়ীরা ইলিশ মাছ দেশের বাজারে বেচার চাইতে ভারতে রপ্তানীতে বেশী আগ্রহী; এ প্রশ্নের সোজা উত্তর হচ্ছে – বিক্রেতাদের টাকার ডিমান্ড এতো বেশী যে দেশের ইলিশ-ভোক্তারা তাদের ডিমান্ড মেটাতে অক্ষম, মানে ভোক্তাদের কাছে টাকার রিজার্ভ বা সাপ্লাই নাই। ব্যাপারগুলো আরেকটু না দেখলে চরিত্র বোঝা যায় না সহজে; বিক্রেতাদের টাকার এতো ডিমান্ড কেনো? ওরা দেখে অন্যান্য বড় বড় ব্যবসায়ীরা আরামের বাড়ীতে থেকে দামী গাড়ী নিয়ে ঘুরছে, প্রমোদ ভ্রমনে বিদেশ যাচ্ছে মাঝে মাঝে, তো ওরা পারবে না কেনো এটা? যুক্তিসঙ্গতভাবেই ওদের দাবী ঠিক আছে। এবার যদি দেখি ক্রেতারা কেনো টাকা দিতে পারছে না তাদের চাহিদা মোতাবেক – তাহলে দেখা যায়, তারা যেখানে কাজ/চাকরী করে – সে ব্যবসায়ী তাকে এমন লেভেলের বেতন দিচ্ছে যে, বাড়ী-ভাড়া, যাতায়াত খরচ এবং অন্যান্য স্বাভাবিক খরচের পর তার কাছে আর টাকা নাই! এখানে মাছ ব্যবসায়ী দল বেশী টাকা উপার্জনের জন্য ঘরের লোককে উপোস রেখে টাকা উপার্জন করে যাচ্ছে, ব্যবসায়ী তার সঞ্চিত টাকা দিয়ে ব্যবসা করে আরও বেশী উপার্জন করে যাচ্ছে; আর গোলাম শ্রেণী খেটেও ইলিশটা খেতে পারছে না! খুচরা ক্ষুদে ছাড়া এ দুই শ্রেণীর ব্যবসায়ীই পলিটিক্সে জড়িত।
এখানে ব্যাপারটা কি হলো? দেশেতো ১৯৯০ সালের তুলনায় প্রিন্টেড টাকার কুয়ান্টিটি ২,০০০ পারসেন্ট বেশি হয়েছে (এ্যাকচুয়াল মানি-সাপ্লাই আরও অনেক বেশী) এবং ওভারঅল ইনকামও বেড়েছে দেশের। কিন্তু ১৯৯০ সালে যতো আরামে মানুষ ইলিশ কিনে খেতে পারতো এখন পারছে না কেন? এটারও একমাত্র উত্তর হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে মাত্রাতিরিক্ত শ্রেণী-বৈষম্য এবং দমন-পীড়ন, ১০-১৫ ভাগ লোকের কাছেই দেশের ৭০-৮০ ভাগ টাকা। আরও কথা হচ্ছে- স্বাভাবিক থিওরীতে ঐ প্রাইসে ইলিশ দেশের বাজারে বিক্রি না হলে অটোম্যাটিক প্রাইস কমে যাওয়ার কথা, কিন্তু কমছে না কারণ ইন্ডিয়া আমাদের চাইতে অবশ্যই বেশী প্রাইস অফার করে ঝুড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে এবং সে রিপোর্টে দেখেছিলাম বাজারেও ইলিশ নাই, মানে ধরে আর দেরী করে নাই! ঐখানে থেকেই নৌকায় করে ইন্ডিয়া এবং সেখান থেকে অন্যান্য দেশেও চলে যাচ্ছে। এটা কন্ট্রোলেবল – ইচ্ছা করলে ঐখানে সিক্যুরিটি দিতে পারে সরকার যে একটা মাছও যেতে পারবে না দেশের বাইরে এবং ব্যবসায়ীদের মাইর দিবে যে, এই দামেই তোরা বিক্রি করবি। কিন্তু এটাও করতে পারবে না – কারণ পলিটিক্যাল-বিজনেস ওদের মতো লোকদের নিয়েই ... এরা যদি ওদের মারে তাহলেতো বিরোধী দলে আশ্রয় পাবে ওরা, তখন দীর্ঘমেয়াদী আরেক সমস্যা। তাই নিরীহ গোলাম-শ্রেণী যারা আছে অত্যাচার তাদের উপর দিয়েই যাবে সবসময়, ওরা যতক্ষণ এরকম নিরীহ থাকবে আরও মাইর খেতেই থাকবে।
এভাবে দেশের শ্রমবাজারও; এখানে ইলিশের বদলে উদাহরণ হবে সবচাইতে বড় সেক্টর গার্মেন্টস এবং রিলেটেড এক্সেসরিসঃ এর ব্যবসা যারা করে, তাদের প্রচুর ডিমান্ড রয়েছে ডলারের, কেননা প্রমোদ ভ্রমন এবং বাড়ী-গাড়ী করতে হবে বিদেশেও, নিজের দেশে সামগ্রিকভাবে নিজেদের উন্নতিতে সময় দিলে তো ব্যক্তিগত এসব আরাম-আয়েশ হবে না, জীবনতো অল্প-সময়ের উপভোগ করতেই হবে, তাছাড়া ব্যবসাতো রাসূল(সাঃ) এর সুন্নাত, কোন বাধা নেই যাই করি না কেন! আর এসব জামা-কাপড়ের মতো বিষয়ে উন্নতরা সময় নষ্ট করতে চায় না বিধায়, এদের মতো ছোটলোক শ্রেণীকে কড়া দাম দেয়, যদিও সেটা উন্নতদের দেশের তুলনায় নিকৃষ্ট-প্রাইস! আর এতেই মোহিত হয়ে এরা পলিটিক্স এর মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে কোনঠাসা করে রাখা দেশের পঙ্গপালের মতো নিরীহ শ্রমিক শ্রেণীকে প্রযুক্তির উন্নয়নে বা এরকম কিছুতে খাটানোর মতো করে তৈরী করার বদলে কাপড় সেলাই করতে কাজে লাগায় এবং এখন আরও এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে দর্জি-ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত খুলে ফেলে সেখানেও আরেক ছোট ব্যবসা করে যাচ্ছে।
স্বাধীন এর আগে আর পরে দেশের কাপড় বানাতে হ্যান্ডলুম নিজেরাই তৈরী করতো আর এখন ঐটুক জ্ঞানও হারিয়ে ফেলেছে ডলারের লোভে! কাপড় সেলাই এর মেশিনতো দূরের কথা সুই-টাও মনে হয় আজও বানাতে পারেনি। সব মেশিন কিনে আনে সেই বিদেশ থেকেই। এক্ষেত্রে চায়না নিজেরাই মেশিন বানায়, নিজেরাই সারা বিশ্বের এ ধরনের কাপড়ের প্রায় অর্ধেক সাপ্লাই দেয় একাই, অবশ্য সেটা তাদের মোট রফতানীর তুলনায় একেবারেই নগন্য। আর আমাদের এখানে এটাই বলতে গেলে মোট রফতানী!
এটাই বাস্তব চিত্র এবং এটাই আমাদের চরিত্র। যেই টাকা বা ডলারগুলো ইনকাম করলি তোরা সেটা দিয়ে ড্রোন, ট্যাংক, জেট-ফাইটার বানানোর জ্ঞানও তো ক্রয় করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে পারিস, কারণ সে জ্ঞান ওরা দিবে না – ওরা তোদের মতো ডলারের উপর ঈমান আনে নাই! তাই নিজেরা সময় দিয়েই চেষ্টা করতে পারিস তো, মেশিন বানানোর চেষ্টা করতে পারিস, গাড়ী বানানোর চেষ্টা করতে পারিস! তা করছিস না কেনো? এতো হারামী কেনো তোরা? টাকাই সুখ দেয়, ডলারই সুখ দেয়, তাই ডলারের উপর ঈমান আইনা কি কার্য্যকলাপে প্রমাণ দিচ্ছিস যে, ডলারের প্রতি তোদের ঈমাণ অনেক পোক্ত? লজ্জা করেনা তোদের - সারা বিশ্ব যে তোদের দর্জি বলে ডাকে এ জন্য যে তোদের মোট রফতানী-ই দর্জিগিরী থেকে আসে? লজ্জাতো তোদের নাই-ই আরও বেশি করে এটা করার জন্য ওদের দ্বারে দ্বারে কান্নাকাটি করিস তোরা! এই দুইটা সেক্টর ছাড়াও অন্যগুলোতেও মোটামুটি একই চরিত্র আমাদের।
এসব আমরাসহ মোটামুটি অল্প কিছু ছাড়া সব মুসলিম দেশেরই সাধারণ চরিত্র বলে আমার মনে হয়। তাই আমরা যদি বেশী ডলারের বা কাগুজে মুদ্রা আহরনের প্রতিযোগীতা করি – এতে দেশের অন্যরাও প্ররোচিত হবে স্বাভাবিকভাবেই, আর এতে করে মুসলিমদের কোনদিনও উন্নতি হবে না – দয়া বা ভিক্ষা ছাড়া, শুধুই প্রতিযোগীতা বাড়বে ডলার কামাইয়ে এবং এর জন্য আমাদের দেশের মতো নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্টতর অবস্থানেই অধঃপতিত হবে সবাই।
বিষয়: বিবিধ
১৪৩২ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এ মুহুর্তে যুদ্ধে গেলেতো মাইর খাবে!
একটা ভুল ছিলো লেখায় ২০০০ গুন এর জায়গায় ২০০০ পারসেন্ট হবে, ঠিক করে দিয়েছি।
কিন্তু বেশী লাভ করার মাধ্যমে যে আরেকজনকে ঠক দেয়া হয়ঃ যেমন আমি/আমরা ১ কেজি উৎপাদন করছি বা কিনেছি ২০ টাকায়, এরপর পুরো বাজার আমার/আমাদের – তাই আমি/আমরা বেচবো ১০০ টাকায়, এটার আসলে কি হবে? এটা কি ঠিক হবে করা এবং এ ধরনের মূল্যায়নের সমর্থনে কি কোন রেফারেন্স পাওয়া যায়?
ধর্ম মেনে চলার লোকজনার অভাব বর্তমান সময়ে....
ভালো লাগলো লেখাটি।
অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে।
আমি অনেক জায়গায় খেই হারিয়ে ফেলছিলাম। বিশেষ করে লিখার প্রথম দিকে - যেখানে ওজনে কনসেন্ট্রেশান করছিলাম, ওটা নিয়ে ভাবনা আসতে না আসতেই - ব্যবসায়ীদের লাভের মানুষিকতা আসায় - ফোকাস হারা হয়ে পড়েছি।
আমার কাছে মনে হয় - আমরা যদি দজ্জাল মানে প্রতারনা দ্বারা সৃষ্ট (মসীহ উদ দজ্জাল নয়) ডিসিপটিভ ইকোনমিক টার্মস গুলোকে মাথা হতে সরিয়ে - সাধারনভাবে অর্থনৈতিক ক্রিয়া বিক্রিয়া ও ফলাফল নিয়ে কথা বলি এবং রেফারেন্স কিংবা তুলনামূলক চিত্র কল্প কিংবা উদাহরন হিসাবে ডিসিপটিভ ইকোনমিক টার্মস গুলোকে সামনে আনি - তাহলে কমপ্লিটলী ভিন্ন তথা ন্যাচারাল ইকোনমির দেখা পাব ইনশাল্লাহ্।
আমার মনে হয় - আল্লাহ ব্যবসাকে একটা 'হিউম্যান মেকানিজম' হিসাবে মানুষের জন্য সেট করেছেন - যেখানে মানুষ 'ইন্ট্রোভার্টেড' বা গোত্র কেন্দ্রিক না হয়ে 'এক্সট্রোভার্টেড' - অন্য গোত্রাভিমূখী হবে এবং এর মাধ্যমে এক গোত্র অন্য গোত্রের সাথে শুধু পন্য কেনা বেচাই করবে না সে সাথে আইডিয়াও বিনিময় করবে। এই জন্যই সম্ভবতঃ আমরা দেখি ইসলামের ব্যবসার উদ্দেশ্যের কোথাও মুনাফাকে সেন্ট্রাল করা হয় নি, আবার ব্যবসাকে কখনো সেংশান কিংবা অবরোধ কিংবা প্রোহিভিশান এর আওতায় আনা হয় নি।
আর ইদানিংকালের বাংলাদেশী কিংবা বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়ির মধ্যে লাভের জন্য যে বিশালাকার ক্ষুধা, যে অসৎ কমপিটিশান কিংবা প্রবৃত্তির সৃষ্টি হয়েছে - তা সামাজিক বিজ্ঞান কিংবা মনস্তত্ব দিয়ে আপনি যে ভাবে দেখালেন - তাই প্রমান করে। কিন্তু ধর্ম এ ইকোয়েশানে আনলে বিষয়টা কমপ্লিটলী ভিন্ন হয়ে যায়। গতকাল রাতের একটা উদাহরন দেই -
বাংলাদেশ হতে এখানে আসা এক গার্মেন্ট ব্যবসায়ীর সাথে ডিনার করছিলাম। তিনি আমাকে ব্যবসার জন্য আর একটু বেশী সময় ব্যয় করতে উদ্ভুদ্ধ করছিলেন - আর আমি চেষ্টা করছিলাম ওনাকে বোঝাতে যে - আমি মূলতঃ ব্যবসায়ে আরো কম সময় দিতে চাই - সাফল্য নিশ্চিত করতে - যদিও শয়তান ও লোভ ইত্যাকার কারনে যে স্পীডে কাজ কমাতে চাই তা পারছি না।
আমি ওনাকে সিরাহ হতে বেশ কিছু উদাহরন দিয়ে বলললাম - যেখানে বাংলাদেশে ছোট বেলা হতে শুনে এসেছি ধন অর্জনে ইসলামে বাধাঁ নেই (টেকনিক্যালী এ্যানকারেজ করা হয়েছে) সেখানে রাসুল সঃ ও সাহাবী রাঃ এর লাইফে দেখা যাচ্ছে লিটারেলী কমপিটিশান করতে কে কত বেশী দরিদ্র জীবন যাপন করতে পারে, কিংবা দারিদ্রতাই তাদের জীবনের পার্ট ছিল - লিটারেলী বলা যায় - বেসিক নীডস অন্ন বস্ত্র ও বাসস্থান এর সংস্থান (সেইভ করে রাখা নয়) হবার পর পর ই স্প্রীচুয়াল স্ট্রেংথ নিশ্চিত করতে তারা দুনিয়াবী ইস্যুতে মনোযোগ না দিয়ে ধর্মীয় বিভিন্ন ইস্যুতে মনোনিবেশ করেছে অনেক অনেক বেশী - তা সে পড়া লিখা হোক, ধর্ম প্রচার হোক, রাষ্ট্রের জন্য কাজ হোক, সামাজিক কাজ হোক, গবেষনা হোক, সমর বিদ্যা অর্জনে হোক কিংবা বিজ্ঞান চর্চা কিংবা এক্সপেডিশান হোক।
মূলতঃ ঈমানদার যদি সাফল্য বলতে জান্নাতে যাওয়া নিশ্চিত করাকে আসলেই মিন করে - তবে সে অধিক লাভে যাবে না, অল্প বিক্রি অধিক লাভ কিংবা ভেজাল বিক্রি অধিক লাভ কিংবা কম দিয়ে বেশী লাভ ইত্যাদি - কারন তাতে তার বেসিক নিডস এর জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ বা টাকা দ্রুত তার হস্তগত হবে অথচ কারসাজি করার জন্য বেহেস্ত হারাবার সম্ভাবনা তৈরী হবে। বরং সে সততার সাথে ক্রেতা সন্তুষ্টির দিকে মনোযোগ দেবে - ফলাফল স্বরূপ ব্যবসায়িক ভাইস গুলো সরে যাবে।
আমাদের সরকার সহ, আমাদের উচ্চশিক্ষা ও রিলিজিয়াস শিক্ষায় ভেজাল নিশ্চিত করা সহ আমাদের ওভার অল সিস্টেমেটিক মানুষিক বৈকল্য নিশ্চিত করায় - আমরা হিরা (ধর্ম) ফেলে কাঁচ (প্রতারনা ও মোহ) তুলে নিয়েছি।
এ বিষয়ে আপনার লেখা মানে ‘ইসলাম লাভের দিকে সেন্ট্রাল করেনি’ এটাই আমারও মনে হয় সঠিক মত।
আসলে আমার যেটা মনে হয় আমরা মুসলমানরা গোত্রভুক্ত না থেকে ব্যাক্তিকেন্দ্রিক হয়ে যাওয়ায় এবং নিজেদের সামগ্রিক লাভের বদলে ব্যাক্তিগত লাভের দিকে কন্সেন্ট্রেট করায় জাতিগতভাবে ধরা খেয়ে এই অবস্থায় পৌছেছি।
'আসলে আমার যেটা মনে হয় আমরা মুসলমানরা গোত্রভুক্ত না থেকে ব্যাক্তিকেন্দ্রিক হয়ে যাওয়ায় এবং নিজেদের সামগ্রিক লাভের বদলে ব্যাক্তিগত লাভের দিকে কন্সেন্ট্রেট করায় জাতিগতভাবে ধরা খেয়ে এই অবস্থায় পৌছেছি'।
আমার চোখে ভাসছে ইকবাল রোডের মসজিদে - অহমিকায় ভরা উঠতি ধনী (লিটারেলী চোর শ্রেনী) লোকগুলো - গাড়ী থেকে নেমে জমায়েতে দাঁড়াতে গিয়ে - চওড়া এক জায়নামাজ বিছিয়ে - পাশের মানুষটি হতে কমপ্লিটলী আইসোলেটেড হয়ে নামাজ পড়তে দাড়িয়েছে - এ্যাজ ইফ সে ঐ জমায়েতে নামাজ পড়ার সময় ও ব্যাক্তিগত লাভের দিকে কনসেনট্রেটেড অবস্থা বজায় রাখতে চাইছে।
সোবহানাল্লাহ্।
মন্তব্য করতে লগইন করুন