নির্দিষ্ট গন্তব্যে অবিরাম পথচলা ...
লিখেছেন লিখেছেন বুড়া মিয়া ২৭ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:৩৩:২১ সকাল
প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং আদিকালের ব্যাংকিং ব্যাবস্থার মধ্যে বড় একটা ফারাক রয়েছে বলে আমার ধারণা; আদিকালের মুদ্রাগুলো ছিলো মূল্যবান ধাতব অথবা অন্যান্য কমোডিটি এবং সেসবের নিরাপত্তাকল্পেই ছিলো ছোট আকারের ব্যাংকিং ব্যবস্থা। বর্তমানে সেসব মূল্যবান ধাতব ও অন্যান্যকে বলতে গেলে পুরোপুরি সরিয়ে দেয়া হয়েছে বিনিময়ের মাধ্যম থেকে এবং মূল্যহীন কাগুজে মুদ্রাকে বিনিময়ের মাধ্যম থেকে উন্নীত করা হয়েছে – ক্যাপিটাল বা মূলধনে। আর এ মূলধন একদল মানুষ থেকে কৌশলে নিয়ে এসে আরেকদলের স্বার্থে ব্যবহারের কার্য্যক্রম-ই মূলত আধুনিক ব্যাংকিং-ব্যবস্থা। এখনো অর্থনীতির বইগুলোতে এবং সত্যিকারার্থেও মূলধন বলতে কাগুজে মুদ্রার বদলে অন্য কিছুকেই বুঝিয়ে থাকে বলেই আমার জানা।
এতে করে সাধারণ মানুষগুলো এখন আর রিয়েল-ক্যাপিটাল এর অর্জন দিয়ে মূল্যবান জিনিস সঞ্চয়ের ইচ্ছাও পোষন করে না, তারা কাগুজে মুদ্রা উপার্জন ও সঞ্চয়ের জন্যই তাদের বিয়েল-ক্যাপিটাল শ্রম এবং অন্যান্য ক্যাপিটালকে নিয়োজিত করে বিনিময়ে পাচ্ছে কাগজ এবং তা যেহেতু মূলত স্বীকৃত বিনিময়-মাধ্যম, সেটার বিনিময়ে খেয়ে পড়ে বাচছে এবং নানারকম অলীক আশায় সেটা অধিক হারে আয় করার জন্য জান-মাল পুরোপুরি বিনিয়োগ করছে এবং আরও বাড়িয়ে তোলার জন্য আধুনিক ব্যাংকগুলোর মকারীতে প্রতারিত হয়ে চলছে, এতে করে মূলত রিয়েল-ক্যাপিটাল হারিয়ে কাগজ-ই (কাগুজে মুদ্রা) বাড়িয়ে চলছে তারা! এদের মধ্যে সামান্য কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায় – যারা কখনোই কাগুজে মুদ্রার হোর্ডার হয় না, বরঞ্চ রিয়েলে (গোল্ড, সিলভার, অন্যান্য, ইত্যাদীতে) কনভার্ট করে নেয় সে কাগুজে বিনিময় মাধ্যমকে।
ব্যাংকগুলো এ কাগুজে টাকা নিয়ে মকারী করে কেন? এ প্রশ্নের জবাবে আমার বেশ কিছু জিনিস মনে এসেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে –
(১) এ কাগজ দিয়ে যাতে উপার্জনক্ষম মানুষগুলো সাস্টেইনেবল কিছু না করতে পারে এবং এটা যাতে নির্দিষ্ট একটা গোষ্ঠী ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে সে রাস্তা করে দেয়ার জন্য।
(২) সাধারণ উপার্জনক্ষম মানুষগুলো যাতে খাদ্য উৎপাদন এবং অন্যান্য উৎপাদনমূখী বিনিয়োগে গিয়ে স্বনির্ভর না হতে পারে সে জন্য তাদের শ্রমের বিনিময়ে উপার্জনের সঞ্চয় থেকেই তাদের হাউজিং-লোন, কার-লোন, এডুকেশান-লোন ইত্যাদী দিয়ে বিলাসিতার/শিক্ষিতের লোভ দেখিয়ে তাদেরকে এক নির্দিষ্ট দিকে ধাবিত করার জন্য।
(৩) সাধারণ মানুষদের হাতে এখনও দেশের যেসব জমি-জমা রয়েছে সেগুলো কেড়ে নেয়ার জন্য (এ বিষয়ে আমার আগের এক পোষ্টে বলেছি)।
(৪) কৃষি লোন দিয়ে এখনো যারা ক্ষেত ছেড়ে দেয় নি কোনমতে তাদের দিয়েই উৎপাদন করিয়ে এখনকার গোলাম শ্রেণীকে খাইয়ে টিকিয়ে রেখে তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে পার্মানেন্ট গোলাম বানানোর জন্য এবং কৃষকদের ছোট পরিবার গড়ে শিক্ষিতের মূলা ঝুলিয়ে তাদেরকে সেখান থেকে উৎখাত করার জন্য। অন্যান্য পণ্যের তুলনায় কৃষি পণ্যে প্রাইস-ডিস্ক্রেপেন্সী দেখে আমার এরকম মনে হয়েছে।
ওদের মকারীটা কি তা আমার মতো ফিনান্স এবং ইকোনোমিকস এ সামান্য জ্ঞানধারী যারা রয়েছে তারা তো জানেই, আর যারা আরও বেশী জ্ঞান অর্জন করেছে তারা খুব ভালো ভাবেই বোঝে আর যেহেতু অপটিমাম-কুয়ান্টিটির মুদ্রার জন্য সুদ না হলেও চলে, তাই একে সবাই মকারীই বলে। এ মকারীতে তাদের একমাত্র উপাদান হচ্ছে সুদ! আমার চাইতে অজ্ঞ যারা তাদের বোঝার জন্য এ বিষয়ে আমার অভিমত দিচ্ছি –
সারা বিশ্বেই এখন সুদী-ব্যাংকিং-ব্যবস্থা, মনে করুন সারা বিশ্বে এখন ৫০০,০০০ টাকা এবং এর অর্ধেক সাধারণ মানুষের কাছে এবং বাকী অর্ধেক একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠির কাছে। সাধারণ মানুষ সকাল-সন্ধ্যা খেটে খায় আর নির্দিষ্ট সে গোষ্ঠি খাটিয়ে খায়। নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর টাকা তাদের ব্যবসায় আর সাধারণ মানুষের টাকা তাদের হাতে। সকাল-সন্ধ্যা খাটার পর সাধারণ মানুষ অন্য কিছু করার চিন্তাই করতে পারে না, আর নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দিনভর চিন্তা কিভাবে কৈ এর তেলে কৈ ভাজা যায় – অর্থাৎ তাদের টাকা নিয়ে তাদেরকে খাটিয়ে তাদেরকে কিভাবে নিষ্পেষিত করা যায়। সাধারণ মানুষ যেহেতু তাদের ব্যবসাগুলোতেই খাটছে কাগজ কামাই এর জন্য, তাই তারা তাদেরকে বলে এটা আমাদের (ব্যাংকে) দাও আমরা তোমাদের আরও কাগজ (টাকা) দিবো এর বিনিময়ে – ধরুণ ১০%। এবার চিন্তা করুন টাকার পরিমাণ তো ৫০০,০০০ যার মধ্যে সাধারনের ছিলো ২৫০,০০০ এবং ১০% সুদ হিসেবে তাদের দিতে হবে ২৫,০০০ - এ টাকা উৎপাদন হবে কোত্থেকে? প্রিন্টারে প্রিন্ট করবে এবং সবাই তাই করে। এবার অনেকের প্রশ্ন হতে পারে না ব্যবসা করে লাভ করার চান্স আছে – আসলে সেটা নাই ধোকাবাজী করা ছাড়া অর্থনীতির দৃষ্টিকোন থেকেই (প্রোফিট-ইন্সেন্টিভ দিয়ে উন্নয়নের যতো গলাবাজীই করুক না কেন)! তাহলে এসব জানার পরও কেন সে নির্দিষ্ট গোষ্ঠী এ চান্স পাচ্ছে? এ টাকা নিয়ে কেন কাড়াকাড়ি এবং মূলা ঝুলাচ্ছে? যেহেতু সাধারণরা এ কাগুজে মোহে আত্নহারা এবং এর বিনিময়ে সর্বস্ব ত্যাগ করতেও উদ্যত এবং এভাবেই তাদের সম্পদ কেড়ে নেয়া যায় বিনা যুদ্ধে - তাই! নির্বিঘ্নে, বিনা-শ্রমে বসে বসে খাওয়ার আমার মতো অনেক সাধারনের ইচ্ছাই এ সুদ-ব্যবস্থাকে চলতে সাহায্য করে! সুদ ব্যবস্থা নিয়ে আমার অন্যান্য ধারণা পরের পোষ্টে লিখবো আশা করি। কিভাবে এ কাগজের বিনিময়ে এবং অলীক-মোহে সাধারণ মানুষ সর্বস্ব ত্যাগ করতেও উদ্যত হয় তার একটা উদাহরণ হচ্ছে –
গ্রামে জমির দাম ২০,০০০ টাকা ডেসিমাল আর শহরে ২০,০০,০০০ টাকা ডেসিমাল; এখানে খেয়াল করুন উৎপাদনশীল জমির (যা আপনাকে খাদ্যে স্বনির্ভর করতে পারে) দাম নেই আর উৎপাদনে অক্ষম বিলাসিতার মোড়োকে সাজানো শহুরে জমি (যা পরের গোলামীর পর ঘুমানোর কাজেই শুধু ব্যবহার করা যায়) কতো মূল্যবান এবং অনেকেই ১০০ ডেসিমাল জমির বিনিময়ে ১ ডেসিমাল পেতে দ্বিধাবোধ করে না। গ্রামে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের মূল্য কতো কম আর সামান্য একটু প্রোসেস করে প্যাক করা সেই একই পণ্যের-ই শহরে কতো দাম! সাধারনের ধারণা - শহরেতো সব রেডিমেইড, হাতের কাছে আর গ্রামে উৎপাদনে তো লাভ নেই (প্রাইস-লেভেল এখনো সেভাবেই সেট করা, যাতে সেসব থেকে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়) – তাই গ্রামের জমি দিয়ে বা গ্রামে উৎপাদন করে কি হবে? স্বাভাবিকভাবেই সেগুলো ছেড়ে শহরে আসতে কেউ কুন্ঠাবোধ করে না, কেননা এখানে তো ভালো আয়ই করা যায় – সব কিনে খাওয়া যায় এবং সঞ্চয়ও করা যায় (এ লেভেলে না থাকলে আসলেই কেউ উদ্বুদ্ধও হবে না), তাছাড়া যে গোলামীটা করি সেটাও তো চাকচিক্যময় মনোলোভা! আর সবার আশা একদিনতো আমার অনেক সঞ্চয় হবে তা দিয়ে শহুরে মানুষের মতো প্রোসেসিং/প্রোডাকশন এর ব্যবসা করবো, ইত্যাদি। নির্দিষ্ট সে গোষ্ঠীর ম্যানিপুলেটেড প্রাইস ইনফ্লেশান এর কারণে কখনোই সাধারণের সে ইচ্ছা আর বাস্তবায়নযোগ্য হয় না! আর বিদ্যুত-গ্যাস-পানি এখনও গ্রামে যায় নি, কেননা ওখানে মানুষগুলোকে অতিষ্ট না করা পর্যন্ততো সেসব তারা ছাড়তে চাইবে না – তাই এভাবেই চলছে!
এভাবে সব মানুষকে ধীরে-ধীরে যুদ্ধ ছাড়াই দাবড়ে এনে ফ্ল্যাট নামক জেলখানায় বন্দী করতে হয়তো সে গোষ্ঠীর আরও এক অথবা দুই প্রজন্ম লেগে যেতে পারে, আর এ জন্য তো পরিবার পরিকল্পনার, শিক্ষা-স্বনির্ভরতার-উন্নয়নের মূলা ঝুলছেই এবং দিনকে দিন মানুষ এসবে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসছে! এবং একই সাথে সে গোষ্ঠীও তাদের ব্যবসার ক্ষেত্রে বাড়িয়ে নিচ্ছে এবং সেটা পরিচালনা করছে সে সাধারনদের গোলাম হিসেবে বেতন দিয়ে পুষেই। আর পুরোপুরি দাবড়ে এনে যখন ফ্ল্যাটে বন্দী করবে – তখন গ্রামেও বিদ্যুত-গ্যাস-পানি চলে যাবে, পার্ক, রিক্রেশান সেন্টার গড়ে উঠবে, কেননা গোলামরা তো না হয় সেখানে থেকে কামলা খাটার ইন্সেন্টিভ পাবে না! আর সেসব প্রতিষ্ঠানের মালিক থাকবে দেশি-বিদেশিদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীই!
আজ থেকে ২০ বছর আগে মুদী-দোকানদারী আর কসাই-তরকারীর ব্যবসা তো ঘৃণিত ছিলো এ গোষ্ঠীর দ্বারা এবং এমন প্রাইস ছিলো সেসবের যাতে করে সবাই সেখান থেকে হতাশ হয়ে বের হয়ে আসে অন্য কাজে; এখন সে পথ অনেকটা সুগম তাইতো এখন মাছ-মাংস-তরকারী এবং অন্যান্য দিয়ে ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর, প্যাক করে সেসব পণ্যের নানারকম মনভোলানো নাম দিয়ে তারাই সেসবের পাইকারী এবং খুচরা ব্যবসায়! আজ থেকে ২০ বছর আগে অনেকেই যারা এসব স্বপ-লাভের ব্যবসা বাদ দিয়ে ছেলে-পেলে মানুষের মতো মানুষ করেছে, তাদের অনেকেই আজ সেসব গোষ্ঠীর এসব দোকানে বা পণ্য বিপননের/প্রক্রিয়াজাতের কর্মচারী! মালিক থেকে কর্মচারী হয়েছে তারা – নিঃসন্দেহে অনেক বড় ষ্ট্যাটাস সেটা, আর সাথে তো কোট-প্যান্ট-টাই-জুতা এবং গাড়ী রয়েছেই! এভাবে আরও চলবে কারণ সব এখনো খোয়াড়-বন্দী হয়-নি এবং মোহও কাটেনি!
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৪ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মানুষের এখন চাহিদার বেশিরভাগ অংশই বিলাসিতা। মেীলিক প্রয়োজননয়। অথচ এই বিলাসিতার জন্যই বিশাল একটি অর্থ মানুষ খরচ করে। বিশেষ করে শহর ও গ্রামের জমির দাম নিয়ে যা লিখেছেন সেটা গুরুত্বপুর্ন। দেশের বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে শহরে কোন মতে জমি কিনে ঘর করে ভাড়া দিয়ে সেই অর্থে জিবনযাপন করার একটা মানসিকতা আছে।যেটা কোন ভাবেই উৎপাদনশিল নয়।
অনেক ধন্যবাদ সবুজ ভাইকে লেখাটা পড়ায়।
যেমন কুকুর তেমন মুগুর না হলে চলে না দাদাজান তারপর বলব মুখের ভাষাও একটা সদাকা আর মুখদিয়ে যা বের হয় তা ফিরিয়ে নেয়া যায় না তাই দাদা জান বলছিলাম মন্দের জবাব আমরা যতটা সন্বব ভাল দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব ।
দাদাজান নাতনি হয়ে আপনাকে উপদেশ দিয়ে ফেললাম বেয়াদবী মাফ করবেন ।
মুসলিম হবার মজাটাই মনে হয় এখানে। ছোট বড় সবার কাছ হতেই শেখার আছে।
আমি জানিনা আপনি কি আগামীতে এ নিয়ে লিখবেন -
১। কমার্শিয়াল ব্যাংক সমূহ কিভাবে আর্টিফিশিয়ালী টাকা তৈরী করে - ফলাফল স্বরূপ সরকার কিভাবে বাধ্য হয় টাকা প্রিন্ট করতে - যার পরিনতিতে মূল্যস্ফিতি তৈরী হয়?
২। মূল্যস্ফিতি কিভাবে সাধারন মানুষের (কৃষক, কামার, চামার ইত্যাদির) সম্পদ ও সম্পত্তি ইয়াহুদীদের পকেটে গ্রাজুয়ালী চালন করে দেয়?
৩। ক্রেডিট কার্ড কিভাবে এর ব্যবহারকারী হতে কোন টাকা দেওয়া ছাড়াই সবচেয়ে বেশী পারসেন্টেইজ এ সুদ আদায় করে এবং তা জিয়োনিস্ট এর দের পকেটে যায় সরাসরি? (আমি এ বিষয়টা ইসলামী ব্যাংকের ভিসা কার্ডের (খিদমা না কি নামে) সাথে চুক্তির নিউজ পড়ার পর - আবিষ্কার করেছিলাম। তার আগে কোনদিন মাথায় ও আসেনি)
আপনি 'Fall / collapse of US Dollars or Collapse of World Economy' লিখে সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন।
আমার ধারনা আপনি ২/৩ টা দেখলে লিখার জন্য পর্যাপ্ত কাচাঁমাল পাবেন - বাকিটা আপনার জ্ঞান ও এ্যানালাইটিক্যাল শক্তি দিয়ে - পাবলিক সচেতনতার জন্য আপনা আপনি লিখে ফেলতে পারবেন। ইনশাল্লাহ্।
মন্তব্য করতে লগইন করুন