জিডিপি - ব্যাপারটা কি হাস্যকর?
লিখেছেন লিখেছেন বুড়া মিয়া ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১১:৩৬:২৮ রাত
এর আগের পোষ্টে জিডিপি এবং প্রাইস ডিস্ক্রিপেন্সী নিয়ে একটু আলোচনা করেছিলাম, অফুরন্ত সময় থাকায় মনে হলো সময়টা ভালোভাবে কাটানোর জন্য আরেকটু আলোচনা করি। জিডিপি বিষয়টা নিয়ে দুই ধরনের মতবাদ রয়েছে তবে উৎস একই – একটা সেন্ট্রাল ডাটাবেইজ। এ ডাটাবেইজ মূলত একাউন্টিং সিষ্টেম। তাই জিডিপি-কে এ্যাকাউন্ট্যান্টরা একরকমভাবে দেখে আর সাধারণ ইকোনোমিষ্টরা আরেকভাবে দেখে থাকে; এ্যাকাউন্টিং জ্ঞানসম্পন্ন লোকেরা জানে ইকোনোমিষ্টরা কি বলতে চায়, তবে এ্যাকাউন্টিং এর জ্ঞানহীন ইকোনোমিষ্টরা আবার অনেক কিছু বুঝতে একটু সময় নেয়।
প্রথমে দেখি ইকোনোমিষ্টরা জিডিপি বলতে কি বুঝেঃ
ইকোনোমিষ্টদের ভাষায় –
Y = I + C + G +NX, যেখানে
Y = জিডিপি;
I = ফার্মের সমস্ত খরচ এবং হাউজহোল্ডদের বাড়ি বানানোর খরচ;
C = হাউজহোল্ডদের ভোগ বা কনজামশান
G = সরকারের ভোগ বা কনজামশান
NX = নেট এক্সপোর্ট (এক্সপোর্ট – ইম্পোর্ট)
তবে এভাবে ক্যালকুলেশানে অনেক সমস্যা, কেননা লক্ষ-লক্ষ এন্ট্রি কোন নিয়ম ছাড়া যোগ বিয়োগ করার জন্য অনেক বেগ পেতে হয়, এছাড়াও এসবের ভিতরে কতোগুলো ক্যাশ-ব্যাসিস এ এবং কতোগুলো নন-ক্যাশ লেনদেন হয়েছে, সেটারও তথ্য লাগে, আর তাই এ জন্য এ্যাকাউন্টিং সিষ্টেম বেষ্ট এবং মূলত ইকোনোমিষ্টদের ঐ সমস্ত তথ্যই একাউন্টিং ডাটাবেইজ থেকেই দেয়া হয়, এ জন্য রয়েছে সিষ্টেম অফ ন্যাশনাল এ্যাকাউন্টস (SNA)।
তবে এ সিষ্টেমটা অর্ডিনারী ডাবল-এন্ট্রি-সিষ্টেম এ্যাকাউন্টস থেকে একটু আলাদা, একে বলে কুয়াড্রুপল-এন্ট্রি-সিষ্টেম একাউন্টিং; তবে ডাবল এন্ট্রি-সিষ্টেম বুঝলে – এটা একদম সহজ। যেমন ডাবল এন্ট্রি-সিষ্টেমে একজন লোকের ক্ষেত্রে একটা ফাইনান্সিয়াল ট্র্যানজেকশানে একটা জার্নাল বা জাবেদা দিতে হয়, আর তাতে দুইটা এন্ট্রি থাকে, ডেবিট এবং ক্রেডিট। এখানেও মূলত একজন (যেমন হাউজহোল্ড) এর একটা ট্র্যানজেকশানের ক্ষেত্রে দুইটা এন্ট্রি-ই হয়; তবে ন্যাশনাল হিসাবে দুই পার্টি-কেই কনসিডার করতে হয় সবসময় (যেমন হাউজহোল্ড কনজামশান করলে সেটা ফার্ম/বিজনেস থেকে কিনে এনে করবে) তাই একই ট্র্যানজেকশান দুই পার্টির হিসাবে নিতে হলে অবশ্যই হাউজহোল্ড এর বইয়ে (ডাবল-এন্ট্রি-সিষ্টেমে) দুইটা এবং ফার্ম/বিজনেস এর বইয়ে আবারও দুইটা করে চারটা এন্ট্রি হয়, তাই এর নাম কুয়াড্রুপল-এন্ট্রি-সিষ্টেম একাউন্টিং।আর এখানে দুইটা এ্যাকাউন্টস এর সেট মেইন্টেইন করা হয়।
১) সেট অফ ন্যাশনাল এ্যাকাউন্টস
২) সেট অফ ফান্ড/ক্যাশ ফ্লো একাউন্টস
এখন দেখা যাক এ দুইটার ভিতরে কি আছেঃ
১) সেট অফ ন্যাশনাল এ্যাকাউন্টস
এখানে সমস্ত জাবেদা বা জার্নাল থেকে মূলত পাচটা লেজার বা খতিয়ান হয়, সেগুলো হচ্ছে –
ক) ফার্ম/বিজনেস/প্রোডাকশান/জিডিপি এ্যাকাউন্ট বা খতিয়ান
খ) হাউজহোল্ড এ্যাকাউন্ট
গ) পাবলিক/গভার্নমেন্ট এ্যাকাউন্ট
ঘ) সেভিংস/ক্যাপিটাল এ্যাকাউন্ট
ঙ) রেষ্ট অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড এ্যাকাউন্ট
এ্যাকাউন্টিং হিসাবে খতিয়ান নাম্বার (ক) এর ডেবিট বা ক্রেডিট যেকোন পাশের যোগ-ফলকেই জিডিপি বলা হয়। এর সাথে ইকোনোমিক্স এর ওসব টার্মের মিল সহজেই বোঝা যায় এবং এ্যাকাউন্টিং এর ধারণা যাদের আছে, তারা এমনিতেই বুঝে যাবে। এ্যাকাউন্টিং সিষ্টেমে এছাড়াও যেটা রয়েছে – এই যে পাচটা খতিয়ানে এন্ট্রিগুলো গেলো এগুলোর টাকা আসলো কোত্থেকে সেগুলোর চেইন কি, এর জন্য আবার আরেকটা, মানে (২) নং, সেট মেইন্টেইন করা হয়।
২) সেট অফ ফান্ড/ক্যাশ ফ্লো একাউন্টস
এখানেও পাচটা খতিয়ান হয়, তবে একটু আলাদা, কারণ এখানে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক এবং কমার্শিয়াল ব্যাংক জড়িত, তাই এখানকার এ্যাকাউন্টসগুলো হচ্ছে –
ক) ফার্ম/বিজনেস এ্যাকাউন্ট
খ) হাউজহোল্ড এ্যাকাউন্ট
গ) পাবলিক/গভার্নমেন্ট এ্যাকাউন্ট
ঘ) কমার্শিয়াল ব্যাংক এ্যাকাউন্ট
ঙ) সেন্ট্রাল ব্যাংক এ্যাকাউন্ট
এখানে ইকোনোমিষ্ট এবং এ্যাকাউন্টিং, দুইটা দৃষ্টিভঙ্গী বলার কারণ হচ্ছে আমাদের দেশের এডুকেশান সিষ্টেম। ইউ.এস, ইংল্যান্ড এর কিছু ইকোনোমিক্স এর লেখা পড়তে গিয়ে দেখেছি, তাদের কারও কারও এ্যাকাউন্টিং এবং ইকোনোমিক্স দুইটারই ডিগ্রী রয়েছে, তবে আমাদের দেশে ছোটবেলায় দেখতাম – আর্টসের (মানবিক বিভাগের) ছাত্র-ছাত্রীই ইকোনোমিক্স এ বেশী, আর আমাদের দেশে আমাদের সময়ের আর্টসে ম্যাথ-তো ছিলোই না, এ্যাকাউন্টিং এরও কোন বালাই ছিলো না; কিন্তু বেলা শেষে দেখা যেতো – ইকোনোমিক্স এর আর্টসের পোলাপান ইকোনোমেট্রিক্সও শেষ করে ফেলেছে বুঝে বা না বুঝেই! এটা আসলে ওদের কোন দোষ না এমনভাবে শিক্ষা-ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে, যাতে করে কেউই ভালোমতো কিছু না বুঝতে পারে, খালি গোলামীর জন্য একটা সার্টিফিকেট ধরিয়ে দিলেই তো চলে! আগেতো এসব ন্যাশনাল এ্যাকাউন্টস, কমার্সে ছিলো – এখন তাও নাই আমাদের দেশে, মানে এটা শিখতে হলে এখন ঐসব ডিপার্টমেন্টে চাকরী করে জানতে হবে অথবা নিজে নিজে SNA-Manual পড়ে জানতে হবে।
যাই হোক, জিডিপি কিভাবে আসলে ক্যালকুলেশান হয় তা বললাম, যারা জানেন না তাদের জন্য; কিন্তু আমার মূল বিষয় ছিলো জিডিপি এ্যাকাউন্ট এর বটম-লাইন বা কথিত জিডিপি এবং আমি এটাকে বলেছিলাম প্রাইস-ডিস্ক্রিপেন্সী বা যা-তা ভাবে মূল্যায়নের মাধ্যমে কোনঠাসা করার পলিসি হিসেবে।
যে কোন জিনিসের তুলনামূলক বিশ্লেষন করতে গেলে প্রত্যেকটা বিষয়ে একটা ষ্ট্যান্ডার্ড থাকতে হবে এবং সে ষ্ট্যান্ডার্ড এর আলোকে একেকজনের অবস্থান বিচার করতে হবে। কিন্তু জিডিপির ক্ষেত্রে আসলে কোন ষ্ট্যান্ডার্ড নাই! আমার দেশের ষ্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী আমার যোগফল হয়, ইউ.এস এর ষ্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী তারটা, ইউ.কে এর ষ্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী তাদেরটা। এখন এই তিন-ষ্ট্যান্ডার্ডের তিনটা যোগফলকে খালি ইউ.এস. ডলার বা ইউরোতে কনভার্ট করে দিলেই কি কম্পেয়ারেবল হয়? হ্যা, এটাও হয় আসলে – এর দ্বারা কে কতো বড় চামারী করতেছে তা খুব সহজেই বোঝা যাবে, কিন্তু এ্যাকচুয়াল এ্যাক্টিভিটি বোঝা যাবে না।
অনেকেই বলেন এবং ইকোনোমিক্স এর ভাষায়ও xy-plane এ এক লাইনকে ডিমান্ড আরেকটাকে সাপ্লাই ধরে একটা ইকুইলিব্রিয়াম-প্রাইস বের করে চাপাবাজী করা হয়, বাস্তবে কি তা হয়? বাস্তবে আমার জানামতে কোনদিনও পণ্য বা সেবার ডিমান্ড-সাপ্লাই দিয়ে প্রাইস নির্ধারণ হয় না। কবে আসলে কিভাবে কোন আইটেম এর প্রাইস কে কিভাবে নির্ধারণ করলো এটা জানা যায় না, তাই ধরে নিলাম আদম-স্মীথ এর হিসেবে এটা হয়ে এসেছে শ্যাডো-হ্যান্ড এর মাধ্যমেই। কিন্তু এ নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে তো কোন অসুবিধা নাই।
যেকোন মূল্যবান জিনিস, যেটার বাজারমূল্য আছে সেটায় মূলত সবসময়ই দুইটা পার্টি থাকে – ক্রেতা আর বিক্রেতা। বিক্রেতা এখানে এমন এমন আইটেম নিয়ে বেচার জন্য বসে আছে (পণ্য-সেবা দুই ক্ষেত্রেই), যেগুলো মূলত সে নিজে উৎপাদন করে নাই, খালি পরিশ্রম করে রিশেইপ করে অথবা অরিজিনাল ফর্মে বিক্রেতার কাছে উপস্থাপন করছে, আর দাম হাকাচ্ছে। এখন চিন্তাযোগ্য বিক্রেতা দাম হাকাচ্ছে কি দিয়ে? এখানে আবার আসে এ্যাকাউন্টিং এর আরেকটা পার্ট, কষ্ট-এ্যাকাউন্টিং, হোক সেটা ফর্মাল বা ইনফর্মাল। বিক্রেতা সর্বপ্রথম তার খরচ হিসাব করে যেকোন বিনিময়-মাধ্যমে এবং তার সাথে লাভ যোগ করে দাম হাকায়; ক্রেতা একটু বাৎচিত করে কিনে নেয়! দুনিয়ায় এমন কোন আইটেম নাই যেখানে এই দুই পার্টি না থাকলে মূল্য নির্ধারণ হয়েছে! ইমমুভেবল ল্যান্ড ছাড়া এমন কোন আইটেম নাই যেখানে লেবার লাগে নাই কিন্তু তার মূল্য আছে।
ফল-মূল, খাবার-দাবার, সোনা-রূপা, মাছ-মাংস, লোহা-লক্কড় হইতে কোন মনুষ্য-লেবার লাগে না, এগুলো আল্লাহ-প্রদত্ত, উনার অন্য কোন লেবাররা এগুলো করে। এটার দাম হলো কিভাবে মানুষের কাছে? ঐ-যে মানুষ লেবার দিয়েছে - মাথায় করে, জাল ফেলে অথবা জবাই করে নিয়া আসছে, তাই এর মূল্য হয়েছে; খনিতে পড়ে বা বনে-বাদাড়ে গাছে ধরে থাকলে, নদীতে কিংবা জঙ্গলে পড়ে থাকলে এর কোন মূল্য কেউ দেয় না! সোজা ভাষায় যেখানেই মানুষের পরিশ্রমের ছোয়া পড়ে সেখানেই বাণিজ্যিক-বিনিময়-মূল্য হয়। তাই দেখা যায় মূল্য মানেই মানুষের লেবার, এটা একেক জায়গায় একেক রকম হয়েছে বিভিন্ন কারণে, তার প্রায় সবই অজানা। আর বিক্রেতা-ক্রেতাদের আচরণও বলে না যে এটা ডিমান্ড-সাপ্লাই দিয়ে হয়। যেমন আমাদের আলু ব্যবসায়ীরা সব আলু ফেলে দিছে, কিন্তু প্রাইস মেনে নেয় নাই, আবার পাইকাররাও কিনে নাই কারণ তার প্রাইস মন মতো হয় নাই। যতোদূর জানা যায় – জনম ভরেই সিন্ডিকেশান এর মাধ্যমেই প্রাইস নির্ধারণ হয়ে এসেছে। আর স্বাভাবিক-বাজারে বিক্রেতারা এটা করে যখন জানে যে ক্রেতার কাছে টাকা আছে এবং তার প্রয়োজনও প্রকট। আরেকটা বিষয় পারফেক্ট-কম্পিটিশান মার্কেট বলে আসলে কোন মার্কেটই নাই, এটা একটা ধারণা-মাত্র! তাই প্রাইস মানেই পণ্য-সেবার ডিমান্ড সাপ্লাই না, এটা পুরোপুরিই নির্ভর করে মানি-সাপ্লাই এর উপরে এবং কার মানি কে, কিভাবে নিবে তার জন্য। একইভাবে এ বিষয়টা যখন আন্তঃদেশিয় হয়, সেখানেও এরকম ভিন্ন-প্রাইস এ কারণেই হয়, মানে কোন দেশকে মেরে কে খাবে! লেবার-প্রাইস আর পণ্যের প্রাইস এর পার্থক্যের উৎপত্তি এবং এখনও এর অবস্থান শুধু এ জন্যই! একই পরিমাণ সময় এ্যাক্টিভ থেকে এক দেশের লেবার একরকম মূল্য পায় আরেক দেশের লেবার তা পায় না।
তাই যখন প্যারিটি-এ্যাডজাষ্ট করতে হবে বলে প্রশ্ন আসে, তখন খালি লেবার আওয়ার কনসিডার করা উচিৎ বলে আমার মনে হয়; কেননা পণ্য এবং শিক্ষা বা চিন্তার প্রোডাকশানতো ন্যাচারালী-ই হয়, খুব বেশি হলে বাগানে সাজানো যায়, লেইকে ঘের দেয়া যায় অথবা স্কুলে শিখানো যায়। কিন্তু লেবার ছাড়া এগুলোর কোন প্রাইসই হয় না। তাই পণ্য বা সেবার মূল্যের ভিত্তিতে ইনকাম ভিউ অফ জিডিপি বা এক্সপেন্ডিচার ভিউ অফ জিডিপি বাদ দিয়ে, একটা ইকোনোমীর টোটাল লেবার আওয়ার-ই মূলত জিডিপি হওয়া উচিৎ।
এভাবে আমরা হিসাব করে দেখতে পারি – বাংলাদেশের টোটাল ইকোনোমিক্যালী এ্যাকটিভ পপুলেশান ৭.৫ কোটি, ইউ.কে এর ৩.২৫ কোটি আর ইউ.এস এর ১৬.৫ কোটি এবং তারা একই পরিমাণ সময় কাজ করলে সে সময়ের মূল্যতো একই হবে প্যারিটি এ্যাডজাষ্ট করলে। তাই জিডিপিতে এই ৩ দেশের মধ্যে ফার্ষ্ট হবে ইউ.এস, সেকেন্ড আমরা আর থার্ড হবে ইংল্যান্ড। এখানে লেবারের ক্লাসিফিকেশান-ইফিশিয়েন্সী নিয়ে যে যতো প্যাচালই পারুক না কেন – টাইম ইজ মানি, তাই যার লেবার টাইম বেশী ওর জিডিপি বেশী।
ব্যাপারটা কি হাস্যকর?
বিষয়: বিবিধ
২২৬২ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছা রইলো।
বাঁধাহীন লেখার অঙীকার ছিলো।
আমি আসলে এর কোন কারণ খুজে পাই না, ওরা কি এভাবে ব্যান করে মজা করে না-কি? ব্যাপারটা এখনও বোধগম্য নয়।
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা @ বুড়া মিয়া
ধন্যবাদ আপনাকে
দারিদ্রতার জন্য মূলত দায়ী ইনকাম-রিডিষ্ট্রিবিশান পলিসী; অন্যান্য অনেকের মতোই আমাদের দেশেরও ন্যাশনাল ইনকাম বেড়েছে, কিন্তু সেটার ম্যাক্সিমাম শেয়ার অল্প কিছু লোকদের। এ লোকগুলো বাকীদেরকে সামান্য বেতন দিয়ে, তাদের শ্রমে-সৃষ্ট ভ্যালু এর পুরোটা নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও সরকারের কিছু পলিসিও এর জন্য দায়ী; যেমন কিছু শ্রেণীর ব্যবসায়ীদেরকে দেশের সব লোন দিয়ে দিচ্ছে – তা দিয়ে সাধারণ লোকদের খাটিয়ে তারাতো ইনকাম করছেই, তার উপর আবার গরীব-মধ্যবিত্তদের থেকে যে ট্যাক্স-ভ্যাট নেয়া হয়, সেটার থেকে তাদের সাবসিডি-ইন্সেন্টিভ দেয়া হচ্ছে সেই শ্রেণিকেই যুগ-যুগ ধরে। এতে করে ইনকাম এর সব একদিকেই চলে যাচ্ছে, এর উপর আরও বড় সমস্যা ড্রেইন; চুরি করে বা এভাবে মেরে কেটে নিয়েও যদি সে টাকাটা দেশেই অন্য কোন প্রোডাক্টিভ খাতে বিনিয়োগ করতো, তাও কর্মসংস্থান বাড়তো এবং এই টাকাগুলো দেশের ধনী-গরীব-শ্রেণীর মানুষদের মধ্যেই সার্কুলেট হতো, এতে করে তাদের লিভিং-ষ্ট্যান্ডার্ড কিছুটা হলেও ভালো হতো; কিন্তু এটা না করে সে টাকাগুলো দেশ থেকে চিরতরে চলে যাচ্ছে অন্য দেশে তাদের হেফাজতের জন্য!
আর এভাবে সাধারণ মানুষকে পঙ্গু করে রাখার জন্য শিক্ষ্যা-ববস্থাও অনেকটাই দায়ী, উদ্ভাবনী কিছুই নাই আমাদের ব্যবস্থায়, বিশ্বের সাথে তালই মেলাতে পারছি না আমরা।
এছাড়াও যে লোকগুলোকে দিয়ে বিদেশিদের লো-কষ্টে প্রোডাক্ট-সার্ভিস দিচ্ছে, এদেরকে অন্য কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের ভালো করতে পারতোঃ একটা উদাহরণ যেমন আমাদের পাশের দেশ ভারত এখন গাড়ী/বাইক বানায় এবং তাদের দেশের লোককে স্বল্প-মূল্যে দেয়, এতে করে একদিকে জাতীয় আমদানী খরচ কমছে (মানে জাতীয় আয় বেড়ে যাচ্ছে) আরেক দিকে নিজেদের বানানো বিধায়, নিজেদের হিসাব মতো কম-মূল্যে দিতে পারছে এবং নিজেদের মানুষদের জন্য কর্মসংস্থান এর ক্ষেত্রও তৈরী হয়েছে, এই একই ক্ষেত্রে আমরা আমাদের ইনকামের অনেক বড় শেয়ার জাপান-ইন্ডিয়া-চায়না কে দিয়ে দেই; অথচ ইঞ্জিনিয়ার আমাদের দেশেও আছে – কিন্তু তাদের কাজের ক্ষেত্র বানানোর জন্য সরকার সাবসিডাইজ করে না!
আর দেশ কোন কোন সেক্টর দিয়ে এগিয়ে নেবে এটায়ও সরকারের ব্যররথতা রয়েছে, সেসব দিকে মানুষকে মোটিভেট না করার কারণে, এর ঠিক আগের পোষ্টে ইউ.কে এর একটা সাইড এর ট্রেড এর উদাহরণ দিয়েছিলাম, যেখানে তারা অল্প কিছু লোক দিয়ে গোল্ড-ট্রেড করে আমাদের কাছ থেকেই বিশাল ইনকাম নিয়ে যাচ্ছে, হতে পারে সে ইনকাম এর একটা পোর্শন তাদের সরকার ট্যাক্স হিসেবে কেটে নিয়ে সেটা দিয়ে অন্যান্য সেক্টরেও এগিয়ে যাচ্ছে।
সব মিলিয়ে কাজের ক্ষেত্রে মানুষকেও কাজের স্বাধীনতা দিতে হবে, আবার সরকারের হস্তক্ষেপও থাকতে হবে সামগ্রীকভাবে সামগ্রীক অবস্থার উন্নয়নের জন্য।
আর দেশের হিসাব সাধারণ ব্যবসার মতো করা যাবে না, মানে রিজার্ভ ইনভেষ্ট করে সরকার কি রিটার্ণ পেলো – এটা সরকার চিন্তা করলে, সাধারণের কষ্ট আরও বাড়বে, তারা মানুষ থেকে ট্যাক্স-ভ্যাট-ডিউটি ইত্যাদীর মাধ্যমে ইনকাম করে সেগুলো দিয়ে সে মানুষগুলোর উন্নয়নের চিন্তাই করতে হবে, কিন্তু তারা তা করে না! গত কয়েক যুগের সরকারগুলোকে দেখলে বলতে হয় – আমাদের সরকারের সবাই তো বিদেশী (দেশের বাইরেই তাদের ছেলে-মেয়ে-বাড়ি-গাড়ি-সম্পদ সবকিছু), মনে হয় দেশে আসে সিজনাল-ব্যবসা করতে, এরা কি সাধারণ মানুষ নিয়ে ভাবে? মনে হয় না!
তাই বাংলাদেশে ফিরছে। আগে বামদের সাথে
আনন্দোলন করতো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন