চাহিদা, যোগান, মূল্য ও চরিত্র

লিখেছেন লিখেছেন বুড়া মিয়া ৩১ আগস্ট, ২০১৪, ০১:২৯:৪৭ দুপুর

বর্তমান বাজারে বিভিন্ন প্রোডাক্ট এর যে প্রাইস-ইনফ্লেশানগুলো হয়; এর যতোটা না সে প্রোডাক্ট এর ডিমান্ড-সাপ্লাই দ্বারা প্রভাবিত হয়, তার চাইতে বেশী প্রভাবিত হয় কারেন্সীর (মুদ্রা/টাকা) ডিমান্ড সাপ্লাই এর কারণে। একেকটা দেশে যে হারে মানুষ বাড়তেছে তার উপাত্তের সাথে এ্যাগ্রো এবং অন্যান্য প্রোডাক্ট এর উৎপাদনের উপাত্ত মিলালে দেখা যাবে দুইটাই প্রায় কাছাকাছি রেইট এ বাড়তেছে – তার মানে এখানে প্রোডাক্ট-ডিমান্ড যে হারে বাড়তেছে প্রায় একই হারে প্রোডাক্ট-সাপ্লাইও বাড়তেছে, তাই প্রোডাক্ট এর ডিমান্ড-সাপ্লাই এর কারণে মূল্যস্ফীতি অনেক কম হওয়ারই কথা তাত্ত্বিকভাবে এবং এর কারণে যে খুব একটা হয় না, তাও সত্য; এটা বেশিরভাগ হচ্ছেই কারেন্সীর (মুদ্রা/টাকা) ডিমান্ড-সাপ্লাই এর কারণে।

এটা হচ্ছে কিভাবে, এর কিছু আলোচনা আগের পোষ্টগুলোতে করেছিলাম, এখানে আমার আরও কিছু ধারণার কথা বলছি – একটা ইকোনোমী-তে যদি ২০০ টাকা এর সাপ্লাই থেকে থাকে এবং এর মধ্যে যদি ১০০ টাকার হোল্ডার সাধারণ-মানুষ, যারা ব্যাংক-সঞ্চয়ের মাধ্যমে টাকা বাড়াতে ইচ্ছুক, হয় – তবে এ টাকা তারা ব্যাংকে রেখে সঞ্চয়ের উপর সুদ এর জন্য বসে থাকবে; এবং তাদের সঞ্চয়ের সে টাকা আরেকদল মানুষ যারা ইকোনোমীর বাকী ১০০ টাকা নিয়ে ব্যবসা করছে তাদের কাছে ব্যাংক দিবে ঋন-হিসেবে অতিরিক্ত সুদে। সে টাকা নিয়ে ব্যবসায়ীরা আগে যদি একটা ব্যবসা করতো তবে এখন আরেকটা ব্যবসার সুযোগ পাবে এবং তারা সেটাই করে, এতে করে যদি ধরে নেয়া হয় পূর্বের ব্যবসায় ব্যবসায়ী ঋনের ১০০ টাকা খাটাবে এবং নতুন ব্যবসায় ব্যবসায়ী তার আগের ব্যবসার টাকা খাটাবে; তবে পূর্বের ব্যবসায়ের প্রোডাকশান-কষ্ট ঋনের সুদের সমপরিমাণ বেড়ে যাবে প্রোডাক্ট এর ডিমান্ড-সাপ্লাই অপরিবর্তিত থাকলেও এতে করে সে প্রোডাক্ট এর প্রাইস বাড়বে, এবং ইকোনোমীতে নতুন একটা ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরী হবে অথবা সেই একই ব্যবসার উৎপাদন বেড়ে যাবে।

নতুন কোন ব্যবসার ক্ষেত্র যদি না বাড়ে (যেমন আমাদের মতো দেশে নতুন ক্ষেত্র তৈরী হয় কম), তবে উৎপাদন বাড়ানোর তেমন কোনই যুক্তি থাকে না, যদি না সেটা লোকাল-ইকোনোমীর বর্ডারের বাইরে বিক্রি করা যায়। বাইরের দেশের ওরাও তো একই প্ল্যান-প্রোগ্রাম করে, ওরা আরেক দেশের এ অতিরিক্ত উৎপাদন কেনই বা কিনবে?

সারা বিশ্বে যদি একই কারেন্সী (মুদ্রা) প্রচলিত থাকতো এবং মুক্ত-বাজার থাকতো তবে একই প্রোডাক্ট এর প্রাইস-লেভেল একই থাকতো, পার্থক্য হতো শুধু পরিবহন খরচ। যেহেতু মুক্ত-বাজার অর্থনীতিতে একই-লেভেল এর প্রাইস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাই কখনোই মুক্ত-বাজার হয় না, এবং লোকাল ও ইন্টারন্যাশনাল বাজার আলাদাভাবে বানানো হয়। এ জন্য আছে কোটা-ট্যারিফ এবং অন্যান্য রিজিওনাল ট্রিটি, যাতে করে এক দেশের অতিরিক্ত উৎপাদন আরেক দেশে কিনে বা বেচে লাভ করা যায় এবং এক দেশকে একটা উৎপাদনে নিয়োজিত রেখে আরেকটা দেশ অন্য কোন ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারে।

এভাবে প্রাইস ম্যানিপুলেশানের মাধ্যমে এক দেশকে ঠকিয়ে আরেক দেশের লাভের জন্য আলাদা আলাদা বিনিময় মুদ্রাও বেশ কার্যকরী। একেকটা দেশ বিভিন্ন কারণে মুদ্রা প্রিন্ট করে এবং এর কিছু ভিত্তি রয়েছে; যেমন আমাদের দেশেঃ গোল্ড-সিলভার এর পাশাপাশি সরকারী-সিক্যুরিটি-বন্ড, আই.এম.এফ-কোটা, ফরেইন-কারেন্সী রিজার্ভ এবং অন্যান্য বিল অফ এক্সচেঞ্জ ও কমার্শিয়াল পেপার এর সমপরিমাণ টাকা তারা প্রিন্ট করতে পারে। এগুলোর মূল্য বাড়লে দেশের মানিটারী-বেইজ বেড়ে যায়। মানিটারী-বেইজ দিয়ে কেন্দ্রীয়-ব্যাংক আর সে বেইজ থেকে রিজার্ভ নিয়ে এবং সঞ্চয়কারীদের থেকে ডিপোজিট নিয়ে কমার্শিয়াল-ব্যাংকগুলো একযোগে কাজ করে যায় দেশের মানি-সাপ্লাই বাড়ানো-কমানোয়। উপরে যে সুদের কথা বলা হয়েছে – কমার্শিয়াল ব্যাংক মানিটারী-বেইজ এর রিজার্ভ এবং সাধারণ সঞ্চয়কারীদের ডিপোজিট দিয়ে ঋনের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ডিপোজিটরদের সুদ দিয়ে এ সাপ্লাই বাড়াতেই থাকে প্রতিনিয়ত।

দেশে নতুন কোন উৎপাদনের ক্ষেত্র যদি না বাড়ে তবে এ সাপ্লাই দিয়ে প্রাইস-ইনফ্লেশান ছাড়া আর কোন লাভ নেই; আর যদি নতুন উৎপাদন বাদ দিয়ে পুরাতন ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত উৎপাদন করা হয় তবে সেক্ষেত্রেও দেশের লাভের চাইতে বিদেশীদের লাভ-ই বেশী হয়, কেননা আমাদের দেশের অতিরিক্ত উৎপাদন আরেক দেশ কিনবেই না, যদি না তার কোন লাভ হয়। আর আমাদের দেশ নিজের চাহিদার বাইরে গিয়ে আরেক দেশের জন্য উৎপাদন মানে তো আমার ভাষায় – কেনা গোলাম। এ ছাড়াও ওদের জন্য উৎপাদনের মাধ্যমে বিক্রি করে যে ফরেইন-কারেন্সী আসবে, সেটা রিজার্ভ বাড়িয়ে মানি-সাপ্লাই বাড়াতে থাকবে যদি এক্সচেঞ্জ-রেইট ফিক্সড থাকে, তবে এখানেও অবমূল্যায়নের কারণে তেমন কোন লাভ না হয়ে লসই খাই আমরা।

এবার যদি দেখি এ ফরেইন-কারেন্সী আসে কিভাবে, তবে দেখা যায়; বিভিন্ন দেশে আমাদের যে কর্মরত লোকজন আছে ওরা পাঠায়, পরের গোলামীর উৎপাদন করে বেচে নিয়ে আসি, আর আসে ফরেইন-গ্র্যান্ট এর মাধ্যমে। মানে এ কয়েকভাবে আমাদের দেশে সাপ্লাই হচ্ছে ফরেইন-কারেন্সী। দেশে তো ডলার-ইউরো চলে না এ সাপ্লাইটা তাহলে কি হয় তা দেখতে গেলে দেখা যায়, দেশের মানুষ এগুলো বিক্রি করে ব্যাংক-ব্রোকারদের কাছে এবং তার বিনিময়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। আর যদি দেখি এর ডিমান্ড কেনো বাড়ে দেশে, তবে দেখা যায় – আমদানী করতে, ছাত্র এবং অন্যান্যদের দেশের বাইরে যেতে এবং দেশের পাচারকারীদের পাচার করার জন্য এর ডিমান্ড রয়েছে। যেহেতু এ ফরেইন-কারেন্সী অন্যান্য ষ্টক এর মতোই এবং একটা ষ্টক এর সাপ্লাই এর তুলনায় ডিমান্ড বেড়ে গেলে এর প্রাইসে প্রভাব পড়ে এবং ফরেইন-কারেন্সীর প্রাইস বেড়ে যায় আর এতে করে দেশিয় টাকার অবমূল্যায়ন ত্বরান্বিত হয়। আর আমাদের দেশের টাকার এভাবে অবমূল্যায়ন হতে থাকলে দেশের অন্যান্য উৎপাদিত পণ্যের দাম সেসব কারেন্সী-সাপ্লাইয়ারদের দেশের তুলনায় কমতে থাকে। এবং ওসব কম-মূল্যে চলে যেতে থাকে।

আরও যদি দেখি আমরা এগুলো দিয়ে আসলে কি করি, তাহলে দেখবো দেশে এগুলো দিয়ে ক্যাপিটাল মেশিনারী, ফালতু-প্রোডাক্ট, বিলাসিতার উপকরণ ছাড়া অন্য কোন উৎপাদনশীল কাজে আমরা ব্যয় করি না। এগুলো দিয়ে আমরা গাড়ি কিনি, সেলাই-মেশিন কিনি, বাড়ী-ঘর বানানোর লোহা-সিমেন্ট কিনি ইত্যাদী। আর যদি দেখি এগুলো বিদেশে নিয়ে কি করি – তাও দেখা যাবে আমরা সেখানেও বাড়ী, গাড়ী, বিলাসিতায় ও পড়ালেখায়ই খরচ করি। মানে কোথাও আমরা কোন ক্রিয়েটিভ কাজে নাই!

আর এসবই হয় রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা উদাসীন থাকার কারণে, আজকেও কোন এক রিপোর্টে দেখলাম আমাদের দেশ থেকে এরকম হাই-ডিমান্ড এর ফরেইন-কারেন্সী নিয়ে আরেক দেশে নেতা-ব্যবসায়ীরা বাড়ী-ঘর বানাচ্ছে; অথচ সেইসব কারেন্সীওয়ালা দেশগুলো তাদের বাজার এমনভাবে পরিচালনা করে যে তারা ফাইনান্সিয়ালী লস খায় না! উপরন্তু আমাদের এ চরিত্র অবলোকন করে গ্র্যান্ট এবং অন্যান্যভাবে সাপ্লাই বাড়িয়ে গোলামীর উৎপাদনে নিয়োগ করে আমাদের সময় এবং শ্রম কিনে নিচ্ছে, যেটা অন্য কোন ভালো কাজে ব্যবহার করা যেতো!

বিষয়: বিবিধ

১৫৭০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

260011
৩১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:৪৫
কাহাফ লিখেছেন : একটু একটু বুঝার পথে..........। ধন্যবাদ অজস্র।
৩১ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৮
203918
বুড়া মিয়া লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ কাহাফ ভাই
260015
৩১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:৫৩
সন্ধাতারা লিখেছেন : Beautiful intiative Jajakallahu khair.
৩১ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৯
203919
বুড়া মিয়া লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ...
260067
৩১ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৪:১৬
আফরা লিখেছেন : দাদাজান আপনার এই লেখাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ন দেশ ও দেশের মানুষের জন্য একটা বই বের করলে ভাল হয় ।
৩১ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৩
203921
বুড়া মিয়া লিখেছেন : এর চাইতে অনেক ভালো করে লেখা বই মনে হয় বাজারে আছে আফরামণি ...
260099
৩১ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৯
মামুন লিখেছেন : সম্পুর্ণটাই পড়লাম। অনেক কিছুই জানলাম। ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটির জন্য।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা। Rose Rose Rose
৩১ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৩
203922
বুড়া মিয়া লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ মামুন ভাইকে ...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File